"কুকুরের কাজ কুকুর করেছে কামড় দিয়েছে পায় , তাই বলে কি কুকুরকে কামড়ানো মানুষের শোভা পায় "। অনেকেই আছেন কুকুরের কামড়েড় বিপরীতে এই বাক্য আওড়িয়ে কুকুরকে ছাড় দিতে বিশেষ আগ্রহী, কামড় দেয়া কুকুরের কোন ধরনের শাস্তির ব্যাবস্থা না করেই সেই কুকুরকে এড়িয়ে চলতে পছন্দ করেন।
কুকুরকে কামড় দেয়ার কোন ইচ্ছাই আমার নাই আবার কামড় দেয়া কুকুরকে নীরিহের মত ছাড় দেয়ার পাত্রও আমি নই।
ছোট বেলার একটা গল্প বলি, আমাদের পাশের গ্রামের একটা কুকুর পাগল হয়েছে, সে ওই গ্রামের অনেক মানুষকে কামড়িয়ে এবার আমাদের গ্রামের দিকে নজর দিয়েছে। ওই গ্রাম ছেড়ে আমাদের গ্রামে আসার পর অনেককেই কামড়িয়েছে, আমার পাশের বাড়ির এক বয়স্ক চাচাকে চার-পাঁচটা কামড় দিয়েছে, আমাদের পাশের বাড়ির এক পরিবারের চার জনকে কামড়িয়েছে, আর সবচেয়ে দুংখজনক হল, একটি ছোট বাচ্চা (৮-১০ বছর বয়স) রাতে পশ্রাব করতে বসেছে ঠিক তখনি সেই পাগল কুকুর তার উপর আক্রমন করে ১০-১২ টা কামড় বসিয়ে দেয়, তার মধ্যে একটা কামড় তার পুরুষাঙ্গ বসিয়েছিলো।
পথচারীরা যদি এসে তাকে রক্ষা না করতে তাহলে হয়ত সেই কুকুর তাকে সেখানে মেরেই ফেলতো।
আমাদের গ্রামে পাগল কুকুরের উপদ্রব বেড়েই চলেছে, আজ অমুককে তো কাল তমুককে কামড়িয়ে চলেছে। আর আমাদের গ্রামবাসী সেই কুকুরকে দমন না করে কুকুরের কাজ কুকুর করেছে কামড় দিয়েছে পায়.... টাইপের চিন্তা ভাবনা নিয়ে বসে আছেন, আমিও সেই চিন্তা নিয়েই বসে ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ এক রাতে আমার ছোট ভাই উঠানে দাড়িয়ে পশ্রাব করছিলো, সেই সময় পাগল কুকুর এসে আমার ভাইয়ের পায়ে একটা কামড় বসিয়ে দিলো। তার পর থেকে আমার মেজাজ খারাপ, ভাবলাম কুকুরের এত্ত বড় সাহস আমার ভাইকে কামড় দেয়, অনেক ছাড় দিয়েছি আর নয় এবার কুকুরকে একটা সাইজ দিতেই হবে !!! ঠিক সেদিন রাতেই শুরু করলাম অভিযান। আমি, আমার অসুস্থ ছোট ভাই (রক্ত শুকানোর আগেই প্রতিশাধ) সহ গ্রামের আরও কয়েকজনকে নিয়ে কুকুরকে সেই রাতে এমন সাইজ দিলাম যে, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমাদের গ্রামে আশাপাশেও আসার সাহস করেনি। পরে শুনেছিলাম অন্য গ্রামের মানুষরা নাকি সেই পাগল কুকুরকে পিটিয়ে মেরেছে।
এবার মুল প্রসঙ্গে আসি,
সাবরিনা আলী। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী। ঢাকা মেট্রোপলিটন আদালতের বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্র্যাট। মুক্তিযোদ্ধের চেতনাধারী, মৌলবাদী জামাত - শিবির বিরোধী এবং রাজাকার নামক হায়েনাদের ফাসীর দাবিতে সোচ্চার এক নারী। রাজাকারদের ফাসীর দাবীতে গড়ে উঠা শাহবাগ আন্দোলনে স্বপরিবারে ছোটে গিয়েছেন একাধিকবার। তার স্বামী শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের একজন সংগঠক।
সাম্প্রতিক সময়ে দাসত্ব শেকল নামের জাতীয়তাবাদী পরিচয় দান কারী এক ছাগু ব্লগার ফেইসবুকে সেই ভদ্রমহিলার ছবি সহ একটা স্টাটাস দিয়েছে । সেখানে লিখা আছে -
ইনি-ই সেই মহীয়সী নারী ম্যাজিস্ট্রেট সাবরিনা আলী।
চিটাগাং ইউনিভার্সিটির ল/ ১০ম ব্যাচের ছাত্রী।
ইনি একজন রেপিস্টকে জামিন মঞ্জুর করেছেন ৫ হাজার টাকায়।
তার পর সেই পোস্টে কতিপয় অমানুষের বাচ্চাদের পদচারনা শুরু হয়, বাঁশের কেল্লা পেজের এডমিন হিসেবে পরিচিত দাসত্ব শেকলের মুরিদরা অনলাইন ধর্ষকের ভূমিকা পালন করা শুরু করে। তার পোস্টে মন্তব্য করা অমানুষরা এই ঘটনার সত্যতা যাচাই না করেই সাবরিনা আলীকে নিয়ে নানা ধরনের অশ্লিল মন্তব্য প্রদান করা শুরু করে। একাধিক অমানুষের বাচ্চা ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ভদ্রমহিলাকে রেপ করার প্রস্তাব দেয় এবং তাকে নিয়ে একাধিক অশ্লিল মন্তব্য করে, অনেক অমানুষের বাচ্চা আবার তার ছোট্ট শিশু কন্যাকে নিয়ে নানা ধরনের অশ্লিল মন্তব্য করে। শুধু তাই নয়, দাসত্ব শেকলের পোস্ট প্রকাশ হওয়ার পর তার অনেক জামাতী বন্ধু ভিবিন্ন আইডি থেকে সাবরিনা আলী কে হত্যা করার ডাকও দেয়, অনেকেই আবার ভবিষ্যতে হামলা করার লক্ষে দাসত্ব শেকল নামক জামাতী হায়েনাদের হিট লিস্টে থাকা সাবরিনা আলীকে চিনে রাখার কথা বলে।
কিছু অমানুষের বাচ্চার মন্তব্য -
সাবরিনা কি আসলেই ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে রেপিস্টকে জামিন দিয়েছেন?
বিচারিক নিয়মকানুন মেনেই সাবরিনা আলী জামিন দিয়েছেন এক আসামীকে, ৫ হাজার টাকার বন্ডে (যা পুরোপুরি রাষ্ট্রীয় আইনেই ধার্য)। আইন বিষয়ক ন্যূনতম জ্ঞান থাকা ব্যক্তিমাত্রই জানেন, জামিনের বিষয়টি পুরোপুরি আদালতের এখতিয়ারাধীন। সঠিকভাবে সাক্ষ্যপ্রমাণ দ্বারা অপরাধ প্রমাণ করার আগে আইনেই জামিনের বিধান রয়েছে। জামিন পাওয়া মানেই কিন্তু মুক্তি প্রদান বা খালাস পাওয়া নয়।
জামিন দানের এই প্রক্রিয়া সকল অভিযুক্ত অপরাধীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। জামিন মিললেও পরবর্তীতে অভিযুক্ত অপরাধীকে আদালতে হাজির হয়ে বিচারের মুখোমুখি হতেই হয়। অথচ, ‘দাসত্ব শিকল’ ফেসবুক আইডি থেকে লেখা হলো, ‘একজন রপেস্টিকে জামনি মঞ্জুর করছেনে ৫ হাজার টাকায়।’ খেয়াল করুণ, ‘৫ হাজার বন্ডে জামিন প্রদান’কে ‘৫ হাজার টাকার বিনিময়ে’ ভুল ব্যাখ্যার মাধ্যমে জামিন দানের অপপ্রচার করা হলো। তাছাড়া যে মামলাটির কথা এখনে বলা হয়েছে, এক শিক্ষকের দ্বারা ছাত্রীর স্লীলতাহানী। তাও ঘটনার দেড় বছরের মাথায় মামলাটি করা।
তাহলে সাবরিনা আলীর উপরে কেন এই আক্রমন?
আপনারা জানেন জামাত শিবির ও তাদের প্রতিষ্ঠানকে রুখে দেয়ার ডাক দিয়েছিল শাহবাগ। ছাত্র শ্রমিক জনতার সাথে সেই ডাকে এগিয়ে এলেন আরো একজন। সাবরিনা আলীর স্বামী ইনসান আলী রাজু। পেশায় তিনি আইনজীবী। অতএব আদালতেই তার সক্রিয়তার স্থান। তিনি জামাত শিবিরকে মোকাবেলা করবেন আদালতের মাধ্যমে। তাই, মামলা করলেন স্বাধীনতার বিরোধী শক্তির অর্থের বড় উৎস ‘ইবনে সিনা’র বিরূদ্ধে।
২৫ শতাংশ কম খরচে চিকিৎসা সেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দ্বিগুণ বা তিনগুণ অর্থ আদায়ের মাধ্যমে সরলমতি মানুষের সাথে প্রতারণার ঘটনায় ইবনে সিনার বিরুদ্ধে মামলার তিনি আইনজীবি। ঢাকার বিজ্ঞ চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৪২০/৪০৬/৩৪ ধারায় এই মামলাটি গত ২৫-০৩-১৩ তারিখে দায়ের করা হয়। মামলাটি এখন তদন্তাধীন। এই মামলা ইবনে সিনার আড়ালে জামাতের একটি শক্তিশালী অঙ্গ পঙ্গু করে দেয়ার মতো অবস্থা তৈরি করেছে।
মামলা চলমান অবস্থায় জামাতি অনলাইন সাপোর্টাররা বুঝেছে এই মামলা হায়েনাদের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছে। আর তার দায়ে যথারীতি স্বজন-প্রিয়জন সহ প্রাণনাশের হুমকি আসছে সাবরিনা আলীর। সাবরিনা আলীর ছবিকে নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার তারই একটি অংশ।
জামাত শিবিরের গৃহপালিত কুকুরদের এমন নোংড়া প্রোপাগান্ডায় ভেঙ্গে পড়েছেন সাবরিনা আলী। বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজনরা ফোন দেন, পরিচিতরা ফোন দেন। ভাংতে ভাংতে অসুস্থ হয়ে পরেছেন তিনি।
দাষত্ব শেকল নামক জামাতি ছাগুদের মিথ্যা প্রচারনার কারনে যদি সাবরিনা আলীর উপর আক্রমন হয় তাহলে দায় কে নেবে ?
সামু ব্লগে জাতীয়তাবাদী ব্লগার (!) নামক একটি বিতর্কিত সিন্ডিকেট আছে, দাষত্ব শেকল সেই সিন্ডিকেটের একজন নেতৃত্বস্থানীয় সদস্য। সেই জাতীয়তাবাদী সিন্ডিকেট কতিপয় সদস্যরা এর আগেও সামুর নারী ব্লগার থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়েও অশ্লিল মন্তব্য করেছে । এদের অশ্লিল মন্তব্য, ট্যাগিং আর অপপ্রচারের শিকার হয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছেন অনেক সম্মানীত নারী ব্লগার। এদের অশ্লিল টার্গেটের শিকার হয়ে মুক্তিযোদ্ধের চেতনাধারী অনেক নারী ব্লগার এক সময় চুপষে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
সেই জাতীয়তাবাদী (!) নামধারী জামাত শিবিরের গৃহপালিত ব্লগাররা, সামুর নারী ব্লগার সহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী সকল ব্লগারকে অশ্লিল আক্রমন করার পর আজ ফেইসবুকে সক্রিয় হয়েছে। সামুতে থাকা মুক্তিযোদ্ধের চেতনাধারীদের নিয়ে অশ্লিলতা ছড়িয়ে চুপসে দেয়ার মিশন সফল ভাবে বাস্তবায়ন করার পর এবার দেশের বিভিন্ন স্থরের মুক্তিযোদ্ধের চেতানাধারীদের নিয়ে নোংরা এবং অশ্লিল মিথ্যাচারে লিপ্ত হয়েছে। তারা সহজ শিকার হিসেবে নারীদের আক্রমন করছে, নানা ধরনের কুৎসা রটানোর মাধ্যমে তাদের এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের জামাত বিরোধী ভুমিকা থেকে সরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।
ওরা গতকাল সামুর মহিলা ব্লগারদের আক্রমন করেছে, প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে অশ্লিল মন্তব্য করেছে, আজকে সাবরিনা আলীকে আক্রমন করেছে, কালকে আপনার পরিবারের সদস্যদের আক্রমন করবে, আপনার মা-বোন অথবা অন্য কাউকে নিয়ে মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর এবং অশ্লিল তথ্য ছড়াবে, আপনারা পরিবারের সদস্যদেরকে হায়ানাদের অশ্লিল আক্রমনের শিকারে পরিণত করবে।
কুকুরের কাজ কুকুর করেছে কামড় দিয়েছে পায়.... টাইপের চিন্তা ভাবনা নিয়ে বসে থাকার সময় এখন নয়। কোন ধরনের টার্গেটের স্বীকার হওয়ার আগেই এসব জাতীয়তাবাদী ব্লগার নামক জামাত শিবিরের পেতাত্মাদের এখনি বর্জন করুন।
উল্লেখ্য, এরা শুধু সামুর নারী ব্লগার এবং মুক্তিযোদ্ধের চেতনাধারীদের আক্রমন করছে না, সামুর কর্ণধার জানাপাকে নিয়েও ভয়ংকর অশ্লিল পরিকল্পনা করেছে। এরা নতুন ছাগু ব্লগ বানিয়ে (সোনার বিকল্প) সেখানে জানাপা সহ সামুর ব্লগারদের নিয়ে অশ্লিলতা ছড়ানোর ফন্দি এটেছে। সামুর প্রত্যেক নারী ব্লগার থেকে শুরু করে জামাত - শিবির বিরোধী প্রত্যেক সক্রিয় ব্লগারদের সাবধান হওয়ার আহব্বান জানাচ্ছি। বিস্তারিত তথ্য প্রমাণ আমার কাছে আছে, শীঘ্রই আপনাদের পরের পোস্টে তুলে ধরার চেষ্টা করব। সাথে থাকুন।
এই পোস্টের কিছু লিখা শামীমা মিতু আপার পোস্ট থেকে হুবহু কপি করা হয়েছে। লিখা কপি করার অনুমতি দেয়ার জন্য এবং এরকম একটা বিষয় নিয়ে সকলের দৃস্টি আকর্ষন করার জন্য আপাকে ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০১৩ ভোর ৪:৫৮