somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্লগ-ডে স্যাটেয়ার ড্রামাঃ 'দ্য প্রপোজাল' ;) :P

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



নাটকঃ “দ্য প্রপোজাল”
মুলঃ আন্তন চেখভ
রূপান্তরঃ মামুন রশিদ
মঞ্চায়নঃ ব্লগ-ডে'১৩ (যে শহর স্পন্সর করবে :P )
চরিত্র রুপায়নঃ
কাল্পনিক ভালোবাসাস্কি (ল্যান্ড লর্ড )
নাতালিয়া শায়মানোভা (ল্যান্ড লর্ডের মেয়ে )
মামুনভ রশিদেস্কু (প্রতিবেশি যুবক )

[চৌধুরী লজের বারান্দায় পায়চারিরত ল্যান্ডলর্ড কাল্পনিক ভালোবাসাস্কি]

কাল্পনিক ভালোবাসাস্কিঃ (স্বগতঃ) তোর আম্মিজান ভেলেন্তিনা তুরিনোভা তিরিশটা বছর আমাকে ভেজে ভেজে তেজপাতা বানিয়েছে । আর এখন তুই! আইবুড়ো মেয়ে, তোর মুখের বচন শুনে শহরের যুবকেরা চৌধুরী লজের গেইট থেকে পালায়! আড়ালে লোকে কত কথা শুনায়, চৌধুরীর মেয়েটা তার মায়ের চেয়েও মুখরা! হাহ, লোকে আর কতটুকু জানে!
[প্রতিবেশি যুবক মামুনভের প্রবেশ]
মামুনভ রশিদেস্কুঃ সালাম চৌধুরী সাহেব, কেমন আছেন?
কাল্পনিক ভালোবাসাস্কিঃ আরে মণ্ডলপূত্র যে! এসো বাবা এসো । তা আমার বাড়িতে কি মনে করে ?
মামুনভ রশিদেস্কুঃ আমরা পাশাপাশি থাকি তিন পুরুষ ধরে, অথচ কারো সাথে কারো মুখ দেখাদেখি নেই । তাই ভাবলাম আপনার সাথে... না মানে ইয়ে আপনার মেয়ে শায়মানোভা... ইয়ে আপনার আপনার, মানে ইয়ে, একটু পানি খাওয়াবেন!
কাল্পনিক ভালোবাসাস্কিঃ (স্বগতঃ) তুমি মণ্ডলপো ধান্ধা ছাড়া কি আমার কাছে আসবে? বিপদে পড়েছি বলে টাকা-পয়সা ধার চাইবে নাতো! (উচ্চস্বরে)মা শায়মানোভা, বাড়িতে অতিথি এসেছেন । কিছু জলপান নিয়ে এসো মা ।
মামুনভ রশিদেস্কুঃ ধন্যবাদ । আমি দুঃখিত, গলাটা শুকিয়ে এসেছিল । আপনাকে বলতে একটু ইয়ে মানে লজ্জা লাগছে । তবু বলি, লজ্জা কিসের! ইয়ে মানে আপনার একটু সাহায্য একটু করুণা, ইয়ে মানে শরীরটা ইদানিং ভাল যাচ্ছেনা, হার্টবিট পালপিটেশন...
কাল্পনিক ভালোবাসাস্কিঃ (চোখ পাকিয়ে, স্বগতঃ) যা ভেবেছিলাম! নইলে তুই ঘাটের মরা আমার বাড়িতে আসবি কেন? (উচ্চস্বরে) না না, বল বাবা, কি সমস্যা বল । আমি তো তোমার বাবার মতোই, কি সমস্যা খুলে বল ।
মামুনভ রশিদেস্কুঃ বলছি বলছি । ইয়ে মানে ইয়ে... শায়মানোভা, আপনার মেয়ে... আমার খুব প-ছ-ন-দ
কাল্পনিক ভালোবাসাস্কিঃ (উত্তেজিত হয়ে) কি কি কি বলছ!! আমি ঠিক শুনতে পাইনি, আবার বলতো...
মামুনভ রশিদেস্কুঃ জ্বী চৌধুরী সাহেব, আমি আমি, মানে শায়মানোভা...
কাল্পনিক ভালোবাসাস্কিঃ (আবেগাপ্লুত হয়ে) হা ঈশ্বর! আপনি কত মহান! আমি বিগত তেত্রিশ বছর ধরে এই দিনের অপেক্ষায় ছিলাম । হা ঈশ্বর! আপনি আজ আমার স্বপ্নপুরন করে দিলেন ।
মামুনভ রশিদেস্কুঃ আপনি একজন মহানুভব পিতা । জানেন চৌধুরী সাহেব, ভেবেছিলাম জীবনে বিয়ে থা করবো না । আমি শান্ত আর নিরিবিলি জীবন পছন্দ করি, উত্তেজনা একদম সইতে পারি না । কিন্তু সেদিন আয়নায় নিজের চালশে চেহারা দেখে আঁতকে উঠি । তখনই হৃদয় পটে ভেসে উঠে শায়মানোভা- যেন হেমন্তের স্নিগ্ধ কোমল রোদে চিকচিক করা শিশির কণা!
কাল্পনিক ভালোবাসাস্কিঃ শায়মানোভা কোমল রোদে চিকচিক করা শিশির কণা! হা ঈশ্বর! আপনি স্বর্গ হতে স্বয়ং দেবদূত পাঠিয়েছেন আমার শান্ত সুবোধ মেয়েটির পাণিপ্রার্থী করে! ধন্যবাদ! ধন্যবাদ!

[জলপান সহযোগে নাতালিয়া শায়মানোভার আগমন ]
নাতালিয়া শায়মানোভাঃ কে এসেছে বাবা? আরে আপনি? মিঃ মামুনভ রশিদেস্কু আমাদের বাড়িতে কি মনে করে!!
মামুনভ রশিদেস্কুঃ কি যে বলেন মিজ শায়মানোভা! আমি কি আপনাদের বাড়িতে আসতে পারিনা! ইয়ে মানে শায়মানোভা, একটু ঠান্ডা...
নাতালিয়া শায়মানোভাঃ আর ঢং দেখাতে হবে না । মণ্ডল বাড়ির লোকগুলোকে আমার খুব চেনা আছে । গলা শুকিয়ে আসলে শরবত খান । আর বাবা তোমার কি হয়েছে? তুমি এমন উত্তেজনায় কাঁপছো কেন? এখানে বসে বেলের শরবত খাও, তোমার অম্বলের উপকার হবে ।
কাল্পনিক ভালোবাসাস্কিঃ না মা ঠিক আছে, আমি দুরেই থাকি । ভদ্রলোক এসেছেন তোর সাথে গল্প করতে । তোর খুব প্রশংসা করেছেন মা । তুই উনার সাথে বসে কথা বল, ভাল করে আপ্যায়ন কর । চৌধুরী বাড়ির মেয়েরা কেমন অতিথিপরায়ণ তা দেখিয়ে দে মা । (ফিসফিস করে) আর আমার একটু দূরে থাকাই শোভন ।

[শায়মানোভা মামুনভের পাশে গিয়ে বসে]
নাতালিয়া শায়মানোভাঃ ও তাই? আপনি আমার প্রশংসা করেছেন? তা কি প্রশংসা করেছেন বলুন না.., প্লিজ প্লিজ প্লিজ...
মামুনভ রশিদেস্কুঃ প্রশংসা পাওয়ার মত উপযুক্তা করে ঈশ্বর আপনাকে সৃষ্টি করেছেন । প্রিয় শায়মানোভা, আপনার প্রশংসা করতে গেলে আমাকে এক গাঁদা সুন্দর সুন্দর শব্দ বলতে হবে । তখন আমাকে আপনার কবি বলে ভ্রম হতে পারে । আমি কবি নই, কিন্তু আপনি সুন্দর মনোহর অপরূপা...
নাতালিয়া শায়মানোভাঃ রিয়েলি... হাউ সুইট!! জানেন, আপনিও না খুব হ্যান্ডসাম! শুধু শুধু... মাথার ঐ চুল পড়ে... চোখে বুড়োদের চশমা... মাথায় হ্যাট পড়লে আর চশমার ফ্রেমটা পাল্টে নিলে..
মামুনভ রশিদেস্কুঃ আচ্ছা আচ্ছা! ঠিক আছে সেভাবেই হবে ।
নাতালিয়া শায়মানোভাঃ জানেন, আমি না পরচুলা একদম দেখতে পারি না । কেমন যেন সার্কাসের ক্লাউন লাগে । আপনি কখনোই পরচুলা পড়বেন না । শুনেছি কলিকাতা হারবালে প্লান্টেশন না কিসব জানি..
মামুনভ রশিদেস্কুঃ বেশ তো! বেশ তো!
নাতালিয়া শায়মানোভাঃ এখানে আসার সময় আমাদের আঙ্গিনায় ফুলের বাগানটা নিশ্চয়ই দেখেছেন । জানেন গাছগুলো আমি নিজে লাগিয়েছি । প্রতিদিন বিকালে নিজের হাতে পানি দিই । কি সুন্দর ফুল ফুটেছে, গোলাপ-টগর-মল্লিকা-হাস্নাহেনা..
মামুনভ রশিদেস্কুঃ হ্যাঁ হ্যাঁ, আসার সময় দেখলাম, বেশ সুন্দর!
কাল্পনিক ভালোবাসাস্কিঃ (স্বগতঃ) ওরে হাদারাম, যা বলতে এসেছিস তা তাড়াতাড়ি বল বাপ! আমাকে টেনশন থেকে উদ্ধার কর!
নাতালিয়া শায়মানোভাঃ এই ফুলের চারাগুলো বাবা স্পেশাল অর্ডার দিয়ে আনিয়েছেন । (উচ্চস্বরে) তাই না বাবা?
মামুনভ রশিদেস্কুঃ অর্ডার দিয়ে আনুন আর যেভাবেই আনুন, আপনাকে স্বীকার করতেই হবে আমাদের বাগান এই শহরের সবচেয়ে বনেদি আর পুরানো । আমার বাবা জাহাজে করে পারস্য থেকে বসরাই গোলাপের চারা এনেছিলেন । আপনাদেরটাও সুন্দর কিন্তু আমাদেরটা...
নাতালিয়া শায়মানোভাঃ কি বললেন আপনি? যা বলেছেন তা কি ভেবে বলেছেন? আপনাদেরটা আবার কোন বাগান হল? ঝোপঝাড় আর আগাছার জঙ্গল! বলি, কিসের সাথ কি, পান্তা ভাতে ঘি! আমিতো শুনেছি আপনাদের বাগানের শ্যাওড়া গাছে শাকচুন্নি পেত্নীদের বাস!
কাল্পনিক ভালোবাসাস্কিঃ (স্বগতঃ) এইরে! সব বুঝি কেঁচে গেলো !! মা মা শায়মা, শান্ত হো মা!
মামুনভ রশিদেস্কুঃ আমাদের বাগান আগাছার জঙ্গল, শাকচুন্নি পেত্নীর বাসা! আর আপনাদের টা ইডেন গার্ডেন? একি অনাচার! একি মিথ্যাচার! দেখুন মিজ শায়মানোভা, আপনার মাথা ঠিক আছে তো?
নাতালিয়া শায়মানোভাঃ মাথা ঠিক নেই মানে! কি বলতে চান আপনি ? যা বলেছি সত্যি বলেছি । আপনাদের বাগান আগাছার জঙ্গল । কোনদিন তো একটা ফুল ফুটতে দেখলাম না, তুলনা করতে আসে আবার আমাদের সাথে, হুহ!
মামুনভ রশিদেস্কুঃ এটা খুব অন্যায়! এই শহরের কে না জানে, আমার পিতা পারস্য থেকে জাহাজযোগে বসরাই গোলাপের চারা এনেছিলেন! (উচ্চস্বরে)এই যে আমার পিতৃবন্ধু চৌধুরী সাহেব, আপনিই বলুন আপনার মেয়ে মিথ্যাচার করছে কি না?
কাল্পনিক ভালোবাসাস্কিঃ আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে, তোমরা দুজনেই থামো । দেখ মা শায়মানোভা...
নাতালিয়া শায়মানোভাঃ আমাকে কি দেখতে বলছ বাবা? এই ছুঁচোমুখো হতচ্ছাড়াকে আমাদের বাসায় দেখেই সন্দেহ হয়েছিল, একটা অনর্থ বাঁধাতে এসেছে । বাবা তুমিই বল, আমাদের বাগানের মত আর কোন সুন্দর বাগান এই শহরে কারো আছে?
কাল্পনিক ভালোবাসাস্কিঃ তাইতো! এই যে মণ্ডলপুত্র, আমাদের বাগান নিয়ে তোমার এরকম কথা বলা ঠিক হয় নাই ।
মামুনভ রশিদেস্কুঃ (উত্তেজিত হয়ে) চৌধুরী সাহেব, আপনাদের বাগানে রোজ পানি দেন বলেই ভাববেন না যে আপনাদেরটাই সেরা । আমার বাবা যখন আমাদের বাগান তৈরি করে, তখন আপনাদের আঙ্গিনায় গরু ভেড়া চড়ে বেড়াত । দয়া করে এই তথ্যটা আপনার মুখরা মেয়ে মিজ শায়মানোভাকে বলে দিবেন ।
নাতালিয়া শায়মানোভাঃ আপনি চিৎকার করে কথা বলছেন কেন? এমনিতে তো মিনমিনে খিনখিনে ঘাটের মরা! ঐ আধমরা গলায় এত জোর আসে কিভাবে? ছেলেবেলায় কোন সৌজন্যবোধ শিখেন নি! একটা অভদ্র ছোটলোক...
মামুনভ রশিদেস্কুঃ (আরো উত্তেজিত হয়ে) কি কি কি বললেন আপনি ? আআআআমি ছোটলোক অভদ্র!! এই শহরে কে না জানে আপনি একটা মুখরা ননস্টপ বাঁচাল মেয়ে !! নিকুচি করি আপনার ভদ্রতার.. (হাঁপাতে থাকে)
কাল্পনিক ভালোবাসাস্কিঃ বাবা বাবা মামুনভ, এতো হাঁপিয়ো না বাবা শান্ত হও । ভালোমন্দ কিছু হয়ে গেলে দোষ পড়বে আমার ঘাড়ে । তুমি যা বলতে এসেছিলে..
মামুনভ রশিদেস্কুঃ আমি শান্ত হবো না । কোন কুক্ষনে এই মুখরা দাজ্জাল মেয়েটিকে আমি... ছি!ছি!ছি!
নাতালিয়া শায়মানোভাঃ কি বললেন, আমি দজ্জাল মেয়ে!! আপনার মত অভদ্র মানুষকে এখনো যে বাড়ি থেকে...
মামুনভ রশিদেস্কুঃ তার আর দরকার নেই । আপনার নিজের বাড়িতে আপনি ইচ্ছেমত গলাবাজি করতে থাকুন । মনে রাখবেন মিজ শায়মানোভা, আপনার সমস্ত মিথ্যাচার, আপনার দাজ্জালপনা, আপনার...

[চিৎকার করতে করতে মামুনভের প্রস্থান ]
নাতালিয়া শায়মানোভাঃ দেখলে বাবা, দেখলে! এই অভদ্র ছোটলোকটা আমাকে কি বলে গেল? আপনি এর কোন প্রতিবাদ করলেন না বাবা!!
কাল্পনিক ভালোবাসাস্কিঃ (দাঁতে দাঁত চেপে) আমার ইচ্ছে হচ্ছে পাথর দিয়ে টুকরে নিজের মাথাটা থেথলে দিই!! (উচ্চস্বরে) চুপ কর! তুই জানিস মামুনভ কেন এসেছিল??
নাতালিয়া শায়মানোভাঃ (অবাক হয়ে) কেন এসেছিল বাবা?
কাল্পনিক ভালোবাসাস্কিঃ এসেছিল তোকে প্রস্তাব দিতে!!
নাতালিয়া শায়মানোভাঃ কি বলছ বাবা!! কিসের প্রস্তাব??
কাল্পনিক ভালোবাসাস্কিঃ তোকে বিয়ে করার প্রস্তাব!! সব তো কেঁচে দিলি মুখপুড়ি!!

[শায়মানোভা বিস্ময়ে হতবাক হয়, তারপর কেঁদে ফেলে]
নাতালিয়া শায়মানোভাঃ বাবা, উনাকে আপনি যেতে দিলেন কেন বাবা? উনাকে শীঘ্রই ফিরিয়ে আনুন, ফিরিয়ে আনুন বাবা!!
কাল্পনিক ভালোবাসাস্কিঃ আমিতো তোকে সে কথাই বোঝানোর চেষ্টা করেছি । কিন্তু তুই তো...
নাতালিয়া শায়মানোভাঃ আমি কিছু শুনতে চাইনা বাবা, আপনি যেভাবে পারেন উনাকে ফিরিয়ে আনুন ।
কাল্পনিক ভালোবাসাস্কিঃ ঠিক আছে দেখছি, মনে তো হয় অনেক দূর চলে গেছে ।

[হন্তদন্ত হয়ে মামুনভ আবার ফিরে আসে]
মামুনভ রশিদেস্কুঃ কিছু মনে করবেন না মিঃ চৌধুরী, আমার চশমাটা ফেলে গিয়েছিলাম । নইলে এরকম মুখরা বদরাগী দাজ্জাল মেয়ে যে বাড়িতে থাকে, সে বাড়িতে কোন ভদ্রলোকের আসার কথা নয় ।
কাল্পনিক ভালোবাসাস্কিঃ আরে বাবা, এসেই যখন পড়েছ, একটু বস । খানিক জিরিয়ে নাও, নইলে শরীর খারাপ করবে ।
মামুনভ রশিদেস্কুঃ দুঃখিত চৌধুরী সাহেব, আমি আপনার কথা রাখতে পারবো না । আমার চশমাটা ফিরিয়ে দিন, আমি প্রস্থান করি ।
নাতালিয়া শায়মানোভাঃ এত রাগ করছেন কেন? বসুন না একটু প্লিজ.. আপনাকে যে কি ক্লান্ত দেখাচ্ছে! আর কথা বলবেন না তো! আসুন, এখানে চুপটি করে বসুন ।

[দুজনে গিয়ে সোফায় বসে]
কাল্পনিক ভালোবাসাস্কিঃ এটাই ভালো, তোমরা গল্প কর, তাড়াতাড়ি কথাবার্তা সেড়ে নাও!
নাতালিয়া শায়মানোভাঃ অবশ্য আপনার রাগ করা ঠিক আছে । আমি আপনাকে এত্তগুলা পঁচা পঁচা কথা বললাম । আমার এটা একদম উচিত হয়নি ।
মামুনভ রশিদেস্কুঃ না না, আপনি এত উতলা হচ্ছেন কেন! আমি রাগ করিনি । আর তাছাড়া আমিও তো আপনাকে কত মন্দ কথা শুনিয়েছি । একদম ঠিক হয়নি, একদম না..
নাতালিয়া শায়মানোভাঃ থাক না এসব! আপনার এখন কেমন লাগছে? বলুন না, কি যেন বলতে এসেছেন..
মামুনভ রশিদেস্কুঃ কি যেন বলতে এসেছি! কি যেন কি যেন! ওহ হ্যাঁ, এই যে দেখেন সময় দেখতে দেখতে চলে যায় । দুদিন পর লোকে আমাকে চালশে বুড়ো বলবে, দুবছর পরেই তো বয়স চল্লিশ হয়ে যাবে..
নাতালিয়া শায়মানোভাঃ নানানা, কে বলেছে? আপনি এখনো সো ইয়াং! ঐ সব লোকদের মুখে ঠাডা পড়ুক ।
মামুনভ রশিদেস্কুঃ তাই ভাবছিলাম, ইয়ে.. আপনিও তো আমার চোখের সামনেই তিরিশ পার করলেন.. আপনার সাথেই ভালই মানাবে!
নাতালিয়া শায়মানোভাঃ ঈশ... আমি নিজেকে এখনো খুকীই ভাবি । আমার বাবাতো এখনো আমাকে খুকি ডাকে ।
কাল্পনিক ভালোবাসাস্কিঃ (স্বগতঃ) হচ্ছে! হচ্ছে! বাবা একটু তাড়াতাড়ি, আমি আর টেনশন নিতে পারছি না!
মামুনভ রশিদেস্কুঃ বেশ তো! খুকি হয়ে থাকতে চাইলে আজীবন থাকবেন, বাঁধা কি!
নাতালিয়া শায়মানোভাঃ জানেন, আমি বিকেল বেলা টিংকু কে নিয়ে যখন হাটতে বেরোই, সে এত্তগুলা দুষ্টুমি করে! আর আমিও তার পিছে পিছে...
মামুনভ রশিদেস্কুঃ টিংকু!! সেটা আবার কে??
নাতালিয়া শায়মানোভাঃ আমার বাবু!!
মামুনভ রশিদেস্কুঃ বাবু!! আআআ আপনার??
নাতালিয়া শায়মানোভাঃ হ্যাঁ আমারই তো! ওহহ, আপনাকে বলাই হয়নি, টিংকু আমার পোষা বেড়াল । এত্তগুলা সুইট! আমার বাবু, আমার গুল্লু সোনা!! সব সময় আমার সাথে থাকে...
মামুনভ রশিদেস্কুঃ দেখুন মিজ শায়মানোভা, একটা কথা আগেই বলে রাখা ভালো । ঐ কুকুর-বেড়াল আমি দুই চোক্ষে দেখতে পারি না । ওদের দেখলেই আমার এলার্জি লাগে, গা ঘিনঘিন করে । আমার হাঁপানির প্রকোপ বেড়ে যায় ।
নাতালিয়া শায়মানোভাঃ বাহরে, এটা কোন কথা বললেন নাকি! আপনি কুকুর-বেড়াল বলছেন কেন? টিংকু সেরকম নয়, ও আমার সুইট টিংকু, গুল্লু গুল্লু..
কাল্পনিক ভালোবাসাস্কিঃ (স্বগতঃ) হায় হায় সেরেছে!! আবার না সব কেঁচে যায়!! হা ঈশ্বর, আপনি আমার কন্যার প্রতি সহায় হোন ।
মামুনভ রশিদেস্কুঃ পোষা হোক আর যাই হোক ঐ কুত্তা-বিলাই.. ওহ সরি, কুকুর বেড়াল আমার পছন্দ না.. ব্যস, এটাই শেষ কথা ।
নাতালিয়া শায়মানোভাঃ আপনার পছন্দের নিকুচি করি । আপনি কেমন মানুষ হে, একটা পোষা বেড়ালকে ঈর্ষা করেন!
মামুনভ রশিদেস্কুঃ দেখুন মিজ শায়মানোভা, আপনি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছেন । একটা বেড়ালের পক্ষ হয়ে আপনি, ছিঃ..
নাতালিয়া শায়মানোভাঃ আপনাকে আমি শেষ বারের মত সাবধান করে দিচ্ছি মিঃ মামুনভ, টিংকু কে নিয়ে আর একটা কথা বলবেন না । অবশ্য আপনি এসব শিখবেনইবা কোত্থেকে, আপনি মণ্ডল বাড়ির ছেলে না! পোষেন তো গরু আর গাধা, মিঃ মামুনভ গাধাপভ...
মামুনভ রশিদেস্কুঃ গাধা পুষি মানে? মুখ সামলে কথা বলবেন মিজ শায়মানোভা! আপ্নারা যে কত ভদ্র তা জানা হয়ে গিয়েছে । মানুষকে ডেকে এনে অপমান করেন আপনারা । আপনার মত ঝগড়াটে মেয়ে আমি কোনদিন দেখিনি ।
নাতালিয়া শায়মানোভাঃ কি! আমি ঝগড়াটে মেয়ে! আপনি যে একটা অভদ্র ছোটলোক তা তো আগেই জানি । বাবা বাবা, শুনে যাও এই অভদ্র লোকটা কি বলছে!
কাল্পনিক ভালোবাসাস্কিঃ (দাঁত চেপে) একটু ঠান্ডা হ মা, ঠান্ডা হ! একবার ভেবে দেখ যদি এবারও মিস হয়ে যায় তাইলে কি হবে!!
মামুনভ রশিদেস্কুঃ চৌধুরী সাহেব, আপনার ঝগড়াটে মুখরা মেয়েকে বলে দেন, একজন ভদ্রলোকের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয়, তা যেন শিখে নেয় ।
কাল্পনিক ভালোবাসাস্কিঃ তুমিতুমি রাগ করোনা বাবা ।
নাতালিয়া শায়মানোভাঃ আবার ঝগড়াটে বললেন? মুখরা, আমি মুখরা! আর আপনি, আপনি কি? একটা মুখপোড়া বাঁদর, কেলেভূত, টাকলুগাধা..
মামুনভ রশিদেস্কুঃ (উত্তেজিত) আমি বাদর! আমি কেলেভূত! আমি বাঁদর হলে আপনি কি?? আপনিআপনি আপনি একটা খন্ডারনি..
নাতালিয়া শায়মানোভাঃ খন্ডারনি!! বাবা... (কেঁদে দেয়)
কাল্পনিক ভালোবাসাস্কিঃ একটু শান্ত হ মা! মিঃ মামুনভ, তুমি আমার মেয়েকে এরকম বাজে কথা বলতে পারো না!
মামুনভ রশিদেস্কুঃ খন্ডারনি! খন্ডারনি!... বলতে পারি... একশোবার পারি... হাজার বা র...

[মামুনভ মাথা ঘুরে পড়ে যায়]
কাল্পনিক ভালোবাসাস্কিঃ হায় হায়! এটা কি হলো? মা শায়মানোভা, উনাকে ধর । মরে টরে গেলেতো পুলিশ কেইসে পড়ে যাব!
নাতালিয়া শায়মানোভাঃ একি! উনি এভাবে পড়ে গেলেন কেন? এখন কি হবে বাবা?
কাল্পনিক ভালোবাসাস্কিঃ আর কি হবে! থানা-পুলিশ জেল-হাজত..
নাতালিয়া শায়মানোভাঃ উনি আমাকে প্রস্তাবটুকু দিয়ে যেতে পারলেন না..
কাল্পনিক ভালোবাসাস্কিঃ সেই সুযোগ কি তুই দিয়েছিস? আহা বেচারা, ধর ধর । পানি এনে চোখে মুখে ছিটিয়ে দে । হা ঈশ্বর, উনার জ্ঞান ফিরিয়ে দিন ঈশ্বর ।

[শায়মানোভা মামুনভের চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়]
মামুনভ রশিদেস্কুঃ উঃ উঃ আমি এখন কোথায়..
কাল্পনিক ভালোবাসাস্কিঃ শ্বশুর বাড়ি! (জিভ কেটে) না না, তুমি এখন আমাদের বাড়ি ।
মামুনভ রশিদেস্কুঃ আমার কি হয়েছে..
নাতালিয়া শায়মানোভাঃ কিচ্ছু হয়নি আপনার, এই মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলেন । এখন কেমন লাগছে আপনার?
মামুনভ রশিদেস্কুঃ পানি, পানি খাব..
কাল্পনিক ভালোবাসাস্কিঃ উনাকে পানি খেতে দে মা । আর শোন, স্বয়ং ঈশ্বর উনাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন, তুই আবার তাড়াসনে যেন..
নাতালিয়া শায়মানোভাঃ আর ছাড়ছিনে বাবা.. (পানি খাইয়ে) এখন ভাল লাগছে?
মামুনভ রশিদেস্কুঃ ভাল, বেশ ভাল । ধন্যবাদ আপনাদের । আমাদের বাড়িতে আমাকে পৌছে দিন দয়া করে । আমাদের বারান্দায় খোলা বাতাস পাওয়া যায় ।
নাতালিয়া শায়মানোভাঃ না না, আমাদের বারান্দায় বসুন । এখানে খুব সুন্দর বাতাস বয়, সামনে সুন্দর বাগান..
মামুনভ রশিদেস্কুঃ আপনাদের বারান্দায় বাতাস আসবে কিভাবে, আপনাদের বারান্দা তো আমাদের মত দখিনমুখী নয় ।
নাতালিয়া শায়মানোভাঃ মোটেই না । আপনাদের বারান্দা দখিনমুখী হলেও সামনের ঝোপঝাড় জঙ্গলের জন্য বাতাস আসতে পারে নাকি?
মামুনভ রশিদেস্কুঃ অসম্ভব! এটা হতেই পারে না!
নাতালিয়া শায়মানোভাঃ এটাই ঠিক, আপনি কচু জানেন!
মামুনভ রশিদেস্কুঃ মোটেই ঠিক নয়, আপনি মিথ্যাবাদি..
কাল্পনিক ভালোবাসাস্কিঃ ঐ হলো! আবার শুরু হলো.. হা ঈশ্বর, এইবার আপনি আমাকে সত্যি সত্যি তুলে নিন । আমি আর পারছি না...

[সমাপ্ত]

****************************************************

ইহা একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টামুলক সম্পুর্ন যৌগিক পোস্ট । আন্তন চেখভের "দ্য ম্যারেজ প্রপোজাল" থেকে রুপান্তর করেছি আমি । পোস্ট এডিট, সংযোজন-বিয়োজন করেছেন ব্লগার 'শায়মা' । স্কেচ করেছেন শায়মা (মাঝেরটা সেল্ফ পোট্রেইট, শায়মা'র নিজের হাতে আঁকা) । পোস্টার বানিয়েছেন ব্লগার 'কাল্পনিক_ভালোবাসা' । আর 'টিংকু'র জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই 'টিংকু'র মা ব্লগার বটবৃক্ষ'কে ।

আরো একটি রম্য নাটক,

ব্লগারস স্যাটেয়ার ড্রামাঃ সামু রাজার দ্যাশে B-) :P

বাংলা ব্লগ-ডে ২০১৩ সফল হউক ।

অটঃ আমাদের পরবর্তি আকর্ষণ ভালোবাসাস্কি প্রযোজিত রশিদেস্কু নিবেদিত শায়মানোভা অভিনিত ড্রামা "এক যে ছিল রাশানকণ্যা" :P :P



'দ্য প্রপোজাল' নাটকের মুল ইংরেজি ভার্সন পড়তে চাইলে নিচের লিংকে ক্লিক করুন,

View this link
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:২৬
১৩২টি মন্তব্য ১৩৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×