somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খালিছ ভাইয়ের আত্মত্যাগ (সড়ি, বস্ত্রত্যাগ) B-) :#> :P

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ৮:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্কুলে আমার ক্লাসমেটরা বেশিরভাগই কোন না ক্লাসে ড্রপ খাওয়া । তাই তাদের সব বিষয়েই পরিপক্বতা ছিল আমার চেয়ে বেশি । তারা দল বেঁধে মারামারি করত, আবার দল বেঁধে কোন উঠতি কিশোরী কে নিয়ে রঙরসপূর্ন আড্ডা দিত । আমি নিরিহ গোবেচারা বালক, মাথায় দৃশ্য-অদৃশ্য হাতের ঠোঁয়া খাওয়াই ছিল আমার নিয়তি । এই নাদান বালকের খাতা-কলম-বই প্রায়ই সরিয়ে ফেলা হত । আর এগুলো খুজে না পেয়ে যখন কাঁদো কাঁদো হয়ে যেতাম, তখন এটা ক্লাসে ব্যাপক আনন্দের রসদ যোগাত । মাঝে মাঝে বদ গুলা আমার প্যান্ট ধরেও টান দিত । ইজ্জত কা সোওয়াল, আমি শরমে মরমে মরে যেতাম । :!> :!>

কিন্তু ক্লাস নাইনে উঠার পরই পরিস্থিতি যাদুবলে হঠাৎ বদলে যায় । ক্লাসের সবচেয়ে বদ ইবলিস গুলোও আমাকে সমীহ করা শুরু করে । ক্লাস নাইনে যে ক্যাপ্টেন হয়,সেই হয় স্কুল ক্যাপ্টেন । মাতবর টাইপের কয়েকজন ক্যাপ্টেন হওয়ার লবিং-গ্রুপিংয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলো এবং সবচেয়ে মজার ব্যাপার তারা সবাই আমারে টিফিনে সিঙারা-পিঁয়াজো খাওয়াতে লাগলো । এমনকি প্রত্যেক প্রার্থীই আমাকে ভাইস-ক্যাপ্টেন পদের নিশ্চয়তা দিলো (ক্লাস এইটে ভিসি পদে দাঁড়িয়ে আমি তামাশার খোরাক হয়েছিলাম :P )। আমিও আমার এই নতুন পাওয়া ক্ষমতা চুটিয়ে উপভোগ করছি । নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করছে, আমার এই নতুন ক্ষমতার রহস্য কি ? রহস্য আর কিছুইনা, আমার পাড়াত বড় ভাই, স্কুলের সবচেয়ে বুড়ো আদুভাই এবং এলাকার বিশিষ্ট রংবাজ খালিছ ভাই ফেল মারতে মারতে এখন আমারই ক্লাসমেট । :-B :-B

স্কুল ছুটি হওয়ার পরই খালিছ ভাই পাড়ায় তার গ্রুপ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায় । স্কুলটা আমাদের পাড়াতেই । বিকেলে খালি স্কুলে এসে বারান্দায় বসে তাস পিঠায় আর ধান্ধা করে রাতে কার বাড়ি থেকে হাস-মুরগী-কবুতর হাপ্পিস করবে । এখন ক্লাসমেট হওয়ার সুবাদে আমিও গিয়ে তাদের পাশে বসি, যদিও তাদের চার-পাঁচ বছরের ছোট হওয়ায় তেমন পাত্তা পাইনা । কিন্তু সুযোগ মিলে গেলো অচিরেই । এই বান্দর গ্রুপের এক সদস্যের দুবাই যাওয়ার ভিসা আসছে । ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে খালিছ ভাই আমাকে তাস পিঠানোর তালিম দিতে থাকে । :-B B-)

এই সুযোগে আমিও তাদের সাথে ঘনিষ্ট হতে থাকি । একটা জিনিস খেয়াল করলাম, পাড়ার প্রায় সব ভাবি-বৌদিদের সাথেই খালিছ ভাইয়ের অবাধ রঙ তামাশার লাইসেন্স আছে । মাঝে মাঝে দুয়েকটা রসালাপ আমিও শুনেছি, আমার কান গরম হওয়ার দশা । :#> :| খালিছ ভাইয়ের দলের সাথে মিশে আমার অনেক অজানা পৃথিবীর পর্দা উন্মোচন হতে থাকে । কিন্তু মুশকিল হলো, সন্ধ্যা হলেই খালিছ ভাই গার্জিয়ান গিরি শুরু করে 'যা যা বাড়ি যাগা, নাইলে চাচী চিন্তা করবো" । কিন্তু কি করে বাড়ি যাই, সারা বিকেল ধরেই প্ল্যান চলিতেছে আজ রাতে রসুই বাড়ির কবুতরের খোপে অপারেশন হবে । তারপর খালিছ ভাইয়ের বাংলো ঘরে সেই কবুতরের বাংলা ফ্রাই হবে । আমি অনিচ্ছায় বাড়ির পথে হাটা ধরি, কিন্তু মন পড়ে থাকে রসুই বাড়ির কবুতরের খোপে আর খালিছ ভাইয়ের বাংলো ঘরে । :-/ :(

এভাবেই দিন যায়, রোজ বিকালে তাস পিঠাই খালি স্কুলের বারান্দায় । স্কুলের চৌকিদার ঠান্ডু ভাই, হাতে সবসময় একটা দা নিয়ে ঘুরে বেড়ায় । এক সময় ঠান্ডু ভাই এলাকার বিখ্যাত চোর ছিলো । অনেকবার জেল খেটেছে, পরে এলাকার লোকজন বিরক্ত হয়ে তারে ধরে বেঁধে স্কুলের চৌকিদারির কাজে লাগিয়ে দেয় । চারপাশে উঁচু বেড়া দেয়া সাড়া স্কুল জুড়ে বিশাল বিশাল আম গাছ । কিন্তু গাছে একটা ঢিল দেবারও উপায় নাই, ঠান্ডু ভাই ঠিকই টের পেয়ে যায় আর হৈ হৈ রৈ রৈ করে দা হাতে নিয়ে হাজির হয় । এলাকার কিশোর-বালকদের কাছে ঠান্ডু ভাই এক জ্বলন্ত আতংকের নাম । সেই ঠান্ডু ভাইকেও আমাদের খালিছ ভাই কিভাবে যেন ম্যানেজ করে নিয়েছে । খালিছ ভাইয়ের গ্রুপ ছাড়া আর কারো বন্ধ স্কুলে ঢুকার উপায় নাই । :D B-)

বর্ষার এক বিকালে খালি স্কুলে গিয়ে দেখি বারান্দায় একা একা বসে খালিছ ভাই সিগারেট ফুকছে । গ্রুপের বাকি কেউ তখনও আসেনি । আমি গিয়ে পাশে বসলাম । আকাশের অবস্থা ভাল নয়, কালো করে আছে । হঠাৎ করে শুরু হলো ঝড়-বৃষ্টি । বৃষ্টির ছাঁচ থেকে বাঁচতে দুজনেই দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়ালাম, তাও দুজন ভিজতে লাগলাম । এবার ঝড়ের বেগ আরও বাড়লো । খালিছ ভাই হঠাৎ বলে, 'চল স্কুলের পেছনে যাই । ঐখানের গাছে বেশি আম ধরছে, কুড়ায়া নিয়ে আসি ।' আমি কইলাম, 'না খালিছ ভাই, ঠান্ডু দেখলে কুপাইলাইব' । খালিছ ভাই কয়, 'ঠান্ডু দেখবার আগেই ভাগমু । এমনিতেই ভিইজ্যা গেছি, চল্ বৃষ্টি থাকতেই কাম ডা সাইড়া ফালাই' । :-B ;)

দুরুদুরু বক্ষে খালিছ ভাইয়ের অনুগামি হওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নাই । বৃষ্টি ভিজে ভিজে স্কুলের পেছনে গেলাম । ওরে ব্বাস, ঝড়ে প্রচুর আম নিচে পড়ে রয়েছে । খালিছ ভাই তাগদা দেয়, 'দেরি করিসনা । সব আম এক জায়গায় জড়ো কর' । এত আম এক সংগে দেখে আমার চোখ ছানাবড়া, এত আম নিমু কেমনে ? ভাই কয় দেখি কি করা যায়, কিন্তু কোন উপায় বেরোয়না । এদিকে বৃষ্টি কমে গেলেই ঠান্ডু মিয়া হাজির হবে কুড়ানো আম নেয়ার জন্য । :-& :-0

হঠাৎ আমার মাথায় একটা বুদ্ধি আসলো । ভাইরে কইলাম আমার টি-শার্ট খুইলা এর ভিতরে আম নেওয়া যায় । আমার এই প্রস্তাব ভাইয়ের খুব পছন্দ হইছে, টি-শার্টের গলার দিকে একটা গিট্টু দিয়ে এটাকে ব্যাগের মত বানিয়ে ভিতরে আম ঢুকালাম । কিন্তু পনেরো-বিশটার বেশি জায়গা হলোনা । আরও প্রায় এক বস্তার মত আম পড়ে রয়েছে । খালিছ ভাই কইলো, 'তুই এইডা মাথায় নিয়া বেড়া পার হইয়া চইলা যা, আমি আইতাছি' । ভাইয়েরে কোন রকম ধরে বেড়া পার হয়ে আমি স্কুল বিল্ডিংয়ের কোনায় গিয়ে দাঁড়ালাম । আমি নিরাপদ স্থানে চলে এসেছি, ঠান্ডু আর আমার নাগাল পাবেনা । এখন দেখি খালিছ ভাই কি করে ? বিল্ডিংয়ের কোনাকে আড়াল করে দেখতে চেষ্টা করলাম । দেখি, খালিছ ভাই তার গায়ের স্যান্ডু গেন্জি নিচে নামিয়ে অ্যান্ডি'র মত পড়ে আছে । আর তার লুঙির এক দিকে গিট্টু দিয়ে আরেক দিক দিয়ে কুড়ানো আম ভরছে । খালিছ ভাইয়ের এই অভিনব বুদ্ধি দেখে আমি পুরা টাস্কিত হয়ে গেলাম । =p~ :P :P

খালিছ ভাই তার লুঙিকে বস্তার মত বানিয়ে এক লুঙি-বস্তা আম বেড়ার বাইরে ফেললো । তারপর বেড়া ডিঙিয়ে অনেক কষ্টে আমের বস্তা মাথায় তুলে দৌড়ে আসতে থাকলো । বিল্ডিংয়ের কোনায় এসে আমাকে দেখে বলে, 'তুই অহনও যাস নাই, যা জলদি ভাগ' । প্রচন্ড বৃষ্টি, বিশাল আম ভরা লুঙি-বস্তা মাথায় নিয়ে খালি গায়ে স্যান্ডু গেন্জির অ্যান্ডি পড়ে খালিছ ভাই আগে আগে দৌড়াচ্ছে আর আমি এক টি-শার্ট-বস্তা আম নিয়ে তার পেছন পেছন দৌড়াচ্ছি । =p~ :P :P

খালিছ ভাই এক হাতে মাথার বস্তা আর এক হাতে অ্যান্ডি'র মত করে পড়া স্যান্ডি'র গিট্টু ধরে দৌড়াচ্ছে । মুন্সি বাড়ির কোনায় যেতেই দেখি জানালার ঘুলঘুলি দিয়ে ঐ বাড়ির মেজ বউ তাকিয়ে আছে । খালিছ ভাইরে এই অবস্থায় দৌড়াতে দেখে মেজ বউ অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো । খালিছ ভাই ঐদিকে তাকাতেই মেজ বউ বললো, "ও বাইছাব, আপ্নের লুঙি নিলো কিডায় ?? আর কুনতা নিছে নায় নি ??" :-* :P :P

মেঝ বউয়ের এই কথা শুনে আমি তব্দা খেয়ে দৌড়ের মাঝেই পা পিছলে পড়ে গেলাম । কাদা, পানি আর আম ছড়িয়ে পড়লো চারপাশে । সামনে থেকে ধমকে উঠলো খালিছ ভাই, 'ঐ তাড়াতাড়ি আয়' । তারপরেই সে ছুটতে থাকলো । আমি কাদা পানিতে ছড়িয়ে পড়া সব আম আবার টি-শার্ট বস্তায় চালান দিচ্ছি । আর আড়চোখে দেখছি, মুন্সি বাড়ির সুন্দরি মেজ বউ আমার দিকে তাকিয়ে ফিক ফিক করে হাসছে । ;) B-)) B-))



***************************************************

ইহা একটি ছেঁচড়া টাইপিয় লোলিয় রম্য প্রচেষ্টা । ইহা পাঠ করিয়া কাহারো সুশিলীয় আঁতে সামান্যতম ঘা লাগিলে, লেখককে কোন ভাবেই দায়ী করা চলিবে না । B:-/ :-0

'খালিছ ভাই' উপাখ্যানের প্রথম গল্প, যারা আগে মিসাইছেন তাদের জন্য,
খালিছ মিয়া ভাই, জিন্দাবাদ :P ;) =p~

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১১:০২
৪২টি মন্তব্য ৪২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×