somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চাকরির ইন্টারভিউ কিভাবে দিবেন?

১৮ ই মার্চ, ২০২১ রাত ১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার দেশের (বা পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে যেকোন দেশের) চাকরির নিয়ম হওয়া উচিৎ মেধা ও যোগ্যতা ভিত্তিক। কোন একাউন্ট্যান্টকে আমি চাকরিতে নিলে আমি পরীক্ষা করবো ওর একাউন্টিং বিদ্যা কতদূর। "প্রোডাক্টের উপর ডিসকাউন্ট কি রেভেন্যু থেকে কাটা যাবে নাকি কস্ট অফ গুড্স সোল্ড একাউন্ট থেকে?" এই বিষয়ে ওর পড়াশোনা কতদূর, কি কি সার্টিফিকেট আছে ইত্যাদি ইত্যাদি যাচাই বাছাই করবো। সেটাই স্বাভাবিক নিয়ম হওয়া উচিৎ। এছাড়া ও আমার কর্পোরেট কালচারের সাথে মানাতে পারবে কিনা, ওকে ম্যানেজ করা কঠিন হবে কিনা ইত্যাদি বিষয় বুঝে নিতে হবে কথাবার্তার ধরন থেকে। এইটাই সভ্য দেশে স্বাভাবিক ইন্টারভিউর নিয়ম।
যেমন আমি এই সপ্তাহ থেকেই নতুন কোম্পানিতে নতুন চাকরি শুরু করেছি। আগের কোম্পানির সাথে সাড়ে সাত বছরের মধুর সম্পর্কের সমাপ্তি আমি নিজেই টেনেছি। কেন? কারন আমার আগের কোম্পানি অন্য আরেকটা কোম্পানির কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। কর্পোরেট আমেরিকার অতি সাধারণ ঘটনা। বড় মাছ ছোট মাছকে খেয়ে ফেলে। এতদিন আমরা অন্য কোম্পানিকে কিনতে কিনতে বড় হয়েছি, এইবার আমরাই শিকার হয়েছি।
তা এসব ক্ষেত্রে প্রথমেই যে ব্যাপারটা ঘটে তা হচ্ছে, নতুন ম্যানেজমেন্ট এসে কিছু পুরানো কর্মী ছাঁটাই করে। উপরের লেভেলের ম্যানেজমেন্ট অদল বদল করে। আপনি খুবই ভাগ্যবান হলে আপনার চাকরির কিছু হবেনা। কিন্তু সেটা অনেকটা ভাগ্য নিয়ে লটারির মতন হয়ে যায়। এইজন্য আমি আমার ইমোশনকে কাবু করে নতুন চাকরি খুঁজে সরে পড়েছি। এছাড়া এইটাও মাথায় রাখতে হবে, এই মুহূর্তে ইকোনমির অবস্থা খুব খারাপ। চাইলেই চাকরি খুঁজে পাওয়া যায় না। আমি সাড়ে সাত বছরের প্রেম দেখিয়ে অফিসের সাথে থেকে গেলাম, তারপরে ওরা আমাকে বিদায় বলে দিল - তখন চাকরি খুঁজে পাওয়া কঠিন হতেও পারে। এই রিস্কে আর গেলাম না।
তা আমার চাকরির ইন্টারভিউ হয়েছে ফোনে। প্যান্ডামিকের কারনে স্বাভাবিকভাবেই এখন সবাই বাড়ি থেকে কাজ করছে। সাধারণত লোকজন জুম ইন্টারভিউ করে। কিন্তু যেদিন আমার ইন্টারভিউ ছিল, সেদিন ডালাসে তুষার ঝড়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় ফোনে ইন্টারভিউ হয়েছে।
নানান বিষয় নিয়ে কথা হলো। তাঁরা কি কি সফ্টওয়্যার দিয়ে কাজ করে, আমরা কি কি দিয়ে কাজ করি, ওদের অফিস পরিবেশ কেমন, আমারটা কেমন ইত্যাদি ইত্যাদি। যেহেতু এখন অনেকেই চাকরির ইন্টারভিউ দেন বা নেন, সেহেতু নিজের অভিজ্ঞতার কিছু জরুরি অংশ শেয়ার করছি। আশা করি কাজে আসবে। আমার এসেছে। আলহামদুলিল্লাহ! সবই আল্লাহর সুনিপুন কৌশল! এই পুরো ঘটনা নিয়ে আলাদা করে আরেকটা লেখা লিখবে। আপাতত এই আজকের বিষয়ে ফোকাস্ড থাকি। তা মাত্র দুইটা ইন্টারভিউ দিয়েই একটাতে পেয়ে গেছি। অপরটাতে ঠিক ফেইল করিনি। ম্যানেজার সরাসরিই বলেছেন "তোমাকে আমার খুব ভাল লেগেছে, কিন্তু আমরা এমন একাউন্ট্যান্ট চাইছি যার সফ্টওয়্যার ডেভেলপারদের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। সহজ ভাষায় "একাউন্টেন্ট+বিজনেস এনালিস্ট।"
ইদানিং এই অভিজ্ঞতার লোকদের খুব ডিমান্ড আছে। কেউ যদি এখনও পড়াশোনা শেষ না করে থাকেন, তাহলে বলবো একাউন্টিং ফাইন্যান্সের সাথে টুকটাক কম্পিউটার রিলেটেড কোর্সও মাইনর হিসেবে করে নিতে পারেন। SQL কোড ল্যাঙ্গুয়েজ শিখে ফেলুন। এই ফিল্ডের ভবিষ্যৎ ওদিকেই যাচ্ছে।

ইন্টারভিউর একটি অতি কমন প্রশ্ন হলো "তোমার সম্পর্কে কিছু বলো।"
আপাত দৃষ্টিতে অতি নিষ্পাপ প্রশ্ন মনে হলেও এখানে একটি ট্রিক থাকে। আপনি যদি আপনার বৌ বাচ্চা পোষা প্রাণী সংসারের আলাপ শুরু করে দেন, তাহলে কিন্তু আপনি বাদ। আপনাকে আপনার সম্পর্কে বলতে হলে অবশ্যই আপনার প্রফেশন নিয়ে বলতে হবে। আপনার পড়াশোনা, আপনার ক্যারিয়ার, সফলতা, ব্যর্থতা, এবং ব্যর্থতা কিভাবে কাটিয়ে উঠেছেন ইত্যাদি নিয়ে বলতে হবে। ভুলেও ব্যক্তিগত আলাপ শুরু করে দিয়েন না। এমন কিছু বলবেন না যা কাজের সাথে সম্পর্কিত নয়। যেমন আপনি ফিকশন রাইটার, বাজারে আপনার বই আছে। আপনার গল্প লোকজন মেরে দিয়েছে। কিন্তু তার সাথে একাউন্টিংয়ের কোনই যোগাযোগ নেই। ম্যানেজারের কিছুই যায় আসে না তাতে। তাই এই বিষয়টা তোলার প্রয়োজন নেই। তবে হ্যা, যদি ম্যানেজার নিজে থেকেই বলেন যে তিনি ফিকশন বই পড়তে পছন্দ করেন, তখন এই প্রসঙ্গ তুলতে যেন না ভুলেন।
আবার আপনি এতই পন্ডিত ব্যক্তি যে একাউন্টিংয়ের উপর কোন বই লিখেছেন "সহজ ভাষায় একাউন্টিং" "একাউন্টিংয়ের খুঁটিনাটি" বা এই জাতীয় কিছু। তখন কিন্তু আপনার প্রাইমারি ফোকাসই হবে এই বইয়ের প্রসঙ্গ তোলা এবং এই নিয়ে গল্প করা। কারন "আপনাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ!"
বুঝাতে পেরেছি?
আরেকটি সাধারণ প্রশ্ন হচ্ছে "তোমার স্ট্রেন্থ এবং উইকনেসেস কি?"
আপনি যদি বলেন "আমার কোনই দুর্বলতা নাই" - তাহলে এরা ধরেই নিবে আপনি আপনার দুর্বলতা স্বীকার করতেই ইচ্ছুক না। কাজেই আপনি বাদ। আপনাকে অবশ্যই আপনার দুর্বলতা (প্রফেশনাল হতে হবে, যদি বলে বসেন "সুন্দরী নারীর হাসিই আমার দুর্বলতা" - তাহলে পত্রপাঠ বিদায়) স্বীকার করতে হবে এবং একই সাথে সেই দুর্বলতা ঢাকতে আপনি কি কি কাজ করেছেন সেটা বলতে হবে। যেমন, আপনি বলতে পারেন, "আমি অমুক তমুক সফ্টওয়্যার নিয়ে কাজ করিনি কখনও। তাই আমি কিছু ক্লাস নিয়েছি, শিখছি। এবং আশা করি আগামী কয়েক সপ্তাহেই আমি আয়ত্ত করে ফেলবো।"
"শক্তি" কি? সেটার জবাব দিবেন ওরা কি চাইছে, সেইটার উপর ভিত্তি করে। যেমন ওরা চাইছে এমন কাউকে যে এক্সেলে ওস্তাদ। আপনি এক্সেলের ফর্মুলা, পিভট ইত্যাদি ভাজাভাজা করা পাবলিক। আপনি সেটা ধরেই আগাবেন। ওরা চাইছে টিম প্লেয়ার। আপনি নিজেও দলবদ্ধভাবে কাজ করতে পছন্দ করেন। আপনি সেটা বলবেন। পারবেন না? জব রিকোয়ারমেন্ট ভাল করে পড়ে নিবেন এক্ষেত্রে।

আরেকটি সাধারণ প্রশ্ন, "আমাদের এখানে কেন জয়েন করতে চাও?"
এর উত্তরে জীবনেও বলবেন না যে "আমার একটা চাকরি দরকার। বাড়িতে অসুস্থ মা, অবিবাহিত বোন, রিটায়ার্ড পিতা আছে। সংসারের হাল আমার কাঁধে। আজকে সকালে নাস্তা করে আসিনি.....।" এইসব ইমোশনাল কথাবার্তা ইন্ডিয়ান আইডল জাতীয় অনুষ্ঠানের পাবলিক খুব খায়, প্রফেশনাল জগতে এর ভ্যালু শূন্য।
"আমি শুনেছি তোমরা নাকি ভাল বেতন-ভাতা দাও....." এই জাতীয় কথাবার্তাও বলবেন না। আপনাকে ভাববে লোভী। সুযোগ পেলেই অন্য কোথাও দৌড় দিবেন।
এই প্রশ্নের জবাবটা দিবেন এইভাবে "আমার ধারণা আমার অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা দুইটাই এই কাজের জন্য যথোপযুক্ত। কারন......"
"আমি এই প্রতিষ্ঠানে চাকরির ব্যাপারে উচ্ছসিত কারণ এটা আমাকে (এইটা সেটা) করার সুযোগ দিবে......(প্রফেশন রিলেটেড যেন "কারন" হয়। যদি বলেন এই চাকরির পাশাপাশি আমি নাটক থিয়েটার লেখালেখি করতে পারবো, তাহলে বিদায়।)" ঠিক এই কারণেই ইন্টারভিউর আগে অবশ্যই কোম্পানি সম্পর্কেও কিছু ধারণা নিয়ে যাবেন। গুগলের যুগে যা খুবই সহজ। আর পরিচিত কেউ যদি কোম্পানিতে কাজ করে, তাহলেতো কথাই নাই।
আপনাকে প্রশ্ন করতে বললে বলবেন, "আমাকে হায়ার করলে আগামী ছয়মাসের মধ্যে আমার থেকে তোমার কি এক্সপেক্টেশন?"
তারপরের প্রশ্ন করবেন, "কি করলে এই পদে দ্রুত উন্নতি করা যায়?"
কোম্পানির শেয়ারের মূল্য, প্রোডাক্ট ইত্যাদি নিয়ে কথাবার্তা বলতে পারেন। তাহলে বুঝবে আপনি ভালই রিসার্চ করা সিরিয়াস পাবলিক। যেমন এক এইটিন হুইলার (বিশালাকৃতির ট্রাক) তৈরির কোম্পানিতে একবার শখের বসে ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে প্রশ্ন করেছিলাম, "দুনিয়া এখন শিফট করছে ইলেক্ট্রিক গাড়ির দিকে। তোমাদের এই সম্পর্কে পদক্ষেপ কি? তোমরা কি এখনও ডিজেলের ইঞ্জিনই বানাবে? নাকি তোমরাও ব্যাটারি চালিত মোটরের পরিকল্পনা করছো?"
ইন্টারভিউ নিচ্ছিলেন একাউন্টিং ম্যানেজার। এই প্রশ্নের গভীরতায় ভ্যাবাছ্যাকা খেয়ে গেছে। এই আঁতলামি প্রশ্ন সে আশা করেনি। আমিও শুধু শুধুই জিজ্ঞেস করেছি। আমার কি ঠ্যাকা কে ব্যাটারি গাড়ি বানাইলো আর কে ডিজেলের? কিন্তু ইন্টারভিউতে এইসব দেখাতে হবে।
উত্তরে সে বলেছে, "ব্রাদার আস্কড এ ভ্যারিগুড কোয়েশ্চেন! সঠিক উত্তরটা আমার জানা নেই।"
এই প্রশ্নটাই চাকরির দৌড়ে বহুদূর এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। শুধুমাত্র ওয়াশিংটনে তিনমাস গিয়ে ট্রেনিং নিতে হবে যখন আমার বৌ প্রেগন্যান্ট, তাই ওটাতে আর আগানো হয়নি। আর ঠিক তখনই আমার তখনকার কোম্পানি আমাকে আরও কিছু নতুন দায়িত্ব দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিল আমাকে নিয়ে তাঁদের দীর্ঘ পরিকল্পনা আছে। তাই আমিও মার্কেট থেকে নিজেকে সরিয়ে ফেলেছিলাম।

আমার কারেন্ট বস আমাকে একটা অদ্ভুত প্রশ্ন করলো। "আমাদের দলে বেশিরভাগই মেয়ে। তোমার কোন অসুবিধা নেইতো মেয়েদের সাথে কাজের ব্যাপারে?"
সে এই প্রশ্নটা করেছে, তার মানে এই বিষয়ে তাঁকে এর আগে ঝামেলায় পড়তে হয়েছে। এবং সেই সাথে এটি "বিহেভিওরাল" প্রশ্নও বটে। যেমন অনেকেই সিচ্যুয়েশন দিয়ে বলবে, "ধরো কোন এমপ্লয়ির সাথে তোমার বনে না। কিন্তু তোমাদের একই টিমে কাজ করতে হচ্ছে। এই ক্ষেত্রে তুমি হলে কি করবে?"
এই ব্যাপারে কিছু কথা বলার আছে আমার।
আমার আগের অফিসের আগের বস ছিল একটা মেয়ে। বয়সে আমার চেয়ে কম, কিন্তু অভিজ্ঞতায় আমার চেয়ে অনেক বেশি। আমি কর্পোরেট একাউন্টিংয়ের মাত্র একটি শাখায় কাজ করে অভ্যস্ত। আর সে পাবলিক একাউন্টিং করায় বিভিন্ন কোম্পানির বিভিন্ন শাখায় কাজ করার অভিজ্ঞতা রাখে। এখন আমার জায়গায় এমন অনেকেই আছে যারা এই বিষয়টাকে না মেনে কেবলমাত্র বয়স এবং লিঙ্গের উপর ফোকাস করে বলবে "আজকে আমি সুন্দরী ব্লন্ড হলে আমার প্রমোশন হতো।"
"একটা মেয়ের আন্ডারে কাজ করতে হবে?"
কিংবা আরও নোংরা কিছু বলতো।
শুধু দেশিদের এই দোষ দিব না। আমাদের সাথেই কাজ করতো এক শ্বেতাঙ্গিনী মহিলা, তাঁরও এই স্বভাব ছিল। তাঁর চেয়ে কম বয়সী একটি মেয়ে কিভাবে তাঁর আগে প্রমোশন পেয়ে গেল, সেটা মানতে পারছিল না। এইটা সব যুগে সব সমাজের মানুষের মাঝেই বিদ্যমান।
"আজ আমার গায়ের রং সাদা না বলে......"
"আজ আমি হিন্দু/মুসলিম/খ্রিষ্টান/বৌদ্ধ বলে......"
"আজ আমি পুরুষ/নারী বলে....."
ঘটনার শুরু সেই আদম-ইবলিস যুগে। আদমকে (আঃ) তাঁর জ্ঞান ও অন্যান্য নানান গুনের কারনে সম্মান করতে বলায় ইবলিস কি বলেছিল?
"আমি আগুনের তৈরী আর ও মাটির!"
চাকরির ক্ষেত্রে এই ব্যাপারগুলি আপনাকে মানতেই হবে। যদি দেখেন চাকরিতে আপনার প্রমোশন হয়নি, তাহলে অভিযোগ তোলার আগে চিন্তা করবেন কি করলে আপনার প্রমোশন হতো। যেমন ধরেন আমি নিজেই আপাতত ম্যানেজমেন্টে যেতে আগ্রহী না। আরও তিন চার বছর অপেক্ষা করতে চাই। প্রধান কারন আমার দুই বাচ্চাই ছোট। সপ্তাহে চল্লিশ ঘন্টার বেশি কাজ করতে গেলে এই দুইটাকে সময় দিতে পারবো না। ম্যানেজারের দ্বায়িত্ব হচ্ছে নিজের অধীনস্থ কর্মচারীদের কাজগুলো ঠিকঠাকমতন হচ্ছে কিনা সেটা নিশ্চিত করা। মানে নিজের কাজের পাশাপাশি অন্যের কাজও করা। আপনি খুব লাকি হলে আপনার অধীনস্থ কর্মচারীরা খুব চৌকস হবে। আপনার উপরও লোড কম থাকবে।
কিন্তু যদি কেউ দুর্বল হয়, তখন? তখন দ্বিগুন সময় নষ্ট হবে এর পেছনে। আর দিনশেষে যদি আপনার টিমের কোন ভুলত্রুটি হয়, সেটার জন্য দোষী কিন্তু আপনি। এই কারণেই দেখবেন বিদেশে একটা সড়ক/নৌ দুর্ঘটনার কারণেও মন্ত্রী মিনিস্টার প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত পদত্যাগ করে ফেলে। আর আমাদের অভ্যাস হচ্ছে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে হাত ধুয়ে ফেলা। সেটা করতে পারবেন না। আপনার দায়িত্ব হচ্ছে কাজ শেষ করা। প্রয়োজনে আপনাকে দিনরাত চব্বিশ ঘন্টা কাজ করে হলেও সেটা শেষ করতে হবে। নাহলে বিদায়।
আমি সপ্তাহে চল্লিশ পঞ্চাশ ঘন্টা কাজ করতেই বিরক্ত হয়ে যাই, যেখানে আমার নিজেরই বন্ধু বান্ধব আছে যারা সত্তুর আশি নব্বই ঘন্টা পর্যন্ত কাজ করে।
আপনাকে দেখতে হবে যে প্রমোশন পেল, সে কি এইসব করতে রাজি আছে কিনা। আমার এক ভিপি, সিনিয়র ভিপি দুইটাই ছিল কাজ পাগলা। এতটাই যে সংসার পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছে। আপনি সেই কমিটমেন্টের জন্য প্রস্তুত কিনা। "আমি বাঙালি বলে আমার প্রমোশন হয়নি" জাতীয় আহ্লাদী কথাবার্তা খুবই ফালতু শোনায়। গুগল, মাইক্রোসফট, মাস্টারকার্ড, এলবার্টসন্স, পেপসি (সাবেক) ইত্যাদির সিইও সব ইন্ডিয়ান। ওরাও মাইনোরিটি। আপনার সাথে ওদের পার্থক্য হচ্ছে, তাঁরা এই আহ্লাদী না করে কাজে ফোকাস করেছে, ফল পেয়েছে।

ইন্টারভিউর সময় আমার পরামর্শ হচ্ছে, আপনি সৎ থাকার চেষ্টা করবেন। অনেকেই অনেক কুপরামর্শ দিয়ে বুঝাবে যে চাপা মারতে, কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা থেকেই বলি, কেউ যদি কোন এক্সপার্টের সামনে চাপা মারতে শুরু করে, তাহলে খুব সহজেই ধরা পড়ে। এবং তখন আপনার অন্যান্য বিষয়ে দুনিয়া উল্টে ফেলা ক্রেডিট থাকলেও আপনাকে ওরা একটা বাটপার হিসেবেই দেখবে এবং বাদ দিবে।
ধরেন আপনি জীবনেও এপিকর নিয়ে কাজ করেন নাই। জব রিকোয়ার্মেন্টে দেখলেন আমরা এপিকর এক্সপার্ট খুঁজছি। আপনি সেটা দেখেই রেজুমেতে লিখে বসলেন আপনার দুই বছরের অভিজ্ঞতা আছে এপিকর নিয়ে কাজ করার। আমরা আপনাকে ইন্টারভিউতে ডাকলাম। আমি স্পেসিফিক্যালি আপনাকে প্রশ্ন করবো জানুয়ারি ২০২০ সালে একটা ইনভয়েস রেকর্ড করা হয়েছে কিনা সেটা কিভাবে খুঁজে বের করবেন?
আপনার অভিজ্ঞতা থাকলে আপনি সহজেই বলতে পারবেন তারিখ উল্লেখ করে "মাল্টিকোম্পানি জার্নাল ডিটেইল" থেকে বের করে ফেলবেন।
আর আপনি চাপাবাজ হলে ভুগিচুগি বুঝানোর চেষ্টা করবেন। যা বুঝতে আমার বিন্দুমাত্র সময় লাগবে না। মাঝে দিয়ে আপনি আমার এবং আপনার সময় নষ্ট করবেন।
বরং এই ধরনের প্রশ্নের উত্তরে বলবেন, "এপিকর নিয়ে কাজ আমি করিনি, তবে আমি BI৩৬০ দিয়ে কাজ করেছি। সেখানে আমরা এইভাবে বের করতাম। আমি নিশ্চিত, এপিকরেও সেভাবেই কোন উপায় আছে, কারন আমি মনে করি প্রতিটা সফ্টওয়্যারই মোটামুটি কাছাকাছি প্রোগ্রামিং ও লজিক দিয়েই তৈরী হয়। শুধু বাটনগুলো এখানে ওখানে আলাদা আলাদা ট্যাবে থাকে।"
তাহলে ম্যানেজার বুঝে নিবে আপনাকে কাজ শেখাতে তাঁর কতটুকু পরিশ্রম লাগবে। সে আপনাকে এই অভিজ্ঞতার কারনে নিয়ে নিতেও পারে। যদিনা অন্যান্য ক্যান্ডিডেটদের মধ্যে কারোর সরাসরি এপিকরে কাজ করার অভিজ্ঞতা না থাকে।
এইটুকু বুঝাতে পেরেছি?
আরও অনেকে অনেক প্রশ্ন পেয়ে থাকেন। কমেন্টে সেসব লিখতে পারেন। যদি কমন পড়ে, অবশ্যই উত্তর দিব। না পারলে আমি নিজেই শিখতে আগ্রহী হবো।

আমার দেশের একটা ব্যাপারে আমার খুব আফসোস হয়। চাকরির ক্ষেত্রে আমরা ধর্ম, আচার, রীতিনীতি, সাধারণজ্ঞান ইত্যাদি বাহ্যিক বিষয় নিয়ে এত বেশি মেতে থাকি যে মূল বিষয়টাতেই ফোকাস করতে পারিনা। যে করবে কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের কাজ, ইন্টারভিউতে তাঁকে জিজ্ঞেস করি রবীন্দ্রনাথের ভাবীর নাম কি ছিল। যে করবে ফাইন্যান্সের চাকরি, যাকে জিন্দেগীতে ক্লায়েন্ট ফেস করতে হবেনা, তাঁর স্পোকেন ইংলিশ পরীক্ষা করি। আরে ভাই, আমেরিকাতেই স্পোকেন ইংলিশ নিয়ে ঝামেলায় পড়তে হয়না যতটা বাংলাদেশে ইন্টারভিউ দিতে গেলে পড়তে হয়। আমরা মাতৃভাষার জন্য প্রাণ দিয়ে দিলাম, তারপরে উর্দুর বদলে ইংলিশকে এলিট ক্লাসের ভাষা বানায় ফেললাম। বাংলার তকদির সেই বায়ান্নতে যা ছিল, তাই থেকে গেল! অদ্ভুত!
হালের সেনসেশন বিসিএস নিয়ে কিছু বলার ইচ্ছাও নাই। যে পাঁচ বছর কষ্ট করে মেডিকেল পড়লো, যে বুয়েট সহ অন্যান্য ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়লো, সে কোন নদীর কয়টা শাখা নদী আর কোন প্রাচীন পাণ্ডুলিপি কোন গোয়ালঘরে পাওয়া গেল ইত্যাদি মুখস্ত করে আমলা পদে এপ্লাই করে! একজন সরকারি মেডিকেল ডাক্তার, যে রোগীর চিকিৎসা করবে, সে পদ্মা নদীর উৎস গতিপথ ইত্যাদি জেনে কি করবে? আমাকে লজিক্যালি বুঝানোর একটু চেষ্টা করুন, দেখি বুঝতে পারি কিনা। রোগীর রোগের সাথে গঙ্গোত্রীর সম্পর্কটা ঠিক কোথায়? ঠিক একারনেই মেধা থাকার পরেও আমরা জ্ঞান বিজ্ঞানে বিশ্বে অনেক পিছিয়ে আছি। কেন? কারন আমরা মুখস্ত বিদ্যা দিয়ে মস্তিষ্কের ক্ষমতা ক্ষয় করি, উদ্ভাবনী বা সৃজনশীলতা দিয়ে নয়। শার্লক হোমসের সেই বিখ্যাত যুক্তি আমরা ভুলে যাই। "মানুষের মস্তিষ্ক একটি খালি কামড়ার মতন। বুদ্ধিমান ব্যক্তি সেই ঘরে সুন্দর সুন্দর আসবাব দিয়ে সাজায়। আর মূর্খ সেটাকে আলতু ফালতু জঞ্জাল দিয়ে গুদাম ঘর বানিয়ে ফেলে।"
এনিওয়েজ, যার দেশে যেমন রীতি। সবাই ভাল থাকলেই হলো।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০২১ রাত ১:১৩
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×