somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিক্ষার্থীদের অনশন তো ভাঙল, জিতলো কে ?

২৬ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোনো সরকারী অফিসার নয়- মন্ত্রী নয়, একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক জাফর ইকবালের অনুরোধে SUST এর শিক্ষার্থীরা অনশন ভেঙেছে, যিনি প্রায় বছর তিনেক আগেই অবসর গ্রহন করেছেন !
অথচ মাত্র কয়েকদিন আগেও শিক্ষক-সমিতির 'চাকরি'জীবী শিক্ষকেরা অনেক চেষ্টা করেছিলেন শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙাতে, পারেন নি!
জাফর ইকবাল পারলেন তার ব্যক্তিত্বগুণে- নিজ যোগ্যতায় ! একজন শিক্ষকের যতগুলা গুন থাকা দরকার ঠিক ততগুলা গুন তিনি ধারন করেন বলেই শিক্ষার্থীরা তার অনুরোধ ফেলে দেওয়ার সাহসটুকু দেখাতে পারেন নি, অথচ জাফর ইকবালের অনেক সহকর্মীকেই শিক্ষার্থীরা চুল দিয়েও গোনে নি যারা পদাধিকারবলে জাফর ইকবালের চেয়ে অনেক উপরে ছিলেন, অথচ শুরুতেই যদি ফরিদ সাহেব শিক্ষার্থীদের কয়েকটা দাবি মেনে নিতেন, বিষয়টা এতোদূর আসতোই না ! ভিসির সবসময় দূরদর্শী হওয়া উচিত !
একটা ভিসিকে তার পদ থেকে অপসারন করা একটা প্রতিষ্ঠিত সরকারের জন্যে কঠিন কোনো কাজ না, বর্তমান সরকারের আমলে তো অবশ্যই না, জাস্ট 'তিনি' মুখ দিয়ে উচ্চারন করলে শুধু ফরিদই নয়, দেশের এমন কোনো ভিসি নাই যিনি স্বপদে 'তার' অনুগ্রহ ছাড়া একটা ঘন্টা থাকতে পারেন!
সারা দেশের এমন কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন কোনো শিক্ষক নাই যিনি শিক্ষকতার চাকরীতে প্রবেশের সময় তৎকালীন সরকারের অনুকম্পা ছাড়া চাকরি পেয়েছেন, আজকেও যদি ফরিদের বদলে একটা 'স্ট্যাম্প'কে ভিসি পদে দাড় করিয়ে রাখা হয় তিনিও সরকারী দলেরই গুনগান করবেন, সরকারেরই অনুগামী থাকবেন, এ তো জানা কথাই, তাহলে ভিসি ফরিদকে সরানো হচ্ছে না কেনো?
তিনি কোন দিক দিয়ে এতো মূল্যবান ?
তিনি কি এমন আত্বত্যাগী 'শিক্ষাগুরু' যে তাকে রাখতেই হবে ?
কারনটা পুরোপুরিভাবেই রাজনৈতিক ! আন্দোলনের কারনে ফরিদকে পদত্যাগ করালে গোটা শিক্ষার্থী সমাজে একটা বার্তা যেতো যে, আন্দোলন-অনশনে কাজ হয়, যা বাকী ৩৪ ভিসির জ্বলুনি বাড়িয়ে দিতো, তারাও নিজেদের গদি নিয়ে চিন্তায় পড়ে যেতেন কারন কেউই তো আর তাদের নিজেদের জায়গায় সৎ নন! সোজাসাপ্টা চিন্তায় আপনার-আমার মাথায় এই আলাপের গভীরতা বোঝা যাবে না !
যেহেতু আন্দোলনের শুরুতেই পুলিশ-ছাত্রলীগ অলরেডী ব্যবহৃত হয়ে গেছে তাই আন্দোলন থামানোর জন্যে নতুন কোনো পদ্ধতি এপ্লাই করতেই হতো, জাফর ইকবালের মতো সর্বজন বিদিত ও শিক্ষার্থীবান্ধব একজনকে পাঠানো হলো শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙানোর জন্যে। সরকারের এই ট্রামকার্ডটা খুব কাজেও দিলো, জাফর ইকবাল আসার সাথে সাথেই শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র তার আশ্বাসে অনশন ভাঙলো ! এই কাজটা শুধুমাত্র একজন জাফর ইকবাল বলেই সম্ভব হয়েছে, যার পরে দ্বিতীয়-তৃতীয়-চতুর্থ বলে কেউ নাই ! আজকে যদি আপনাকে জিগ্যেস করি, দেশের পাঁচজন জীবিত শিক্ষাবিদের নাম বলেন তো, জাফর ইকবালের পর আর কয়জনের নাম বলতে পারবেন আপনি ? আব্দুল্লাহ আবু সাইয়্যিদ-মাকসুদুল আলম-অরুন কুমার বসাক...হয়তো অনেকেই আছেন কিন্তু এমন আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের কনভেন্স করে তাদের অনড় অবস্থান থেকে সরানোর মতো শিক্ষাগুরু কে আছেন, জাফর ইকবাল ছাড়া ?
সেদিন সংসদে দাড়িয়ে সংসদ সদস্য ফিরোজ রশীদ বললেন, 'মোনায়েম খানের আমলে আমরাও ছাত্র আন্দোলন করেছি, আমাদেরকে পাড়ার বিয়েতেও কেও দাওয়াত দিতো না, কিন্তু মোনায়েম খান আমাদেরকে বঙ্গভবনে দাওয়াত দিয়েছিলেন, সেই দাওয়াত আমরা প্রত্যাখ্যান করেছিলাম....ছাত্র আন্দোলন সবসময় যৌক্তিভাবেই হয় কিন্তু সব সময় ক্ষমতায় থাকা মানুষগুলো সেই আন্দোলনকে অযৌক্তিক মনে করে...'
জাফর ইকবাল, নিঃসন্দেহে শিক্ষার্থীদের ভরসার জায়গা, তার সময়েও যখনই শিক্ষার্থীদের উপর হামলা হয়েছে, জাফর ইকবাল এবং তার সহধর্মিণী সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন ! তার অনুরোধ ফেলতে পারে এমন শিক্ষার্থী সারা দেশেই খুজে পাওয়া ভার সেখানে সাস্ট তো তার নিজের বিশ্ববিদ্যালয় !
জাফর স্যারের আশ্বাস এবারের মতো হয়তো অনশন ভাঙাতে পেরেছে কিন্তু তার আশ্বাসও যখন কাজে পরিণত হবে না, তখন ছাত্ররা জাফর ইকবালকেও জাস্ট একটা 'তুরুপের তাস' বলেই হয়তো সম্বোধন করবে ! তখন পরবর্তীতে আর কোনো ট্রাম্প কার্ডই কাজে আসবে না, দাবি মেনে নেওয়া ছাড়া !
অনশন ভাঙার মাধ্যমে আন্দোলন যে এখানেই ইতি টানলো তা সহজেই অনুমেয়, যার শেষ পেরেক পড়তে এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা, তবুও এটা শিক্ষার্থীদের ইনডিরেক্ট বিজয়ই, সেই সাথে সরকারেরও স্বস্তি ফিরলো !

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:২৫
৮টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×