somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাজধানীতে বপেরোয়া হয়ে উঠছেে মলম র্পাটি ও পকটেমার চক্র

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সরোয়ার আলম
ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে অজ্ঞান-মলম, টানা পার্টি ও পকেটমারের সদস্যরা। নানারকমের কৌশল অবলম্বন এবং তালিকার পর তালিকা করেও তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ঢাকায় ৪৭ জন অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব খুইয়েছেন। পুলিশ ও র‌্যাবের তালিকা অনুযায়ী ঢাকায় ৮৭টি অজ্ঞান ও টানা পার্টির গ্র“প সক্রিয় রয়েছে। দিনের চেয়ে রাতের বেলায় এসব ঘটনা বেশি ঘটছে। বাস-লঞ্চ টার্মিনাল ও রেলস্টেশনে পকেটমাররা ঘাপটি মেরে থাকে। তাদের দমন করতে র‌্যাব ও পুলিশের বিশেষ টিম গঠন করে মাঠে নামানো হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার একেএম শহীদুল হক জানিয়েছেন, ঈদ মৌসুমে অজ্ঞান পার্টি ও ছিনতাইকারীর তৎপরতা কিছুটা বেড়ে যায়। তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে নানারকমের কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। তাছাড়া পুলিশের একাধিক বিশেষ টিম গঠন করে মাঠে নামানো হয়েছে। ইতিমধ্যে কিছু অজ্ঞান পার্টির সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। পাশাপাশি তাদের আশ্রয়দাতাদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ঈদকে সামনে রেখে এবারো ঢাকাসহ সারাদেশে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে র‌্যাব ও পুলিশের বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেও প্রতিদিনই অজ্ঞান, মলম ও টানা পার্টির খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছেন নিরীহ লোকজন। তাদের পাশাপাশি পকেটমারদের তৎপরতাও আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। বাসস্ট্যান্ডগুলোতে ল্যাগেজ টানাটানি করে সর্বস্ব হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। সম্প্রতি অজ্ঞান-মলম ও টানা পার্টির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় তাদের দলনেতা ও অন্য সদস্যদের গ্রেফতার করতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার বিশেষ নির্দেশ দিয়েছে। এক সপ্তাহ আগে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ৪১ থানার অফিসার ইনচার্জদের নিয়ে বিশেষ বৈঠক করেছেন। বৈঠকের পর থেকেই থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দারাও ছদ্মবেশে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চষে বেড়াচ্ছেন। পুলিশ ও র‌্যাবের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে, অপরিচিত লোকদের কাছ থেকে কোন কিছু না খাওয়ার জন্য। বিভিন্ন বাস টার্মিনাল ও কমলাপুর রেলস্টেশন ও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে টানা পার্টির সদস্যরা যাত্রীদের ল্যাগেজ নিয়ে যাতে টানাহ্যাঁচড়া করতে না পারে সেদিকে বিশেষ নজর দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে পুলিশকে। রাতের বেলায় ঢাকার বিভিন্ন স্থানে জোরালো টহল দেয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তা নেই বললেই চলে। এ সুযোগে অজ্ঞান-মলম ও টানা পার্টির তৎপরতা আশংকাজনকভাবে বেড়ে গেছে। চার দিন আগে অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে বরগুনার নূর ইসলামকে জীবন দিতে হয়েছে। এ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন খন্দকার। ঠিকমতো কথা বলতে পারছেন না তিনি। তার প্রস াব-পায়খানা বন্ধ হয়ে গেছে। আনোয়ার জানান, তিনি গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়ায় একটি শাড়ির দোকানের ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন। ঈদ উপলক্ষে মাল কেনার জন্য আড়াই লাখ টাকা নিয়ে দোকান থেকে বের হন। রিকশা ঠিক করার সময় তিনি দেখেন তার পাশেই দু’জন লোক কথা কাটাকাটি করছেন। তাদেরই একজন হঠাৎ করেই তার মুখে থুথু ছিটিয়ে দেয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আরেকজন এসে রুমাল দিয়ে তার মুখ মুছে দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করতে থাকেন। তারপর তার কাছে জানতে চান তিনি কোথায় যাবেন। থুথু মুখে যাওয়ার পরপরই তার মাথা চক্কর দিয়ে ওঠে। দূরে দাঁড়িয়ে থাকা একটি রিকশায় তুলে দেয় প্রতারকরা। এক পর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। প্রতারকরা তার কাছ থেকে আড়াই লাখ টাকা নিয়ে গেছে। একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আলু ব্যবসায়ী হারুনর রশীদ জানান, বৃহস্পতিবার তিনি ভাণ্ডারিয়া থেকে মুন্সীগঞ্জ যাওয়ার পথে মাওয়া ফেরিঘাটে অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়েন। ফেরিঘাটে অপর এক ব্যবসায়ী সিরাজ মিয়া তাকে কেক খেতে দেয়। সিরাজ তার পূর্বপরিচিত হওয়ায় তিনি সেই কেক খেয়ে ফেলেন। খাওয়ার কিছুক্ষণ পরই তিনি জ্ঞান হারান। পরে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা তার কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা নিয়ে যায়। কমলাপুর, সায়েদাবাদ, গাবতলী, মহাখালী, গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া ও সদরঘাটসহ জনাকীর্ণ এলাকায় ঈদ উপলক্ষে কয়েকশ’ অজ্ঞান পার্টি ও মলম পার্টির সদস্য অবস্থান নিয়ে নানা কৌশলে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করে আসছে। সংঘবদ্ধ চক্রটি টার্গেট করে মানুষের পিছু নিয়ে শরবত, চা, ডাব, ইফতারি, পানসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে নেশা ও ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে মানুষকে অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে।
ঢামেক হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, অজ্ঞান ও মলম পার্টির সদস্যরা চোখে মলম লাগানোর সময় যদি চোখে ইরিটেন জাতীয় কিছু হয় তবে অন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা খাবারের মধ্যে যদি মাত্রারিক্ত ঘুমের ওষুধ মেশায় তবে আক্রান্ত ব্যক্তি মারা যায়। তাছাড়া কম মাত্রায় আক্রান্ত ব্যক্তির বেশির ভাগই জ্ঞান হারিয়ে ফেলা, ডিহাইড্রেশন, প্রস াব বন্ধ, গলা শুকিয়ে আসা, শরীর জ্বালাপোড়াসহ বিভিন্ন সমস্যার উপসর্গ দেখা দিতে পারে। মঙ্গলবার সায়েদাবাদে বাস টার্মিনালে বাসে ওঠার সময় ব্যবসায়ী আবদুর রাজ্জাকের প্যান্টের পকেট কেটে এক লাখ টাকা নিয়ে যায় পকেটমাররা। তেজগাঁও শিল্প এলাকায় ব্যবসায়ী নাসির রহমানকে অচেতন করে নগদ ১ লাখ ২৫ হাজার টাকাসহ দেড় লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। গাবতলী বাস টার্মিনালে সিঙ্গাপুর থেকে আসা মোহাম্মদ আলম বাসে ওঠার সময় টানা পার্টির সদস্যরা তাকে ঘিরে ফেলে। পরে তার ল্যাগেজ নিয়ে যায় ওই চক্রটি। ল্যাগেজে স্বর্ণালংকারসহ ১৫ লাখ টাকার মালামাল ছিল। সূত্র মতে, ঈদের সময় অজ্ঞান পার্টি ও ছিনতাইকারীদের তৎপরতা রোধ করতে পুলিশ ও র‌্যাবের বিশেষ টিম মাঠে নামানো হয়েছে। ঈদের ছুটির দিন পর্যন্ত ওই টিম মাঠে থাকবে। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ৮৭টি অজ্ঞান-মলম-থুথু-টানা পার্টি ও পকেটমার গ্র“প সক্রিয় রয়েছে বলে গোয়েন্দারা একটি রিপোর্ট তৈরি করেছেন। গ্র“পের সদস্যরা মগবাজার, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, মহাখালী বাস টার্মিনাল, গাবতলী বাস টার্মিনাল, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল, কমলাপুর রেলস্টেশন, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা, রামপুরা, বনানী, কাকলী, উত্তরা, গুলশান, বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি, আরামবাগ দেওয়ানবাগ শরীফের পাশে, ফার্মগেট, আসাদ গেট, শাহজাহানপুর, খিলগাঁও, খিলগাঁও ফ্লাইওভার, ফকিরাপুল বাজার, দৈনিক বাংলা মোড়, মতিঝিল কালভার্ট, মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় বেশি তৎপর থাকে। তাদের সঙ্গে সিএনজি, রিকশা ও ট্যাক্সিক্যাব চালকদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ থাকে।

View this link
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×