নুপীলান সম্পর্কে দুটি কথা - এ.কে শেরাম
মণিপুরের মহিলাগণ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে যে গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনে শরিক হয়েছিল তা ইতিহাসে এক নুতন অধ্যায় সূচিত করে। প্রথম নারী আন্দোলন হয় ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে এবং দ্বিতীয়টি হয় ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে। উভয়ই মণিপুরের ইতিহাসে ১ম এবং ২য় নারীবিদ্রোহ নামে স্থান লাভ করে।
প্রথম নারী আন্দোলন
১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে মণিপুর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত হয়। শীঘ্রই মণিপুর ব্রিটিশদের করদরাজ্যে পরিণত হয়। এবং মণিপুর রাজ্যকে ২.৫০ লক্ষ টাকা বাৎসরিক কর প্রদানে বাধ্য করে। পরবর্তীতে Free Trade Policy নীতির বদৌলতে মণিপুর থেকে প্রচুর খাদ্যশস্য বাহিরে রপ্তানি করত। তাই মণিপুরে দূর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এর প্রতিবাদস্বরুপ উত্তাল জনগণ খ্বাইরমবন্দ বাজারে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং সম্পূর্ণ ভষ্মীভূত করে। ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের বাংলো জ্বালিয়ে দেয়। পরবর্তীতে বাংলোগুলো পুননির্মাণের জন্য আদেশ জারি করা হয় এতে মণিপুরের নারীপুরুষ ক্রোধান্বিত হয়ে ফেটে পড়ল। সংঘটিত হল ১৯০৪ সালের প্রথম নারী আন্দোলন। হাজার হাজার রমণী রুখে দাঁড়াল তাদের অন্যায় আদেশের বিরুদ্ধে। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ সশস্ত্র সেনাবাহিনী লেলিয়ে দিল। আহত হল অনেক নারী। এই আন্দোলনের ফলে ব্রিটিশ সরকার অন্যায় আদেশ প্রত্যাখ্যান করতে বাধ্য হয়েছে।
দ্বিতীয় নারী আন্দোলন
১৯৩৯ সালের নারীবিদ্রোহের মূল কারণ ছিল ২টি। ১) শাসকচক্রের ঘৃণ্য কপটনীতি এবং ২) ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের পদলেহী মারোয়াড়ি ব্যবসায়ী।
মারোয়াড়িরা ছিল মজুতদার, মুনাফাখোর, কালোবাজারী। তারা চড়াদামে খাদ্যশস্য ক্রয় করে গুদামজাত করত এবং বাহিরে রপ্তানি করত। ফলে তখন মণিপুরে খাদ্যসংকট প্রকটভাবে দেখা দেয়। এ ব্যাপারে সরকারি কর্মচারীগণের সহযোগিতা ছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্টি হয় দূর্ভিক্ষ। দেশের অগণিত নারী-পুরুষ-শিশু অনাহারে প্রাণ হারায়। এহেন অবস্থায় মণিপুরের বীর নারীসমাজের বুকে জলে উঠল বিদ্রোহের দাবানল। ১৯৩৯ সালের ১২ই ডিসেম্বর মণিপুরী জাতির ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে উঠল। হাজার হাজার মা-বোন প্রকাশ্য রাজপথে গগণ বিদারিত শ্লোগানে এবং তাদের হাতে যা আছে তা নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল। ভেঙে ফেলল সরকারি গুদাম। এই পরিস্থিতিকে দমন করতে তলব করা হল Assam Regiment সিপাহীদের। তাদের অত্যাচারে পরিণত হয়েছিল এক নারকীয় পরিবেশ। তাদের বেয়নেটের খোচায় ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল অগণিত মহিলাদের শরীর। তৎকালীন নারীসমাজ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিল। তাই স্মরণীয় হয়ে রইল ১২ই ডিসেম্বর মণিপুরের ইতিহাসে প্রখ্যাত নুপীলান অর্থাৎ নারীবিপ্লব নামে। তাই বিশ্বের যেখানে মণিপুরী আছে সেখানে অত্যন্ত সশ্রদ্ধচিত্তে দিবসটি পালিত হয়।
:: বাংলাদেশের প্রথিতযশা মণিপুরী কবি এ.কে শেরাম এর এই নিবন্ধটি থেঙুজম হীরন সম্পাদিত 'খোংগুল লীবা' ১২ই ডিসেম্বর ২০০৭ সংখ্যা থেকে সংকলিত ::

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




