somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এতিমের প্রতি ইসলাম

২৩ শে আগস্ট, ২০০৯ রাত ১২:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এতিমের সজ্ঞা: এতিম শব্দের আভিধানিক অর্থ একক, অদ্বিতীয়, অতুলনীয়, অনুপম, বিস্ময়। মূলত অচেতন থেকে এতিমের উৎপত্তি হয়েছে। কেননা এতিম তার হক থেকে অচেতন থাকে।
পরিভাষায় এতিম বলা হয়; বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়ার পূর্বেই পিতার মৃত্যু হওয়া। রাসূল (সাঃ) বলেন; স্বপ্নদোষ তথা বালেগ হয়ে গেলে আর কেউ এতিম থাকে না। বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়ার পূর্বে মাতার মৃত্যু হলে আরবদের পরিভাষায় তাকে লতীম বলে, আর মাতা-পিতা উভয় মৃত্যুবরণ করলে তাকে কাতী’ বলে। আর কন্যা সন্তানকে এতিম (এতীমাহ) বলা হবে যতদিন তার বিয়ে না হবে। বিয়ে হয়ে গেলে তাকে আর এতিম বলা যাবে না।

ইসলামে এতিমের তত্ত্বাবধানের ফযীলত: ইসলাম এতিমের হক আদায়ের ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেছে। বিশেষ করে বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ১০টি হকের প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে;

১. এতিমের মাল অন্যদের জন্য স্পর্শ করা নিষিদ্ধ:

আল্লাহ বলেন; যারা অন্যায়ভাবে এতিমের ধন-সম্পত্তি গ্রাস করে, নিশ্চয় তারা স্বীয় উদরে অগ্নি ব্যতীত কিছুই ভক্ষণ করে না এবং সত্বরই তারা অগ্নি শিখায় উপনীত হবে। (সূরা নিসা: ১০)

২. কঠোরতা বা জোরকরা নিষিদ্ধ:
পাওনা আদায়ে অধিকার না থাকা সত্ত্বেও জোরপূর্বক নিজের আয়ত্বে রাখাকে আরবী ভাষায় ক্বাহ্র বলে। মহান আল্লাহ এতিমের সাথে এই ক্বাহ্র বাক্যটি ব্যয় করতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ বলেন; অতএব, তুমি এতিমের প্রতি কঠোর হয়ো না। (সূরা জুহা: ৯)

৩. মর্যাদার অধিকার:
করম বলা হয় কোন প্রকার বিনিময় ছাড়া কাউকে কিছু দেয়া। আল্লাহ বলেন; না কখনই নয়। তোমরা এতিমদেরকে করম তথা সম্মান কর না। (সূরা ফাজর: ১৭)

৪. রূঢ়তা ও দুর্ব্যবহার নিষিদ্ধ:
আল্লাহ বলেন; সে তো ঐ ব্যক্তি, যে পিতৃহীনকে রূঢ়ভাবে তাড়িয়ে দেয়। (সূরা মাউন: ২)

৫. খাদ্যের অধিকার: আল্লাহ বলেন; আহার্যের প্রতি আসক্তি থাকা সত্ত্বেও তারা অভাবগ্রস্ত ও এতিম ও বন্দীকে আহার্য দান করে না। (সূরা দাহ্র: ৮)

৬. আশ্রয়দানের অধিকার:
আল্লাহ বলেন; তিনি কি তোমাকে পিতৃহীন অবস্থায় পাননি, অতপর তোমাকে আশ্রয় দান করেন নি? (সূরা জুহা: ৬)

৭. বয়ঃপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত উত্তরাধিকার সংরক্ষণ:
আল্লাহ বলেন; আর ঐ প্রাচীরটি- ওটা ছিল নগরবাসী দুই পিতৃহীন কিশোরের, এর নিুদেশে আছে তাদের গুপ্তধন এবং তাদের পিতা ছিল সৎ-কর্মপরায়ণ। সুতরাং তোমার প্রতিপালক দয়াপরবশ হয়ে ইচ্ছা করলেন যে, তারা বয়ঃপ্রাপ্ত হোক এবং তারা তাদের ধন ভান্ডার উদ্ধার করুক। (সূরা কাহ্ফ: ৮২)

৮. ইহসানের অধিকার: ইহসান অর্থ ভাল কাজ করাকে বুঝায়, যা ইন’আম তথা পুরস্কার অপেক্ষা ব্যাপক। আর ইহসান, আদল তথা ইনসাফের উপরও অগ্রাধিকার রাখে। বলা হয় ইনসাফ হলো যে পরিমাণ গ্রহণ করা হয়, সে পরিমাণ ফিরেয়ে দেয়া। পক্ষান্তরে ইহসান হচ্ছে বেশী দিয়ে কম গ্রহণ করা। তাই বলা হয় ইনসাফ করা ওয়াজিব। আর ইহসান নফল হলেও এতে সাওয়াব রয়েছে বেশী।

৯. ইনসাফের অধিকার:
আল্লাহ বলেন; এবং পিতৃহীনদের প্রতি সুবিচার প্রতিষ্ঠা কর। (সূরা নিসা: ১২৭)

১০. ফাই'র অধিকার:
ফাই শব্দের আভিধানিক অর্থ প্রত্যাবর্তন করা। ফুক্বাহাদের নিকট ফাই হলো কাফেরদের যে মাল যুদ্ধ ছাড়া হস্তগত হয়। যেমন খেরাজ, জেযিয়া। এই মালে সকল মুসলমানের অধিকার থাকে। আর এর থেকে এক পঞ্চমাংশ বের করা হয়। আর যে মাল যুদ্ধের পরে অর্জিত হয় তাকে মালে গনীমত বলে। আবার কেউ কেউ ইমামের (খলীফার) (অংশ) ভাগকে মালে ফাই বলেছেন। মোট কথা হলো মুসলমানদের ঘর হতে সংগৃহীত মালই মালে ফাই। এই মর্মে আল্লাহ বলেন; আল্লাহ এই জনপদবাসীদের নিকট হতে তাঁর রাসূল (সাঃ) কে যা কিছু দিয়েছেন, তা আল্লাহর, তাঁর রাসূল (সাঃ)’র এবং রাসূলের স্বজনগণের এবং এতিমদের, অভাবগ্রস্ত ও পথচারীদের, (সূরা হাশর: ৭)

আসুন এবার এতিমের ব্যাপারে যে নবী এতিম হয়েই জন্ম নিলেন, তিনি তাদের সম্পর্কে কি বলেন;
নিশ্চয় রাসূল (সাঃ) এতিমদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু ছিলেন। তিনি বলেন; আমি এবং এতিমের জিম্মাদার বা অভিভাবক জান্নাতে এভাবে থাকবো। তখন তিনি তর্জনী এবং মধ্যমা আঙ্গুল সামান্য ফাঁক করে দেখান।
একদা জনৈক ব্যক্তি রাসূল (সাঃ)'র নিকট অভিযোগ করলো হে আল্লাহর রাসূল! আমার হৃদয় অত্যন্ত পাষাণ হয়ে গেছে। আল্লাহর রাসূল বললেন; এতিমের মাথায় হাত রাখ, মিসকীনদের আহার করাও। এতে অনেক পূণ্য রয়েছে। প্রতিটি চুলের বিনিময় নেকী দেয়া হবে। আবু উমামা হতে বর্ণিত; রাসূল (সাঃ) বলেন; যে ব্যক্তি এতিমের মাথায় হাত রাখবে আল্লাহর সন্তুষ্টের উদ্দেশ্যে, তার বিনিময় আল্লাহ প্রতিটি চুলের বদলায় নেকী দান করবেন।
রাসূলের এসব বর্ণনার কারণে দেখা যায় সাহাবাগণ, তাবেঈন, তাবে’ তাবেঈনগণ তাঁরা প্রত্যেকে প্রতিযোগিত করতেন এতিম লালন পালন করার জন্য।
তা ছাড়া আমি আরব রাষ্ট্রগুলো প্রত্যক্ষ করেছি যে, এসব দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে এতিমদের লালন পালনের ব্যবস্থা রয়েছে, এতে দেশের ধনী লোকেরাও অংশগ্রহণ করছে।

এতিমের প্রতি ইসলাম
১. ইসলামী সমাজ এমন একটি সমাজ, যে সমাজে পরস্পর সহানুভূতিশীল ও বন্ধুভাবাপন্ন স¤প্রীতি বর্তমান থাকে। আল্লাহ বলেন; মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল; তাঁর সহচরগণ কাফিরদের প্রতি কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল; (সূরা ফাত্হ: ২৯) আল্লাহর রাসূল মুমিনদের গুণ বর্ণনা করেন এভাবে যে, সমস্ত মুমিনগণ একটি শরীরের মত। রাসূল (সাঃ) বলেন; মুমিনগণ পরস্পর দয়া ও পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং ভালবাসার দিক হতে একটি শরীরের মত। যদি শরীরের কোন অঙ্গে আঘাত লাগে সমস্ত শরীর ব্যথায় কাতরায়। এই হাদীস স্পষ্ট প্রমাণ করে যে এতিমদেরকে দয়া মায়া মমতা ভালবাসা দিয়ে তাদেরকে আপন করে নিতে হবে।

২. অবশ্য উত্তম কাজের জন্য উত্তম পুরস্কার (জান্নাত) ব্যতীত আর কি হতে পারে?
এই মর্মে আল্লাহ তা'আলা বলেন; উত্তম কাজের জন্য প্রতিদান উত্তম পুরস্কার হবে। (সূরা আর রাহমান: ৬০) অর্থাৎ যদি কোন ব্যক্তি কারো সাথে সদাচরণ করে তাহলে আল্লাহ উত্তম বদলা দিয়ে দিবেন।
এতিমের লালন পালন করা যেন নিজের সন্তানের লালন পালন করার মত। কেননা আল্লাহ না করুন নিজের সন্তান এতিম হলে তখন অন্যরা এই এতিম সন্তানটি লালন পালন করবে। পক্ষান্তরে নিজে অন্য সন্তানের খুঁজ না নিলে, কেউ নিজের সন্তানের খুঁজ-খবর নিবে না, এটাই রীতি। প্রবাদ রয়েছে; যেমন কর্ম তেমন ফল।

৩. ইসলামী সমাজ পরস্পর সহযোগিতার শিক্ষা দেয়।
ইসলাম উৎসাহ প্রদান করেছে, একে অন্যের সুখে-দুঃখে শামিল হওয়ার জন্য। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন রাসূল (সাঃ)’কে কেউ জিজ্ঞাস করলো যে, উত্তম আমল কোনটি? রাসূল (সাঃ) বললেন; তুমি তোমার মুসলিম ভাইয়ের আনন্দে শরীক হও, তার ঋণ পরিশোধ কর, তাকে খানা খাওয়াও। রাসূল (সাঃ) আরো বলেন, যে ব্যক্তি অন্যের প্রয়োজনে এগিয়ে আসবে, আল্লাহ ও তার প্রয়োজনের সময় এগিয়ে আসবেন। রাসূল (সাঃ) আরো বলেন; আল্লাহর নিকট ঐ ব্যক্তি প্রিয়, যে মানুষের উপকার করে। উপরোক্ত হাদীস থেকে স্পষ্ট বুঝা গেল যে, এতিমের লালন-পালন এটি একটি মহত কাজ।
আল্লাহ আমাদের সকল এতিমের লালন-পালন করে চির শান্তি জান্নাতের নীড়ে বসবাস করা সুযোগ করে দিন। আমীন

সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০০৯ রাত ১:০২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×