somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সংবাপত্রে ট্রেড ইউনিয়ন: পুঁজিপতির মালিকানায় শ্রমজীবীর প্রতিকৃতি (র্পব- ০২)

২৩ শে মার্চ, ২০১০ রাত ১১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রথম পর্ব এখানে

ফলাফল উপস্থাপন ও বিশ্লেষণ
আধেয় বিশ্লেষণ


’সংবাদপত্রে ট্রেড ইউনিয়ন বিষয়ক সংবাদ উপস্থাপন’ শীর্ষক আলোচ্য গবেষণাটি সম্পাদনের েেত্র আধেয় বিশ্লেষণের পর নির্বাচিত বিষয়ের ভিত্তিতে সংবাদপত্রগুলো হতে আমরা মোট ২৪০টি সংবাদ উল্লেখিত বিষয়ের উপর পেয়েছি। এর মধ্যে ১৯২টি ছিল বাংলা সংবাদপত্রে আর ৪৮টি ছিল ইংরেজি দৈনিকে। সংবাদপত্রে ইস্যুভিত্তিক মোট কভারেজের দিকে ল্য করলে আমরা দেখতে পারি সার্বিক ট্রেড ইউনিয়ন ইস্যুতে মোট ১৬৩টি সংবাদ এসেছে। এর মধ্যে বাংলা সংবাদপত্রে ১৫০টি ও ইংরেজি সংবাদপত্রে ১৩টি সংবাদ এসেছে। ইপিজেড ইস্যুতে মোট ৫৬টি সংবাদ এসেছে। এর মধ্যে বাংলা সংবাদপত্রে ২২টি ও ইংরেজি সংবাদপত্রে ৩৪টি সংবাদ এসেছে। গার্মেন্টস্ ইস্যুতে মোট ১৫টি সংবাদ এসেছে। এর মধ্যে বাংলা সংবাদপত্রে ১৪টি ও ইংরেজি সংবাদপত্রে ১টি সংবাদ এসেছে। ব্যাংকিং ইস্যুতে মোট ৬টি সংবাদ এসেছে। এর মধ্যে বাংলা সংবাদপত্রে ৬টি ও ইংরেজি সংবাদপত্রে কোনো সংবাদ আসেনি। এখানে একটি বিষয় লণীয় যে অন্য তিনটি ইস্যুতে বাংলা সংবাদপত্র বেশি কভারেজ দিলেও ইপিজেড ইস্যুতে ইংরেজি সংবাদপত্রগুলো বেশি কভারেজ দিয়েছে। এর কারণ হচ্ছে ইপিজেড ইস্যুটা আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পরিণত হওয়ায় ইংরেজি পত্রিকা কভারেজ বেশি দিয়েছে। এছাড়াও নমুনাকৃত সময়ে ইপিজেড সম্পর্কে সংবাদ বেশি এসেছে। এর কারণ হচ্ছে বিএনপি নেতৃত্বে চারদলীয় জোট সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কারণে ইডপিজেডে সীমিত আকারে ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ দিয়েছে। বিষয়টি দেশের জন্য বা শ্রমিকদের জন্য কতখানি লাভবান তা নিয়ে সংবাদপত্র বিভিন্ন ধরনের সংবাদ প্রকাশ করেছে।

গুণগত বিশ্লেষণ
সার্বিক ট্রেড ইউনিয়ন অবস্থা: ১৭ জাুনয়ারি দৈনিক যুগান্তরে ‘লোকসানি সরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা যাচ্ছে না ট্রেড ইউনিয়নের বিরোধিতায়- আইএমএফকে অর্থমন্ত্রী’ শিরোনামে দুই কলামের একটি প্রতিবেদন ছাপানো হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক হস্ট কোহেলারের কাছে পাঠানো দেশের ‘মেমোরেন্ডাম অব ইকোনমিক অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল পলিসিস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান মন্তব্য করেন, ট্রেড ইউনিয়নের তীব্র বিরোধিতার কারণে দেশে লোকসানি সরকারি প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শাখা বন্ধ করা যাচ্ছে না। এর ফলে ওই কার্যক্রম চলছে ধীরগতিতে। প্রতিবেদনে আরো যে সব বিষয় উল্লেখ করা হয় সেগুলোর মধ্যেÑ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মন্দা ঋণ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অদতা, ঘাটতি বাজেট কমানো, স্বাধীন দূনীর্তি কমিশন, এডিপির সঠিক বাস্তবায়ন, মুদ্রানীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভসহ অন্যান্য বিষয়ের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু শিরোনাম হিসেবে ট্রেড ইউনিয়ন সম্পর্কে কথা তুলে ধরা হয়েছে। ৭ মার্চ দি ইন্ডিপেনডেন্ট দঞৎধফব টহরড়হরংস ফবংঃৎড়ুরহম নঁংরহবংং রহ ইধহমষধফবংয’ শিরোনামে বলে, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টু জাপান সফর করলে সেখানে সরকারি প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি একথা বলেন।

বাংলাদেশে যে কোনো প্রতিষ্ঠান বা শিল্প কল-কারখানা ধ্বংসের কারণ হিসেবে ট্রেড ইউনিয়নের কথা বলা একটা গঁৎবাঁধা বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেমন: আদমজী, ২০০২ সালের জুন মাসে চারদলীয় জোট সরকার লোকসানের কারণে আদমজী বন্ধ ঘোষণা করে। এখন আমরা যদি এর লোকসানের দিকে তাকায়, তাহলে দেখতে পাবো এখানে লোকসানের প্রধান কারণ কিন্তু ট্রেড ইউনিয়ন নয়। বরং প্রধান কারণ ছিল তাহলো পাট ক্রয়ে দূর্নীতি। সারাদেশে আদমজীর ৩৩টি পাটক্রয় কেন্দ্র ছিল। দেখা যেতো পাটের দাম যখন ৩/৪ শ’ টাকা অর্থাৎ উৎপাদনের পরপরই পাট যখন কৃষকের হাতে থকত তখন আদমজীর কর্মকর্তারা তা ক্রয় করতেন। সে সময় মিলের কাছে বিক্রি করতে না পেরে চাষীরা টাট বিক্রির বিকল্প উপায় খুঁজতো। তখন দেখা যেতো আদমজীর অফিসারের আত্মীয়-স্বজনরা, এমনকি পারচেজ অফিসাররা বেনামিতে প্রচুর পাট ক্রয় করে রাখতেন। মৌসুমের অনেকদিন পর যখন পাটের মণ ৫/৬ শত টাকায় উঠতো তখন আদমজীর ক্রয় বিভাগ পাট ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিতেন। প্রতি মণে পাটে তখন মিলে অতিরিক্ত খরচ হতো ২/৩ শত টাকা। এই ক্রয় প্রক্রিয়ায় আদমজীর ক্রয় কর্মকর্তারা লাখ লাখ টাকা আয় করতেন। (পারভেজ, ২০০৩: ১৪) ফলে আদমজীতে অনেক লোকসান হয়। বিষয়টি নিয়ে সংবাদপত্রে তেমনভাবে ফুটে উঠেনি। তাই আদমজীর লোকসানের পরিমাণ ১২০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। তাই যে কোনো কল-কারখানা লোকসান বা তির কারণ ট্রেড ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ নয়। এখানে সমাজের উপর শ্রেণীর কর্মকর্তাদের দূর্নীতি প্রধান। কিন্তু তাদের কথা না সংবাদপত্রে না এসে নিচের শ্রেণী বলে কথিত শ্রমিক নেতাদের কথা আসে। হয়তো তারা এর জন্য কিছুটা দায়ী। কিন্তু তাদের ঘাড়ে সব দোষ চাপিয়ে সংবাদপত্র আসলে এলিট শ্রেণীকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে।

গার্মেন্টস: গণমাধ্যম সমাজের নিু শ্রেণী হিসেবে স্বীকৃত শ্রমিকদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুকে যথাযথ ট্রিটমেন্ট দেয় না। একটা দায়সারাভাবে তারা ইস্যুটাকে বর্ণনা করে। যেমন: গার্মেন্টস নারী শ্রমিকরা মাতৃকালীন ছুটি পাচ্ছে না। অথচ এটা তাদের একটা অধিকার। বাংলাদেশের শ্রম আইন অনুযায়ী নারী কর্মীরা তিন মাস মাতৃকালীন ছুটি পাবে। এখানে তাদের পূর্ণ বেতন দেয়া হবে। অথচ গার্মেন্টস শিল্পে তা মানা হচ্ছে না। ১১ জানুয়ারি দৈনিক যুগান্তরে ‘গার্মেন্টেসে মাতৃকালীন ছুটির অভাবে শ্রমিকরা চাকুরিচ্যুত হচ্ছেন’ শিরোনামে এক কলামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের গার্মেন্টস শিল্পের লাখ লাখ নারী শ্রমিকের মাতৃকালীন ছুটি না থাকায় চাকরির স্থায়িত্ব নষ্ট হচ্ছে। ছুটির অভাবে অনেকে কর্মচ্যুত হয়ে পড়ছেন। এই ছুটির অভাবে লংঘিত হচ্ছে মানবাধিকার তথা শ্রম অধিকার। এর বেশি প্রতিবেদনে তেমন কিছু বলা হয়নি। এর দৈর্ঘ্য ছিল মাত্র ৩.৫ ইঞ্চি। অথচ বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানী বা তথ্যমূলক প্রতিবেদন আশা উচিত ছিল। কারণ আমাদের দেশে বৈদেশিক মুদ্রার অনেকটা আসে এই গার্মেন্টস খাত থেকে। আবার এই শিল্পের ৮০ভাগ শ্রমিকই হচ্ছে নারী। সুতরাং তাদের মাতৃকালীন ছুটি যে অধিকার তা নিয়ে সংবাদপত্রের তেমন মাথাব্যাথা নেই। আবার ২৯ জানুয়ারি যুগান্তরে ‘মুক্তাঙ্গনে গার্মেন্টস শ্রমিক সমাবেশ’ এক কলামের শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, গার্মেন্টস শ্রমিকরা মাতৃকালীন ছুটির দাবি করছে। এর দৈর্ঘ্যও মাত্র তিন ইঞ্চি। কিন্তু শিরোনামে তা বলা হয়নি। অথচ তার উল্লেখ প্রয়োজন ছিল। কারণ অনেক পাঠক ব্যস্ততার কারণে পুরো প্রতিবেদন না পড়ে শুধু শিরোনাম পড়ে থাকে। তার পে প্রতিবেদনের মূল বিষয় বুঝা সম্ভব নাও হতে পারে। আবার ঘটনার ট্রিটমেন্ট এতো ছোট যে বিষয়টি অনেকের চোখ এড়িয়ে যেতে পারে। তাই আমরা বলতে পারি, মিডিয়াগুলো যে নিরপেতার কথা অহরহ কপচায় এবং জনগণের পে থাকার যে দোহাই দেয় তা ঠিক নয়। মিডিয়া অতি-অবশ্যই শ্রেণীনির্ভর, মিডিয়ার অতিঅবশ্যই রাজনৈতিক ভূমিকা আছে এবং আধিপত্যশীল ধারার মিডিয়া সমাজের মতাশীল শ্রেণীর মতাদর্শকেই বহন করবে। (মামুন, ২০০৩: ৬৬)

ইপিজেড: ১ জানুয়ারি ২০০৪ ইপিজেডে ট্রেড ইউনিয়ন চালুর কথা থাকলেও সরকার প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তা বন্ধ করে দেয়। ইপিজেডগুলোতে ট্রেড ইউনিয়ন চালুর জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনেক দিন ধরে চাপ দিয়ে আসছে। সরকার যদি ইপিজেডে ট্রেড ইউনিয়ন চালু করতে ব্যর্থ হয় তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বাংলাদেশ যে জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্স (জিএসপি) সুবিধা পেয়ে থাকে তা প্রত্যাহার করার হুমকি দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে ইপিজেডের বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ট্রেড ইউনিয়নের বিরোধিতা করে বলেন, শ্রমিকদের সংগঠন করার অধিকার দেয়া হলে বাংলাদেশে অন্য সেক্টরের মতো ইপিজেডে শ্রমিক আন্দোলন গড়ে উঠবে, যাতে উৎপাদন ব্যহত হবে। বিনিয়োগকারীরা সরকারকে হুমকি দেন যে, ইপিজেডে ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার দেয়া হলে অনেকেই তাদের বিনিয়োগ প্রত্যাহার করবে। এই সংকট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ইপিজেড কর্তৃপ এবং মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরকার আলোচনা করে।

সংবাদপত্রগুলো এই সময় ইপিজেড ইস্যু নিয়ে ট্্িরটমেন্টের েেত্র নানা ধরনের কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। এখানে যারা মতাবান ও যারা কম মতাবান সংবাদপত্রে তাদের ট্রিটমেন্টের েেত্র বৈষম্য দেখা যায়। যেমন: ১ মার্চ প্রথম আলোর তিন কলাম ও ২৫ মার্চ আজকের কাগজে ৪ কলামে প্রতিবেদনে কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত কিইয়ু হিয়ং লি ইপিজেডে ট্রেড ইউনিয়ন চালুর েেত্র তাদের উদ্বেগের কথা বলা হয়। তিনি জানান এখানে বিনিয়োগের আগে উদ্যোক্তাদের আশ্বস্ত করা হয়েছিল ইপিজেড এলাকায় ট্রেড ইউনিয়ন থাকবে না। আবার ১৪ ফেব্র“য়ারি দৈনিক সংবাদে ‘ইপিজেড ও গার্মেন্টস শিল্প ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার ও শ্রম আইন বাস্তবায়নের দাবি’ এক কলামের এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন ইপিজেড ও গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিতে ট্রেড ইউনিয়ন ও শ্রম আইনের পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের দাবি করেছে। ১৫ ফেব্র“য়ারি ভোরের কাগজে ‘গার্মেন্টস শিল্পে চলছে অবাধ শোষণ ও লুণ্ঠন’ ২ কলামের শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন এক সাংবাদিক সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ বলেছেন, গার্মেন্টেস শিল্পে বিশেষত ইপিজেডে চলছে দেশি-বিদেশি পুঁজির অবাধ শোষণ ও লুণ্ঠন। রাষ্ট্রীয় সংবিধান, শ্রম ও শিল্প আইন, আইএলও কনভেনশন এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদ লঙ্ঘন ও পদদলিত করে নিষ্ঠুরভাবে শ্রমিক শ্রেণীর আইনি অধিকারগুলো কেড়ে নিয়ে এই খাতে কায়েম হয়েছে শ্রম দাসত্ব।

এখানে দেখা যাচ্ছে ট্রেড ইউনিয়ন নিয়ে দ: কোরিয়ার রাষ্ট্রদূতের উদ্বেগের কথা আমাদের দেশের সংবাদপত্র খুব গুরুত্ব সহকারে ছাপছে। পান্তরে ট্রেড ইউনিয়নের দাবিতে গার্মেন্টস শ্রমিকদের দাবি অনেকটা দায়সারাভাবে ছাপছে। প্রকৃতপে এ বিষয় নিয়ে অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন আসা উচিত ছিল। আসলে ইপিজেডে ট্রেড ইউনিয়ন কতোটা প্রয়োজনীয় বা আসলে তা চালু হওয়া উচিত কিনা? অর্থাৎ আমাদের সংবাদপত্র মতাবানদের কথা খুব গুরুত্বের সঙ্গে ছাপে। বাংলাদেশে সফরকালে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জ্যানেট স্টিল বাংলাদেশের সাংবাদিকতার প্রবণতা সম্পর্কে এক সাাৎকারে (৫ আগস্ট, ২০০৫, দৈনিক আমাদের সময়) বলেন, বাংলাদেশের সাংবাদিকতা এলিটমুখী। সাংবাদিকরা সোর্স হিসেবে সবসময় অথরিটিকে কোট করে। সাধারণ মানুষ ঘটনা সম্পর্কে কী ভাবছে তা সচারচর এদেশে সংবাদের সোর্স হিসেবে ব্যবহার করা হয় না। কেবল অফিসিয়াল, এলিট ও মতাবানদের পয়েন্ট অব ভিউ-ই সংবাদপত্রে উঠে আসে।

আবার বিরোধিতাকারী যদি মতাবান হোন তাহলে তার ট্রিটমেন্ট যথাযথভাবে দেয়া হয়। যেমন: ইপিজেডে ট্রেড ইউনিয়নের ব্যাপারে বিশ্বব্যাংকের উদ্বেগের সংবাদ ১৫ মার্চ যুগান্তরে ‘ইপিজেডে ট্রেড ইউনিয়ন: সংকট নিরসনে মাঠে নেমেছে বিশ্বব্যাংক’ শিরোনামে চার কলামের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইপিজেডে ট্রেড ইউনিয়ন চালুর ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের যে মতপার্থক্য ও দ্বন্দ্ব চলছে তা নিরসনে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ প্রতিনিধি ক্রিস্টিনা ওয়ালিস। তিনি এই সংকট নিরসনের একটি ফর্মুলা বা রোডম্যাপ প্রণয়নের কাজ শুরু করেছেন। আমাদের দেশে যে কোনো সমস্যা নিয়ে বিদেশিদের
হস্তপে নতুন কিছু নয়। তারপরও দেশে একটি শিল্পাঞ্চলে ট্রেড ইউনিয়ন চালু হবে কিনা তাতে বিশ্বব্যাংকের আগ্রহ অনেক কথার সৃষ্টি করে। কিন্তু এ নিয়ে সংবাদপত্র কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করে নাই। তাই আমরা দেখতে পাচ্ছি, সমাজের উঁচুতলার মতাবানদের পে মিডিয়া কাজ করে যাচ্ছে, হীরক রাজার মস্তিষ্ক প্রালন যন্ত্রের মতো একালের বাণিজ্যিক মিডিয়া সেই উঁচুতলার মানুষের পরে মতাদর্শ বিস্তারে নিয়োজিত। (মামুন, ২০০: ৭৫)

১ জানুয়ারি ভোরের কাগজে ট্রেড ইউনিয়ন নিয়ে সরকারের সংকট নিয়ে শংকর মৈত্রী’র ‘একদিকে মার্কিন চাপ অন্যদিকে বিনিয়োগ প্রত্যাহারের হুমকি’ এক কলামের শিরোমানে প্রতিবেদনে ইপিজেডে ট্রেড ইউনিয়ন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং ইপিজেডে বিনিয়োগকারীদের হুমকির কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ইপিজেডে ট্রেড ইউনিয়ন বাস্তবায়ন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাথাব্যাথা বা আগ্রহ কেন বা বিনিয়োগকারীরা কেন এখানে ট্রেড ইউনিয়ন চাচ্ছে না তা নিয়ে সংবাদপত্রে কোনো অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন আসেনি। যা আসা উচিত ছিল।

ব্যাংক সেক্টর: ব্যাংক সেক্টর নিয়ে ২ জানুয়ারি প্রথম আলো’ ‘ব্যাংকে ট্রেড ইউনিয়ন’ নিয়ে একটা সম্পাদকীয় ছাপে। এতে অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের উদ্ধতি দিয়ে বলা হয়, গণতান্ত্রিক অধিকার হিসেবে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক বাাংকগুলোতে ট্রেড ইউনিয়ন চলবে, কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নয়। প্রথম আলো অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে একমত প্রকাশ করে বলে, অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের মর্মের সঙ্গে দ্বিমতের অবকাশ নেই। বাংলাদেশ ব্যাংককে অবশ্যই সিবিএ কালচার থেকে উদ্ধার করতে হবে এবং আমরা আশা করি সরকার আন্তরিক হলে এটা করা সম্ভব। পরিশেষে তারা আশা প্রকাশ করে বলে, ট্রেড ইউনিয়নের নামে জবরদস্তি ও বিশৃঙ্খলা বন্ধ এবং নিয়মতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ ইউনিয়ন কার্যক্রম নিশ্চিত করতে সরকারের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। (চলমান....................)

(আলোচ্য লেখাটি রোবায়েত ফেরদৌস ও মুহাম্মদ আনোয়ারুস সালাম সম্পাদিত গণমাধ্যম বিষয়ক বই "গণমাধ্যম/শ্রেণিমাধ্যম", শ্রাবণ প্রকাশণী, ২০০৯ প্রকাশিত হয়েছে। যদি কেহ এই লেখা থেকে রেফারেন্স দিতে চান, তাহলে তাদের উক্ত বইয়ের রেফারেন্স দেয়ার জন্য অনুরোধ রহিল)

(কৃতঞ্জতা প্রকাশ: আলোচ্য লেখাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগে চতুর্থ বর্ষ এর ইন্টার্শীপ প্রোগামের আওতায় "বাংলাদেশ ইনিস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ বিলস" এ ইন্টানি করার সময় সম্পাদন করা হয়।)

৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×