somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেশের সমালোচনা ও কূপমণ্ডুকতা

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৩ রাত ৯:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলায় একটা কঠিন শব্দ আছে "কূপমণ্ডুক," সহজ ভাষায় কুয়ার ব্যাঙ। মানে হচ্ছে যেই ব্যাঙের কাছে ঐ কুয়াটাই হচ্ছে পৃথিবী। ও জন্মায় ঐ কুয়ায়, বেঁচে থাকে সেখানে এবং একটা সময়ে মারাও যায় ঐ কুয়াতেই।
ঐ ব্যাঙের কাছে যদি বলেন পৃথিবী বিশাল, আছে জঙ্গল, পাহাড়, সাগর, আছে কোটি কোটি বিচিত্র রকমের প্রাণী, আছে প্রাকৃতিক বৈচিত্র, এর কোনটাই সে বিশ্বাস করবে না। কারন ও এর কিছুই দেখেনি।
শব্দটা আমরা রূপক অর্থে ব্যবহার করি। অনেকভাবেই অনেকের উপর এর প্রয়োগ ঘটানো যায়। আজকে "দেশপ্রেমিকদের" ব্যাপারে কিছু বলব।
সবার আগে আমাকে বলেনতো "দেশ" কি? সহজ ভাষায় নির্দিষ্ট সীমারেখার মধ্যে একটি নির্দিষ্ট ভৌগলিক ভূখন্ড। যেমন বাংলাদেশ। ইন্ডিয়া। পাকিস্তান। এই সীমারেখাও আপেক্ষিক। যেমন একশো বছর আগেও ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশ তিনটাই ছিল এক দেশ। ভবিষ্যতে আরও টুকরা হয়ে আরও অনেক দেশ হবেনা, এর কোন নিশ্চয়তা নেই। আজকের ইউক্রেন কয়েক বছর আগেও সোভিয়েৎ রাশিয়ার অংশ ছিল, ভবিষ্যতে আবারও এর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
তো, দেশ নিয়ে আমাদের প্রেম অনেক। কেন? কারন আমরা সেই দেশে জন্মাই, থাকি, বড় হই ইত্যাদি। দেশ এবং দেশের মানুষ কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। দেশ নিষ্প্রাণ বুদ্ধিহীন ভূমি, কাজেই এর দোষ ত্রুটি থাকা সম্ভব না। বাংলাদেশ সুজলা সুফলা, আরব নিষ্প্রাণ ধুধু ম্রু প্রান্তর। সেখানে আমাদের মতন ফসলের উৎপাদন হয়না। তাই বলে ওরাও পিছিয়ে নেই। ওদের আছে তেলের খনি, সোনার খনি। আমাদেরও আছে প্রচুর খনিজ সম্পদ। পৃথিবীর সব "দেশে"ই কিছু না কিছু থাকেই।
কিন্তু দেশের মানুষ যেহেতু বুদ্ধিমান প্রাণী, কাজেই দেশের মানুষের দোষত্রুটি থাকেই। পৃথিবীতে এমন কোন জাতি খুঁজে পাবেন না যাদের কোন সমস্যা নাই। থাকতেই হবে। মানুষ জন্মেছেই এমনভাবে।
এখন আপনি হয়তো একটি নির্দিষ্ট দেশে জন্মেছেন। জীবনেও অন্যান্য দেশে যাননি, অন্য দেশের কৃষ্টি কালচার, সভ্যতার সাথে আপনার পরিচয় ঘটেনি। আপনাকে তখন কূপমণ্ডুক বলা চলে। এতে লজ্জিত, বা অপমানিত হবার কিছু নেই। আমেরিকারই কোটি কোটি জনতা কূপমণ্ডুক জীবন কাটায়। পাশের স্টেটেও বেড়াতে যায় না এমন প্রচুর লোক আছেন।
তবে, কূপমণ্ডুক জীবন যাপন করাটা মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ না। আপনাকে অবশ্যই মানসিকভাবে দেশ বিদেশ ভ্রমন করতে হবে। এবং সেক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য করবে বই। ভাল আর্ট সিনেমা কিছুটা ধারণা দিবে। এছাড়া নানান জার্নালতো আছেই। এখনতো ফেসবুকের যুগ। ট্রাভেলার ভ্লগারে দুনিয়া ভরপুর। ওদের ভ্লগও দেখতে পারেন। যতই ভ্রমন করবেন, ততই মন মানসিকতা পাল্টাবে। এবং তখন অন্যদের ভালোর সাথে নিজের তুলনা করে আপনি সঠিক/বেঠিকের পার্থক্য করতে শিখবেন। নিজের জীবনকে উন্নত করতে এর কোন বিকল্প নেই।
এখন উদাহরণ দেই।
আমি আমেরিকায় আছি পনেরো বিশ বছর ধরে। একটি দেশ গত একশো দুইশ বছর ধরে পৃথিবীর পরাশক্তি হয়ে বসে আছে, সেটা জানতে হলেওতো আমাকে একটু মাথা ঘামাতে হবে, তাই না? ওরা কি করে ফেলছে যা আমরা করতে ব্যর্থ হচ্ছি?
তখনই দেখতে পাই ওদের আইনের প্রয়োগ, বিচার ব্যবস্থা, সামাজিক নিরাপত্তা ইত্যাদি আরও অনেক কিছু। সামান্য যে যন্ত্রপাতি যা তাঁরা দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করে, সেটা তৈরির সময়েও ব্যবহারকারীর নিরাপত্তার বিষয়টা আগে মাথায় রাখে। আর আমাদের অবস্থাটা দেখেন? বঙ্গ মার্কেট দেশের সবচেয়ে ব্যস্ততম মার্কেটের একটি। অথচ সেখানে কোন সিস্টেমেরই বালাই নেই। আগুন লাগলে কি ঘটতে পারে সেটারই উদাহরণ আজকে দেখলাম। যদি ভিতরে মানুষ থাকতো? অগ্নিনির্বাপনের ব্যবস্থা কি? শূন্য। ফায়ার ব্রিগেড এলো, মারও খেল। দুনিয়ার আর কোন সভ্য দেশে মানুষ আগুন নেভাতে আসা ফায়ার ব্রিগেডের উপর হামলা করে আমাকে উদাহরণ দিতে পারেন? এদিকে আগুন জ্বলছে, সাথে সমানে লুটপাট চলছে। যত পারো কাপড় চুরি করো। এমন না যে আগুন নেভানোর জন্য ভিড় জমা হয়েছে। চোরগুলি এসেছেই চুরি করতে। এদেরই অনেকে রোজা রেখেছে। ইফতারের আগে এক গ্লাস পানি পর্যন্ত মুখে দিবে না। চুরির পোশাকেই ঈদ করবে। বাড়তি পোশাক বিক্রি করে সেমাই খাবে। কি অদ্ভুত! কি অদ্ভুত!
কথাটা বলায় আমি কি দেশের সমালোচনা করলাম, নাকি দেশের মানুষের?
উগ্র দেশপ্রেমিক আলগা দরদ দেখাতে তখন বলবেন, "আপনি বিদেশে গিয়ে দেশের সমালোচনা করেন! কাকের ময়ূর সাজার চেষ্টা!"
নারে কূপমণ্ডুক! আমি দেশের মানুষদের সমালোচনা করছি। আমি প্র্যাকটিক্যালি দেখছি মানুষের আচার আচরণের কারনে কিভাবে একটি দেশ বিশ্বের রাজ দরবারে মুকুট মাথায় সিংহাসনে বসে। আমি শুধু বলছি সেসব নিজ জীবনে এপ্লাই করলে আমরাও পারবো সম্রাট না হোক, উজির নাজির কিছু একটা হতে।
বললে অবিশ্বাসও করতে পারেন, কিন্তু এই বাঙালিরাই বিদেশে আসলে জেন্টেলম্যান হয়ে যায়। চুরি ডাকাতি ছিনতাই ইত্যাদি কাজে আমাদের পাবেন না। আমরা সময় মতন নিজ নিজ অফিসে যাই, কাজ করি, বাচ্চা কাচ্চাদের মানুষ করার পেছনে ছুটাছুটি করি, উইকেন্ডে দাওয়াত খেয়ে জীবন পার করে দেই। যা আমরা বিদেশে করছি, সেটা দেশে করছি না কেন? কারন বিদেশে দুই নম্বরি করলেই ধরা খাব। পুলিশকে পাঁচ ডলার ঘুষ সাধলে ফেডারেল অফিসারকে ঘুষ সাধার অপরাধে হাতে হাতকড়া পরিয়ে জেলে ভরে দিবে।
আর আমার দেশে আমরা করি কি কোয়ালিটি কম্প্রোমাইজ করে ঘুষের জন্য আলাদা বাজেট রাখি। মানে হচ্ছে, খরচ আমার একই হচ্ছে, উল্টা অপরাধ বাড়ছে। বরং আমি যদি যা চুক্তি করা হয়েছিল, সেই কোয়ালিটিই ধরে রাখি, তাহলে ঘুষের টাকা বেঁচে যাবে, আমার পকেটে ঠিক তত টাকাই আসবে।
কিছু বুঝাতে পারলাম?
এখন আবার দেশপ্রেম নাই, দেশের সমালোচনা করি, দেশমাতৃকার বেঈমান সন্তান টাইপ আল্লাদ শুরু কইরেন না। নিজে শুধরান, দেশের জন্যই সেটা কাজে আসবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৩ রাত ৯:৩১
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×