নারী ফুটবল দলের বাসযাত্রার ছবি দেখলাম। সবচেয়ে ভাল লেগেছে মানুষজনের ভিড় দেখে। তাঁদের চ্যাম্পিয়নদের দেখতে ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে মানুষজন অপেক্ষা করেছে, এই সম্মান তাঁদের প্রাপ্য।
জিন্দেগীতে বহুত খোলা বাসে চ্যাম্পিয়নদের শোভাযাত্রা দেখেছি, কোথাও দেখিনাই রাষ্ট্রপ্রধান ও স্বাধীনতার স্থপতির ছবি যোগ করে তেলবাজি করতে। এই জয়ে প্রধানমন্ত্রীর অবদানটা কি কেউ একটু বুঝিয়ে বলতে পারবেন? না ওদের উন্নতমানের প্র্যাকটিস ফ্যাসিলিটিজ ছিল, না তাঁদের উচ্চবেতন ছিল; যাতায়াতের জন্য একটা এসি বাসও ছিল না; তাঁদের যা অর্জন এর পুরোটাই কোচ এবং খেলোয়াড়দের। এটাকে আসন্ন নির্বাচনে দলীয় প্রচারণার অংশ বানিয়ে ফেলা এবং একই সাথে চরম তেলবাজির পরিচয় দেয়া ঠিক হজম হচ্ছেনা।
তা ইউরোপ আমেরিকায় এমন তেলবাজি সংস্কৃতি নেই, ওখানে বাইডেন/ট্রাম্প/ওবামা ও জর্জ ওয়াশিংটনের ছবি থাকেনা বলে বাংলাদেশে থাকতে পারবেনা এমন কোন শর্ত নেই। যেটা একেবারেই সহ্য হলো না তা হচ্ছে বাফুফের সংবাদ সম্মেলনে এই সাফল্যের মূল কারিগর দলীয় অধিনায়ক ও কোচকে সামনে না বসিয়ে ভিড়ে দাঁড় করিয়ে তেলতেলা চেহারা ও নাদুস নুদুস শরীরের কর্মকর্তারদের সব আলো কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করাটা। উপস্থিত সাংবাদিকদের উচিৎ ছিল চিকন জালি বেত দিয়ে পিটিয়ে ফাজিলগুলির পাছার ছাল লাল করে দেয়া। যেহেতু ভদ্রসমাজে সম্ভব না, কাজেই ভবিষ্যতে যেন সাংবাদিকরা সরাসরিই বলেন “আমরা উনাদের বক্তব্য শুনতে চাই, আপনারা সরেন।” এদের জুতাপেটা করে বেইজ্জত না করা পর্যন্ত লজ্জা আসবে না।
এগুলি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না। এখন যেটা বলবো সেটা খুবই সিরিয়াস, ভাল করে মন দিয়ে পড়ুন, বুঝুন এবং পারলে মানুন।
মেয়েদের এই বিজয়কে এক শ্রেণীর মানুষ এমনভাবে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে যেন এটি ছিল ইসলামের বিরুদ্ধে ওদের বিজয়। না কোন ফুটবলার এমন মন্তব্য করেছে, না ওদের কোচ বা পরিবার, উল্টো ছবি এসেছে বিজয় শেষে ওরা সবাই সিজদায় নত হয়ে তাঁদের রবকে ধন্যবাদ দিচ্ছে - মাঝে দিয়ে এই প্রোপাগান্ডার কি মানে আমার মাথায় ঢুকছে না। কোন আলেম কি বলেছেন, এই নিয়ে দেশের “বুদ্ধিজীবী" বাণী প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। একটা ডাক্তার যেমন কখনই বলবে না “সিগারেট মদ স্বাস্থ্যের জন্য ভাল, খান, সমস্যা নাই" তেমনই একজন আলেমও বলবেন না যে “হাফপ্যান্ট পরে খেলা জায়েজ, খেলে যাও!” কমন সেন্সের ব্যাপার। এ নিয়ে এত হৈচৈ করার কি হলো সেটা বুঝলাম না। বুদ্ধিজীবীর মাথায় এই সামান্য বুদ্ধিও নেই?
এমনভাবে প্রচারণা চলছে যেন মুসলিমরাই মেয়েদের ঘরে বন্দি করে রাখে। তাহলে ভারতের নারী ক্রিকেট/ফুটবল দলের এই অবস্থা কেন? ওরাতো মুসলিম দেশ না। এর মানে আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার সংস্কৃতি, রক্ষণশীল সমাজটাই দায়ী - ধর্ম কেবলই একটি উপাদান। এখন যেসমস্ত বুদ্ধিজীবী নিজের ভিউ ও লাইক বাড়াবার জন্য মেয়েগুলিকে একেকজন তসলিমা নাসরিন বানিয়ে প্রচার করলেন, ওদের এবং ওদের পরিবারের যে সমস্ত অসুবিধায় পড়তে হবে, সেটার দায় কয়জন নিবেন? বাংলাদেশে ইন্টারনেট সস্তা বানানো উচিত হয়নাই। একদমই উচিৎ হয়নাই।
হ্যা, যদি কেউ ফতোয়া দিয়ে বেড়াতেন এইসমস্ত মেয়েরা কাফের মুরতাদ হয়ে গেছে, ওদের বেত্রাঘাত করা হোক, পাথর মারা হোক, ওদের পরিবারকে বয়কট করা হোক, ইত্যাদি, তখন সবার উচিত ঐ তথা কথিত “আলেমকে” বয়কট করা।
অনেক ফেসবুকীয় ইসলামী পন্ডিত বলছেন, “হাফপ্যান্ট পরে খেলে, ওরা কিসের মুসলিম?“
ইসলামের ব্যাপারে এদের জ্ঞান শূন্য বলেই এমন মন্তব্য করে। একটা টুপিমাথার দাড়িওয়ালা ঘুষখোরের ছবিও খুব ভাইরাল হয়েছে। এই লোকটাই সবার জন্য উদাহরণ যে, কার ঈমান আল্লাহর কাছে গ্রহণীয় সেটা একমাত্র আল্লাহই জানেন। হাদিসেই এসেছে, এক বেশ্যাকে আল্লাহ মাফ করে দিয়েছিলেন কারন সে একটা কুকুরকে পানি খাইয়েছিল। বাংলাদেশের জনতা নিজের বেহেস্ত নিয়ে নিশ্চিত, অন্যের জাহান্নাম নিয়েও নিশ্চিত। বাস্তবতা হচ্ছে, ঐ যে মেয়েগুলি সিজদাহ দিল, যদি আসলেই তাঁরা ১০০% কৃতজ্ঞতার সাথে তা করে থাকে তবে সেটা আমার আপনার ১০০০ বা এরও বেশি রাকাত “দায়িত্ব পালনের” নামাজ থেকেও উত্তম। আমরা দায়ে পড়ে বাধ্য হয়ে সিজদাহ দিচ্ছি, ওরা আল্লাহর রহমত স্বীকার করতেই এটা করেছে। বাকিটা নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে বুঝুন।
আল্লাহর ওয়াস্তে, ফেসবুকে কিছু লেখার আগে সেটার ইম্প্যাক্ট চিন্তা করে লিখুন। আপনার বলা একটা বাক্য অনেকের জীবনে অনেক বড় দাগ কাটতে যথেষ্ট।