"করোনা হচ্ছে চীনাদের উপর আল্লাহর তরফ থেকে গজব!"
"কেন?"
"কারন ওরা মুসলমানদের মারে। কারন ওরা চেয়েছিল কুরআন পাল্টে দিতে। কারন ওরা.....।"
"আচ্ছা, তাহলে ইরানে ছড়ালো কেন?"
"কারন, ওরাই ইসলামধর্মকে সবচেয়ে বেশি বিকৃত করেছে।"
"তাহলে বাংলাদেশে করোনা হবে না বলছেন?"
"অবশ্যই হবে না! কারন আমাদের দেশে ওয়াজ মাহফিল হয়। পবিত্র কুরআন, রাসূলের জীবনী নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়। যতদিন আমাদের দেশে লাখে লাখে মুমিন মুসলমান জীবিত থাকবেন, তাঁদের করোনা কেন, করোনার বাপকেও ভয় পাবার কিছু নাই। ঠিক কিনা বলেন?"
"ঠিক ঠিক! কিন্তু যদি কেউ করোনা আক্রান্ত হন?"
"তাহলে বুঝে নিবেন সে মুনাফেক। সে লেবাসধারী মুসলমান!"
"আচ্ছা ভাল।"
"তাছাড়া আমাদের জাতির জনকের সুযোগ্য উত্তরসূরি, গণতন্ত্রের মানসকন্যা, বিশ্ব রাজনীতির বুকে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর, আলেম উলামা পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়া নারী খলিফা, প্রধানমন্ত্রী হযরত শেখ হাসিনা রহমাতুল্লাহ আলাইহির সুযোগ্য নেতৃত্বে এইসব করোনা ফরোনা নিয়ে ভয়ের কোনই কারন নেই। সবকিছুই নিয়ন্ত্রণে আছে। তিনি প্রতিরাতে তাহাজ্জুদ পড়েন। তিনি যতদিন প্রধানমন্ত্রী আছেন, ততদিন আমাদের দেশে করোনা হবেনা।"
"এটাতো আমাদের বঙ্গবাসীর জন্য আনন্দের সংবাদ! আলহামদুলিল্লাহ!"
"আলবৎ! এইসব করোনা ফরোনা নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। সর্দি জ্বরের মতন সামান্য রোগ। মিডিয়া বেশি বেশি হাইপ করেছে। শুধু শুধু প্যানিক সৃষ্টি করার চেষ্টা। আমাদের দেশের মানুষের ইমিউন সিস্টেম ভাল। এইসব ভাইরাসকে আমরা হজম করে ফেলবো, ওরা টেরই পাবেনা। গরিবের শক্তির ব্যপারে কোন ধারণা আছে?"
"না ভাই, ওটা কী?"
"হিন্দি সিরিয়ালে যেমন দেখায় "সুযোগকি শক্তি" "সিন্দুর কি শক্তি" "মঙ্গলসূত্র কি শক্তি".....তেমনই আমাদের দেশে চলে গরিবের শক্তি। বিশেষ করে গার্মেন্টস কর্মী গরিবদের এই শক্তি আছে। এর সামনে করোনা কিছুই না।"
"আচ্ছা আচ্ছা। ভাল ভাল।"
"স্ট্যাটিস্টিক্স দেখেন। সব শীত প্রধান দেশে করোনা ছড়িয়েছে। আমি ম্যাথেমেটিক্যালি প্রমান করে দিয়েছি বাংলাদেশে করোনা ছড়াবে না। তেইশ ডিগ্রির উপর বাঁচবে না। আমাদের কোনই ভয় নেই।"
"কিন্তু ডব্লিউ এইচও বা রেপুটেড বিজ্ঞানীরা বলছেন এর উপর তাপমাত্রার তেমন প্রভাব পড়ে না!"
"ওরা কি আমার চেয়ে বেশি জানে? এই আমি ডাক্তার, আমার চেম্বার আছে। এই যে ফেসবুকে আমার ফলোয়ার আছে। আমি টিভি ইন্টারভিউ দেই। আমার কথা বিশ্বাস হয়না?"
"ইয়ে....মানে...।"
"তাছাড়া একটা কথা কানে কানে বলি শোন। ইতালির এক মুমিন ভাই মামুন মারুফ স্বপ্নে করোনা ভাইরাসের ইন্টারভিউ নিয়েছে। দুই আড়াইঘন্টা যাবৎ দীর্ঘ ইন্টারভিউ চলেছে তাঁদের মধ্যে। একটা সেশনে ভাইরাসের তৃপ্তি মেটে নাই, তাই পরের পর্বের জন্য আবারও সে স্বপ্নে দেখা দিয়েছে। দুই পর্বের এই ধারাবাহিক স্বপ্নে সে নিজে বলেছে বাংলাদেশে সে কাউকে আক্রান্ত করবে না। যাবার আগে সে ফর্মুলাও বাতলে দিয়েছে। ১.Q+৭=১৩! এই হচ্ছে ফর্মূলা। আগেই জানতাম, কিন্তু বলি নাই। এই এখন বললাম। কিন্তু ব্যাখ্যা এখন করবো না। পরে করবো।"
"আচ্ছা আচ্ছা।"
"আরে ভাই, একটা দোয়া শিখায়ে দিব, মুখস্ত করবেন। মাস্ক ফাস্ক কিচ্ছু লাগবে না। যদি আপনার করোনা হয়, তাহলে আমার কাছ থেকে ওষুধ নিয়ে যাবেন। যদি আপনার করোনা হয়, তাহলে কুরআন মিথ্যা হয়ে যাবে!"
এইসব কথাবার্তা দুই তিনমাস আগের।
বক্তাদের কেউ কেউ গর্তে ঢুকে গেছেন, কেউ আক্রান্ত হয়েছেন, কেউ পরপারেও চলে গেছেন। কোটি কোটি মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে। সময় সুযোগ থাকতে কেউ সেগুলো কাজে লাগাইনাই। সাবেক স্বাস্থমন্ত্রী মন্ত্রী যদি স্বাস্থ্যখাতকে দুর্নীতিমুক্ত করতেন, তাহলে আজকে তাকেই হয়তো মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে কবরে যেতে হতো না। ওপারে গিয়ে কাকে দোষ দিবেন তিনি? জীবন তাঁকে একটি সুযোগ দিয়েছিল, তিনি কাজে লাগাননি।
তেমনই আমরা প্রত্যেকেই নিজের নিজের কর্মের ফল ভোগ করবো। কেউ আগে, কেউ পরে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০২০ ভোর ৬:১২