somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফুলির আকাশ

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অল্প অল্প গল্প: “ফুলির আকাশ”

ঝনঝন করে শব্দ হল। শব্দটা প্রথমে জোরে, তারপর একটু আস্তে, তারপর আরেকটু আস্তে, তারপর আরো একটু আস্তে ... এভাবে মিলেয়ে যেতে পারতো কিন্তু তার আগেই ঝনাত করে শব্দটা শেষ হয়ে গেল। কেউ একজন স্টিলের বাটিটা চাপা দিয়ে ধরেছে।

টেবিল থেকে বাটিটা কিভাবে পড়লো কে জানে? তবে ঝনাত করে শব্দটা থেমে যাওয়ায় এখন ঝড়ের পূর্বাবাস পাওয়া যাচ্ছে।

- এই ফুলি, ফুলি।

গৃহকর্ত্রীর চিকন ধারালো গলা শোনা যাচ্ছে। এই গলার ধার ধারালো ছুরির চাইতে কোন অংশে কম না। ফুলি এই ধারালো গলাকে খুব ভয় পায়। এর ধারে তার চৌদ্দ পুরুষ প্রতিনিয়ত কুচিকুচি হচ্ছে। চড়-থাপ্পর কিংবা গরম খুন্তির বাড়ির ব্যথা সে ভুলতে পারে কিন্তু যখন তার বাপ-মা তুলে গালাগাল দেয় তখন আর সে সইতে পারে না। মেম সাহেবের মুখের উপর কিছু কইতে পারে না, শুধু নিরবে চোখের পানি ফেলে।

ফুলির বয়স বেশি না। কৈশোরের শেষ সীমার কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছে। বাপ-মা থাকে গাঁয়ে। ছয় ভাই-বোনের সংসারে দুবেলা ঠিকমত খাবার জুটতো না। গেল বছর চোখের পানি নাকের পানি এক করে সেই বাপ-মাকে ছেড়ে তাকে এখানে আসতে হয়েছে। গাঁয়ে থাকতে বাপ-মার প্রতি রাজ্যর অভিযোগ অনুযোগ থাকলেও এখন তাদের জন্যই তার মন পোড়ে। তাদের নামে কেউ কিছু কইলে সে সইতে পারে না, চোখ দিয়ে দরদর করে পানি পড়তে থাকে।

- জি মেমসাব।
দুপুরের খাবার শেষে সব কিছু গুছিয়ে বারান্দার মেঝেতে একটু গা এলিয়ে দিয়েছিল, ফুলি। সারাদিনে ঐ অতটুকুই তার অবসর। এর মাঝে আবার কোন উপদ্রোব এসে হাজির হল কে জানে।
- বলি তোর কি জ্ঞান বুদ্ধি কোন দিনই হবে না? তোর বাপ-মা তোরে ...... .... । বটিটা কেউ এ ভাবে রাখে?
এই বলে ফুলির গালে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে মেমসাব হন হন করে চলে গেলেন। হয়তো বাটিটা তার হাতে লেগেই পড়েছে।

ফুলি বটি গুছিয়ে রেখে আবার বারান্দায় চলে এলো। তার কেবলই বাপ-মায়ের কথা মনে হতে থাকে। বারান্দার গ্রিলের ফাঁক গলে অন্য বাড়িগুলোর ছাদ পেরিরে একটুকরো আকাশ দেখা যায়। গাঁয়ে কত বড় আকাশ দেখা যেতো!

ফুলি সেথায় সূর্য উঠার আগেই ঘুম থেকে উঠতো। যে কটা পান্তা ভাত থাকতো তা মা সবাইকে ভাগ করে দিতো। সাথে লবন মরিচ আর কপাল ভালো থাকলে পিয়াজ। কি যে অমৃত ছিল সেই খাবার! মনে হতো সব খেয়ে ফেলি। কিন্তু তা তো হবার নয়, অন্য ভাই বোন আছে না? তারপর কোথায় কোথায় যে ও চলে যেতো তার হিসেব থাকতো না। কখনো ওপাড়ার সালমার সাথে কুতকুত খেলা, কখনো রাস্তার ধারের বরই গাছতে বরই পেড়ে খাওয়া, আবার কখনো পুকুরে ঐ পাড়ে বেত ঝাড় থেকে কাঁটার আঁচড় খেয়েও বেতুইন পাড়া, অথবা পুকুরে ডুব সাঁতারের খেলা। এত কিছু করার পর রাজ্যের ক্ষিদা লাগতো। বাড়িতে আসলে মা বাকার সাথে সাথে কি যে মাইর দিতো! মনে হতো মার বুঝি কোন মায়া দয়া নাই। তবু রাতে মার ঘামে ভেজা গায়ের সাথে লেপটে ঘুমাতে কি যে ভালো লাগতো। আজ কত দিন মার গায়ের গন্ধ পায় না ফুলি। কত দিন বাবার মুখটা দেখে না! ভাই-বোনগুলো কেমন আছে কে জানে?

এই শহরে এসে তার আকাশটা কতই না ছোট হয়ে গেছে। ছাদ পেরিয়ে ঐ এক টুকরো আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ফুলির চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। টপ টপ করে বৃষ্টির ফোটা পড়ে। ছাদ পেরুনো ঐ আকাশ থেকে নয়। ফুলির চোখের ভেতরে যে ছোট্ট আকাশ আছে, সেখানে কখন যে মেঘ করেছে তা ফুলি বুঝতেই পারে না। এই নোনা জলের বৃষ্টি বুঝি কেউ কখনো দেখবে না।

ওদিকে আবার মেম সাহেবের গলা শুনা যাচ্ছে।
- এই ফুলি, ফুলি।

#আবদুল্লাহ আল মামুন ..০৪-১০-২০১৮।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ১০:৪৯
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×