somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমেরিকান সেক্যুলারিজ্ম ইউরোপিয়ানদের মতন নয়।

০২ রা জুন, ২০২৩ রাত ১২:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমেরিকান উদার গণতন্ত্রের একটি অতি শক্তিশালী খুঁটি হচ্ছে ধর্মীয় স্বাধীনতা।
ধর্মীয় স্বাধীনতা মানে আপনি চাইলে যেকোন ধর্ম পালন করতে পারেন, ইসলাম, বৌদ্ধ, হিন্দু, বাহাই, ইহুদি, খ্রিষ্টান ধর্মের যেকোন শাখা থেকে শুরু করে শয়তানের উপাসনা পর্যন্ত যেকোন ধর্ম, এবং চাইলে ইচ্ছা করলে কোন ধর্ম পালন না করে পুরোপুরি নাস্তিক থাকতে পারবেন। এইটা আমেরিকার সাংবিধানিক অধিকার।
আমেরিকার জন্মই হয়েছে মূলত এই কারণেই। আমাদের মুসলিমদের মাঝে যেমন হানাফী, শাফেঈ, হাম্বালী, মালেকী ঈমামদের শিক্ষায় ছোটখাটো পার্থক্য আছে, তেমনই খ্রিষ্টানদের মধ্যেও এমন নানান মত পার্থক্য আছে। মধ্যযুগে সেই সামান্য মত পার্থক্যই ক্ষমতাবানরা সহ্য করতে পারতো না। ভিন্নমতের খ্রিষ্টানদের মেরে ফেলতো। এবং সেই কারণেই, দলে দলে খ্রিষ্টান আমেরিকায় এসে ধর্মীয় স্বাধীনতা চেয়েছে। এবং এই কারণেই দেখা যায়, এখানে অলিতে গলিতে চার্চ। রাস্তার এই দিকে ব্যাপ্টিস্ট চার্চ, তো উল্টো দিকেই মেথোডিস্ট, একটু দূরেই ক্যাথলিক (বাংলাদেশের মোটামুটি সবাই রোমান ক্যাথলিক) চার্চ পাবেন তো ইভাঞ্জেলিকান লুথেরান চার্চও আশেপাশেই পাবেন। এরই ফাঁকে ফাঁকে কোথাও দেখবেন গুরুদুয়ারা, কোথাও মন্দির, কোথাও মসজিদ ইত্যাদি।
আমেরিকান সেক্যুলারিজ্ম ইউরোপিয়ানদের মতন নয়। আমেরিকান সেক্যুলারিজ্ম প্রো-রিলিজন, মানে ধর্মচর্চাকে বিনাশ করা নয়। ওদের ডলারেই দেখবেন লেখা থাকে "আল্লাহ ভরসা।" আমাদের দেশে যেমন "জয় বাংলা" এদেশে সেটি "God Bless America."
আপনার যদি গাত্রদাহ শুরু হয় যে সেক্যুলার দেশ কোন যুক্তিতে এত God God করে, তাহলে আপনার কোন ধারণাই নাই আমেরিকা সম্পর্কে, এদের ইতিহাস সম্পর্কে এবং এদের সংবিধান সম্পর্কে। সিটিজেন পাবার আগে একটি পরীক্ষা হয়, সেটা পাশ করতে হলে একশো প্রশ্নের উত্তর অবশ্যই জানতে হয়। আর এদেশে ডিগ্রি নিতে হলে এদের ইতিহাস এবং গভর্নমেন্ট কোর্সগুলোতো করতেই হবে। সেখানে আরও ডিটেইলে আলোচনা করা আছে।
ইউরোপের সেক্যুলারিজ্ম এন্টি রিলিজন, মানে ধর্মচর্চাকে নিরুৎসাহিত করা। কারন ঐ যে বললাম, দীর্ঘ সময়ে ক্ষমতাবান চার্চ জনজীবনে এতটা ইন্টারফেয়ার করেছে যে ওরা সব ধর্মের উপরই বিরক্ত হয়ে গেছে। ওদের ধারণা ধর্মীয় আচার আচরণ মানেই হচ্ছে চার্চ/মসজিদ/মন্দির কর্তৃক চাপিয়ে দেয়া বোঝা। ইউরোপে বোরখায় ব্যান করা বা ইত্যাদি ইত্যাদি যা যা অসভ্যতার কথা আমরা শুনে চোখ কপালে তুলি, তা আমেরিকায় অকল্পনীয়। কারন সেটা এদেশের সাংবিধানিক অধিকারের বিপরীত। এবং এজন্যই দেখবেন, যখন আমেরিকায় কোন ধর্মীয় বর্ণবাদী ঘটনা ঘটে, তখন এদেশের সাধারণ জনতাই একজন আরেকজনের পাশে এসে দাঁড়ায়। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার প্রথম সপ্তাহেই দেখা গিয়েছিল দলে দলে খ্রিষ্টান মেয়েরা স্কার্ফকে হিজাব বানিয়ে পরছে, এয়ারপোর্টে আজান দিয়ে জামাতে নামাজ আদায় করছে মুসলিমরা এবং ইহুদিদের সিনাগগে গুলি চালালে পরে দলে দলে মুসলিম ও খ্রিষ্টান ওদের পাশে গিয়ে বলেছে "আমরা তোমাদের পাশে আছি।" এর অর্থ এই না যে দলে দলে সব খ্রিষ্টান মুসলিম হয়ে গেছে, বা আমরা ইহুদি হয়ে গেছি। বর্ণবাদীদের গালে কষে চপেটাঘাত করাটাই এখানে মুখ্য উদ্দেশ্য।

তা এই ধর্মীয় স্বাধীনতার আওতায় পড়ে মুসলিম নারীদের নেকাব সহ বোরখা পরার অধিকার, হিজাব পরার অধিকার, হ্যাসেডিক ইহুদিদের ট্র্যাডিশনাল পোশাক (পুরুষের মাথায় টুপি, লম্বা জুলফি, মেয়েদের হিজাব বা মধ্যযুগীয় ফ্যাশনের ড্রেস), খ্রিষ্টান মহিলাদের, বিশেষ করে নানদের হিজাব পরার অধিকার, শিখ ছেলেদের পাগড়ি মাথায় দেয়ার অধিকার, হিন্দু পুরুষ/নারীদের মাথায় তিলক দেয়ার অধিকার, আমিশদের মধ্যযুগীয় কায়দায় বেঁচে থাকার অধিকার ইত্যাদি ইত্যাদি। হ্যা, নেটিভ আমেরিকানদের প্রতি আমেরিকা ভীষণ অন্যায় করেছে, সেটা ভিন্ন টপিক, অনেক বিস্তারিত আলোচনা হয়ে যাবে তাহলে। কিন্তু ওদের ধর্ম চর্চাতেও কোন সমস্যা নেই।
এদেশে আপনার ইচ্ছা হলে আপনি পানির এলাকায় বিকিনিতে চলতে পারবেন, ইচ্ছা করলে পুরো শরীর ঢেকে রাখতে পারবেন, কেউ কিছু বলতে পারবে না যতক্ষন না পর্যন্ত আপনি অশ্লীলতা করছেন, মানে পুরোপুরি বা আংশিক নগ্ন হচ্ছেন। নগ্ন বিচও এদেশে আছে। এদেশের কিছু স্থানে পোশাকের জন্য কোড আছে, অফিসে, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে, আদালতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইত্যাদি; সেটা ভঙ্গ না করলে আপনাকে কেউ কিছু বলবে না।
এই কথাগুলি বললাম কারন ফেসবুকে অনেক মানুষকেই দেখছি নিজেকে প্রগতিশীল মনে করেন, কিন্তু বাস্তবে এত গোড়া যে ওদের প্রতিটা পোস্টেই রেসিজমের নগ্নরূপ প্রকাশ পায়। বিদেশে এসেছে কয়বছর, জানা নেই, কিন্তু পোস্ট থেকে ওদের আদি ও অকৃত্রিম বর্ণবাদের প্রচন্ড দুর্গন্ধ বেরোয়।
একটা ব্যাপার মাথায় রাখুন, আমেরিকার সংবিধানের কারণেই আপনি এদেশে নিজ ধর্ম চর্চা করতে পারছেন। কাজেই অমুক কেন বোরখা পরে, তমুকের দাড়ি কেন লম্বা, তমুকের মাথায় পাগড়ি কেন ইত্যাদি নিয়ে কুমন্তব্য করে নিজেকে অমানুষের কাতারে নামাবেন না। ওসব করতে গেলে যেই টাট্টিখানা থেকে উঠে এসেছেন, সেখানে ফেরত যান। আধুনিক সভ্য সমাজ আপনাদের জন্য না।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০২৩ রাত ১২:৫৮
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×