somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাবা মা ও আমরা

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফেসবুকে একটি ভিডিও দাবানলের মতন ছড়াচ্ছে। ভারতে এক কুলাঙ্গার পুত্র নিজের পিতাকে চড়থাপ্পড় মারছে। বৃদ্ধ পিতা চুপচাপ সেই মার হজম করছেন।
প্রতিবেশীরা এই এক ভাল কাজ করেছেন। ঘটনাটির ভিডিও আগে করে তারপরে বদমাইশটাকে পাকড়াও করেছেন। যাতে কোনভাবেই অস্বীকার করে পিছলাতে না পারে। শুনেছি ব্যাটার শাস্তি হয়েছে। আবার পিতার প্রার্থনায় মুক্তিও পেয়েছে সে। আহা পিতা! তোমাদের বিশাল হৃদয়ের ছিটেফোঁটাও যদি সন্তানেরা পেত!
ঘটনাটি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত দুঃখজনক। শুধু যে ভারতেই ঘটছে এমন ঘটনা তা কিন্তু নয়। অ্যামেরিকায় এমন অনেক কেস সম্পর্কে পড়েছি যেখানে পুত্র কন্যার হাতে বাবা মা খুন পর্যন্ত হচ্ছেন। এক দুইটি "বিচ্ছিন্ন" ঘটনা বলে পাশ কাটাবার চেষ্টা করাটা আমার কাছে ছোটলোকিপনা মনে হয়। এক দুইটি করে ঘটলেও এই ঘটনা অহরহই ঘটছে। অ্যামেরিকা বলেই জনসম্মুখে আসছে। ইন্ডিয়াতে শুনেছি সাউথ ইন্ডিয়ায় কোন কোন গ্রামেও এমন ঘটনা ঘটে থাকে। জাপানে এক সময়ে বৃদ্ধ পিতামাতাকে পাহাড়ে ছেড়ে আসা হতো। আমাদের দেশে যে এমন ঘটেনা, চোখ বন্ধ করে বলবেন কোন বিশ্বাসে?
বৃদ্ধ পিতামাতাকে কুকুর বেড়ালের মতন রাস্তায় ফেলে দিয়ে সন্তানদের পালিয়ে যাওয়া, বা বৃদ্ধাশ্রমে ছেড়ে এসে মৃত্যুর সময়েও খোঁজ না নেয়ার ঘটনাতো অহরহই ঘটছে। একবার দেশের এক সংগীত তারকার সাথে আড্ডায় তিনি আফসোস করে বলেছিলেন, "আমাদের দেশে বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, ভাবা যায়?"
সেই ঘটনায় যাবার আগে একটি ঘটনা বলি।
আমি তখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এক বেডরুমের এপার্টমেন্ট ভাড়া করে দুই ভাই থাকি। সপ্তাহে চারদিন কাজ করি, বাকিটা সময় পড়াশোনা। অতি ব্যস্ত সূচি। এমন সময়েই বাবা মা দেশ থেকে বেড়াতে এলেন। দুই মাসের জন্য। ডালাস শহর ভর্তি আমাদের আত্মীয় স্বজন। সবারই তিন চার বেডরুমের বাড়ি। কেউ কেউ বললেন, যেহেতু আমার এপার্টমেন্ট এক বেডরুমের, এবং আমরা এর মধ্যেই দুই ভাই থাকি, তাই আব্বু আম্মু চাইলে তাঁদের বাড়িতে থাকতে পারেন।
আমার বাবা মা সাথে সাথেই বললেন, তাঁরা আমাদের সাথেই থাকবেন।
সেই এক বেডরুমের এপার্টমেন্টে আমরা চারজন থাকলাম পরবর্তী দুই মাস। দীর্ঘ প্রবাস জীবনের সেরা সময়কাল যদি আমাকে বেছে নিতে কেউ বলেন, তাহলে আমি সেই দুইমাসকে প্রথম সারিতেই রাখবো।
আমি তখন শুক্রবার অফ নিতাম। কোন ক্লাস না, কোন কাজও না। বাবা মাকে নিয়ে জুম্মা শেষে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ বাফেট খেতে যেতাম। আমার বাঙালি পিতামাতার আবার দেশি খাবার ছাড়া বিদেশী খাবার গলা দিয়ে নামে না। একবার ম্যাক্সিকান রেস্টুরেন্টে নিয়ে গিয়েছিলাম, ওদের খাবার যে ভাল না - সেটা বাকি জীবন শুনে যেতে হয়েছে।
আমার বাবার জন্য কেউ এক পয়সার কাজ করলে তিনি এমনভাবে তাঁর প্রশংসা করতেন, যেন কেউ শ' টাকার কাজ করেছেন। সেখানে তাঁর ছেলেরা তাঁর জন্য কিছু করলে কী করতে পারেন অনুমান করুন। মোটামুটি মাঝারি মানের সস্তা বা মিডিওকার সেসব রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ খেয়েও আব্বু সবাইকে এমনভাবে বলে বেড়াতে লাগলেন যেন প্রতি শুক্রবার আমরা কোন ফাইভস্টার রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাচ্ছি।
সেই সময়ে এলসিডি টিভি মাত্র নতুন নতুন এসেছে বাজারে। বাংলাদেশে তখনও আসেনি। আব্বুকে আমি একটা সনি এলসিডি গিফট করলাম। এতে যেহেতু আবেগ মিশে আছে, তাই পেছনের গল্পটা বলা যেতে পারে।
একবার আমাদের সিলেটের বাসার টিভি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। আব্বু আম্মু নতুন টিভি কিনতে দোকানেও গিয়েছিলেন, এবং ঠিক তখনই আমি ফোনে জানালাম নতুন সেমিস্টারের টাকা জমা দেয়ার শেষ তারিখ আগামী সপ্তাহে। পঞ্চাশ হাজার টাকা যাবে এক সেমেস্টারে, তখনকার সময়ের হিসেবে অনেক টাকা। এছাড়া বোনের সেমেস্টার ফীতো আছেই। আব্বু ফোন রেখে আম্মুর দিকে তাকাতেই আম্মু বুঝে গেল। সেবার আর তাঁদের টিভি কেনা হয়নি।
আমি তখনই মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, চাকরি পেলে প্রথম যে কাজটা করবো, তা হচ্ছে, বাজারের সেরা টিভি তাঁদের পায়ের কাছে ফেলে দেব। আমি তখনও অফিসিয়ালি চাকরি শুরু করিনি। পার্টটাইম কাজ করে এখানে কোনরকমে নিজের খরচটা তুলি। তবে, টিভি কেনার সামর্থ্য তখন ছিল। তাই সময় নষ্ট না করে প্রথম সুযোগেই প্রতিজ্ঞা পালন করলাম।
বাবার আনন্দ তখন আর দেখে কে! দেশে ফোন করে করে সবাইকে বলছেন তাঁর ছেলে পার্টটাইম কাজ করে তাঁকে এলসিডি টিভি উপহার দিয়েছে! বাজারের সেরা টিভি! সাথে বারোটা ব্র্যান্ডেড পারফিউম! সাথে দামি ব্র্যান্ডের শার্ট! এইটা ঐটা সেটা!
এতে দেখা গেল আব্বুর অতি ঘনিষ্ট এক বন্ধু আব্বুর উপর ভীষণ চটে গেলেন। এমনই রাগ করলেন যে আব্বুর সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলেন। আব্বু মাথা চুলকেও কারন অনুসন্ধান করতে পারলেন না। তখন আমি বুঝলাম, আংকেল আসলে হতাশায় কাজটি করেছেন। তাঁর ছেলে মেয়েরা আমাদের চেয়ে বহুগুন প্রতিষ্ঠিত হয়েও তাঁদের খোঁজ পর্যন্ত নেন না। এদিকে দেখছেন, তাঁরই বন্ধুর ছেলেরা গরিব হয়েও বাবা মাকে পূজা করছে।
আব্বুকে বুঝালাম আমার থিওরি। আব্বু মোটামুটি বুঝলো। এবং কয়েকমাস পরে মিলিয়ে দেখে ঘটনা সত্য।
যে কারনে এত লম্বা ইতিহাস টানলাম, তা হচ্ছে, আমার আব্বুর সেটাই ছিল শেষ অ্যামেরিকা ভ্রমন। এর এক বছরের মধ্যেই তিনি মারা যান। আমি যদি সেসময় টিভি, বা পারফিউম, বা প্রতি উইকেন্ডে রেস্টুরেন্টে খেতে নিয়ে না যেতাম, তাহলে এই জীবনে আর কখনই সেই সুযোগটা পেতাম না।
প্রথমবার যখন আমরা অ্যামেরিকা আসি, এবং আমার আত্মীয়দের বড় বড় বাড়িগুলোতে বেড়াতে যাই, আব্বু একবার বিড়বিড় করে বলেছিল, "হে আল্লাহ, আমার ছেলেদের কী কখনও এমন বাড়ি হবে?"
আমার ফুপাতো বোন তখন বলে, "মামা, তোমার ছেলেরা যদি এই দেশে পড়াশোনা করে, তবে অবশ্যই এমন বাড়ি তাঁদের হবে।"
আমার সারাজীবনের সবচেয়ে বড় আফসোস কী জানেন? মাশাল্লাহ, গত তিন বছর ধরেই আমার নিজের বাড়ি আছে। এবং বেশ বড় বাড়ি। কিন্তু আমার বাবাকে আমি সেই বাড়িতে একটি রাতের জন্যও পেলাম না। আমার এক বেডরুমের এপার্টমেন্টে তিনি তৃপ্তির সাথে ঘুমিয়েছিলেন, আমি দেখতে চেয়েছিলাম পাঁচ বেডরুমের বাড়িতে তিনি কিভাবে ঘুমান। আমার মা এখনও বলেন, "যেই লোকটা এই বাড়ি দেখে সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন, সেই দেখে যেতে পারলো না।"
মানুষকে আল্লাহ অসীম ক্ষমতা দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। কিন্তু সময়ের কাছে সেই মহাশক্তিধর মানুষের পরাজয় বড্ড পীড়া দেয়।

এখন বলি আমাদের সৃষ্টিকর্তা বাবা মা সম্পর্কে কী নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনের অতি বিখ্যাত সূরা বনী ইসরাঈলের ২৩ ও ২৪ নম্বর আয়াতে তিনি বলেছেন, "তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহার কর। তাঁদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাঁদের ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাঁদেরকে ধমক দিও না এবং তাঁদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা বল।
তাঁদের সামনে ভালবাসার সাথে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বলঃ হে পালনকর্তা, তাঁদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তাঁরা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।"
আয়াতটি ভাংচুর করা যাক। অনেক অনেক গভীর এসব কথাবার্তা, বাড়তি মনযোগ দিয়ে পড়ুন।
প্রথমেই বুঝতে হবে আয়াতটি কবে নাজেল হয়েছে। এটি মক্কাবতীর্ণ সূরা, এবং ইসলামের একদম প্রাথমিক পর্যায়ে নাজেল হওয়া। মানে হচ্ছে, তখনও নামাজ ফরজ করা হয়নি, তখনও যাকাত রোজা পর্দা ইত্যাদি ফরজ করা হয়নি। তখন কেবল এই প্রচারণা চলছে যে আল্লাহ ছাড়া আর কোন উপাস্য নাই, এবং মুহাম্মদ (সঃ) তাঁর প্রেরিত পুরুষ। সেই সময়ে আল্লাহ বলছেন বাবা মায়ের সেবা করতে। মানে ইসলাম ধর্মের অতিগুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হচ্ছে পিতামাতার সেবা।
এইবার আসা যাক আয়াতের প্রথম অংশে। আল্লাহ নিজের ইবাদতের সাথে "এবং" দিয়ে যুক্ত করে দিয়েছেন পিতামাতার সেবার কথা। আর কোন কিছুকেই এইভাবে আল্লাহ যুক্ত করেন নি। হাদিস শরীফে (তিরমিযী) তাই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, জান্নাতের সবচেয়ে বড় দরজা হচ্ছে পিতামাতা। মানে বাবা মায়ের সেবার করলে জান্নাত লাভের রাস্তা অতি সহজ হয়ে যায়।
রাসূলুল্লাহ এও বলেছেন, "আল্লাহর সন্তুষ্টি পিতামাতার সন্তুষ্টিতে, এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টি পিতা মাতার অসন্তুষ্টিতে।"
একবার সুদূর ইয়েমেন থেকে এক লোক এসে বললেন, "ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আপনার সাহাবী হতে চাই। আমি আপনার সেবা করতে চাই, ইসলামের জন্য জিহাদ করতে চাই। কিন্তু আমি বাড়ি ছাড়ার সময়ে আমার বাবা মা খুব কাঁদছিলেন, তাঁরা আমাকে আসতে দিতে চান নি। কিন্তু আমি দ্বীনের জন্য তাঁদের ত্যাগ করে চলে এসেছি।"
তখনকার দিনে মুসলিম সংখ্যা তেমন বেশি নয়। জিহাদে প্রতিটা সৈন্যের মূল্য অপরিসীম। তারপরেও আমাদের রাসূলুল্লাহ কী জবাব দিলেন জানেন?
"তুমি তোমার বাবা মাকে কাঁদিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য এসেছো? এই মুহূর্তে ফিরে যাও তাঁদের কাছে, এবং তাঁদের মুখে সেভাবে হাসি ফোটাও যেভাবে তুমি তাঁদের চোখে অশ্রু এনেছো!" (আবু দাউদ)
আয়াতের পরের অংশে আল্লাহ বুঝিয়েছেন, পিতামাতাকে বৃদ্ধ হতে দেখা সবার সৌভাগ্যে হয়না। আমার নিজের বাবা বৃদ্ধ হবার আগেই মারা গেছেন। আরও অনেকেই আছেন যাদের পিতামাতা শৈশবেই গত হন। আমাদের রাসূলুল্লাহর (সঃ) বাবা মারা গিয়েছিলেন তাঁর জন্মের আগেই। কাজেই যদি কেউ সৌভাগ্যবান হয়ে থাকে, তবেই কেবল সে একজন অথবা দ্বিগুন সৌভাগ্যবান হলে দুইজনকেই বৃদ্ধ হতে দেখবে। এবং তখন যেন সে তাঁদের প্রতি সর্বোচ্চ শিষ্টাচারপূর্ন আচরণ করে।
এখন এইটা আল্লাহর খেলার অংশ যে মানুষ যত বৃদ্ধ হতে থাকে, সে ততই দূর্বল হতে থাকে। তাঁদের স্মৃতিশক্তি লোপ পায়, তাঁদের স্বাভাবিক বুদ্ধিবিবেচনা লোপ পায়। কেউ কেউ এতই দূর্বল হয়ে যান যে শিশুদের মতই বিছানাতে পেশাব পায়খানা করেন। এমন অবস্থায় তাঁদের কোন কোন আচরণে সন্তানরা মনে মনে বিরক্ত বোধ করতেই পারে। এবং ইসলামে বিরক্ত বোধ করাটাকে হারাম করা হয়নি। কিন্তু সেই বিরক্তি প্রকাশকে আল্লাহ কুরআনের মাধ্যমে হারাম ঘোষণা করেছেন। "উহ" বা "উফ" শব্দটি হচ্ছে বিরক্তিপ্রকাশের সর্বনিম্ন মাধ্যম, এর নিম্নে কোন প্রকাশভঙ্গি নেই। সেই নিম্নস্তরের বিরক্তিপ্রকাশটিকেও আল্লাহ নিষিদ্ধ করে বলেছেন, উফ শব্দটিও তাঁদের সামনে উচ্চারণ করা যাবেনা। ধমক ধামকতো অবশ্যই না। সেখানে মাকে মিষ্টি খাওয়ানোর অপরাধে বাবাকে মারধর করলে আল্লাহ সেই সন্তানকে কী কঠিন শাস্তি দিবেন, কল্পনা করাও দায়।
এবং এর পরের আয়াতটিতেই আল্লাহ বলেছেন সেই বিখ্যাত আয়াত, যা আমাদের দেশে বাচ্চা বয়স থেকেই শেখানো হয়, রাব্বির হামহুমা, কামা রাব্বা ইয়ানি সগীরা। "হে পালনকর্তা, তাঁদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তাঁরা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।"
এর ব্যাখ্যা সবাই জানেন। বিস্তারিত লেখার প্রয়োজন দেখছি না।
আমাদের ক্যানভাসের অতি অতি পরিচিত এবং বিখ্যাত এক লেখক ভাইয়ের সাথে ইনবক্সে কথাবার্তায় সেদিন জানলাম তাঁর বাবা ভীষণ অসুস্থ। একারনেই তিনি লেখালেখি করতে পারছেন না।
আমি সাথে সাথে বললাম, লেখালেখি বন্ধ করে আপাতত পূর্ণ মনোযোগ বাবার প্রতি যেন দেন। বাবা আগে সুস্থ হন, লেখালেখি বই প্রকাশ ইত্যাদি আরও বহুবার করা যাবে।
তিনি তখন একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা বললেন। তা হচ্ছে, "পিতার মূল্য তুমি আমার চেয়ে বেশি বুঝবে। কারন আমার বাবা আছেন, তোমার নেই।"
জীবনে মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত মানুষের সবচেয়ে বড় আফসোস কী জানেন? জীবনের এই সোনালী সময়টাতে নিজের বাবা বা মাকে একসাথে না পাওয়া। হুমায়ূন আহমেদ যেমন তাঁর পরিচিতদের আফসোস করে বলতেন, তাঁর প্রচুর টাকা, কিন্তু নিজের বাবাকে এক প্যাকেট দামি সিগারেট কিনে দেবার ক্ষমতা তাঁর নেই।
ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডআপ কমেডি কিং কাপিল শর্মা বহুবার বলেছেন, তাঁর বাবা বহু আগেই পৃথিবী ত্যাগ করেছেন। সৌখিন মানুষ ছিলেন, কিছু শখ মনে লালন করতেন, এবং টাকার অভাবে সেসব শখ পূরণের আগেই ক্যান্সারে মারা গেলেন। এখন যদি তিনি বেঁচে থাকতেন, তবে পিতার শখ পূরণের জন্য কাপিল বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করতেন না।
বিখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ আল জুবায়ের (রাঃ) যেদিন মারা যান, তাঁর ছেলে সেদিন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, পিতার মৃত্যুতে আমি কাঁদছি না। আমি কাঁদছি এই ভেবে যে আজ আমার বেহেস্তে যাবার সবচেয়ে সহজ পথটি বন্ধ হয়ে গেল।
পূর্ণবয়স্ক মানুষের সবচেয়ে বড় গিল্টি ফিলিংস হচ্ছে, পিতা মাতা যখন বেঁচে ছিলেন, তখন অতি তুচ্ছ কোন ঘটনার কারনে তাঁদের সাথে করা দুর্ব্যবহার। যেমন টিভির চ্যানেল নিয়ে ঝগড়া, অথবা আরও তুচ্ছ কোন বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি, এবং তাঁদের মনে আঘাত দিয়ে কোন কথা বলা। তাঁদের মৃত্যুর পরে সেইসব ঘটনাই বারবার মনে আসে, এবং সেটার জন্য আফসোস করে মরা।
অনেককেই বলতে শুনি, আজ যদি আমার মা বেঁচে থাকতো, তাহলে তাঁর পা ধুয়ে চুমু খেতাম।
তাঁদের মৃত্যুর পর বিপুল সমারোহে মিলাদ-শিন্নির আয়োজন করা হয়। লাখ লাখ কোটি কোটি টাকা খরচ হয় সেসবে।
কিন্তু এই কথা এখন বলে বা এইসব কাজ এখন করে লাভ কি ভাইয়েরা ও বোনেরা? বাবা মা যতদিন সাথে আছে, ততদিন নাহয় তাঁদের সেবা করেন। পায়ে চুমু খাবার দরকার নেই, স্রেফ ভাল আচরণ করুন, এতেই দেখবেন তাঁরা খুশি হয়ে যাবেন।
কিছুদিন আগে আমাদের বাড়িতে বেড়িয়ে যাবার পর মায়ের এক বান্ধবীও "জেলাস" হয়ে তাঁর সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছেন। ভদ্রমহিলার অবস্থা আরও খারাপ। মেয়ে খোঁজ খবরতো নেয়ই না, উল্টো মেয়ের জামাই কিছুদিন পরপর ভদ্রমহিলাকে চাপ দিয়ে বৃদ্ধ বয়সের সঞ্চয়ের টাকা পয়সা হাতিয়ে নিচ্ছে। কিসের জন্য টাকা নিচ্ছে জানেন? গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে ট্রিপ দিবে। বাহামা আইল্যান্ডে ভ্যাকেশনে যাবে। স্বামীর এই ফাজলামিতে মেয়ে বাঁধা দেয় না। ভ্যাকেশনে যে সে নিজেও যায়!
আমার মায়ের প্রতি ভদ্রমহিলার "জেলাসি"তে তাই তাঁর জন্য উল্টো খুব কষ্ট হয়। তিনিতো মেয়ের বাড়িতে থাকতে চাইছেন না। শুধু চাইছেন, একটু খানি সম্মান। তাঁর বান্ধবি পেলে তিনি কেন পাবেন না? হয়তো বেচারি নিভৃতে বসে ভাবেন, "What did I do wrong?"
আহারে!
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১১:৪৭
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×