ঢাকা মেডিকেলে নিয়মিতই নবজাতক চুরির ঘটনা ঘটে। এই আজকেই এমন ঘটনা ঘটেছে।
বাচ্চাদের চুরি করে নিয়ে ভিক্ষা করানোর কাজ করায় কিছু চক্র। কিছুদিন পরপর সংবাদে দেখি পুলিশের হাতে এরকম চক্র ধরাও পড়ে। ওদের ধরে ধরে ফাঁ সি তে ঝু লা নো র শাস্তি দেয়া উচিত। বাংলাদেশের আইনে ওদের শাস্তি কি আমার জানা নেই। কিন্তু ওদেরও হাত পা কে টে আজীবনের জন্য পঙ্গু করে রাস্তায় ফেলে রাখতে পারলে উচিত শিক্ষা হতো।
যাই হোক, আমাদের সরকারি মেডিকেল কর্তৃপক্ষের টনক কেন নড়ছে না সেটাই মাথায় ঢুকছে না। সিকিউরিটি হিসেবে উনারা সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করেছেন এবং আনসার পাহারা দিচ্ছেন। ভাল, কিন্তু তারপরেও যেহেতু বাচ্চা চুরির ঘটনা ঘটেছে, তারমানে সিস্টেমটা খুবই পুরানো এবং তারচেয়েও বড় কথা, অকার্যকর। সিসিটিভিতো সুপারশপেও থাকে, চুরি কি আটকানো যায়? চোর চুরি করে নিয়ে যাওয়ার পরে পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজে চোরের চেহারা দেখার চেষ্টা করে। চোর যদি নকল দাড়ি রেখে বা বোরখা পরে আসে, চিনতে পারবেন? ক্লিনড সেভ মানুষ যদি গাল ভর্তি দাড়ি রেখে ফেলে, তাকেতো চেনা কঠিন হয়ে পড়ে। সিসিটিভির ফুটেজ তখন কতটা সাহায্য করে?
উনারা বলতেই পারেন "আমাদের লোকবল নাই। ভিড় বেশি। আমাদের সিস্টেমে গন্ডগোল। ইত্যাদি ইত্যাদি।" কিন্তু এসবই অজুহাত। ডান হাত আর বাম হাতের চাইতেও বাঙালির প্রিয় হাত হচ্ছে এই অজুহাত, যার ব্যবহার আমরা সবচেয়ে বেশি করি।
আমি যদি জানি আমার মেডিকেলে বাচ্চা চুরির ঘটনা ঘটছে, এবং আমাকে সেটা থামাতে হবে, তবে আমি অজুহাত না খুঁজে যথাযত পদক্ষেপ নিব। আমি কি চাইবো কেউ আমার নিজের বাচ্চা চুরি করে নিয়ে যাক? তাহলে? অন্যের বাচ্চা চুরি হলে অন্যের বাবা মায়ের কলিজাতেও সেভাবেই আঘাত লাগে।
এখন বলি আমেরিকায় ওরা কি পদক্ষেপ নেয়।
প্রথমত, যে কেউ মন চাইলো আর ইচ্ছা মতন হাসপাতালে ঢুকে গেল এমন ঘটনা এখানে ঘটে না। এটা হাসপাতাল, রমনা পার্ক না। নানান রোগের রুগী ভর্তি হন। কারোর ছোঁয়াচে রোগ থাকে, তো কারোর অবস্থা এতই সেন্সিটিভ থাকে যে অন্যের বয়ে আনা জীবাণুই তাঁদের জন্য প্রাণঘাতী হতে পারে। কাজেই, হাসপাতালে সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষেধ।
দ্বিতীয়ত, রোগী দেখার নির্দিষ্ট সময় থাকে। আমি রোগীর বিশ্রামের সময়ে গিয়ে হাজির হলাম, এমনটা এখানে হতে দেয়া হয়না। নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে আপনাকে প্রবেশ করতে দেয়া হবেনা।
তৃতীয়ত, আইডি চেকিং। কে আসছে, কার কাছে আসছে, কেন আসছে ইত্যাদি সব আইডি চেকিং করে ভ্যারিফাই করা হয়। আপনি রহিমা খাতুনের সাথে দেখা করতে চান। ভ্যারি গুড। আগে দেখবে আসলেই রহিমা খাতুন নামের কোন রোগী ভর্তি আছে কিনা। এই লোকের তাঁর সাথে দেখা করার অনুমতি আছে কিনা। তারপরেই সে ঢুকতে পারবে।
চতুর্থত, এইটা অতি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। বাচ্চা জন্ম নিলেই ওর হাতে একটি ব্রেসলেট পরিয়ে দেয়া হয় যেখানে নির্দিষ্ট একটি আইডেন্টিটি নাম্বার থাকে। একই ব্রেসলেট বাচ্চার বাবা মায়ের হাতেও থাকে। বাচ্চা যতবার বাবা মায়ের কাছে আনা হবে, নম্বর মিলিয়ে দেখা হবে ম্যাচ করে কিনা। এতে একের বাচ্চা অন্যের হাতে দেয়ার রিস্ক যেমন থাকেনা, তেমনই যে কেউ বাচ্চার এক্সেস পায় না। সবশেষে বাচ্চা এবং মাকে যখন রিলিজ করে দেয়া হয়, তখন হসপিটাল থেকে বেরুনোর গেটে আবারও চেক করা হয় আসল বাবা মাই বাচ্চাকে নিয়ে যাচ্ছে কিনা।
এককালে আমেরিকাতেও হসপিটালে বাচ্চা অদল বদল হতো। বিষয়টাকে ওরা সিরিয়াসলি নিয়েছে বলেই এইসব নিয়ম বের করেছে। প্রতিদিনই চেষ্টা করে আরও কড়া সিকিউরিটির ব্যবস্থা করতে।
আমাদের দেশে শিশু চুরি হওয়া যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা, সেটা অনুধাবন করে তো? করলেতো বহু আগেই ব্যবস্থা নিয়ে নেয়ার কথা। যদি বলে বাজেট নাই, টাকা নাই, লোকবল নাই, আবারও বলবো, এগুলো সব অজুহাত। অনেক অগুরুত্বপূর্ণ খাতে শত শত কোটি টাকা উড়িয়ে দেয়া হয়, এই সামান্য কিছু পদক্ষেপ নিতে নিশ্চই এত বিপুল পরিমান টাকার প্রয়োজন নেই?
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ৩:৫১