ঈদ উপলক্ষে ফেসবুক আমাদের জন্য উপহার দিয়েছে নতুন নাটক "পুত্র যখন ছাগল!"
ঘটনার শুরুতে আমরা দেখতে পাই এক ছেলে পনেরো লাখ টাকা দিয়ে ছাগল কিনে বাপকে উপহার দিয়েছে।
এর আগে বাপকে গাড়ি উপহার দিয়ে ফেঁসেছিল এক জনপ্রিয় ভ্লগার, বাঙালি খুঁজে বের করে আনে ওর ড্যাডি একজন ঋণ খেলাপি। সে নিজে অনুমতি ছাড়া খাদ্যপণ্য বাজারে ছেড়েছে। লেটেস্ট খবর হচ্ছে, ওর নামে এরেস্ট ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়েছে। বাকিটা জানিনা।
এই ছেলে সেই ঘটনা থেকে কোন শিক্ষা না নিয়ে একই কান্ড ঘটিয়ে বসে। বাপকে উপহার দিয়ে বসে।
স্বাভাবিকভাবেই ফেসবুকাররা নিজ দায়িত্বে তদন্তে নেমে পড়ে এবং বের করে ফেলেছে যে সে আমাদের দেশের একজন ট্যাক্স অফিসারের পুত্র।
ট্যাক্স অফিসারের বেতন কোনক্রমেই লাখ টাকার উপরে হওয়ার কথা না। কিন্তু উনার পুত্রের কোটি কোটি টাকার একাধিক গাড়ির কালেকশন, পনেরো লাখ টাকার ছাগল ইত্যাদি নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই গোটা দেশজুড়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করলো।
খেলা তখন জমে উঠলো যখন উনি সিনেমার অভিমানী পিতার মতন বললেন "এই ছেলে আমার না। ওর সাথে আমার কোনই সম্পর্ক নাই।"
দাবীটাতে আরেকটু রং চড়াতে উনার কন্যাও যুক্ত হলেন। "ও আমার ভাই না। ওর সাথে আমাদের পরিবারের কোনই সম্পর্ক নাই।"
এখন লোকে বলছে, ব্যাটা কি তবে দুইটা (আরও বেশি হতে পারে) বিয়া করছে? যে বৌয়ের সাথে সংসার, সে জানেনা? নাহলে নিজের ছেলেকে অস্বীকার করবে কেন?
কিন্তু পরের দৃশ্যেই দেখা গেল ঐ পোলার আগের কোন এক পোস্টে (গাড়ি কেনার) এই মেয়েই নিজের বাপকে ট্যাগ করে মুরাদ টাকলা স্টাইলে কমেন্ট করেছিল।
দর্শকের মনে টান টান উত্তেজনা, যদি অপরিচিতই হয়ে থাকে, তবে কে বেহুদা পাবলিকের পোস্টে এমন আল্লাদি কমেন্ট করেন? তার মানে কি মেয়ে মিথ্যা বলছে? বাপকে বাঁচানোর চেষ্টা? নাকি আসলেই ওরা ছেলেকে চিনে না?
নাটকে আরেকটা টুইস্ট মাত্র যোগ হয়েছে, পোলার ফোন ইন্টারভিউ প্রকাশ হয়েছে, যেখানে সে বলছে, ঐ ছাগলটা সে কিনেই নাই। সাদিক এগ্রোর মালিকের অনুরোধে বেহুদা পার্ট নিতে গিয়ে ছবি তুলেছিল। এখন বিপদে পড়ে গেছে।
উপরে যা ঘটনা বললাম, সব মাত্র কয়েক ঘন্টার ঘটনা।
ভেবে পাচ্ছিনা নাটকটা আগামী কয়েক ঘন্টায় আর কি কি টুইস্ট নিয়ে হাজির হবে।
হয়তো দেখা যাবে এইবার ছেলেটার প্রেমিকা ওর সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করেছে, কারন ছেলেটার ফেসবুকে দামি গাড়ির ছবি, ব্রলোকস বাপের ছবি দেখে ও ভালবেসেছিল, এখন দেখা যাচ্ছে সব মিথ্যা! কেন ওর মনের সাথে এইভাবে ছিনিমিনি খেললো সে? ওর কি মনে একটুও মায়া জাগেনি?
সাদেক এগ্রো দাবি করেছিল ছাগল বিক্রি হয়ে গেছে। এখন ছেলেটা দাবি করছে ওকে ছবি তুলতে বলেছিল তাই সে তুলেছে। ছাগল এখনও বিক্রি হয়নাই, সাদেক এগ্রোতেই আছে। সাদেক আলী এখন একটা ইন্টারভিউতে বলবে ছাগল বিক্রি হয়েছে, ছেলেটা মিথ্যা বলছে। সেই রহস্য নিয়ে দর্শকের মাথায় আরেক জটিল গিট্টু লাগবে।
"কোথায় গেল ছাগল? পনেরো লক্ষ টাকার ছাগল?"
এদিকে সরকার নিজের রেপুটেশন বাঁচাতে ট্যাক্স অফিসারের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিবে। ট্যাক্স অফিসার নিজের চাকরি বাঁচাতে ডাক্তারি সার্টিফিকেট হাজির করবে যে উনি পিতা হওয়ার ক্ষমতা রাখেন না।
উনার মেয়ে তখন আরেকটা ইন্টারভিউতে বলবে, "তাহলে আমি কে? কার বাড়িতে জন্মেছি আমি? কে আমার আসল পিতা?"
লোকে উনার বর্তমান বৌয়ের দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলবে "ঘটনা কি? আপনাকেতো ভদ্র মহিলা মনে করতাম! আপনিও তলে তলে.....?"
ভদ্র মহিলা নিজের চরিত্রের দিকে আঙ্গুল তোলার অভিযোগে ট্যাক্স অফিসারকে তালাক দিবেন। ট্যাক্স অফিসারের তখন মাথায় হাত। কি বাঁচাবেন? চাকরি? সংসার? রেপুটেশন?
তখন নাটকে আবির্ভূত হবে নতুন চরিত্র, এই লোকটা ভদ্রমহিলাকে কলেজ জীবন থেকে ভালবাসতো। কিন্তু মেয়ের বাবা মা বিসিএস ক্যাডার পেয়ে ওর সাথে বিয়ে না দিয়ে ওর হৃদয় ছিন্নভিন্ন করে দেয়। দুঃখে কষ্টে সে নদীর তীরে বসে কাঁদতে থাকে। তখন তীরে ঘাস খেতে থাকা কিছু গরু ছাগল তাঁর চোখের পানি চেটে দেয়। ও বুঝে যায়, গরু ছাগলই ওর হৃদয়ের কথা বুঝতে পারে। তাই সে পশু পালন শুরু করে। ওরই খামারের নাম হয় "সাদেক-এগ্রো।"
ধীরে ধীরে এগ্রো ফার্ম বড় হয়।
এদিকে সে খোঁজ পায় তাঁর পুরানো প্রেমিকার বর্তমান পুত্রের। তাই সে নিজের এক কর্মচারীকে ছাগলের চামড়া আর মুখোশ পরিয়ে ছেলেটির সাথে ছবি তুলিয়ে ভাইরাল করে দেয়।
সেই ছাগল আসলে ছাগলই ছিল না।
হুহুহাহাহাহা!
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০২৪ রাত ১০:৪৪