গত ২৫ ফেব্র“য়ারি ২০০৯ ইং ঢাকার পিলখানার বিডিয়ার সদর দফতরে বিদ্রোহে শতাধিক সেনাকর্মকর্তার পরিকল্পিত হত্যাকান্ডে বিপুল ক্ষতি হয়েগেছে বাংলাদেশের। এ ঘটনা পৈশাচিক, বর্বরোচিত ও নিষ্ঠুর। সাধারণ মানুষের কাছে এটা ছিল সম্পূর্ণ অকল্পনীয়। বাংলাদেশের শতাধিক সেনাকর্মকর্তাকে এভাবে কোনো যুদ্ধক্ষেত্রেও একসাথে হত্যা করা সম্ভব ছিল না। এই হত্যাকান্ডে গোটা জাতী স্তম্ভিত, হতবিহ্বল এবং শোকাভিভূত। এই হত্যাকান্ডে বাংলাদেশের সরকার, জনগণ, সেনাবাহিনী কিংবা বিডিআর কেউ লাভবান হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবাই। এই হত্যাকান্ডে দেশের সার্বভৌম্ব রক্ষার কাজে নিয়োজিত যে শতাধিক চৌকস সেনাকর্মকর্তাকে আমরা হারিয়েছি, তাদের পুনর্বাসনের জন্য ২০ তেকে ২৫ বছর সময় লাগবে বলে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। বাংলাদেশ রাইফেলসকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নিতে সময় লাগবে ২০ তেকে ৩০ বছর। ২৫ ফেব্রুয়ারির সকালে পিলখানায় কী ঘটেছিল তার পূর্ণাঙ্গ চিত্র এখনো আমাদের কাছে নেই। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে বিডিআর'র দরবার হলে এমন এক পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছিল যে, সেনাকর্মকর্তাদের সম্পূর্ণ আলাদা করে ফেলা হয়েছিল, যাতে বেছে বেছে তাদের হত্যা করা সম্ভব হয়। এক দিনে মাত্র কয়েক ঘন্টায় দেশের এক তৃতীয়াংশ কমান্ডিং অফিসার হত্যাকান্ডের ঘটনা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কোনো রণক্ষেত্রেও ঘটানো সম্ভব হয়নি।
কিন্তু বাংলাদেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীরা সে কাজটি সুচারুভাবেই সম্পন্ন করতে পেরেছে। এর সাথে বিডিআর'র একশ্রেণীর রাষ্ট্রদ্রোহী জড়িত যে ছিল না তা নয়। কিন্তু ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে, এই হত্যাকন্ড সম্পন্ন করার জন্য তাদের সাথে যোগ দিয়েছিল বাইরের ভাড়াটে খুনিরাও। একজন সেনাকর্মকর্তা জানিয়েছেন, গোলাগুলি শুরু হওয়ার পরপরই অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিডিআর'র দরবার হলের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল একটি ছাই রঙের পিকআপ ভ্যান। পোশাক পরিহিত সেই লোকেরাও অংশ নিয়েছিল এই কলিং মিশনে। মুখে লাল কাপড় বেঁধে তারা নির্দেশ দিচ্ছিল কাকে কাকে খুন করতে হবে। তদন্ত যদি সুষ্ঠ হয়, তদন্তের লক্ষ্য যদি জাতির সুরক্ষা হয়, তাহলে নিশ্চয় এক সময় রহস্য উন্মোচিত হবে। আমরা প্রকৃত সত্য জানতে পারব। পূর্বেই বলেছি যে, এই হত্যাকান্ডে বাংলাদেশের কারো লাভ হয়নি। তাহলে এই ষড়যন্ত্রমূলক হত্যাকান্ডে লাভ হলো কার.? তাদেরই লাভ হলো যারা আমাদের বাংলাদেশকে দেখতে চায় একটি অকার্যকর, দুর্বল, ভঙ্গুর ও ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে। ২০০৭ সালের ১২ ই জানুয়ারি বাংলাদেশে যে অসাংবিধানিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার পেছনেও ছিল বাংলাদেশবিরোধী এক বিশাল চক্রান্ত, যা জ্ঞানীমহলের নিকট স্পষ্ট। তখন অনেক বুদ্ধিজীবিদের মন্তব্য আমরা লক্ষ্য করেছি যে, সেনাসমর্থিত ওই সরকার যেন এমন কোন কাজ না করে যাতে জনগণ সেনাবহিনীকে তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে মনে করতে শুরুনা করে। কিন্তু সব ক্ষেত্রে সেই সরকার সুষ্ঠভাবে অগ্রসর হতে পারেনি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ষড়যন্ত্রকারীরা সেনাবাহিনীকে জনগণের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাড় করিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। বিডিআর বিদ্রোহীরা সেই সুযোগটুকু প্রথম দিকের কয়েক ঘন্টা ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছিল। তারা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এমন সব বক্তব্য দিতে শুরু করেছিল যে, মিডিয়া একতরফাভাবে সেগুলো প্রচারও করে যাচ্ছে। তখন অবশ্য অপর পক্ষের ভাষ্য নেয়ার মতো কোনো সুযোগ ছিল না। ফলে হত্যাকারীরা কিছুটা সময় কিচুই অন্ধকারে রাখতে পেরেছিল। তখন মিডিয়ার লোকেরা বুঝে উঠতে পারেননি যে, ধন্দের আড়ালে ষড়যন্ত্রকারীরা দেশের কী বিরাট সর্বনাশ করে যাচ্ছে। এদিকে আবার নিপুন খেলার অংশ হিসেবে ভিন্ন আয়োজনও করা হয়েছিল। এক দিকে সমরবিদ্রোহের রাজনৈতিক সমাধানের চেষ্টা, দিকে পরিকল্পিতভাবে বিডিআর'র সমর্থনে মিছিলের আয়োজন। সব কিছুই ছিল এই পরিকল্পনার অংশ। বিডিআর’র সমর্থনে আয়োজিত মিছিলের ছদ্মাবরণে ঘাতকরা মিশে যাচ্ছিল সেই মিছিলের মধ্যে। এভাবেই পালিয়েছে প্রকৃত অপরাধীরা মিছিলের ওপর ভর করে।
বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের নিকট আড়াই লক্ষ কুয়েত প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রাণের দাবী হলো; সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উন্মোচন করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা। যাতে অদূর ভবিষ্যতে এমন অনাকাঙ্খিত ঘটনা না ঘটে। সাথে সাথে বিডিআর সদস্যদের হাতে শহীদ সেনা অফিসারদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি।
পিলখানার বিডিয়ার সদর দফতরে নিহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন
J K and Our liberation war১৯৭১


জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ
কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন
নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।