somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন হতাশাগ্রস্ত পিতার গল্প "তরঙ্গের ওপারে আলো"

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রিয়াজ, একজন মধ্যবয়স্ক মানুষ, পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। সে একজন দায়িত্বশীল স্বামী এবং একজন বাবা। কিন্তু তার জীবনে এমন কিছু ঘটেছিল, যা তাকে গভীর হতাশার মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। রিয়াজের সন্তান আদিত্য, একজন অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডারের শিশু। শিশুটির বিশেষ চাহিদা এবং ভিন্ন ধরণের আচরণ প্রথমে রিয়াজের জন্য বোঝা হয়ে উঠেছিল। আদিত্য কথা বলতে দেরি করে, চোখের দিকে তাকাতে চায় না, এবং মাঝে মাঝে আচরণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না। রিয়াজ ও তার স্ত্রী সুমনা প্রথমে বুঝতেই পারেনি কিভাবে তাদের সন্তানকে সাহায্য করবে।

সন্তানের ভিন্নধর্মী আচরণ নিয়ে সমাজের অজানা মন্তব্য এবং কাজের চাপের কারণে রিয়াজের মানসিক অবস্থা খারাপ হতে শুরু করেছিল। নিজেকে সে অসহায় মনে করতে লাগল, মনে হচ্ছিল যেন জীবনটা তার হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। দুঃশ্চিন্তাগুলো ধীরে ধীরে তাকে গ্রাস করতে থাকল। অফিসের কাজে মন দিতে পারছিল না, এবং পরিবারেও আগের মতো মনোযোগ দিতে পারছিল না। তার রাতের ঘুম হারিয়ে যেতে শুরু করল। ভোরের প্রথম আলো দেখার আগেই সে জেগে থাকত, শুধুই চিন্তা আর চাপ তাকে আচ্ছন্ন করে রাখত।

একদিন রিয়াজ অফিস থেকে বাড়ি ফিরে দেখল, সুমনা চুপচাপ বসে কাঁদছে। আদিত্য সারাদিন বিক্ষিপ্ত ছিল, এবং তার মায়ের সাথে কোনভাবেই যোগাযোগ করতে পারছিল না। রিয়াজ বুঝতে পারল, এই একা লড়াই শুধু তার নয়; সুমনাও একইভাবে লড়ছে। কিন্তু রিয়াজ তার সমস্যাগুলো নিয়ে কখনো সুমনার সাথে কথা বলেনি, এমনকি নিজের দুর্বলতার কথাও গোপন রেখেছিল।

সেই রাতে, রিয়াজ সিদ্ধান্ত নিল যে সে আর একা লড়াই করবে না। সে সুমনার সাথে তার হতাশা, চাপ, এবং কষ্টের কথা শেয়ার করল। সুমনাও তাকে সমব্যথী হয়ে শুনল এবং বলল, "আমরা একসাথে আছি, এবং একসাথে সবকিছু মোকাবেলা করব। আমাদের ছেলেটা অন্য সবার থেকে আলাদা, কিন্তু সে আমাদের সেরা উপহার। আমরা ওর পাশে থাকব, যেমন আমাদের ওর পাশে থাকা উচিত।"

এরপর রিয়াজ এবং সুমনা একসাথে পরামর্শকের কাছে গেলেন। তারা শিখলেন কীভাবে তাদের সন্তানের সাথে আরও ভালোভাবে যোগাযোগ করতে হবে এবং তাকে বোঝার জন্য ধৈর্য ধরতে হবে। ধীরে ধীরে রিয়াজ তার ছেলের অটিজমের নানা দিক বুঝতে শুরু করল। আদিত্য তাকে একদিন সরাসরি চোখে তাকিয়ে হাসল। সেই হাসি রিয়াজের ভেতরে যেন নতুন এক আলোর সঞ্চার করল। তিনি বুঝতে পারলেন, আদিত্যও তাকে ভালোবাসে, শুধু তার প্রকাশের পদ্ধতি আলাদা।

রিয়াজ তার হতাশা মোকাবেলা করতে ধীরে ধীরে শিখতে লাগল। তিনি মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিলেন, তার অনুভূতিগুলো নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে শুরু করলেন, এবং নিজের মধ্যে একটা ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করলেন। আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার, তিনি শিখলেন, জীবনের প্রতিটি তরঙ্গের মাঝেই একটা আলো থাকে—তার সন্তান আদিত্য সেই আলো। তাকে শুধু সঠিকভাবে দেখার চেষ্টা করতে হয়।

সন্তানের অটিজম মানে জীবন থেমে যাওয়া নয়। রিয়াজ শিখলেন, জীবন মানেই ওঠানামা, তবে তার মধ্যেও আনন্দ আছে, ভালোবাসা আছে, শুধু তা খুঁজে বের করার জন্য একটু বেশি পরিশ্রম করতে হয়। এখন রিয়াজ আর সুমনা একসাথে হাসে, একসাথে কাঁদে, এবং একসাথে লড়াই করে—তাদের ছেলে আদিত্যকে ঘিরে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:১২
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

= দাওয়াত বা কোন অনুষ্ঠানে খাবার গ্রহণের সময় যে কটি বিষয় আপনার বিবেচনায় রাখা দরকার =

লিখেছেন এমএলজি, ১৪ ই অক্টোবর, ২০২৪ ভোর ৪:২৩



১. দ্রুত খাবার গ্রহণের অভ্যাস থাকলে তা কিছুটা ধীর বা প্রলম্বিত করার চেষ্টা করুন যাতে অন্য সবার বেশ আগেই আপনার খাওয়া শেষ হয়ে না যায়।

২. কোন আইটেম খুব সুস্বাদু বা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ এবং কিছু কথা......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৪ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:৩০

আমাদের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ এবং কিছু কথা.........

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমাদের সফলতার চেয়ে ব্যর্থতার বিষাদময় গ্লানির সঙ্গেই বোধকরি বেশি সম্পর্ক। কদাচিৎ কোনো বড় দলকে পরাজিত করার পর আমরা পুরো বাংলাদেশ এখনো আবেগে আপ্লুত... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। অন্য দেশে চলে যাচ্ছে গার্মেন্টসের অর্ডার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১২:২০




এবার বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের অর্ডারের একটি অংশ প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তানসহ অন্য দেশের বাজারে চলে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। রাজনৈতিক অস্থিরতা, সরকার পতন এবং শ্রমিক অসন্তোষের কারণে দেশের সবচেয়ে বড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন ভারতের উদ্বেগ!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


ভালোভাবেই শেষ হলো সনাতনীদের বৃহৎ উৎসব দুর্গাপূজা কিন্তু দুর্গাপূজা ভালো ভাবে শেষ হওয়ায় অনেকেই বড্ড হতাশ হয়েছে; পূজা নিয়ে তারা ট্রামকার্ড খেলতে চেয়েছিল কিন্তু ট্রামকার্ড খেলার পরও সফল হতে পারেনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

উফ্! কি দারুণ!! WOW!!!

লিখেছেন মন থেকে বলি, ১৪ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:০৬

চোখটা সবে যেই বুঁজেছি, ডাকল হুলো 'মিঁয়াও'।
মাথায় এলো আজিব টপিক - আরি সাবাশ! WOW!!

ল্যাংটাকালে 'আমার বই'-য়ে,
আঁকল ছবি কোন আঁকিয়ে?
তালগাছেতে উলটো ঝোলে কানাবগির ছাও।
সেটাই ছিল প্রথম অবাক, প্রথম বলা - WOW!!

আরও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×