somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এই পৃথিবীর শাস্তি এই মুনাফেকদের জন্য অনেক হাল্কা হয়ে যায়।

২৫ শে মে, ২০২৩ রাত ১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হজ্ব হচ্ছে প্রতিটা মুসলিমের স্বপ্নের ইবাদত। সামর্থ্যবান মুসলিমদের জীবনে একটিবার হলেও আল্লাহর ঘর জিয়ারত করতেই হয়। সামর্থ্য যাদের নেই, তাঁদের এই ইবাদত থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তারপরেও মুসলিম মাত্রই হজ্ব করতে চান। যে কাবার দিকে মুখ ফিরিয়ে পুরো জীবন নামাজ আদায় করে, সেই কাবা একটিবার হলেও দর্শন করতে কে না চায়?
এছাড়া হজ্বে গেলে "দুনিয়ার জান্নাত" আমাদের প্রিয় নবীজির রওজা মোবারক জিয়ারত করার সুযোগ থাকে। এ সুযোগ হাতছাড়া করবে কোন পাগলে?
প্রসঙ্গ ওঠায় বলে নেই, "হজ্বে" গেলে আপনার মদিনায় যাওয়া বাধ্যতামূলক নয়। হজ্বের রীতিনীতি পালন করতে পাঁচ থেকে ছয়দিন প্রয়োজন, আপনার হাতে যদি এর বেশি সময় না থাকে, তবে আপনি ইচ্ছা করলে হজ্ব শেষে ইচ্ছা করলে মক্কা থেকেই বাড়ি ফিরে আসতে পারেন। "মদিনায় না গেলে আপনার হজ্ব বাতিল" - এমন কোন শর্ত নেই।
তাছাড়া মর্যাদার দিক দিয়ে মক্কার ধারে কাছেও কিছু নেই। হারাম শরীফে এক রাকাত নামাজ আদায়ের সওয়াব হচ্ছে এক লক্ষ রাকাতের সমান। সেদিক দিয়ে মসজিদে নববীতে এক হাজার রাকাতের সমান। পার্থক্য এতটাই বিশাল। তাই কেউ যদি এই কারণেও মক্কায় থেকে কম সময়ে বেশি বেশি ইবাদতের ফায়দা লুটতে চান, অবশ্যই তাঁকে দোষ দেয়া যায় না।
হ্যা, আমরা এতদূর গিয়ে প্রিয় নবীজির (সঃ) পবিত্র মসজিদে নামাজ আদায় করার লোভ সামলাবো কিভাবে? তাছাড়া যার মাধ্যমে আমরা পবিত্র কুরআন পেলাম, যার দাওয়াতে ইসলাম গ্রহণ করলাম, এবং যাকে না দেখেও এত শতাব্দী পরেও জান, মাল, পরিবারের উর্দ্ধে ভালবেসে গেলাম - তাঁর কবরে গিয়ে সালাম দিতে না পারলে জীবনটাই বৃথা মনে হয়। এই কারণেই আমরা হজ্বের প্যাকেজে অবশ্যই মদিনা সফর রাখি।
কথাটা বলার প্রয়োজন হতো না, কিন্তু একটা ভিডিওতে দেখলাম বাংলাদেশের এক হুজুরকে একজন প্রশ্ন করেছেন হজ্বে মদিনা জিয়ারত বাধ্যতামূলক কিনা, হুজুর সত্যি কথা বলেছেন, এবং এজন্য কমেন্টে বাংলার ফেসবুকীয় আলেমগণ কাজ্জাব, মুনাফেক ইত্যাদি গালাগালিতে ভরে দিচ্ছে। কতটা মূর্খ হলে এরা এই সামান্য ধারণাটাও রাখে না যে আমাদের নবীজি (সঃ) স্বয়ং মদিনা থেকে হজ্বে গিয়েছিলেন! এবং হজ্বের রীতিনীতির সবকিছুই মক্কায় করতে হবে, কোনটাতেই মদিনায় অবস্থানের প্রয়োজনীয়তা নেই।

তো যা বলতে লিখতে শুরু করেছি, তা হচ্ছে, আমাদের দেশে হাজারে হাজারে মানুষ হজ্বে যান। সমস্ত জীবনের গুনাহ মাফের পাশাপাশি রবের কাছে পুরস্কার দাবি করতে। কিন্তু সমস্যা করে আমাদের হজ্ব এজেন্সি নামের বাটপারগুলি। সবাই না, তবে ওদের সংখ্যা কমও না। এই বছরও পত্রিকায় দেখলাম প্রথম দিনেই অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে এমন হজ্ব এজেন্সির সংখ্যা একাধিক। যে হোটেলে রাখার কথা, সেই হোটেলে রাখেনি, বুকিং দেয়া হয়েছে সস্তা, ফালতু, দূরের হোটেলে, তাও সেখানে রিসিভ করার লোকজন নেই, লাগেজ চলে গেছে ভুল ঠিকানায় ইত্যাদি নানান অনিয়ম ও জটিলতাতো আছেই। এই অসভ্যগুলির জন্য সৌদিতে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনের লোকজনকে চরম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। এবং ঘটনা কেবল এক দুই বছরেরই না, বরং প্রতি বছরই ঘটিয়ে থাকে। সরকার এদের লাইসেন্স কেন বাতিল করে না? কেন এদের জেলে ভরে না? হজ্ব নিয়ে ব্যবসা? হজ্বের নামে ডাকাতি? অনেক হজ্ব এজেন্সি আছে টাকা পয়সা নিবে, তারপরে চম্পট। আর এরা হচ্ছে আপনাকে দেখাবে ভাল হোটেল, ভাল ব্যবস্থা, টাকাও নিবে সেই অনুযায়ী, তারপরে যেখানে রাইত, সেখানে কাইত টাইপ হোটেলে ফেলে দিবে।

আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ি গিয়েছিলেন এমনই এক বাটপারের মাধ্যমে। তাঁদের পরিস্থিতি এমন হয়েছিল যে তাঁদের ফেলে ওরা চলে গিয়েছিল, তাঁদের পাসপোর্ট তাঁদের হাতে ছিল না, হোটেল থেকে জানিয়ে দিয়েছিল তোমাদের বুকিং শেষ, তাঁরা যে দেশে ফিরে আসবেন - এরও নিশ্চয়তা ছিল না। তাঁরা ইবাদতে মনোযোগ দিবেন কিভাবে? এইসব টেনশনেই ঘুম হারাম!
আমার ভায়রা ভাই কর্নেল ছিলেন বলেই হুমকি ধামকি দিয়ে এই ফাজিলটাকে লাইনে এনে তাঁদেরকে নিরাপদে সুস্থভাবে দেশে আনতে পেরেছিলেন। যাদের ক্ষমতা নাই, তাঁদের কথা চিন্তা করুন! প্রতিবছর বহুলোক এই ভোগান্তির শিকার হন। এই অসভ্য, অশিক্ষিত, ধর্ম ব্যবসায়ী লোকটা আবার এলাকার মসজিদ কমিটির চেয়ারম্যান। তা চেয়ারম্যান হয়ে ও কি করেছে জানেন? "ঈমামের মেয়েরা কেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে?" - এই অভিযোগে ঈমামের চাকরি খেয়েছে। নিজে টিপসই দেয়া পাবলিক, সে কিভাবে মেনে নিবে গরিব ঈমামের মেয়েরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে ফেলছে! তাই নিজের ক্ষমতা দেখালো।
তা আল্লাহ তো উপরে বসে বসে ঘুমান না। তিনি সবই দেখেন, জানেন। ঈমামের কোনই ক্ষতি হয়নি। তিনি আগের চেয়ে এখন অনেক ভাল আছে। আর এই মুনাফেকের মতন আরও হাজারো মুনাফেকদের জন্য তিনি কি ব্যবস্থা রাখেন, সেটা দেখতে হাশরের ময়দানে চোখ রাখতে হবে। এই পৃথিবীর শাস্তি এদের জন্য অনেক হাল্কা হয়ে যায়।

যারা যারা হজ্বে যাচ্ছেন, নিজের পাশাপাশি আমাদের সবার জন্য দোয়া করবেন। দোয়া করবেন যেন আমরা আল্লাহর নির্দেশিত পথে থাকতে পারি। আমরা যেন আমাদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে পারি। বিশ্ব শান্তি, দুর্নীতি, যুদ্ধ, হাঙ্গামা ইত্যাদি কোন কিছু নিয়ে আলাদা দোয়ার প্রয়োজন নেই। আমরা লাইনে চলে আসলে, সব আপনাতেই শুধরে যাবে। সবই ইন্টারকানেক্টেড।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০২৩ রাত ১:৪৬
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×