somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি মেয়েকে অপমান করাতেই জগতের সকল সুখ নিহিত।

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"তুমি দেখেছো, ওর স্ট্যাটাসে আমাকে নিয়ে কী লিখেছে?"
"হু।"
"হু মানে? তুমিও কী একমত?"
আমি বুঝতে পারলাম না কী বলবো। আমার এক বন্ধু এক বান্ধবীকে খুঁচিয়ে একটা স্ট্যাটাস লিখেছে। স্ট্যাটাসের লেখা পড়ে মনে হওয়া স্বাভাবিক তাদের দুজনের মাঝে বুঝিবা খুব ঘনিষ্ট বন্ধুত্ব আছে।
"ও কী তোমার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু?"
"কিসের বন্ধু? জীবনে হাই হ্যালো পর্যন্ত হয়নি।"
তাহলে ব্যপারটা যথেষ্ট আপত্তিকর। যার সাথে হাই হ্যালো সম্পর্কও নেই, তাকে নিয়ে এভাবে পাবলিকলি এইধরনের স্ট্যাটাস লেখা যায় না।
"তুমি প্রতিবাদ কর।"
"করেছি। আমি বলেছি আমাকে নিয়ে তোমার এভাবে লেখা উচিৎ হয়নি।"
"গুড! ও কী বলল?"
"ও এটাও পাবলিকলি প্রকাশ করলো। তার সাথে তাল মেলাতে চলে এলো ওর আরো কিছু বন্ধু!"
ব্যপারটি দুঃখজনক। এক বন্ধু একটি অনুচিত কাজ করলো, আর তাকে সঙ্গ দিতে আরো কিছু বন্ধু উড়ে আসলো। ফেসবুকেও তাদের অদৃশ্য দাঁত কেলানো দেখা যাচ্ছে। একটি মেয়েকে ছোট করার চেষ্টায় সবাই খুব মজা পাচ্ছে। একটি মেয়েকে অপমান করাতেই জগতের সকল সুখ নিহিত!
মেয়েটা আমাকে খুব আহত হয়ে বলল, "আমাদের দেশের ছেলেরা এমন কেন?"
আমি তাকে কিছু একটা বুঝিয়ে বললাম। যদিও আমি নিজেও সেই প্রশ্নের উত্তর জানিনা।
আসলেই, আমাদের দেশের ছেলেরা (সবাই নয়, তবে বেশির ভাগ) এমন কেন? নিজের মা এবং বোনকে সম্মান করতেই তাদের সব পুরুষত্ব শেষ হয়ে যায়। অনেকে সেই কষ্টও নেয় না। মা আর ঘরের কাজের লোকের মাঝের ব্যবধানটুকু তাদের চোখে পড়েনা।
একটা মেয়ে হেঁটে যাচ্ছে। শরীর ঢেকে রাখার মত যথেষ্ট শালীন পোষাক সে পড়েছে। তারপরেও আমাদের চোখ তাদের শরীর থেকে সরে না। মুখ থেকে এমন কিছু একটা শব্দ বেরিয়ে আসবে যা শুনলে মেয়েটির পুরো শরীর কেঁপে উঠবে। আসেপাশের বন্ধু বান্ধব আবার সেটা দেখে খুব মজা পাবে। বিরাট বড় কাজ করে ফেলেছিস ব্যাটা! শাবাস!
একটা মেয়ে বাসের পিছের সীটে বসেছে। সামনের সীটের যাত্রীর সিগারেটের ধোঁয়ায় তার কষ্ট হচ্ছে। কয়েকবার অনুরোধ করার পরেও সে সিগারেট ফেলা যাবেনা। পয়সা দিয়ে বিড়ি কিনছি, একজন 'লেডিসের' কথায় ফেলে দিব?
ভিড়ের মধ্যে এক সুন্দরীকে খুঁজে পাওয়া গেছে। যাই, তার গাটা একটু টিপে আসি। এত ভিড়ে বুঝতেও পারবে না কে করেছে। আর যদিওবা বুঝতে পারে, লজ্জায় কিছু করতে পারবে না। হিহিহি।
কিছুদিন আগে একটা ডকুমেন্টারি দেখেছিলাম। সেখানে এক শ্বেতাঙ্গিনিকে 'ডেয়ার' করা হয় ইন্ডিয়ান লোকাল বাসে চড়ে একঘন্টা ঘুরতে হবে।
মেয়েটা অফিস টাইমে বাসে উঠে পড়লো। এক ঘন্টা পর বেচারী নেমে আসলো। তার চোখ মুখ ফুলে গেছে। চেহারা কাঁদো কাঁদো। ক্যামেরার সামনে সে দেখালো, লোকজন টিপে তার শরীরকে একদম লাল করে দিয়েছে। মৌমাছি কামড়ালেও এই অবস্থা হয় না! অথচ বাসটিতে তখন সব অফিসগামী ভদ্রলোকেরাই ছিলেন।
ইন্ডিয়ায় যা ঘটে, অবধারিতভাবে বাংলাদেশেও তা ঘটে। নিউমার্কেটে শপিংয়ে গেছেন, অথচ এই ধরনের নোংরা শোষনের শিকার হননি এমন সুন্দরী বাংলাদেশে কেউ আছে বলে আমি বিশ্বাস করিনা।
এটাই সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট। এটাও একধরনের ধর্ষণ।
এই সমস্যা সমাধান কিন্তু সরকার বা বিরোধী দলের হাতে নেই। আমাদের হাতে আছে। কিন্তু আমরা শুধরাবো না। আমরা পাবলিকলি একটি মেয়েকে নিয়ে মজার মজার স্ট্যাটাস দিব। আমার বন্ধু বান্ধবের সেই স্ট্যাটাস পড়ে লাইক দিবে। মেয়েটা প্রতিবাদ করতে কমেন্ট করবে। সেই কমেন্টেও তাকে অপমান করবো। এবার আমার বন্ধু বান্ধবেরাও যোগ হবে। লাইকের পর লাইকে ভরে যাবে আমাদের কমেন্টগুলো। একটি মেয়েকে অপমান করাতেই জগতের সকল সুখ নিহিত।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭



আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে লেখাটি সে বিষয়ে। এখানে এক শিম্পাঞ্জির কথা উদাহরণ হিসেবে টেনেছি মাত্র।

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×