আমেরিকায় গত পাঁচদিনে দুইজন বাংলাদেশি গুলিতে নিহত হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করে বের করার চেষ্টা করছে ঘটনা কি। হতে পারে ছিনতাই/ডাকাতি, কিংবা অন্য কোন মোটিভ ছিল পেছনে। সেটা তদন্ত করে কর্মকর্তারা বলুক।
আমি বরং এ নিয়ে কিছু অতি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলি। যারা আমেরিকায় থাকেন, বা আসবেন, তাঁদের জানা ভীষণ জরুরী।
দেশ থেকে আসলে অনেকেই রিটেইলে কাজ করেন। মানে ধরেন কোন গ্যাস স্টেশন, গ্রোসারি স্টোর, রিটেইল ব্যাংকিং ইত্যাদি। এখানে যেহেতু ক্যাশের কারবার চলে, কাজেই চোর ডাকাতের নজরও থাকে এর উপর। গ্যাস স্টেশনগুলো সারারাত খোলা থাকে। অনেক রেস্টুরেন্টও গভীর রাত পর্যন্ত খোলা থাকে। তখন লোকজনের ভিড় কম থাকে বলে এক বা দুইজন কর্মচারী সেটা পরিচালনা করে। স্বাভাবিকভাবেই ডাকাতরা এর ফায়দা তোলে। ওরা কাস্টমারের ছদ্মবেশে ঢুকে, দেখে নেয় ভিতরের পরিস্থিতি, তারপরে হঠাৎই বন্দুক/পিস্তল বের করে ক্যাশ ড্রয়ার খালি করে দিতে বলে।
বা ওয়ালমার্ট জাতীয় বড় দোকানে চোরের দল আস্ত টিভি থেকে শুরু করে ছোটখাটো ইলেক্ট্রোনিক্স মেরে দেয়ার চেষ্টা করে।
এক্ষেত্রে কর্মচারী হিসেবে আপনার করণীয় কি?
ওয়ালমার্টে ট্রেনিং দেয়া হয় এই বলে যে এইসব ব্যাপারে সাথে সাথে ম্যানেজারকে জানাতে। আপনি নিজে কনফ্রন্ট করতে যাবেন না। ম্যানেজার পুলিশ ডাকার পাশাপাশি ওদের এসেট প্রোটেকশন অফিসারকে (ছদ্মবেশী কর্মচারী, যে কাস্টমারের বেশেই ডিউটিরত থাকে) জনাবে। বিষয়টা প্রফেশনালি হ্যান্ডেল করা হবে।
আপনি যদি চোরকে সরাসরি ধরতে যান, এবং চোর যদি ছুরি চাকু বা পিস্তল চালিয়ে দেয়, বেহুদা কারনে আপনি মরবেন। আর বেঁচে গেলে ওয়ালমার্টই আপনাকে ফায়ার করবে। আপনাকে ট্রেনিং দেয়া হয়েছিল এইসবে না জড়াতে, আপনি কেন কোম্পানির পলিসি লঙ্ঘন করলেন? একটি টিভির দাম কত? হাজার, দুই হাজার ডলার? আস্ত ক্যাশ বাক্স লুটে নিলে কতই বা নিবে? দশ হাজার? আপনার প্রাণের চেয়ে কি সেটা বেশি মূল্যবান? হয়তো সেই সম্পদ ইন্স্যুরেন্স থেকেই উঠে আসবে, আপনি কেন শুধু শুধু নিজের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলবেন?
এখন ধরা যাক আপনি ওয়ালমার্টে না, গ্যাস স্টেশনে রাতের কর্মচারী। আপনি ছাড়া সেখানে আর কেউ কাজ করছে না। এমন সময়ে আপনি ডাকাতির শিকার হলেন। কি করবেন? হাত উপরে তুলে দোকান লুটে নিতে দিবেন। উপরে সিসিটিভি ক্যামেরায় ডাকাতের ফুটেজ ধরা পড়বে। পুলিশ পরে এনালাইসিস করে ঠিকই বের করে ফেলতে পারবে। আপনি মরে গেলে আপনার প্রাণ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবেনা।
যে মালিকের জন্য নিজের জীবন দিয়ে দিতে যাচ্ছেন, সে কিন্তু আপনাকে চাকরিচ্যুত করার আগে দ্বিতীয়বার চিন্তা করবে না। ও যদি দেখে ওর ব্যবসায় কস্ট কাটিংয়ের প্রয়োজন, আপনাকে খেদিয়েই সে শুরু করবে।
আপনি যদি নিজে মালিক হন, তখন? প্রথমেই নিশ্চিত করবেন আপনার দোকানে লাগানো সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো ভাল রেজোলুশনের। যাতে স্পষ্ট সব চেহারা ফুটে উঠে। নিশ্চিত করবেন পুলিশের সাথে ভাল সম্পর্ক রাখতে। ওদের জন্য ফ্রি সোডা/কফির ব্যবস্থা রাখবেন, যাতে ওরা নিয়মিতই আপনার দোকানে বেড়াতে আসে। আপনার পার্কিং লটে ওদের গাড়িটাই যথেষ্ট, ডাকাতের দল আপনাকে ঘাঁটাবে না। নিরাপত্তার জন্য যা যা প্রয়োজন, সব ব্যবস্থা নিবেন। তারপরেও যদি দেখেন ডাকাতির শিকার হয়েছেন, নিজেকে রোহিত শেট্টির সিনেমার কোন নায়ক ভেবে ওদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার চিন্তা বাদ দিয়ে প্র্যাক্টিক্যালি চিন্তা করবেন। ওদের হাতে বন্দুক আছে, আপনার হাত খালি। কাজেই আপনি এমন কিছু করতে যাবেন না যাতে ওরা গুলি করে বসে। তারপরেও গুলি করে বসে অনেক ডাকাত। তখন কিছুই করার নেই। আপনি আপনার চেষ্টা করেছেন।
অনেককেই চিনি গ্যাস স্টেশনে ডাকাতির শিকার হয়েছেন, গুলি খাননি, বেঁচে গিয়েছেন।
এমনও একজনকে চিনি যাকে সাতটা গুলি করা হয়েছিল, সে বেচারা নিজে ৯১১ কল করে এম্বুলেন্স ডাকিয়ে হসপিটালে গিয়ে বেঁচে গিয়েছে।
এমনও অনেকেই আছেন, গুলিতে নিহত হয়েছেন।
প্রতিটা পরিস্থিতি আলাদা। তবে নিয়ম একটাই, নিজেকে বাঁচাবার আপ্রাণ চেষ্টা করবেন।
আমাদের এক মামা দেশে থাকতে এথলেট ছিলেন। আশির দশকের কথা। তিনি লস এঞ্জেলেসে এসেছেন। পাবলিক ফোন থেকে দেশে কল করে বেরিয়ে দেখেন একদল ছিনতাইকারী উনাকে ঘিরে ধরেছে। ইয়া মস্ত চেহারা, বিশাল সাইজের শরীর! তিনি জানেন ওদের সাথে লড়ে তিনি সুবিধা করতে পারবেন না।
তিনি ফাঁক গলে দিলেন দৌড়। ওরাও তাঁর পেছনে দৌড়ালো। কিন্তু কিছুক্ষনের মধ্যেই ওরা হাপিয়ে উঠলো। তাঁর যেহেতু অভ্যাস ছিল, তিনি দৌড়ে কয়েক ব্লক পেরিয়ে নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত থামেননি। বেঁচে গিয়েছেন, এবং সে কাহিনী এখনও গর্বের সাথেই সবাইকে বলেন যাতে সবাই বুঝে কি করতে হবে।
আমার এক খুব কাছের বন্ধু একবার নিজের ফোন বাঁচাতে গিয়ে তেমনই এক সন্ত্রাসীর হাতে মরতে গিয়েছিল। ভাগ্য ভাল দুই চারটা থাপ্পড়ের উপর দিয়ে গেছে। ওটা খুবই বোকার মতন কাজ ছিল। ফোন নিতে চাইলে সানন্দে দিয়ে দিন। প্রথম ঐ ফোন ইন্স্যুরড থাকলে আপনার মোটামুটি খুবই অল্পের উপর দিয়ে যাবে। তারচেয়ে বড় কথা, পুলিশ সহজেই ট্রেস করে ধরে ফেলবে চোরদের। আর লক্ড ফোনতো সে খুলে ব্যবহারই করতে পারবে না। ফোন ছিনতাই এখন হতেই শুনিনা।
যাই হোক।
আবারও বলি। আমেরিকায় আসলে প্রথমেই ধরে নিবেন এদেশের প্রত্যেকের হাতেই পিস্তল থাকে। কাজেই নিজেকে হিরো প্রমান করতে যাবেন না। নিজের জীবন বাঁচানো ফরজ। আপনার পরিবার, আপনার সন্তানদের কাছে আপনার চেয়ে মূল্যবান কিছুই নেই।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০২৩ রাত ১২:০৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




