somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফরমালিন ও নেতাদের চামচামি

২৬ শে জুন, ২০১৪ রাত ৩:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"আমার এক বন্ধু একদিন বাজারে গিয়ে একটা রুই মাছ কিনলো। বিশাল সাইজের রুই! কানকোটাও টকটকে লাল! আমার বন্ধু আবার মাছের খুবই ভক্ত। এত তাজা এবং বড় মাছ দেখে বেচারা আর লোভ সামলাতে পারলোনা। কিনে ফেলল। দাম একটু বেশি নিল, কিন্তু তাতে সে কিছু মনে করলো না।
মাছওয়ালা বলেছিল মাছটা কেঁটে কুটে দিবে কিনা।
সে আর মাছ কাটালো না। সে তার বউকে মাছটা দেখাতে চায়। এত বড় মাছ দেখাতেও আনন্দ।
বাসায় ফিরতে ফিরতে দেশের বাড়ি থেকে ফোন এলো যে তার বাবা ভীষণ অসুস্থ হয়ে গেছেন। সে যেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাড়িতে ফিরে আসে।
বন্ধু বুঝতে পারলো খবর ভাল না। কারন সাধারণত কোন নিকটাত্মীয়ের "ভীষণ অসুস্থতার" খবর মানে হচ্ছে মৃত্যু সংবাদ। আপনজনদের টেলিফোনে সরাসরি মৃত্যু সংবাদ না দেয়াটা হচ্ছে বাঙ্গালি সংস্কৃতি।
বন্ধু ফ্ল্যাটে আসার আগেই তার বউকে ফোন করে বলল ব্যাগ গুছিয়ে প্রস্তুত থাকতে। তারা এখনই বেরিয়ে যাবে।
বাসে করে দেশের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হবার পরে বন্ধুপত্নীর খেয়াল হলো বিশাল সাইজের রুইটা ফ্রীজে ঢোকানো হয়নি। বাইরেই রেখে চলে এসেছে।
বন্ধু বেচারা তখন পিতৃশোকে বিহ্বল, মাছ নিয়ে তাকে তেমন চিন্তিত মনে হলো না।
বাবার জানাজা, কবর, মিলাদ এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সেরে ঢাকায় ফিরে আসতে তাদের দশ দিন লেগে গেল। বন্ধু বেচারা তখন সদ্য বাবাকে হারানোর যন্ত্রণায় ভাঙ্গা বুক সারাতে ব্যস্ত। মাছের কথা তারা ভুলেই গিয়েছিল।
ফ্ল্যাটের দরজা খুলে রান্না ঘরে এসে তারা দুজনই অবাক! মাছটা ঠিক তেমনই রয়ে গেছে। একদম অবিকৃত, টাটকা!
যেখানে মাছ মরার চার ঘন্টা পর থেকেই পঁচতে শুরু করে, সেখানে দশদিন পেরিয়ে যাবার পরেও কিছুই হলোনা, ব্যপারটা অবিশ্বাস্য!
ঘটনা বুঝতে বন্ধুর কোনই সমস্যা হলো না। মাছে ফরমালিন দেয়া হয়েছিল।
শখের মাছটিকে না খেতে পেরে এভাবে ফেলে দিতে তার বুকে আবারও নতুন করে ফাঁটল ধরলো।"
গল্পটি বলছিলেন আমাদের শ্রদ্ধ্যেয় শিক্ষক দেওয়ান নিয়ামুল করিম। "অর্গানাইজেশনাল বিহেভিওর" ক্লাসে লেকচারের ফাঁকে তিনি গল্পটি শুনিয়েছিলেন। সময়কাল দুই হাজার ছয়। ঠিক আট বছর আগের ঘটনা। খাবারে ফরমালিন মেশানো তারও আগে থেকে হয়ে আসছে। বাংলাদেশের ফল, মাছ, মাংস সবকিছুতেই বিষাক্ত কেমিক্যাল মিশিয়ে যুগের পর যুগ ধরে মানুষকে খাইয়ে এসেছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সমাজ। সেই দেশের ফ্রুট জ্যুসে মেশানো হতো ইটের গুড়া, কনডেন্সড মিল্ক তৈরী হয় সাবানের উপাদান দিয়ে। টমেটো সসে মেশানো হত বিষাক্ত রং!
গণ মাধ্যমে এত সচেতনতার পরেও কোন সরকারকেই সেভাবে কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
ভাম্যমান আদালত মাঝে মাঝে হানা দিয়েছেন কোথাও কোথাও, কিন্তু যেখানে কেমোথেরাপির প্রয়োজন, সেখানে এন্টিবায়োটিকে কাজ হয়?
সব পরিস্থিতিতেই মানিয়ে নিতে অভ্যস্ত বাঙ্গালি এই ভয়াবহ পরিস্থিতেও নিজেকে মানিয়ে নিল। কেউ কেউ রসিকতাও করলো, "ফরমালিন খেয়ে খেয়ে একটা লাভ হয়েছে, মরে গেলে আমাদের লাশ কবরে পচবে না। ইজিপশিয়ান মমি হয়ে বছরের পর বছর টিকে থাকতে পারবো। হাহাহা।"
নিরুপায় মানুষের কাষ্ঠ হাসি।
আহারে!
সেদিন পেপারে একটা দারুন সংবাদ দেখলাম। এখন থেকে নাকি খাদ্যে ফরমালিন পাওয়া গেলে সেই ব্যবসায়ীর বিপক্ষে "attempt to murder" চার্জে অভিযুক্ত করা হবে, এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আলহামদুলিল্লাহ! যাক! যুগের পর যুগ পরে হলেও কোন এক সরকারের টনকতো নড়লো!
এর ফল স্বরূপ সেদিন দেখলাম রাজধানীর সব ফলের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা অনির্দিষ্ট কালের জন্য তাঁদের দোকান বন্ধ ঘোষণা করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, ভ্রাম্যমাণ আদালত অহেতুক ফরমালিন মেশানোর অভিযোগে তাঁদের হয়রানী করে। যারা তাঁদের ফল ডিস্ট্রিবিউট করেন, সেই হীমাগার মালিকদের নাকি কেউ কিছু বলেনা। তাঁদের অভিযোগ, খাদ্যে ফরমালিন সেই হীমাগার মালিকেরাই মেশান।
এখন হীমাগার মালিকদের ধরা শুরু হলে আরও উপরের লেভেলের কারো নাম বেরোবে। তারপর আরও উপরের। এভাবে একটা সময়ে হয়তো বা সত্যি সত্যিই আমাদের দেশ ফরমালিন মুক্ত খাদ্য খেতে পারবে!
সরকারকে অভিনন্দন।
রাজনীতি নিয়ে যখন কথা তুলেছিই, তখন দুয়েকটা গল্পও শেয়ার করা যাক!
আজকের খবরে পড়লাম, সাংসদ মমতাজ নাকি বঙ্গবন্ধু এবং প্রধাণমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে সংসদে চমৎকার গান গেয়েছেন। প্যারোডি গানের কথা ছিল, ‘হায়রে বাঙালি, ওরে বাঙালি, তোরা বুঝবি রে একদিন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তোদের মাঝে থাকবে না যেদিন। শেখ হাসিনার জন্য আছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, তা না হলে ওসব কথা বলাই যেত না।...’
গানটি শুনে নাকি প্রধাণমন্ত্রী হেসে দিয়েছেন।
জাতীয় সংসদ এখন একটি পারিবারিক আড্ডার স্থান হয়ে গিয়েছে। সেখানে সবাই নিজেদের লোক। কিছুদিন আগে একজন আমাদের প্রধাণমন্ত্রীকে "অলী আল্লাহ" বানিয়ে দিয়েছিলেন। এখন শিল্পী মানুষ গান গেয়েও শোনাচ্ছেন। কোনই সমস্যা নাই।
এদিকে আরেকজন, যিনি কিনা বিরোধী দলের সাংসদ (বিরোধী দল মানে এখন কিন্তু জাতীয় পার্টি, বিএনপি আগামী পাঁচ বছরের জন্য সংসদের বাইরে) তিনি প্রস্তাব করেছেন পদ্মা সেতুর নাম বঙ্গবন্ধুর স্ত্রীর নামে রাখতে।
আমি নিশ্চিত, প্রস্তাবনাটি বিপুল ভোটে পাশও হবে।
একটি সেতুর নাম বঙ্গবন্ধু হোক, জিয়াউর রহমান হোক, কিংবা কুতুবউদ্দিন জায়গীরদার হোক, কিছুই যায় আসেনা। সেতু হওয়াটাই জরুরী।
বহুদিন ধরে ঝুলে থাকা পদ্মা সেতু কবে নির্মাণ শেষ হবে কেউ বলতে পারেনা। শেষে দেখা যাবে নামকরণ জটিলতার কারণে সেটা আরও কয়েক বছর পিছিয়ে গেছে! আমার কথা হচ্ছে, আপাতত তেল মারামারি পাশে থাকুক, সেতু নির্মাণ শেষ হোক। তারপরে যার যা খুশি একটা নাম দিয়ে দিক। সাধারণ মানুষের কাছে সেটা পদ্মা সেতুই থেকে যাবে।
আমাদের নেতাদের থাইল্যান্ড পাঠিয়ে দেয়া উচিৎ। তৈল মর্দন তাঁরা ভালই পারেন। এখন মাসাজের টেকনিকটাও যদি শিখে আসতে পারেন, তাহলে আর কষ্ট করে কাউকে এত পয়সা খরচ করে ব্যাংক যেতে হতো না। একেকজন ঘরে বসেই একেকটি "মাসাজ শিল্প প্রতিষ্ঠান" খুলে বসতে পারতেন।
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×