একটা সময়ে পৃথিবী ছিল বর্বরে ঠাসা। ন্যায়, অন্যায়, সুষ্ঠু বিচার ইত্যাদির কোন বালাই ছিল না। যার যেটাকে ন্যায় মনে হতো, সেটাই করতো। ধনীর এত সম্পদ কেন থাকবে? লুটে নাও! ডাকাতদের কাছে এইটাই ন্যায়।
"আমার ভাইকে খুন করেছে অমুক। বদলা নিতে হবে। ওর ভাইকেও খুন করে ফেল! এইটাই ন্যায়!"
"আমি ওর অপরাধী ছিলাম। আমার ভাইকে ও কেন মারলো? আমি ওর পুরো খান্দান শেষ করে দিব!"
এইসব ছিল সমাজের নিয়ম। গোত্রভিত্তিক আরব সমাজে সেটা ছিল নিত্যদিনের ব্যাপার।
"আমার গোত্রের কাউকে ছোঁয়ারও অধিকার কারোর নাই। তা আমার গোত্রের ছেলেটা যত বড়ই অপরাধী হোক না কেন। যদি কেউ ওর কোন ক্ষতি করে, তাহলে আস্ত গোত্র মিলে যুদ্ধ ঘোষণা করবে।"
যে কারনে অনেক বড় আর শক্তিশালী গোত্রের কেউ অনেক বড় বড় অপরাধ করেও পার পেয়ে যেত। ধুঁকে মরতো ক্ষুদ্র ও দুর্বল গোত্রের লোকজন।
বড় গোত্রের "ভদ্রলোকেরা" ক্ষুদ্র গোত্রের মেয়েদের তুলে এনে যা খুশি তাই করে ছুড়ে ফেলে দিলেও কেউ কিছু বলতে পারতো না।
ঠিক এই সময়ে হাশেমী গোত্রের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় সন্তান মুহাম্মদ (সঃ) অতি অদ্ভুত এক নিয়ম চালু করলেন। "কেউ অপরাধ করলে ওকে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। সে যেই গোত্রেরই হোক না কেন।"
অদ্ভুত, কারন ইজ্জত আর শক্তির দিক দিয়ে আরবের সেরা দুই গোত্রের একটি হাশেমী। মানে এই নিয়মের ফলে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হবে তাঁর নিজেরই। শুধু তাই না, দীর্ঘ তেইশ বছর ধরে এই ভদ্রলোক (সঃ) প্রচার করলেন ন্যায়ের সাথে কোন আপোষ নেই। সাদা কালো, আরব অনারব, আশরাফ আতরাফ কোন কিছুই বিবেচ্য হবেনা। ন্যায়ের ব্যাপারে তিনি এতটাই আপোষহীন ছিলেন যে যদি তাঁর প্রানপ্রিয় কন্যার বিরুদ্ধেও চুরির অভিযোগ প্রমাণিত হতো, তবে তিনি তাঁর প্রতি কঠোর শাস্তির বিধানই জারি করতেন। এই ব্যাপারে তিনি কারোর পরামর্শ শুনতেও রাজি ছিলেন না। কারন তাঁকেও তাঁর রবের কাছে জবাবদিহি করতে হয়।
জীবনের শেষ পাবলিক ভাষণে কেয়ামত পর্যন্ত আগত কোটি কোটি মানুষের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, "কোন পিতার অপরাধের জন্য তাঁর পুত্র, বা কোন পুত্রের অপরাধের জন্য পিতা দায়ী নয়।"
তখনকার সমাজের জন্য কল্পনাতীত আর অদ্ভুত শোনালেও, এই ফিলোসফিই বিশ্বজুড়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত করে। এতটাই যে "ন্যায়" প্রতিষ্ঠায় জন্ম নেয়া দেশ আমেরিকা নিজের সুপ্রিম কোর্টে পৃথিবীর ইতিহাসের সেরা গুটিকয়েক কিছু আইন প্রণেতার প্রতি সম্মান দিতে যে ভাস্কর্য স্থাপন করেছে, তাঁদের সেই এলিট লিস্টে মুহাম্মদেও (সঃ) আছেন।
আমেরিকার জাস্টিস সিস্টেম যে কি, সেটা এদেশে না আসলে কেউ বুঝতে পারবে না। এই যে দেশটা এত সফল, এত প্রতিপত্তি বিশ্বজুড়ে, আমি বলবো এর ৯০% ক্রেডিট পাবে এদের ন্যায় বিচার এবং সেটার প্রয়োগ। এই দেশে বাস্তবেই কেউ আইনের উর্দ্ধে নয়। আপনি সরকারি দপ্তরের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিলেন যে, যে পানি আপনি খান, সেটা বিশুদ্ধ করা হয়নাই, ফলে অসুস্থ হয়ে গেছেন। কিংবা মিউনিসিপলিটির কাজ ছিল রাস্তা ঠিক করা, সেটা বারবার জানানোর পরেও ওরা দীর্ঘদিন ফেলে রেখেছে। সেই রাস্তায় যাতায়াত করতে গিয়ে আপনার গাড়ির ক্ষতি হয়েছে। এইসব ছোটখাটো থেকে বড় বড় সব অভিযোগ যদি আপনি কোর্টে প্রমান করতে পারেন, বিচার আপনার পক্ষে যাবে।
একদিনে এমনটা ঘটেনি। আড়াইশো বছর লেগেছে। এখনও ক্রমাগত উন্নতি করে যাচ্ছে। কিন্তু এখানকার মানুষের মানসিকতাটাই এমন হয়ে গেছে যে এদের অন্যায়কে অন্যায় বলতে হবে এবং ন্যায়কে ন্যায়।
আমাদের উপমহাদেশে এইসব অবিশ্বাস্য ঘটনা। শুনতে গল্পের মতন লাগে। ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল কোন দেশেই এইসব কল্পনা করা যায়না।
অন্য ধর্মের কথা বাদ দেই, আমাদের প্রানপ্রিয় নবীর (সঃ) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা আমরা মুসলিমরাই গ্রহণ করিনাই। আমাদের গোত্রভিত্তিক মেন্টালিটি আজও পাল্টায়নি। আজও নিজের "গোত্রের" কেউ অপরাধ করলে আমরা ন্যায় বিচারের তোয়াক্কা করি না।
জনতার কথা বাদই দিলাম। আমাদের সরকারও না।
ফেসবুকে দেখছি দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর সমর্থন করায় এক প্রবাসী ছেলের মাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে।
এইসব কি ধরনের জাহেলিপনা? এইটাতো টোটাল এনার্কি চলে, এমন দেশেও ঘটে না। ছেলের অপরাধে মাকে কেন গ্রেফতার করা হবে?
কালকে আমি সরকারের সমালোচনা করলাম, তো আমার জ্ঞাতি গুষ্ঠীকে কোমরে দড়ি বেঁধে নিয়ে যাবে?
একটা "'স্বাধীন গণতান্ত্রিক" দেশের দাবি করা দেশে এমনটা হতে পারে? পৃথিবীর কোন সভ্য দেশে এমনটা ঘটে?
পোস্টটিকে "রাজাকার শাবকের প্রতি মায়া বা দরদ দেখাতে পোস্ট করেছি" বলে অনেকেই ভিন্ন মোড় দেয়ার চেষ্টা করবে। আশা করি সুসভ্য ও শিক্ষিত মানুষ বুঝতে পারবেন এখানে "ন্যায় অন্যায়ের" বিষয়েই ফোকাস করছি। রাজাকার সমর্থককে ডিফেন্ড করি নাই, বরং ওর মাকে টেনে এনে হেনস্থা করার বর্বরতার প্রতি অভিযোগ করেছি।
আফসোস! আজকের যুগে এতটা ভেঙ্গে লিখতে হয়। সেই যুগ নাই যখন শিক্ষিত লোকজন যা লেখা হয়েছে তাই বুঝতো।
এখনকার জিপিএ ফাইভ, অটোপাস জেনারেশন যা লিখেছি সেটাতো বুঝেই না, উল্টো যা বিরোধিতা করেছি, সেটারই সাপোর্ট করেছি ধরে নিয়ে ফাত্রামি কমেন্ট শুরু করে দেয়।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে আগস্ট, ২০২৩ রাত ১:০৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





