"আলহামদুলিল্লাহ" শব্দের অর্থ হচ্ছে সকল প্রশংসা আল্লাহর।
কেউ যখন কাউকে জিজ্ঞেস করেন, "ভাই কেমন আছেন?"
উত্তরে আপনি বলতে পারেন, "ভাল/খারাপ আছি" - অথবা "আলহামদুলিল্লাহ!" মানে হচ্ছে, "আল্লাহ যেমনই রেখেছেন, আমি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ।"
"ইন শা আল্লাহ" মানে হচ্ছে, "যদি আল্লাহ চান তাহলে হবে।"
আপনাকে আমি জিজ্ঞেস করলাম, "আপনি কি আগামীকাল আসবেন?"
আপনি বলতে পারেন "হ্যা/না।" অথবা "আমার চেষ্টা থাকবে, কিন্তু বাকিটা দৈব বিধান।" বা "যদি আল্লাহ চান, তাহলে অবশ্যই আসবো।"
সমস্যা হচ্ছে, আমাদের দেশে লোকে যখন ইন শা আল্লাহ বলে, তখনই বাটপারিটা করে।
কিন্তু মূলত এর অর্থটা সুন্দর। যেহেতু আমি ভবিষ্যতের ব্যাপারে নিশ্চিত না, কাজেই নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। আমি মারা যেতে পারি, আমি অন্য কোন বিপদে পড়তে পারি, অন্য কাজে আটকে যেতে পারি, ইত্যাদি নানান ঘটনা ঘটতেই পারে। তবে আমার ১০০% চেষ্টা থাকবে আসার।
"জাজাকাল্লাহ খায়ের" মানে হচ্ছে "আল্লাহ তোমাকে উত্তম প্রতিদান দিন।"
আমি আপনার একটা উপকার করলাম, আপনি ধন্যবাদ দিতে পারেন, থ্যাংক ইউ বলতে পারেন, কিংবা আমাদের দেশে নানী দাদীরা বা আমার বাবার জেনারেশনও যেটা বলতেন, "আল্লাহ তোমার ভাল করুন।" একই দোয়া এখন লোকে আরবীতেই করে।
"জাজাকাল্লাহ" যেমন একটি বিদেশী শব্দ, থ্যাঙ্কইউ শব্দটাও কিন্তু খাঁটি বাংলা না।
তা দেখা যাচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ, ইন শা আল্লাহ এবং জাজাকাল্লাহ তিনটা শব্দই একপ্রকার ইবাদত বা দোয়া। বিদেশী ভাষা, সত্য, কিন্তু ন্যূনতম, কিছু একটা অর্থতো আছেই। নিরর্থক কিছু না।
অন্যদিকে আমরা তরুণ প্রজন্মই কিছু শব্দ ব্যবহার করি যার কোন আভিধানিক মানে নেই। যেমন, "পিনিক!"
কেউ কোন নেশাদ্রব্য নিয়েছে, জিজ্ঞেস করেন, "কিরে মামা, কি অবস্থা?"
"পুরাই পিনিক!"
এক বন্ধুর সাথে আরেক বন্ধুর দেখা হলো।
"দোস্ত কেমন আছিস?"
"পুরাই ঝাক্কাস!"
এই ঝাক্কাস শব্দের মানেটা কি আমি নিজেও জানিনা। যতদূর জানি, অনিল কাপুরের এক ডায়লগ থেকে উৎপত্তি।
"কিরে, সিনেমাটা কেমন রে?"
"পুরাই জোস্!"
"জোস্"এর কোন আভিধানিক শব্দ আছে? নেই।
"পুরাই ঝাকানাকা অবস্থা!"
এই ঝাকানাকা মানে কি? জানিনা। শুধু জানি মীরাবাঈ ঝাকানাকা দেহ দোলায়। সেটাও কিভাবে, জানিনা।
তা কারোর যদি বাংলা ভাষার সর্বনাশ নিয়ে আসলেই চিন্তা থাকে, সে চিন্তা করবে কেন অর্থহীন শব্দ ঢুকে যাচ্ছে। বিদেশী ভাষার প্রবেশতো পৃথিবীর সব দেশের ভাষাতেই হয়, ভাষার বিবর্তন সেভাবেই ঘটে। ইংলিশ শব্দে "লুট" "বখশিশ" "কর্মা" ইত্যাদি শব্দগুলো ঢুকেছে, আমাদের ভাষায়তো অগণিত। কেউ একটা বাক্য লিখুক, প্রতিটা শব্দ হবে হয় ইংলিশ, নাহয় পর্তুগিজ, নাহয় আরবি বা ফার্সি। খাঁটি বা আদি বাংলায় আজকাল কেউ কথা বললে কয়জন বুঝবেন? আদি ইংলিশে বললে? আদি আরবিতে? কেউই না।
ভিনদেশি ভাষার আগ্রাসন নিয়ে চিন্তিত হলে অবশ্যই এইটা জেনুইন কনসার্ন যে আমাদের দেশের এত সুন্দর সুন্দর গান থাকার পরেও একটি বিয়ে বা হলুদের অনুষ্ঠানে এমনকি নানান জাতীয় অনুষ্ঠানেও হিন্দি গান ছাড়া যেন চলেই না। বাঙালি ছেলে মেয়ে, বাঙালি অনুষ্ঠানে হিন্দি গানে নাচাকুদা করে, ব্যাপারটা কি খুবই হাস্যকর এবং একই সাথে দুঃখজনক না?
এখন আপনার ব্যাপার, আপনি ঝাক্কাস, ঝাকানাকা, পিনিক, জোস্ ইত্যাদি নিয়ে চিন্তিত, নাকি কিছু আরবি শব্দ, যা এদেশের একটি বিরাটাংশের ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে জড়িত, যার অর্থগুলো সুন্দর, সেটা নিয়ে।