somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্মীয় সম্প্রীতির মানে হচ্ছে পারস্পরিক বিশ্বাস অবিশ্বাসের প্রতি "সমানে সমান" সম্মানবোধ।

১২ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ২:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিছুদিন আগে আমি লিখেছিলাম অন্যের বৌকে পর্দা শেখানোর আগে নিজের ভাল মুসলিম হওয়াটা জরুরি। মুহাম্মদ ইব্ন আব্দুল্লাহকে (সঃ) নবী বানানোর আগে আল্লাহ তাঁকে মক্কার আল-আমিন বানিয়েছিলেন। আমাদেরও কাউকে ইসলাম শেখানোর আগে আল-আমিন (বিশ্বাসী) হতে হবে।
এক ভাই ফালতু কমেন্ট করে বসলেন, "ইসলাম প্রচার করতে হলে আল আমিন হতে হবে? আমার তা মনে হয়না। মানুষ পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি। মানুষকে জ্ঞানে সমৃদ্ধ করেই আল্লাহ নিজের অস্তিত্ব জাহির করছেন। তাই আল্লাহর দেয়া জ্ঞান যে পেয়েছে, তার উপর ফরজ হয়ে যায় সেই জ্ঞান অন্যকে পৌঁছে দেয়া। তার জন্য আল আমিন হওয়া জরুরী না।"
কেন এই কমেন্টকে ফালতু বললাম তার কারন হলো, ইসলাম কখনও ডাবল স্ট্যান্ডার্ড নীতিকে সাপোর্ট করে না। ইসলামে জ্ঞান বিতরণ না করাকে গুনাহ পর্যায়ে গণ্য করা হয় সত্য, কিন্তু একই সাথে সবার আগে ফরজ হচ্ছে অর্জিত জ্ঞানের উপর আমল করা।
মানে হচ্ছে, আমি জানলাম, বুঝলাম, শিখলাম যে আমার সম্পদের আড়াইভাগ অংশ আসলে আমার না, সেটাতে গরিবের অধিকার আছে - আমাকে তাঁদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দিতে হবে। এখন এই অর্জিত জ্ঞান আমি সবাইকে শিখিয়ে দিলাম, কিন্তু নিজে আড়াইভাগ সম্পদ দান করলাম না - তাহলেই কিন্তু আমার প্রতি তিরস্কার। আল্লাহ কুরআনে তাদের প্রতি তিরস্কার করেছেন যারা অন্যকে সৎ কাজের উপদেশ দেয়, কিন্তু নিজেরা মন্দ কাজে লিপ্ত থাকে। সবাইকে শেখালাম মিথ্যা বলা মহাপাপ, অথচ নিজে ক্রমাগত মিথ্যা বলে যাই, এই সুযোগ আমার নেই।
তো - আমাদের যদি ইসলাম প্রচার করতে হয়, অবশ্যই অবশ্যই এবং অবশ্যই আগে সেই বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। নিজে সেটা আমল করতে হবে। এবং তারপরেই কেবল সেটা অন্যকে শেখাতে হবে। শেখানো জ্ঞান যদি ১০% হয়, তবে আমার অর্জিত জ্ঞান অবশ্যই ১০০% হতে হবে। কারন ঐ ১০% এর বাইরে কেউ কোন প্রশ্ন করলে আমি যেন আমার উত্তর নিয়ে তৈরী থাকতে পারি।
বাংলাদেশের ফেসবুক মুমিনদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, এরা ইসলাম শিখে ফেসবুক থেকে, অথবা ফেসবুকে প্রচারিত ওয়াজ মাহফিল থেকে। যেসব মোল্লারা ওয়াজ করে বেড়ায়, তাদের জ্ঞানের বহর কতখানি সে সম্পর্কে দুয়েকটা উদাহরণ দিলেই বুঝতে পারবেন কেন আমি এদের দেখতে পারিনা।
কিছুদিন আগে বলেছিলাম, আমাদের নবীজির (সঃ) বাবা মা কাফির (বিধর্মী, আল্লাহর একত্ববাদে অবিশ্বাসী) অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর সবচেয়ে প্রিয় চাচা ছিলেন আবু তালিব, তিনিও ছিলেন কাফির। তাঁর অতি প্রিয় দাদা ছিলেন আব্দুল মুত্তালিব, তিনিও ছিলেন কাফির। কাজেই কাফিরকে গালাগালি করা মানে আমাদের নবীর বাবা মা চাচা দাদাদের গালাগালি করা। ইসলামে জেনারালাইজ করে গালাগালি করা নিষেধ।
তো এক ভাই বললেন, তিনি নাকি কোন এক ওয়াজে কোন এক মুফতি মাওলানাকে বলতে শুনেছেন, বুখারী শরীফে আছে, আমাদের নবীজি নাকি আল্লাহর কাছ থেকে স্পেশাল পারমিশন নিয়ে তাঁর বাবা মাকে মৃত্যুর পর ইসলাম গ্রহণ করিয়েছেন।
ব্যাপারটা আমাদের ধর্মে সরাসরি কন্ট্রাডিক্ট করে। যা আমল করার আমাদের এই জীবনেই করে যেতে হবে। মৃত্যুর পর আমাদের হাতে কিছু নেই। কুরআনে তাই বলা আছে যে কেয়ামতের দিন অপরাধীরা আল্লাহর কাছে ভিক্ষা চাইবে পৃথিবীতে ফেরত পাঠানোর জন্য - কিন্তু তাদের আর সেই সুযোগ দেয়া হবে না।
এখন যেই সমস্ত ভাইয়েরা কুরআন হাদিস না পড়ে স্রেফ ওয়াজ শুনে শর্টকাটে মুসলিম হতে চায়, তারা যন্ত্রনাতো করবেই। দূর্গা পূজার মৌসুমে যেমন এদের যন্ত্রনা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে।
যন্ত্রনা নম্বর এক: ইসলাম ধর্মে শিরক হচ্ছে সর্বোচ্চ পর্যায়ের গুনাহ। কাজেই বিধর্মীদের পূজামন্ডপ, মন্দির ভাংচুর করো!
কিছু বলার আগে দেখি আল্লাহ বিধর্মীদের ব্যাপারে কী বলেছেন। সূরা আন আমে ১০৭ ০ ১০৮ নম্বর আয়াতে তিনি মহাগুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, "যদি আল্লাহ চাইতেন তবে তারা শেরক করত না। আমি আপনাকে তাদের সংরক্ষক করিনি এবং আপনি তাদের কার্যনির্বাহী নন।
তোমরা তাদেরকে মন্দ বলো না, যাদের তারা আরাধনা করে (তাঁদের দেব দেবী) আল্লাহকে ছেড়ে। তাহলে তারা ধৃষ্টতা করে অজ্ঞতাবশতঃ আল্লাহকে মন্দ বলবে। এমনিভাবে আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিতে তাদের কাজ কর্ম সুশোভিত করে দিয়েছি। অতঃপর স্বীয় পালনকর্তার কাছে তাদেরকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তখন তিনি তাদেরকে বলে দেবেন যা কিছু তারা করত।"
সূরা বাকারায় আয়াতুল কুর্সির ঠিক পরের আয়াতেই (২৫৬) তিনি বলেন, "দ্বীনের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি বা বাধ্য-বাধকতা নেই।"
সূরা কাফিরুনের বিখ্যাত আয়াত, যেখানে আল্লাহ বলেন, "তোমাদের ধর্ম তোমাদের কাছে, আমাদের ধর্ম আমাদের।"
এবং রাসূলুল্লাহ(সঃ) নিজের মসজিদের ভিতর খ্রিষ্টান ধর্মযাজকদের পূজার/ইবাদতের অনুমতি দিয়ে যেই উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন, সেটা কয়জন মুসলমান জানেন?
তাহলে কী দাঁড়ালো? পূজা মন্ডপ ভাংচুরতো বহুদূর, ওদের দেবদেবীকে নিয়ে "মন্দ কথা" (গালাগালিও না, তারচেয়েও কম, যেকোন নেগেটিভ মন্তব্য) বললেও আমি বেসিক্যালি আল্লাহর বিরুদ্ধে চলে যাব। মানে আমি নিজেই মুসলিম থাকবো না তখন।
এখন আসি যন্ত্রনা নম্বর দুইয়ে। এই ব্যাপারটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সবাই এক্সট্রা মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। না বুঝলে সরাসরি প্রশ্ন করুন। নাহলে গিট্টু বাঁধিয়ে ফেলবেন।
ইসলাম ধর্ম মতে পূজার সময়ে কোন পূজা মন্ডপে মুসলিমদের যাওয়া নিষেধ। এটি এই ধর্মের নিয়ম, এবং এই নিয়মের ব্যাপারে এই ধর্মের সর্বোচ্চ পর্যায়ে কোন দ্বিমত নেই। প্রতিটা স্কলার এপ্রুভ করেন। কিন্তু তৃণমূল পর্যায়ে এই নিয়মের ইন্টারপ্রিটেশনে বিরাট ফারাক রয়ে গেছে। সমস্যাটা হচ্ছে, কেউ বলছে গ্লাসের অর্ধেক পানি, কেউ বলছে গ্লাসের অর্ধেক খালি। ব্যাপারটা দর্শনার্থীর দৃষ্টিভঙ্গির উপর, তার অন্তরের উপর।
ব্যাখ্যা করছি। ব্যাখ্যার সুবিধার জন্যই আমি উপরে কুরআন হাদিস থেকে কতিপয় উদাহরণ দিলাম স্রেফ এইটা বুঝাতে যে বিধর্মীদের প্রতি আমাদের মনে কোনরকম নেগেটিভ চিন্তা/ঘৃণা পোষন করার সুযোগ নেই। সেটা ইসলামই নিয়ম করে দিয়েছে। তারমানে "গ্লাসের অর্ধেকটা খালি" তত্ব প্রথমেই বাদ গেল। এখন প্রশ্ন আসতেই পারে, এমনই যদি হয়, তাহলে কেন ওদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় আনন্দের দিনে, আমাদের মন্দিরে যাওয়া নিষেধ করা হলো? ওদের বাড়িতে যেতে সমস্যা নাই। পূজা বাদে অন্য সময়েও ওদের ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রবেশ নিষেধ না। (উদাহরণ জেরুসালেমের পতনের পর উমারের (রাঃ) গীর্জা পরিদর্শন।) তাহলে কেন পূজার সময়েই নিষেধ?
এই নিয়মটা বুঝতে হলে সবার আগে আপনাকে ইসলাম বুঝতে হবে। আপনি মুসলিম হলেও বুঝতে হবে, বিধর্মী হলেও বুঝতে হবে।
ইসলামের মূল ভিত্তি হচ্ছে আল্লাহর/ঈশ্বরের একত্ববাদ। মানে হচ্ছে, আল্লাহর সমকক্ষ কেউ নেই। তিনি আমাদের সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, লালনকর্তা। তিনিই যাবতীয় ক্ষমতার কেন্দ্র, তাঁর হুকুম ছাড়া ইহলোক, পরলোকে কারোরই কিচ্ছু করার ক্ষমতা নেই।
এইটাও মানতে হবে মুহাম্মদ (সঃ) তাঁর প্রেরিত পুরুষ, তাঁর একজন আজ্ঞাবহ দাস, আমাদের পথ প্রদর্শক, এবং রাসূলুল্লাহ হবার পরেও তাঁর ঐশ্বরিক কোনই ক্ষমতা নেই। তিনিও একজন মানুষ, সুপারম্যান নন।
কাজেই, এই সূত্রানুসারে, যারা বিশ্বাস করে রাসূল (সঃ) আলোর তৈরী, তাঁর ছায়া মাটিতে পরতো না, আল্লাহর কাছে কিছু চাইতে হলে তাঁর মাধ্যমে চাইতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি, এই সবকিছুই শির্ক পর্যায়ের গুনাহ।
যেখানে রাসূলুল্লাহর এই অবস্থা, সেখানে আমাদের দেশে মাজারে মৃত ব্যক্তি, পীর ফকির, আউলিয়া, দরবেশ ইত্যাদি নানান জীবিত ও মৃতদের কবর ঘিরে যাবতীয় "ধর্মীয় অনুষ্ঠান" (ওরস, মিলাদ, শিন্নি, মাহফিল ইত্যাদি) সব শির্ক পর্যায়ের গুনাহ। আমি সিলেটি, এবং জন্ম চিটাগং, তাই এই যন্ত্রনা সেই ছোটবেলা থেকেই সহ্য করে এসেছি। বারো আউলিয়ার পুন্য ভূমি হচ্ছে চিটাগং, আর ৩৬০ আউলিয়ার পুণ্যভূমি হচ্ছে সিলেট। সিলেট-চিটাগংকে ধর্মীয়ভাবে পুণ্যভূমি ডিক্লেয়ার করাটাও শির্ক। আমাদের ধর্মীয় পুণ্যভূমি পৃথিবীতে মাত্র তিনটি, মক্কা, মদিনা এবং জেরুসালেম। জন্মভূমি হিসেবে বাংলাদেশকে পুণ্যভূমি জ্ঞান করি "অধর্মীয়" কারনে, কাজেই ওটাতে দোষ নেই। কিন্তু ইচ্ছামতন ধর্মীয় ট্যাগ দেয়ার অধিকার ইসলামে নেই।
মাজারে যাওয়া, মানত করা, তাবিজ, কবজ ইত্যাদি সবকিছুর কথাতো বাদই দিলাম। মুসলিমদের কবরে যাওয়ার কেবলমাত্র দুইটি বৈধ কারন থাকতে পারবে, এক, মৃতের জানাজা, দাফন। এবং দুই, মৃতদের গুনাহ মাফের জন্য দোয়া চাইতে চাইতে নিজের মনকে বারবার রিমাইন্ডার দেয়া যে একদিন এখানেই আসতে হবে। এছাড়া আর কোন উদ্দেশ্যে যাওয়া (পরীক্ষার আগে বাবা শাহজালালের দোয়া, বা সন্তান লাভের জন্য বাবা শাহ মগদুমের দরগায় চাদর বিছানো ইত্যাদি) হারাম।
আর জীবিত পীরের কাছে কেবলমাত্র ধর্মীয় শিক্ষালাভের উদ্দেশ্যে যাওয়া যেতে পারে। সেটাও, নামাজ কিভাবে পড়তে হয়, যাকাত কতটুকু, কোন সম্পদের উপর আদায় করতে হবে ইত্যাদি খুঁটিনাটি নিয়ম কানুন জানা। আমার ছেলের চাকরি হবে কবে? আমার বৌ অসুস্থ, পানিপড়া দিন - ইত্যাদি শির্ক, হারাম।
এইটুকু বুঝতে পেরেছেন?
এই পর্যন্ত মুসলিমদের কালচারের ভিতর কী কী শির্ক চলছে সেটা বললাম। এখন বিধর্মীদের ব্যাপারটায় আসি।
আমাদের ধর্মে আল্লাহর কোন আকার নেই। তাঁর কোন লিঙ্গ নেই। তাঁর কোন রূপ নেই। সূরা ইখলাসের ভাষায়, তিনি এক, তিনি অমুখাপেক্ষী, তাঁর কোন সন্তান নেই, তিনি কারোর সন্তান নন। এবং তার সমতুল্য কেউ নেই।
এবং আমাদের ধর্মের প্রধান শর্ত হচ্ছে, নো ম্যাটার হোয়াট, আল্লাহকে এবং তাঁর রাসূলকে ভালবাসতে হবে সবার আগে। তারপরে মা বাবা সন্তান সন্ততি। আমার বাবা অমুক পীরের ভক্ত ছিলেন, কিন্তু আমার রাসূল নিষেধ করেছেন পীরের কাছে তদবির করতে, তাহলে অবশ্যই আমাকে with due respect আমার বাবার বিরুদ্ধে গিয়ে রাসূলের কথা মানতে হবে। আর আল্লাহ সরাসরি বললেতো কথাই নাই।
এখন যে মুসলিম, সে যদি অন্য কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যায়, এবং দেখে যেই আল্লাহকে সে এত ভালবাসে, যেই আল্লাহকে সে নিরাকার হিসেবে চেনে, তাঁকে আকার (গনেশ) দেয়া হচ্ছে, তাঁকে পুরুষ নারী ইত্যাদি লিঙ্গের রূপ দেয়া হচ্ছে, (দূর্গা, শিব, কৃষ্ণ), তাঁকে সাদা/কালো গাত্রবর্ণ দেয়া হচ্ছে (সরস্বতী, কালী) - তখন একজন মুসলিম হিসেবে মনে কষ্ট পাওয়াটা স্বাভাবিক (যদি তাঁর ঈমান শক্ত হয়ে থাকে)। কারন ইসলামিক ফিলোসফিতে, আল্লাহকে কোন আকৃতিতে কল্পনা করাটাও আল্লাহর ইনসাল্ট করা।
ব্যাপারটা বুঝতে আরেকটু ভাঙি। ১৫ই অগাস্ট জাতীয় শোক দিবস। এই দিনে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের দুই মেয়ে বাদে প্রতিটা সদস্যকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল। দশ বছরের ছোট্ট ছেলেটিকে পর্যন্ত খুনিরা ছাড়েনি। এইদিনে পার্টি করা মানে বঙ্গবন্ধুর প্রতি অসম্মান। অথচ এই দিনেই আমাদের আরেক নেত্রী বার্থডে পার্টি থ্রো করেন। কেক কেটে একজন আরেকজনের মুখে ঠুসে ধরে হাসিমুখে ক্যামেরায় পোজ দেন।
এখন ধরা যাক, আমাদের দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক গভীর শ্রদ্ধাবোধ, ভালবাসা, সম্প্রীতি বিদ্যমান। হাসিনা-খালেদা দ্বন্দ্ব নেই। কিন্তু তাই বলে ১৫ই অগাস্ট তারিখে শেখ হাসিনার কী উচিৎ খালেদা জিয়ার বার্থডে পার্টিতে গিয়ে কেক খাওয়া? এই দিনটা বাদে অন্য যেকোন দিন তিনি গেলে কোন সমস্যা নাই, শুধু এই দিনটা তাঁর জন্য আলাদা।
আমাদের মূল টপিকে ফেরত যাওয়া যাক। যেই মুহূর্তে একজন খাঁটি মুসলিম দেখবে তাঁর আল্লাহকে আকার, লিঙ্গ, গাত্রবর্ণ দান করা হয়েছে, সেই মুহূর্তে তাঁর অতি প্রিয়, অতি শ্রদ্ধেয়, ইবাদতের মালিক আল্লাহর অপমানের জন্য তাঁর রাগ উঠতে পারে তাঁদের প্রতি যারা এই কাজটি করছে। নিজের পিতা মাতার অপমানই যেখানে মানুষ নিতে পারেনা, সন্তানের অপমানে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পরেন পিতামাতা, সেখানে আল্লাহর অপমান মুখ বুজে সহ্য করা কী সহজ কথা? এবং এই বিষয়টি এড়ানোর জন্যই ইসলাম বলছে ঐ প্রতিষ্ঠানগুলোতে ঐ অনুষ্ঠানের সময় না যেতে। কারন, বিধর্মীদের প্রতি অসদাচরণ, বা তাঁদের দেবদেবী নিয়ে মন্দ কথন ইসলামে নিষেধ।
এক কথায়, তোমাদের ভগবানকে অপমান করতে নয়, আমি নিজের আল্লাহকে সম্মান করতেই যাচ্ছি না।
এই পয়েন্টটা ক্লিয়ারতো? তাহলে যন্ত্রণা নম্বর তিনে যেতে পারবো।
যন্ত্রনা নম্বর তিন হচ্ছে, বিধর্মীদের হাতের যেকোন কিছু খাওয়া হারাম! না ভাই। বিধর্মীদের হাতের যেকোন কিছু খাওয়া হারাম না, স্রেফ হারাম জিনিস খাওয়াটাই হারাম। উদাহরণ হচ্ছে, "বিসমিল্লাহ" না বলে জবাই করা অথবা অন্যভাবে হত্যা করা পশুর মাংস খাওয়া, সেটা হিন্দু খ্রিষ্টান বৌদ্ধ বা মুসলিম যে কারোর বাড়িতেই খাওয়া হারাম। মুসলিমদের যে কারনে ম্যাকডোনাল্ডস, বার্গার কিংয়ে খাওয়া হয় না। হালাল রেস্টুরেন্ট খুঁজতে হয়। ইহুদিরা যেমন "কোশার মিট" ছাড়া অন্য কোন রকমের মাংস খায় না। আমাদের ধর্মে মুসলিম মালিকের রেস্টুরেন্টে বা বাড়িতে হারাম মাংস খাওয়ার বদলে হিন্দু মালিকের রেস্টুরেন্টে বা বাসায় হালাল মাংস খাওয়ার নিয়ম। শূকর খাওয়া সর্বাবস্থায় হারাম। বিসমিল্লাহ বললেই শূকর বা মদ হালাল হয়ে যাবেনা। ঈদ উপলক্ষেও যদি আপনি শূকর মাংস বা মদ সার্ভ করেন, সেটা হারাম। এতে হিন্দু মুসলিম ইস্যু জড়িত না।
হ্যা, পূজার খাবার খাওয়া নিষেধ। কেন? ঐ পয়েন্ট নম্বর দুই। ১৫ই অগাস্ট বেগম জিয়ার পার্টিতে শেখ হাসিনার কেক খাওয়া।
এখানে মহাগুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট উল্লেখ করি। ইসলামে ওরস, মিলাদের শিন্নি খাওয়াও কিন্তু নিষেধ। কেন? কারন প্রথম কথা, ওরস মিলাদ ইত্যাদি অনুষ্ঠানগুলোই হারাম। আমাদের ডবল স্ট্যান্ডার্ড নীতিগ্রহণ তীব্রভাবে নিষিদ্ধ। অনুষ্ঠান হারাম, কিন্তু অনুষ্ঠানের খাবার আরাম - ব্যাপারটা আমাদের মাঝে থাকতে পারবে না। তাছাড়া মিলাদ/ওরস যারা করেন, তাঁদের একটি ধারণা আছে যে এই শিন্নিতে (বিরিয়ানি, খিচুড়ি বা জিলাপি) আল্লাহ বরকত দেন। নিয়্যত করে খেলে মনোবাসনা পূরণ হয়, ইত্যাদি ইত্যাদি। কাজেই এটাও শির্ক। আল্লাহ ছাড়া কোন খাদ্যের ক্ষমতা নেই আপনার মনোবাসনা পূরণ করার। আপনি আল্লাহর ক্ষমতা সেই খাদ্যকে দিয়ে দিলেন।
এইবার আরেকটা পয়েন্টে আসা যাক কেন ভিন্নধর্মের "ধর্মীয় অনুষ্ঠানে" যাওয়া উচিৎ না। অন্যতম প্রধান কারন হচ্ছে মিশ্রতার সুযোগ।
আমি ভিন্ন ধর্মের কোন অনুষ্ঠানে গিয়ে দেখলাম ওদের পুরোহিতের অনেক সম্মান। পুরোহিত যা বলছেন, তাই লোকে লুফে নিচ্ছে। পুরোহিতের উচ্ছিষ্টের উপর লোকে গড়াগড়ি দিচ্ছে। ওদের বিশ্বাস এতে পাপ কাটা যাবে, অথবা পুন্য অর্জন হবে।
এইটা দেখে আমার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেললো। আমি এসে ইসলামিক পুরোহিত সেজে আস্তানা খুলে ফেললাম। ইসলামে এর অনুমতি নেই, কিন্তু আমার যারা মুরিদ, তারা কতটুকুই বা ইসলাম জানে? তাঁরা এসে exactly সেটাই করবে যেটাকে আমাদের ধর্মে শির্ক বলে। দুর্বল ঈমানের কারণেই কাজটা করবে। যেমন, সিলেটে এক পীরকে চিনতাম যিনি সুপারি খেয়ে থু করে মাটিতে ফেললে লোকে সেটা কাড়াকাড়ি করে নিয়ে যেতেন পুণ্যের লোভে। আমাদের দেশে ন্যাংটা ফকিরেরও মুরিদ জুটে যায়। ঢাকা শহরে এক বদ্ধ পাগলের সাথে দল বেঁধে নেকীসন্ধানীদের হাঁটাহাঁটি করতে দেখেছি আমি। আফসোস।
কাজেই দেখা যাচ্ছে, আপনি শক্ত ঈমানের লোক হলে আপনার আল্লাহর অপমানের জন্য সেই অনুষ্ঠানে অফেন্ডেড হবেন, আবার দুর্বল ঈমানের লোক হলে নিজের ধর্মে বেদাত ঢুকিয়ে দিবেন। মধ্যম ঈমান বলে কোন টার্মতো আমাদের ধর্মে নাই। এখন আপনি কি করবেন? ঠিক এই কারণেই বলা হয়েছে, বেস্ট হচ্ছে পূজা চলার সময়ে তুমি পূজাস্থানের বাইরে অবস্থান করো।
মক্কা বিজয়ের পর মক্কার ব্র্যান্ড নিউ মুসলিমরা রাসূলুল্লাহকে (সাঃ) বলেছিলেন, "জাহেলী যুগের মতন আমাদের একটি পবিত্র গাছ দিন, যেখানে যুদ্ধের আগে আমরা আমাদের অস্ত্রশস্ত্র ঝুলিয়ে রাখবো, যাতে সেগুলোর উপর আলাদা বরকত হয়, এবং আমরা যুদ্ধে বিজয়লাভ করি।"
নবীজি (সঃ) সেদিন ভীষণ মর্মাহত হয়েছিলেন এদের এই আব্দারে। তিনি তুলনা করেছিলেন মূসা (আঃ) নবীর উম্মতদের সাথে, যারা তাঁকে বলেছিল একটি সোনার বাছুর বানিয়ে দিতে যাকে তাঁরা পূজা করতে পারবে।
আমাদের যুগে এইসব পীর, দরবেশ, মাজার, তাবিজ, মানত, শিন্নি ইত্যাদি দেখলে আমাদের নবীর (সঃ) কী অবস্থা হতো? এরা কী কখনও ভেবে দেখেছে?
যাই হোক, ব্যাক টু দ্য টপিক।
পূজার সময়ে অনেক মুসলিমই অতি চেতনায় চেতিত হয়ে হিন্দুদের সাথে দুর্ব্যবহার করবে। যদি কেউ সহীহ মুসলিম হয়ে থাকেন, নিজের আল্লাহ এবং নবীকে সম্মান করে থাকেন, তাহলে তিনি অবশ্যই আল্লাহর নির্দেশ মান্য করবেন, এবং নিশ্চিত করবেন, তাঁর বিধর্মী ভাইয়েরা যেন নির্বিঘ্নে তাঁদের ধর্মীয় উৎসব পালন করতে পারে।
একই সাথে এইটা মনে রাখবেন, ধর্মীয় সম্প্রীতির মানে হচ্ছে পারস্পরিক বিশ্বাস অবিশ্বাসের প্রতি "সমানে সমান" সম্মানবোধ। পূজায় যদি কেউ যেতে না চান, পূজার খাবার খেতে না চান, তাহলে অবশ্যই ব্যাখ্যা করবেন যে কেন খেতে পারছেন না। অবশ্যই তাঁদের বুঝতে সাহায্য করুন যে আপনি তাঁদের ধর্মকে অপমান করতে নয়, বরং নিজের ধর্মকে সম্মান করতেই এই কাজটা করছেন। তিনি যদি আপনার "বন্ধু" হয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই ব্যাপারটি বুঝবেন।
আমার এক হিন্দু ব্রাক্ষন বন্ধু আমাদের মুসলিম বন্ধুদের বাড়িতে রান্না করা খাবার খায় না। মধ্যদুপুর বা রাতে, যখন আমাদের বাড়ি থেকে কাউকে ভাত না খাইয়ে বিদায় জানানো রীতিমতন পারিবারিক অপমান, সেখানেও আমরা কেউ কখনই তাঁকে কারন জিজ্ঞেস করি না। ওটা তাঁর ধর্মীয় রীতি হতে পারে, অথবা হতে পারে সেটা ব্যক্তিগত কসম। আমরা সেটাকে সম্মান করি। আমরা "বন্ধু" বলেই এইসব ধরাধরি করে অপমান গায়ে মাখিনি। বুঝি যে সে আমাদের সম্মান করে, আমরাও তাঁকে সম্মান করি। বন্ধুত্বের শর্তই এটি, ভালবাসা, সম্মান আর শ্রদ্ধা।
বর্তমান বাংলাদেশের তথা বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে, এই পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ থাকাটা মহাগুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ২:৪৯
৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×