somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের সময়ের প্রথম পাতায় বিজ্ঞাপন এবং কামাল লোহানী

২১ শে জুন, ২০০৮ সকাল ১০:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১১মে আমাদের সময়ের প্রথম পাতা জুড়ে বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়। এতে দেশে-বিদেশে পাঠক-সাংবাদিক প্রতিক্রিয়া জানায়। দেশের স্বনামধন্য সাংবাদিক কামাল লোহানী ১৭ জুন এ প্রতিক্রিয়া আমাদের সময়ে লিখেন। সামহোয়ার ব্লগে তার প্রতিক্রিয়া একজন ব্লগার (নাম মনে করতে পারছি না) পোস্ট করেন। আজ ২১ জুন কামাল লোহানীর লেখার প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সুদূর সিডনী আকিদুল ইসলাম তার প্রতিক্রিয়া জানান। আমি এর সঙ্গে একমত। সবার জন্য তা আবার পোস্ট করা হলো।


নতুন ধারার প্রবর্তকরা চিরকালই উপেক্ষিত

আকিদুল ইসলাম, সিডনি থেকে: গত ১৭ জুন আমাদের সময়ে দেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক কামাল লোহানীর লেখা ‘পরিবর্তন মানে যা ইচ্ছে তা নয়’ পড়ে আমার মনে হয়েছে, এই প্রবীণ সংবাদকর্মী একুশ শতকের আলোকিত সময়ের কলার চেপে ধরে আড়াই হাজার বছর পেছনে টেনে নিয়ে যেতে চেয়েছেন। এথেন্সের এক অন্ধকার বিচার কে নতুন ধারার প্রবক্তা সক্রেটিসকে যে পাঁচশজন বিচারক বিচার করতে বসেছিলেন তাদের প্রাচীন প্রথার কণ্ঠস্বরটিই আমি শুনতে পেয়েছি কামাল লোহানীর কণ্ঠে। রোমানের যে ইহুদি পুরোহিতরা নতুন কথা শোনানোর অপরাধে হত্যা করেছিল যিশুখ্রিস্টকে, তাদের ভাষায়ই কথা বলেছেন আমাদের প্রিয় সাংবাদিক। পণ্ডিত কোপার্নিকাসের মতবাদ প্রচারক ব্র“নো, মহাকবি বায়রন, রোমান্টিক দান্তে, শিল্পী পল গগ্যাঁ আর দুঃসাহসী গ্যালিলিওকে দেশত্যাগ করতে বাধ্য করেছিলেন যেসব প্রাচীনবাদী পোপ আর বিচারক তাদের মেধাহীন আক্রোশটিই ফুটে উঠেছে কামাল লোহানীর পুরো লেখা জুড়ে।
পৃথিবীতে যারাই নতুন ধারার প্রবর্তক তারাই নিগৃহীত হয়েছেন, উপেতি হয়েছেন। দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। কারো কারোকে হত্যাও করা হয়েছে। প্রথাবাদীরা কোনোকালেই নতুন ধারাকে স্বাগত জানাননি। বৈজ্ঞানিক, কবি, ধর্ম প্রবর্তক, সমাজ সংস্কারক যারাই নতুন কথা বলেছেন, নতুন ধারা প্রবর্তন করতে চেয়েছেন তারাই বাধা পেয়েছেন। বিতর্কিত হয়েছেন। কিš' পৃথিবীর ইতিহাস বলে, সমকালে নতুন ধারার প্রবর্তকরা নিগৃহীত হলেও ইতিহাস আলোকিত মানুষ হিসেবে তাদের কথাই মনে রেখেছে। প্রাচীনপন্থিদের কথা কেউ মনে রাখেনি।
১৪৩১ সালে জোয়ন অব আর্ককে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছিল যারা তাদের পান্ডা বোভের বিশপের লাশ ১৪৫৫ সালে কবর থেকে তুলে নর্দমায় ছুড়ে ফেলে দেয়া হয়েছিল। মৃত্যুর দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর পর গ্যালিলিও তার গতিতত্ত্বের স্বীকৃতি পান এবং সান্টাক্রসে তার স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়। অথচ জীবিতকালে এই গতিতত্ত্ব প্রচারের জন্যে আট বছর তাকে কারাগারে আটকে রাখা হয়। শেষ পাঁচ বছর তিনি ছিলেন অন্ধ।
প্রাচীনবাদীদের পুরো জগতই থাকে অন্ধকারে ভরা। তাদের মগজে আঁধার, বুকে আঁধার। আমাদের সমাজ প্রথাবাদী মানুষে ভরা। সেখানে কেউ একটু প্রথার বাইরে গেলেই অতীতবাদীরা হইচই করে ওঠেন। তারা সবসময়ই যাপিত জীবনের চারপাশে একটি বৃত্ত তৈরি করে নেন। সেই বৃত্ত থেকে যেমন নিজেরা বেরুতে চান না, তেমনি অন্যকেও বেরুতে দেন না।
গত চার পাঁচ দশক ধরে কামাল লোহানী সংবাদপত্রের প্রথাগত একটি বৃত্তের ভেতরেই বাস করছেন। উনিশ শতকের সংবাদপত্রের মুখস্ত কিছু নিয়ম-নীতি এখনো যে তিনি বুকে ধারণ করে রেখেছেন তা তার লেখা থেকেই বোঝা যায়। গত পাঁচ দশকে সংবাদপত্রের সংজ্ঞাই যে পাল্টে গেছে সেটাই তিনি টের পাননি। তার অগোচরেই বদলে গেছে মিডিয়া ভুবন।
মিডিয়া এখন ‘দ্বিতীয় ঈশ্বর’। পৃথিবীর রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, যুদ্ধ, শান্তি সব কিছুই এখন মিডিয়ার করতলে। পৃথিবীর অনেক বড় বড় যুদ্ধকৌশল যেমন পাল্টে দিচ্ছে মিডিয়া, তেমনি রাষ্ট্র পরিচালনার নীতিও নির্ধারণ করে দিচ্ছে। আর মিডিয়া ভুবনের সবচেয়ে শক্তিশালী আর উজ্জ্বল তারকা যেহেতু সংবাদপত্র তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই এখন সংবাদপত্র তার অতীতের প্রথাগত ইমেজ ভেঙেছে। এই ইমেজ ভাঙার বৈপবিক উৎসবে যদি কেউ যোগ দিতে না পারেন সে ব্যর্থতা তার নিজের। কামাল লোহানী নিজের দৈন্যতাকে অন্যের কাঁধে চাপানোর চেষ্টা করেছেন।
দেশের প্রবীণ সাংবাদিক কামাল লোহানী অতীতের কয়েকজন সম্পাদকের উদাহরণ টেনে বলেছেন, তারা ব্যববস্থাপনা ‘দেখভাল’ করতেন না। আজকালকার সম্পাদকরা নিজেরাই ব্যবস্থাপনার বিষয়টি দেখছেন বলে হাহাকার করে উঠেছেন তিনি। আমি স্বীকার করছি, তিনি আমাদের দেশের একজন খ্যাতিমান সাংবাদিক কিš' গত চার দশকে যে গোটা পৃথিবীর চেহারাটাই পাল্টে গেছে সেটিই তিনি বুঝতে পারেননি। আমি তাকে আমন্ত্রণ জানাই অস্ট্রেলিয়াতেÑ এসে দেখে যান, ব্যক্তি মালিকানার অফিসগুলোতে মালিক অফিসে এসেই প্রথমে ঘুরে আসেন টয়লেটে। বাথরুমে। সাবান, টিসু, তোয়ালে ঠিকমতো আছে কিনা দেখে নেন। না থাকলে নিজেই সেগুলো গুছিয়ে রাখেন। স্টাফদের টেবিল চেয়ারগুলোও ঠিকমতো সাজিয়ে রাখেন তিনি। এখানে পোস্ট অফিসে ঢুকলে চোখ কপালে উঠে যাবে আমার প্রিয় সাংবাদিক কামাল লোহানীর। কসমেটিকস থেকে শুরু করে কনডম পর্যন্ত বিক্রি করছে পোস্ট অফিসগুলো। ফুয়েল পাম্পে বিক্রি হচ্ছে মূল্যবান ল্যাপটপ, এটি কি ভাবতে পারেন আমাদের দেশের প্রবীণ এই সাংবাদিক? আর সংবাদপত্রগুলো সংবাদপত্রের ধারণাই পাল্টে দিয়েছে। এই পরিবর্তনকে কেউ ধারণ করতে পারেন, কেউ পারেন না।
নাঈমুল ইসলাম খান সেই পরিবর্তনকে ধারণ করেছেন। উনিশ শতকের সংবাদপত্রের প্রচলিত প্রথাকে তিনি ভেঙে দিয়েছেন। একজন সম্পাদক হয়ে কেবলমাত্র অফিসের ঠাণ্ডা রুমে বসে না থেকে তিনি গোলটেবিল বৈঠকের সঞ্চালক হচ্ছেন, টিভি-সিনেমার তারকাদের সঙ্গে আড্ডায় মেতে উঠছেন, টক-শোতে তর্ক-বিতর্কে জড়িত হচ্ছেন, সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন বণ্টনের অনিয়মের প্রতিবাদ করছেন, সরকার ও বিরোধী দলগুলোর অসঙ্গতি আঙুল তুলে দেখিয়ে দিচ্ছেন, সংবাদপত্রের নিয়মনীতি ভেঙে কলাম ছাপছেন প্রথম পাতায়।
একথা কে না স্বীকার করবেন নব্বই দশকে নাঈমুল ইসলাম খানের হাত ধরেই আমাদের ভূখণ্ডে আধুনিক সংবাদপত্রের যাত্রা শুরু হয়েছিল। আজকের ‘প্রথম আলো’ আর ‘ভোরের কাগজ’-এর নীতিনির্ধারকদের অনেকের অভিষেকই হয়েছিল নাঈমুল ইসলাম খানের হাত স্পর্শ করে। সংবাদপত্রের প্রথা ভাঙার এই রাজপুত্রকে যদি আমরা অভিনন্দন জানাতে না পারি তাহলে আমাদের মনের নিচতাই প্রকাশ পাবে।
নাঈমুল ইসলাম খান অত্যন্ত বিনয় করে বলেছেন, ‘দৈনিক আমাদের সময় বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় নতুন কিছু প্রবর্তন করেছে কিনা এটা নিয়ে আমি এখন ভাববার মতো সময়ই পাবো না। আরো ১০ বছর যাক তখন অনেকে মিলে বিচার-বিশেষণ করবো এদেশের সাংবাদিকতায় আমাদের সময়-এর কোনো উলেখযোগ্য অবদান আছে কিনা। এখনো তো আমরা কাজ করছি, সেটাই করি।’
এই প্রশান্ত মহাসাগরের পার থেকে আমরাও বলি, কাজ করতে দিন। ইতিহাসই নির্ধারণ করে দেবে কার স্থান কোথায়।

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×