somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুই নম্বরির ফল।

১৮ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বৈরুত বিস্ফোরণে প্রথমআলোর সংবাদ (রয়টার্স থেকে নেয়া) থেকে কিছু চুম্বকাংশ তুলে ধরে নিজের বক্তব্যে আসছি।
"২ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট নিয়ে রাশিয়ার এক ব্যক্তির মালিকানাধীন এমভি রোসাস নামের একটি জাহাজ ২০১৩ সালে পোর্ট অব বৈরুত বন্দরে এসে আটকা পড়ে। জাহাজটির গন্তব্যস্থল ছিল মোজাম্বিক। রুশ ও ইউক্রেনের ক্রুদের সঙ্গে জাহাজের মালিকের দ্বন্দ্বের কারণে সৃষ্ট আর্থিক সংকটের জন্যই বৈরুতে এসে থেমে যায় জাহাজটি, যা আর যাত্রা শুরু করতে পারেনি।
লেবাননের শুল্ক বিভাগের পরিচালক বাদরি দাহারের তথ্যমতে, ২০১৩ সালে থামার পর আর কখনো বন্দর ত্যাগ করেনি জাহাজটি। বাদরি ও অন্য কর্মকর্তারা বেশ কয়েকবার পণ্যবাহী জাহাজটি ‘ভাসমান বোমা’ হিসেবে অভিহিত করে সতর্ক করলেও জাহাজটি নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়নি।
বিস্ফোরক দ্রব্যবোঝাই জাহাজটির অবস্থানের বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এই মামলা পরিচালনা করা এক বিচারকের কাছে ২০১৬ সালে চিঠি লেখেন বাদরির পূর্বসূরি ছফিক মেরহি। সেখানে তিনি লেখেন, ‘অনুপযুক্ত আবহাওয়ায় এই পণ্য মজুত করে রাখায় বড় ধরনের বিপর্যয়ের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। বন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং এর কাজ সচল রাখতে অবিলম্বে এই পণ্যগুলো পুনরায় রপ্তানি করতে বন্দর কর্তৃপক্ষকে আবারও অনুরোধ করেছি।’
ওই বিস্ফোরণের সূত্র হিসেবে এমভি রোসাসের নাম সরাসরি উল্লেখ করেনি লেবাননের কর্তৃপক্ষ। তবে প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব বলেছেন, ২ হাজার ৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট এই বিপর্যয়কর বিস্ফোরণের কারণ। তিনি বলেন, কোনো নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়াই ওই রাসায়নিক পদার্থ ছয় বছর ধরে বন্দরের গুদামে পড়েছিল।
জননিরাপত্তা বিভাগের প্রধানও বলেছেন, উচ্চমাত্রায় বিস্ফোরক পদার্থগুলো কয়েক বছর আগে বাজেয়াপ্ত করে তা বন্দরের গুদামে রাখা হয়েছিল।
এই বিস্ফোরক পদার্থ জানমালের জন্য বড় ধরনের হুমকি তৈরি করতে পারে, এমন উদ্বেগ থাকায় বিষয়টি নিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে বেশ কয়েকবার চিঠি ও নথি চালাচালি হয়।"
এই হচ্ছে প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে জানা এই দুর্ঘটনার পেছনের কারন।
সহজ কথায়, ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও এক জাহাজ ভর্তি বিস্ফোরক রাসায়নিক বন্দরে অরক্ষিত ফেলে রাখা হয়েছিল। বছরের পর বছর। সেদিন বিস্ফোরণ না ঘটলে হয়তো আরও কয়েক দশক সেখানেই পড়ে থাকতো। হয়তো আরও কয়েক জাহাজ ভর্তি বিস্ফোরক এসে জমা হতো সেখানে। যা ভবিষ্যতে আরও ব্যাপক ক্ষতি ঘটাতো নিশ্চিত।

তা আমাদের জনতা প্রথমেই ধরে নিলেন এটি মার্কিন-ইজরায়েলি হামলা। লেবানিজ সরকার যেখানে দাবি করছেন এটি কেমিক্যাল দুর্ঘটনা, একজন বঙ্গীয় সন্তান তর্ক করলেন, আট বছর ধরে ওখানে কেমিকেল পড়েছিল, আজকে হঠাৎ বিস্ফোরণ হলো? আরে বাহ্! পুরা মিসির আলী পর্যায়ের যুক্তি দেখি! কতটা চিন্তাবুদ্ধিহীন আর নির্বোধ তর্ক হতে পারে এটি! তারচেয়ে ভয়ংকর ঘটনা হচ্ছে, সত্য মিথ্যা যাচাই বাছাই না করেই নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর দিকে অঙ্গুলি নিক্ষেপ।
আফসোস! এরা দাবি করে এরা মুসলিম! এদের মন মতন কিছু না বললেই আপনি কাফের! আপনি মুনাফেক! জায়ানিস্টদের এজেন্ট! অথচ পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, "হে ঈমানদারগণ, তোমরা ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাক; আল্লাহর ওয়াস্তে ন্যায়সঙ্গত সাক্ষ্যদান কর, তাতে তোমাদের নিজের বা পিতা-মাতার অথবা নিকটবর্তী আত্নীয়-স্বজনের যদি ক্ষতি হয় তবুও। কেউ যদি ধনী কিংবা দরিদ্র হয়, তবে আল্লাহ তাদের শুভাকাঙ্খী তোমাদের চাইতে বেশী। অতএব, তোমরা বিচার করতে গিয়ে রিপুর কামনা-বাসনার অনুসরণ করো না। আর যদি তোমরা ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে কথা বল কিংবা পাশ কাটিয়ে যাও, তবে আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় কাজ কর্ম সম্পর্কেই অবগত।" (আন নিসা, ১৩৫)
মানে হচ্ছে, ন্যায়ের জন্য আপনাকে প্রয়োজনে নিজের বাবা মা, এমনকি নিজের বিরুদ্ধেও যেতে হলে যেতে হবে। যদি কাঠগড়ায় দাঁড়ানো ব্যক্তি আমার জন্মশত্রুও হয়, এবং আমাকে বিচারের ভার দেয়া হয়, তবুও অতীতের অভিজ্ঞতা যেন বর্তমান বিচারের রায়ে প্রভাব না ফেলে। অর্থাৎ, আমার সাথে জমিজমা নিয়ে বিরোধে জড়ানো ব্যক্তির বিরুদ্ধে কেউ যদি ধর্ষণের অভিযোগ আনে, এবং আমাকে বিচারকের ভার দেয়া হয়, তবে আমাকে ধর্ষণের আলামত, সাক্ষ্যপ্রমান ইত্যাদির ভিত্তিতেই ওর বিচার করতে হবে। আমার ব্যক্তিগত ক্ষোভ, রাগ, হতাশা, প্রতিশোধস্পৃহা ইত্যাদি এই বিচারে প্রভাব ফেলতে পারবে না। এমনকি এই লোকটা যদি আমার পিতার খুনিও হয়ে থাকে, তারপরেও না। আমাকে ওর বিচার করতে হবে কেবলমাত্র এই নির্দিষ্ট অভিযোগের গন্ডিতে থেকেই। যদি প্রমান হয় ও নির্দোষ, তাহলে অবশ্যই আমাকে ওকে বেকসুর খালাস ঘোষণা করতে হবে। কাজটা কঠিন? কিছু করার নাই। আল্লাহর নির্দেশ এটাই।
তেমনই, কেউ ধনী, তাই তেলবাজি বা খাতির কিংবা কেউ গরিব, তাই আল্লাদ দেখাতে তার অপরাধকে উপেক্ষা করা ইত্যাদি বিষয়ও যেন বিচারে প্রভাব না ফেলে।
আমাদের নবী (সঃ) যখন সুদকে হারাম ঘোষণা করেন, তখন সবার আগে নিজের চাচার প্রাপ্য সুদকে বাতিল ঘোষণা করেন।
যে কারনে আমরা দেখি এক ইহুদি ব্যক্তি আলীর (রাঃ) বর্ম চুরি করে নিজের দাবি করায় খলিফা লোকটিকে কাজীর দরবারে নিয়ে যান। কিন্তু সাক্ষী প্রমানের অভাবে আলী (রাঃ) মামলা হেরে যান। মুসলিম কাজী, মুসলিম খলিফার বিরুদ্ধে গিয়ে এক ইহুদির পক্ষে রায় দেন। ঘটনাটি জানেনা এমন একটাও মুসলমান দেশে নাই। অথচ ঘটনাটির শিক্ষা মেনে চলেন এমন মুসলমানও দেশে আছেন কিনা সন্দেহ।
তাহলে যারা গলা ফাটিয়ে মুমিন দাবি করেন, তারা না মানছেন কুরআনের বাণী, না মানছেন রাসূলের ও তাঁর সাহাবীদের শিক্ষা, এদিকে লোকজনকে ফতোয়া দিয়ে বেড়াচ্ছেন কে নাস্তিক, কে মুনাফেক, কে ইহুদি খ্রিষ্টানদের দালাল! বাহ্!
সেদিন আমাদের এক এডমিন/মডারেটর এক রিক্সাওয়ালার কাছ থেকে শুনেছেন বৈরুতের ঘটনা ইহুদি-খ্রিষ্টানরা ঘটিয়েছে। রিক্সাওয়ালার দোষ নেই। সে শুনেছে কোন "ভদ্রলোক" যাত্রীর কাছ থেকেই। এরাই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ! আফসোস!

একই ঘটনা প্রযোজ্য সর্বক্ষেত্রে। আমাদের চিন্তাভাবনার ধরণ এমন হয়ে গেছে যে আপনি যদি কাউকে ডিফেন্ড করতে যান, লোকে ধরেই নেয় আপনি ওর দলের লোক। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আপনি যদি বলেন পনেরো অগাস্ট দিনটিতে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করা উচিৎ হয়নাই (লক্ষ্য করুন, শোক জানানো, নিন্দাজ্ঞাপন ইত্যাদি সব বাদ, শুধু বলছেন কাজটা ঠিক হয়নাই) তাতেই লোকে ধরে নিবে আপনি আওয়ামীলীগের পদলেহী দালাল। আবার সরকারি দলের নানান কর্মকান্ডের (সংখ্যা অগণিত, কিন্তু একটি দুইটিও যদি নেন) সমালোচনা করেন, তাহলেই লোকে আপনাকে বিএনপি জামাত ট্যাগ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি, ল্যাঞ্জা ইজ ডিফিকাল্ট টু হাইড ইত্যাদি ট্যাগ দিতে শুরু করবে।
সেদিন কয়েকজন খুব তর্ক জুড়ে দিলেন ইমরান খান এক কালে প্লেবয় ছিলেন, তাই তাঁর মুখে এখন বা তখনও ইসলামের বাণী মানায় না। ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করলাম এমন কোন কথা কি হাদিস বা কুরআনের কোথাও লেখা আছে? তিনি উদাহরণ দিতে পারলেন না। এর অর্থ এই না যে আমি ইমরান খানের ভক্ত। ওর স্থানে যে কেউ হলেও আমি একই প্রশ্ন করবো। কারন উমার (রাঃ), খালিদ (রাঃ), আবু সুফিয়ানরা (রাঃ) নবী হত্যা করতে চাইতেন। কারোর প্লেবয় হওয়া নিশ্চই নবী হত্যার অপরাধের তুলনায় কিছুই না? তাঁরা যদি মুসলিম হতে পারেন, তাঁদের যদি আল্লাহ ক্ষমা করতে পারেন, তাহলে এই ফতোয়া দেয়া লোকজন কারা? আল্লাহর চেয়েও বড় কেউ?
লিন্ডসে লোহান হলিউডের অভিনেত্রী। এককালের ড্রাগ এডিক্ট। এমন কোন বিতর্ক থাকতো না যেখানে সে জড়িত ছিল না। অথচ এই মেয়েই হঠাৎ হিজাব পরিধান শুরু করলো। হঠাৎই কুরআন পাঠ শুরু করলো। গত বহু বছর ধরেই সে বিতর্কের শিরোনামে নেই। বাঙালিফেসবুকি আলেমরা হলে বলতেন, "হলিউডের নায়িকা কুরআন নিয়ে কথা কয়! হু!"
ইমরানের এক্স গার্লফ্রেন্ড, সাবেক এমটিভি ভিজে এবং কনভার্টেড মুসলিম সম্পর্কে যে কথা বলা হয়েছে। "আলেমের অভাব পড়েছিলতো তাই প্লেবয়ের কাছ থেকে ইসলাম শিখছে।"
এই বুদ্ধিমানপ্রাণীদের কাছে প্রশ্ন, তথাকথিত আলেমদের কাছে কি মিডিয়া জগতের তারকারা আসেন, নাকি তাঁরা যান? তাহলে প্লেবয়ের কাছ থেকে শিখবে নাতো কার কাছ থেকে শিখবে?
অতি সম্প্রতি বার্সেলোনা ৮- ২ গোলে উড়ে গেল। বাঙালি সমাজ আনন্দে উদ্বেলিত। কারন মেসি মারা খেয়েছে! বলাই বাহুল্য, সবাই ব্রাজিল সমর্থক, সেভেনআপের অপমানের শোধ এখন নেয়া হচ্ছে। সেভেনআপের সময়ে যে ইতরামি করা হয়েছে, সেটাই এখন ওরা ফেরত পাচ্ছে। আবার ভবিষ্যতে নেইমারের দলই (পিএসজি হোক বা ব্রাজিল) এমন মারা খাবে, তখন আবারও এই ইতরামি ফেরত আসবে। দুনিয়া গোল। চক্রাকারে ঘটতে থাকে। কিছু বলতে গেলে আপনাকে এক দলের ট্যাগ দিয়ে দেয়া হবে। আপনি ব্রাজিল সমর্থক হলে মেসির প্রশংসা করতে পারবেন না। এইটা বাঙালি ফুটবলপ্রেমীদের নিয়ম। যদিও নেইমার নিজেই মেসিকে গুরু মানেন। এবং বহু আর্জেন্টাইন রোনালদিনহো-রোনালদোর (দ্য ফেনোমেনো) ভক্ত।
মহেন্দ্র সিং ধোনির বিদায়ে আপনি কিছু বলুন, আপনাকে ভারতের দালাল ধরে নেয়া হবে। পাকিস্তানী কোন গ্রেট ক্রিকেটারের (ইমরান বা ওয়াসিম আকরাম) প্রশংসা করার দুঃসাহস করেই দেখুন, আপনাকে রাজাকার ডাকতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করবে না।
অতি সম্প্রতি নেপোটিজম নিয়ে লিখলাম। এক ভদ্রলোক শুরু করলেন টাইগার শ্রফের চেহারা মেয়েলি, ওর কোন যোগ্যতাই নাই ইত্যাদি ইত্যাদি বাণী নিঃসরণ। একটা ছেলেকে চিনে না জানে না, তারচেয়ে বড় কথা, কারোর চেহারা নিয়ে, যেখানে তাঁর কোনই হাত নেই, অকথা কুকথা বলে বেড়াচ্ছে, প্রতিবাদ করতেই বুদ্ধিমান ভদ্রলোক ধরে নিলেন আমি টাইগার শ্রফের ভক্ত!
আরেকজনতো সালমান খানের বিরুদ্ধে এতটাই বিরক্ত যে যা তা বলতে শুরু করলো। ওকে থামতে বলতেই আমাকে বললো, "সালমান খান কি তোর দুলাভাই লাগে যে ওর দালালি করছিস?"
কেন ভাই? আমার দুলাভাই না হলে কি কাউকে গালাগালি নিষেধ করতে পারবো না?

যাই হোক - বাঙালির চিন্তাভাবনা আমি বদলাতে পারবো না। চেষ্টা করতে যাওয়াও বোকামি। বরং ফেরা যাক বৈরুতের ঘটনায়।

আমাদের পুরান ঢাকাতেও একই ঘটনা ঘটে। বারবার সতর্কতার পরেও বাড়িতে বাড়িতে কেমিকেল গুদামজাত করে রাখা হয়। মাঝে মাঝেই তা ভয়াবহ দুর্ঘটনার কারন হয়। তাপমাত্রা, চাপ সহ্য করতে না পেরে কেমিকেল বিস্ফোরণ ঘটে, আগুন ধরে, মানুষের প্রাণহানি ঘটে। তবুও ব্যবসায়ীদের লোভ কমে না। বাসিন্দাদের টনক নড়ে না।
একবার শুধু চিন্তা করুন, যদি মাঝে মাঝে এইসব বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা না ঘটতো, তাহলে কি হতো? সাহস পেতে পেতে প্রতিটা ঘরের একটা দুইটা ফ্ল্যাটে এইভাবে রাসায়নিক বিস্ফোরক গুদামজাত করা হতো। এক বাড়িতে কয়েক টন বডিস্প্রে, তো পাশের বাড়িতেই আরও কয়েক টন হ্যান্ড স্যানিটাইজার জমা করে রাখা হতো। এইভাবে প্রতিটা বাড়িতে কিছু না কিছু জমা রাখতে রাখতে একদিন কেবল একটি বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতো। তারপরে? চারশো বছর পুরানো নগরীকে হিরোশিমা নাগাসাকিতে পরিণত হতে কয়েক সেকেন্ডও সময় লাগতো না। মাঝে মাঝে দুর্ঘটনা যে আসমানওয়ালার রহমত হিসেবে আসে, এখনও যদি না বুঝেন, জীবনেও বুঝবেন না।

নতুন ঢাকাতেও দেখেছি আবাসিক ফ্ল্যাটবাড়ির নিচের দিকের ফ্ল্যাটে কাপড়ের গুদাম বানিয়ে রাখা হয়েছে।
আপনি হয়তো ভাবছেন, আপনার এপার্টমেন্টে এমন দুরবস্থা নেই, তাই আপনি নিরাপদ, এবং আপনার এ নিয়ে কথা না বললেও চলবে। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে, কয়েক বছর আগে যে পুরান ঢাকায় অগ্নিকান্ড ঘটলো, সেখানে নিহত কিছু মানুষের কেউ কেউ ছিল এমনও ছিলেন যারা সেদিন কাবাব খেতে গিয়েছিলেন। মানে হচ্ছে, এমন দুর্ঘটনার শিকার আপনি আমি যে কেউ যখন তখন হতে পারি। শুধু ভুল সময়ে ভুল স্থানে উপস্থিত থাকলেই খেল খতম! কাজেই, কোথাও অনিয়ম দেখলে, যা মানুষের জীবনের ঝুঁকির কারন, আমাদেরই আওয়াজ তুলতে হবে। অন্যের নিরাপত্তার জন্যতো বটেই, নিজের নিরাপত্তার জন্যও। নিজের সন্তানের জন্যও।

আমাদের দেশে এত অগ্নিকান্ড ঘটার পরেও বাড়ির পেছনে বা লাগোয়া ফায়ার এস্কেপ ব্যবস্থা নাই। লোকজনকে হয় বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে সিঁড়ি ব্যবহার করতে হয়, যা ধোঁয়ায় আচ্ছাদিত থাকে। নাহয় ছাদের দিকে দৌড়াতে হয়। তারপর? এক ছাদ থেকে অন্য ছাদে যাওয়ার চেষ্টা, কিংবা নিচের দিকে লাফ দেয়া। অথচ ছাদ থেকে একটি লোহার মই দেয়ালের সাথে এটাচ করে দিলে কোনই সৌন্দর্যহানি ঘটবে না। জায়গাও নিবেন। ঝুঁকিপূর্ণ? একটুতো বটেই। কিন্তু এবাড়ি থেকে ওবাড়ি লাফালাফির চেয়ে ভাল। চোর চলে আসবে? তাহলে সেভাবেই চিন্তাভাবনা করে নিরাপদ কিছু লাগান।

ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ আছে পৃথিবীর জন্মের পর থেকেই। একটা মধ্যম মাত্রার ভূমিকম্পেই যে ক্ষতি হতে পারে, তার জন্য আমাদের কোন সাবধানতা আছে? নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে আমরা যেভাবে পেরেছি বাড়ি তৈরী করেছি। দুই তলার অনুমতি নিয়ে ছয়তলা বাড়ি তৈরী করেছি। ফাউন্ডেশন ছাড়াই একটা দুইটা বারান্দা যোগ করেছি। সিমেন্টের তুলনায় বেশি বেশি করে বালু দিয়ে কোনরকম ইট গেঁথে ফ্ল্যাট বিক্রি করে দিয়েছি। লোহার রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহার করেছি। আমাদের কোন প্রস্তুতি আছে আসন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য? সরকারি কর্মকর্তাদের পরিদর্শনে পাঠান, তারা গিয়ে ভবন মালিকের থেকে ঘুষ দাবি করেন। দশ হাজার, পঞ্চাশ হাজার, এক লাখ টাকা দিলেই বাড়ি ভূমিকম্পপ্রুফ হয়ে যায়। ম্যাজিক! এই ট্রিকস শিখতে হলে বাংলাদেশে যেতে হবে!
একটি সত্য ঘটনা বলে আজকের বকবক শেষ করি।
পরিচিত একজন অনেকদিন ধরেই ড্রাইভিং লাইসেন্স পাচ্ছেন না। তিনি একদিন বললেন, "একটা লিংক পেয়েছি! পরীক্ষা যারা নেয়, তাদের মধ্যে একজন বাঙালি আছেন। তাঁর কাছে কয়েকদিন শিখলেই পাশ করা যাবে। আমার বন্ধুদের কয়েকজন কাজটি করে লাইসেন্স পেয়ে গেছে।"
বললাম যে "ড্রাইভার্স লাইসেন্স অন্যের চেয়েও বেশি প্রয়োজন নিজের নিরাপত্তার জন্যই। কাজেই, সৎ পথেই লাইসেন্স নেয়া ভাল। নাহলে এক্সিডেন্ট করে নিজের প্রাণনাশের সম্ভাবনা থাকে।"
কয়েকদিন পরেই দেখা গেল ঐ পরিচিত বন্ধুবান্ধবদের একজন গাড়ি পেছানোর সময়ে নিজের বৌকে ধাক্কা দিয়ে পা ভেঙ্গে ফেলেছেন। এই হচ্ছে দুই নম্বরির ফল। নিজের ঘাড়ের উপর পড়বেই। পড়তে বাধ্য। কারন পৃথিবী গোল এবং সবকিছুই চক্রাকারে ঘুরে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:৩১
১২টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×