বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম
আলহামদুলিল্লাহ, ওয়াস্সালতু ওয়াস্সালামু আলা নাবিয়্যিনা মুহাম্মদ ﷺ।
আসসালামু আলাইকুম,
ঈদ মুবারক। সবাইকে ঈদের অগ্রিম শুভেচ্ছা। এই ঈদ আমাদের সকলের জীবনে নিয়ে আসুক মহান আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি।
চলুন যেনে নিই ঈদ-উল-ফিতরের রাসূল ﷺ এর সুন্নাহঃ
১. রাসূল ﷺ সাদকাত-উল-ফিতর আদায় করতেন এবং সকল স্বাধীন নারী-পুরুষদের সাদকাত-উল-ফিতর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এই সাদকাত-উল-ফিতর ঈদের নামাজের আগেই দিয়ে দিতে হবে। ঈদের নামাজের পর দিলে তা সাদকাত-উল-ফিতর হিসেবে বিবেচিত হবে না, তবে সাধারণ দান হিসেবে বিবেচিত হবে।
ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত: রাসূল ﷺ সবাইকে ঈদ এর নামাজের আগেই সাদকাত-উল-ফিতর আদায় করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
Bukhari :: Book 2 :: Volume 25 :: Hadith 585
আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত: রাসূল ﷺ এর সময়ে আমরা এক সা' পরিমাণ খাদ্য অথবা এক সা' পরিমাণ বার্লি অথবা এক সা' পরিমাণ শুকনো গ্রেপ ফল সাদকাত-উল-ফিতর হিসেবে দিতাম।
Bukhari :: Book 2 :: Volume 25 :: Hadith 584
ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত: আল্লাহর নবী সাদকাত-উল-ফিতরকে অত্যাবশকীয় করে দিয়েছেন এবং সাদকাত-উল-ফিতর হিসেবে এক সা' বার্লি অথবা এক সা' খেজুর প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক নারী-পরুষের এবং বৃদ্ধ ও সকল স্বাধীন পুরুষ ও দাসের অবশ্যই আদায় করতে হবে।
(এক সা' = ২ কেজি ২৫০ গ্রাম )
Bukhari :: Book 2 :: Volume 25 :: Hadith 588,
Muslim :: Book 5 : Hadith 2153
আবু সাঈদ খুদরী (রা) বলেন: অনেকেই ঈদের এক বা দুই দিন আগেই সাদকাত-উল-ফিতর আদায় করতেন।
Bukhari :: Book 2 :: Volume 25 :: Hadith 587
উপরোক্ত হাদীসগুলো আলোকে, সাদকাত-উল-ফিতর হিসেবে খাদ্য দ্রব্য দেওয়া ভালো, কারণ এটাই রাসূল ﷺ তাঁর জীবদ্দশায় করে গিয়েছেন এবং এটাই উনার সুন্নাহ আর সাহাবীরাও এভাবে দিতেন। এটা সমাজের প্রচলিত খাদ্য হতে হবে যেমন: দুই কেজি আড়াইশ গ্রাম (এক সা' হিসেবে) পরিমাণ চাল অর্থাৎ ঈদের দিন যাদের সামর্থ্য নেই তারাও যেন ভালো খেতে পারে সে মূল্যমানের খাদ্য মোট কথা সমাজের প্রচলিত খাদ্য হলেই চলবে।
সকল স্বাধীন প্রাপ্ত বয়স্ক নারী-পরুষের এই সাদকাত-উল-ফিতর আদায় করতে হয় কারণ এটাই রাসূল ﷺ করতে বলেছেন। অর্থাৎ যার যার সাদকাত-উল-ফিতর তার তার আদায় করতে হবে। অবশ্যই মনে রাখতে হবে সাদকাত-উল-ফিতর ঈদের নামাজের আগে আদায় করতে হয়, দুই একদিন আগেও দিলেও হয় যেহেতু রাসূল ﷺ এর সাহাবীরা দিয়েছেন।
সাদকাত-উল-ফিতর কাদের জন্য:
সাদকাত-উল-ফিতর যে এলাকায় দেওয়া হবে সে এলাকার গরীব মুসলমানদের দিতে হবে। আবু দাউদ কর্তৃক বর্ণিত, ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, আল্লাহর রাসূল (স) রমাদান মাসে গরীবদের খাওয়ানোর জন্য সাদকাত-উল-ফিতর দিতে বলেছেন।
২.তাকবীর দেওয়া: ঈদের চাঁদ দেখা যাওয়ার সাথে সাথে তাকবীর দিতে হয় এবং এই তাকবীর দেওয়া ঈদের নামাজ শুরু হওয়ার সাথে সাথে শেষ হয়ে যায় অর্থাৎ নামাজ শুরু হয়ে গেলে আর তাকবীর দিতে হবে না।
আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবর,আল্লাহু আকবর,আল্লাহু আকবর, ওয়া লিল্লাহিল হামদ (আল্লাহ সবচেয় বড়, আল্লাহ সবচেয় মহান, আল্লাহ সবচেয় বড়, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, আল্লাহ সবচেয় বড়,আল্লাহ সবচেয় মহান,আল্লাহ সবচেয় বড়, এবং সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য)
এই তাকবীর নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য প্রযোজ্য। তবে পুরুষদের উচ্চ স্বরে পড়তে হয় এবং উচ্চ স্বরে পড়তে পড়তে ঈদগাহে এক রাস্তা দিয়ে যেতে হয় এবং ফেরার সময় অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরতে হয়, এটাই রাসূল এর সুন্নাহ।
৩. রাসূল ﷺ ঈদের দিন ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়ার আগে বিজোড় সংখ্যক খেজুর খেতেন। আমরা যদি এইভাবে খাই তাহলেও আমরা এই থেকে দুইটি জিনিস পাবো। এক হলো খেজুর খাওয়ার মজা, দুই হলো রাসূল ﷺ এর সুন্নাত পালন করার মজা।
আনাস বিন মালিক (রা) থেকে বর্ণিত: আল্লাহর নবী কখনই খেজুর খাওয়া ব্যাতীত ঈদ-উল-ফিতরের নামাজ পড়তে যেতেন না। আনাস (রা) আরো বর্ণনা করেন: রাসূল ﷺ বিজোড় সংখ্যক খেজুর খেতেন।
Bukhari :: Book 2 :: Volume 15 :: Hadith 73
৪. রাসূল ﷺ নারী-পরুষ সকলকে ঈদ গাহে যাওয়ার নির্দেশ দিতেন।
উম্মে আতিয়া (রা) থেকে বর্ণিত: আল্লাহর নবী ﷺ আমাদের সকল নারীদের(বিবাহযোগ্য, বিবাহিত, বয়স্ক), মাসিকরত থাকা নারীরাকেও ঈদ-উল-ফিতর ও ঈদ-উল-আযহায় ঈদগাহে যাওয়ার নির্দেশ দিতেন; মাসিকরত থাকা নারীরা নামায না পড়ে ঈদ জামাতের পিছনে দাড়িয়ে থাকত তবে দান করার কাজে তারাও অংশগ্রহন করতেন । আমি জিজ্ঞেস করলাম: আল্লাহর রাসূল ﷺ, যদি আমাদের মধ্যে কারো জিলবাব(পর্দার জন্য মুখ ও শরীর ঢাকার কাপড় যেমন: বড় চাদড়) না থাকে? তিনি ﷺ বললেন: তাকে তার বোনের জিলবাব দ্বারা ঢেকে দাও।
Muslim :: Book 4 : Hadith 1934
উপরোক্ত হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম নারীদেরও ঈদ গাহে যাওয়ার জন্য রাসূল ﷺ আদেশ দিয়েছেন। তবে এক্ষেত্রে তাকে অবশ্যই জিলবাব পড়ে যেতে হবে(পর্দার জন্য মুখ ও শরীর ঢাকার কাপড় যেমন: বড় চাদড়) ।
৫. আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত: নামাজ পড়ে শেষ করা পড়া রাসূল ﷺ খুতবা দিতেন। এরপর তিনি মানুষদেরকে দান করার জন্য নির্দেশ দিতেন। তিনি ﷺ বলতেন: ''ওহে পুরুষেরা, দান কর''। এরপর তিনি নারীদের দিকে যেয়ে বলতেন: "ওহে নারীরা, দান কর"। (সংক্ষেপিত)
Bukhari :: Book 2 :: Volume 24 :: Hadith 541
উপরোক্ত হাদীস থেকে আমারা জানলাম, রাসূল ﷺ ঈদের দু'রাকাত নামাজের পড় খুতবা দিতেন তারপর মানুষদেরকে দান করার জন্য নির্দেশ দিতেন।
৬. ফজরের নামাজের পর ঈদের নামাজের আগে পরে কোন নামাজ নেই।
ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত: রাসূল ﷺ ঈদ-উল-ফিতরের দিন দুই রাকাত নামাজ পড়তেন এবং এই নামাজের আগে পড়ে তিনি কোন নামাজ পড়তেন না।
Bukhari :: Book 2 :: Volume 15 :: Hadith 81
৭. দুই ঈদ ; ঈদ-উল-ফিতর এবং ঈদ-উল-আযহার দিন রোযা রাখা নিষেধ।
আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত: রাসূল ﷺ আমাদেরকে দুই ঈদ; ঈদ-উল-ফিতর এবং ঈদ-উল-আযহার দিন রোযা রাখতে নিষেধ করেছেন।
Muslim :: Book 6 : Hadith 2536
হে আল্লাহ, আমাদের রাসূল ﷺ এর সুন্নাহ(কর্মনীতি) অনুযায়ী ঈদ উৎযাপন করার তৌফিক দান করুন, আমীন।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


