ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে অবিভক্ত ভারতবর্ষে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শুরুটা খুব বেশি পুরাতন নয়। ব্রিটিশরা প্রথমে বাংলা ও পরে সমগ্র উপমহাদেশে ক্ষমতার দখল নেয় মুসলিমদের কাছে থেকে। মাত্র কয়েক হাজার ব্রিটিশ সামরিক আর বেসামরিক অফিসার দিয়ে কয়েক কোটি মানুষের এই সুবিশাল ভারতবর্ষ শাসন করে ইংরেজরা অনেক চাতুর্যতার সঙ্গে। ছোট ছোট বিভিন্ন রাজ্য, গোত্র আর গোষ্ঠীর মধ্যের দ্বন্দ লাগিয়ে “ডিভাইড অ্যান্ড রুল পলিসির” আওতায় এরা অবলীলায় প্রায় ২০০ বছর ভারতবর্ষকে শাসন, শোষন করে গেছে। মদ, নারী আর জুয়ার নেশায় মত্ত আমাদের দেশের আয়েশি রাজা, মহারাজা, নবাবরা নিজেদের মধ্যে মারামারি, দ্বন্দে লিপ্ত থেকেছেন বছরের পর বছর আর মাঝে মধ্যে ব্রিটিশ লাটের একটু আধটু আতিথিয়তায় সন্তুষ্ট থেকেছেন। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে ইংরেজি বাস্তবমুখী শিক্ষার প্রসারের জন্য এই দেশের মানুষরা আত্মঅধিকার সচেতন হন আগের চেয়ে অনেকবেশি। তাই অনেক জায়গায়তেই চলে স্বশাসনের জন্য সংগ্রাম। উপমহাদেশের বেশীরভাগ অশিক্ষিত, অর্ধ-শিক্ষিত, ধর্মপ্রাণ গ্রাম্য ভারতবাসীদের জন্য ব্রিটিশরা সে সময় সবচেয়ে সহজ অথচ মারাত্মক যে কুটকৌশল প্রয়োগ করে, তা হলো ধর্মীয়বিভাজন সৃষ্টি, যার প্রভাব ছিল সুদুরপ্রসারি। ফলশ্রুতিতে ভারতবর্ষে শুরু হয় ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, হিন্দু অধিষ্ঠিত এলাকায় মুসলমান নিধন অথবা মুসলিম অধিষ্ঠিত এলাকায় হিন্দু নিধন চলে অবলীলায় যা বন্ধ করতে ভারতবর্ষের অবিসংবাদিত নেতা মহাত্মা গান্ধিকে আমরণ অনশন করতে হয়েছে বহুবার।
১৯৪০ এর লাহোর প্রস্তাবে ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্রের কথা বলা হলেও পরবর্তীতে দ্বিজাতিতত্বের উপর ভিত্তি করে ভারত আর পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয় যাদের সৃষ্টির মুলে ছিল, ধর্ম। এই ধর্মভিত্তিক আদর্শ যে একদমি অসার আর দুরদৃষ্টিহীন ছিল তার প্রমাণ মাত্র ২৫ বছরের মাথায় পাকিস্তান ভেঙ্গে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম, যা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, ধর্মের ভিত্তিতে রাষ্ট্র টিকে না, রাষ্ট্রের মুল ভিত্তি মানুষের ভাষা, সাহিত্য আর সংস্কৃতি ।
ব্রিটিশরা ছিল আমাদের এখানে ভিনদেশী শাসক। মানুষের উন্নয়ন বা মঙ্গল নয়, দ্বন্দ সৃষ্টি, ধর্মীয় বিভাজন বা মানুষ হত্যা, যেকোন উপায়েই হোক উপমহাদেশে ক্ষমতা ধরে এদেশটাকে শোষণ করায় ছিল তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য। এরপর ইংরেজরা এইদেশ ছেড়ে চলে গেছে সেই ১৯৪৭ সালে। কিন্তু, তাদের রেখে যাওয়া “ডিভাইড অ্যান্ড রুল পলিসির” সেই ধর্মীয় বিভাজন আমাদের ভারতবর্ষের রাজনীতিবিদরা এখনও লালন করছেন ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আর শুধু মাত্র ক্ষমতার লোভে; মানবিকতা ভুলে এক ধর্মের ধর্মপ্রাণ মানুষদের উস্কে দিচ্ছেন অপর ধর্মের নীরিহ, নিরপরাধ মানুষদের বিরুদ্ধে।
ইতিহাস কখনও মনে রাখে না দাঙ্গায়, কত হিন্দু মরেছে, কত মুসলিম মরেছে। ইতিহাস শুধু মনে রাখে, কতজন মানুষ মরেছে। তুমি হিন্দু মার, মুসলিম মার, বৌদ্ধ মার, খ্রিষ্ট্রান মার, শক্তির উল্লাসে তুমি যে বা যাকেই মার না কেন, মনে রেখ তুমি একজন মানুষ মেরেছ! শুধুই একজন মানুষ!
তোমার উদ্ধত হাতে, তোমারি মত একজন মানুষের রক্তের লাল দাগ !

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





