somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এই ফেরাউনের বিরুদ্ধে মুসা (আঃ) না হতে পারি, হারুন (আঃ) হয়েও মুসাকে যেন সাহায্য যেন করি।

১৯ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মহররম মাস চলছে। এ মাসে আমরা মুসলিমরা পবিত্র আশুরা পালন করি। কেন জানেন? ঘটনাটা আমরা সবাই জানি, আবারও বলছি।

ফেরাউন ছিল মিশরের সম্রাট (exact নাম উল্লেখ নাই, হয়তো দ্বিতীয় রামেসিস। মিশরের রাজাদের এমনিতেই ফেরাউন বলা হতো)। তখনকার বিশ্বে মিশরের চাইতে শক্তিশালী ও আধুনিক দেশ আর দ্বিতীয়টি ছিল না। একদিন সে জানতে পারলো বনি ইসরায়েলি, মানে ওর গোলাম সম্প্রদায় থেকে একটি পুরুষ ওর সর্বনাশের কারন হবে।
সে তখন এক অতি ঘৃণ্য পন্থা অবলম্বন করে।
সে সৈন্য লেলিয়ে দেয়, বনি ইসরায়েলের যে পরিবারে পুরুষ শিশু জন্ম নিবে, ওকে তৎক্ষণাৎ হত্যা করা হবে।
একের পর এক শিশু মারা পড়তে থাকে। সন্তান হারা মা বাবার আহাজারিতে নীল নদ ঘেঁষা নগরী বিষণ্ণ হয়। ফেরাউনের হৃদয় দ্রবীভূত হয় না। তারচেয়েও লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে, এই যে বনি ইসরায়েলের শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে, এর পরেও ওদের সম্প্রদায়ের কেউ ফেরাউনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস করছে না। বছরের পর বছর ধরে ফেরাউন এভাবেই ওদের শাসন করে এসেছে যে কেউ টু শব্দটি পর্যন্ত উচ্চারণের কল্পনা করতে পারেনা। মেন্টাল ট্রমা কোন পর্যায়ে গেলে লোকে এমন স্তম্ভিত আচরণ করে!
জন্ম হয় মুসা (আঃ) নবীর। আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টির একজন। তাঁর পর্যায়ের কোন মহামানব পৃথিবীতে খুব বেশি একটা আসেন নি।
ফেরাউন সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে, বনি ইসরায়েলের কোন পুরুষ শিশুকে বাঁচতে দিবে না।
এদিকে আল্লাহ সিদ্ধান্ত নিলেন শিশুটিকে রক্ষা করবেন।
ফেরাউন সেনা পাঠালো। মুসার (আঃ) মা তাঁর কলিজার টুকরাকে একটি ঝুড়িতে শুইয়ে কুমিরে ভরপুর নীল নদে ভাসিয়ে দিলেন।
আল্লাহ খেলা আরও জমিয়ে তুললেন। ফেরাউনকে নিয়ে মজা ও একই সাথে চরম অপদস্থ করতেই তিনি মুসাকে (আঃ) ফেরাউনের বাড়িতেই, ফেরাউনের স্ত্রী দ্বারাই বড় করলেন। তিনি নদীর ঘাটে মুসাকে (আঃ) কুড়িয়ে পেয়েছিলেন।
ফেরাউনের বাড়িতে অন্যান্য রাজকুমারদের সাথেই মুসা (আঃ) বেড়ে ওঠেন।
এরপরের কাহিনী আমরা জানি।
কিভাবে একের পর এক মিরাকেল দেখার পরেও ফেরাউন জেদ ধরে রইলো, এবং একটা পর্যায়ে বনি ইসরায়েলকে চিরতরে ধ্বংস করে দিতে সেনাবাহিনী সহ নিজে পথে নামলো। সমুদ্র ফাঁক হয়ে বনি ইসরায়েলিদের জন্য পথ খুলে গিয়েছিল, সেই একই সমুদ্র ফেরাউনকে ওর সৈন্য সামন্তসহ ডুবিয়ে মেরেছিল।

দিনটা ছিল ১০ই মহররম।

ইহুদিরা এই দিনে রোজা রাখতো। আমাদের নবীজি (সঃ) বললেন, মুসার (আঃ) প্রতি আমাদের অধিকার আরও বেশি, তাই আমরা এর আগের দিন অথবা পরের দিন মিলিয়ে দুইটা রোজা রাখবো।

ইসলাম ধর্মে ফেরাউনকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের কাফের আখ্যা দেয়া হয়। ওর চেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ দুনিয়ায় আর দ্বিতীয়টি আসেনি। আজও "স্বৈরাচারী" "dictator" ইত্যাদি গালি দিতে হলে আমরা মুসলমানরা "ফেরাউন" গালি দেই।

আমাদের গণতন্ত্রের মানসকন্যা যে মিনি ফেরাউন হয়ে গেছেন, সেটা বুঝতে পারছেন?
বাচ্চারা আন্দোলন করেছে, আপনি ওদের খতম করতে ফেরাউনের সেনার মতন ছাত্রলীগ লেলিয়ে দিয়েছেন। ইন্টারনেট, মোবাইল সার্ভিস সব বন্ধ করে দিলেন। দেশ এখন বাইরের বিশ্ব থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ছাত্রলীগের ধাওয়া খেয়ে পুলিশের কাছে আশ্রয় নিয়েছে এক যুবক। পুলিশই ওকে লীগের হাতে তুলে দিয়েছে। দেখলাম হেলমেট মাথায় চপ্পল পায়ে এক "সিভিলিয়ান" পুলিশের পাশে দাঁড়িয়েই পিস্তলে গুলি ভরে নিরস্ত্র ছাত্রদের উপর গুলি চালাচ্ছে। রামদা হাতে খুবই ক্যাজুয়াল ভঙ্গিতে মানুষকে কোপাচ্ছে। র্যাবের গাড়ি ছাত্রদের চাপা দিয়ে পালাতে গিয়ে জনতার হাতেই ধরা খেয়েছে।
ফেরাউনকে যেমন ওর ম্যাজিশিয়ানরা সাহায্য করতো, আমাদের সরকারকে সাহায্য করে তেমনই কিছু বুদ্ধিজীবী। ড. জাফর ইকবাল চিরকুট লিখে ঘোষণা দেন ঢাবির ছাত্রছাত্রীরা রাজাকার। ফেসবুকে সরকারের পোষ্য সেলিব্রিটিরা বয়ান শোনান সব কিছু শান্ত, দেশের বাতাসে বইছে বসন্তের পুষ্পরেণু। বিএনপি জামাত শিবিরের দোসররা অপপ্রচার চালাচ্ছে, ওদের গুজবে কান না দিতে।
গুজব যে ছড়াচ্ছে না, তা বলার উপায় নেই। অবশ্যই বিএনপি, জামাত, শিবির এখানে সুযোগ তোলার চেষ্টা করবে। অবশ্যই গুজব ছড়াবে। হয়তো দশজন মারা গেছেন, ৫ জন আহত হয়েছেন। খবর ছড়াবে ১৫জনই নিহত হয়েছে। এইসবই স্বাভাবিক ঘটনা। এখান থেকেই সত্যকে ফিল্টার করতে হয়। তা সেটা করার উপায় আছে? মোবাইল, ইন্টারনেট সব বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। ফলে এখন গুজব দাবানলের মতন ছড়াবে। লোকে ধরে নিবে ১৫ না, কমসে কম ১৫০ মরেছে। বেকুবের ছাও না হলে ইন্টারনেট বন্ধ করতো না। কোন আহাম্মকের মাথা থেকে এই বুদ্ধি এসেছে?
সরকারের নীতিনির্ধারক কারা? এই ছাগলগুলিকে দেখার বড় ইচ্ছা। যে কাজ অতি সহজে মাত্র এক সিটিংয়ে চা মিষ্টির সাথে দুয়েকটা ভাল কথায় সমাধান হয়ে যেত, সেটাকে আজকে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে পাল্টে দিয়েছে। ইগো? এরোগ্যান্স? ক্ষমতার দাপট? এছাড়া আর কি?
এই বাচ্চাগুলিকে মনে আছে? ২০১৮ সালে এরাই রাস্তায় নেমেছিল নিরাপদ সড়কের দাবিতে। তখনও ওদেরকে ছাত্রলীগ পিটিয়ে দমিয়েছিল। ওরা জানে, সেবার রাজপথ ছেড়ে দেয়ার ফল কিছুই হয়নি। এইবারও সরে গেলে ফল হবে শূন্য। এখন দেখার বিষয়, ওরা কতদিন নিজেদের বুকের ভিতরের আগুন জ্বালিয়ে রাখতে পারে।

সরকার অনেকভাবেই চেষ্টা নিবে। প্রথমে ভয় দেখিয়ে তাড়াতে চেয়েছিল। মার্ডার করেছে। এখন অভিভাবকদের দিয়ে মানসিক চাপ দিবে। "যাদের পোলাপান গেছে, গেছেই। তোমারটাও যাবে। বাড়িতে ফেরত আনো।" - সহজ ইমোশনাল কৌশল।
বিএনপি, জামাত, শিবির মাঝে দিয়ে ঢুকে নিজেদের ফায়দা তোলার চেষ্টা করবে। হুট করে কোন বাসে আগুন ধরিয়ে দিবে, কোন ট্রেন পুড়িয়ে দিবে। বদনাম হবে এইসব বাচ্চাদের। এরা যেন ওদের থেকেও সাবধান থাকে।

আর আমরা?
যেভাবে সম্ভব ন্যায়ের পক্ষে থাকতে হবে। মেন্টাল সাপোর্টতো আছেই, সাথে অন্যান্য সাপোর্ট নিয়েও আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। আন্দোলনকারী শিশুদের খাবার/পানি খাইয়ে, চিকিৎসা দিয়ে, নিরাপদ আশ্রয় দিয়ে বা যেভাবে যেভাবে সম্ভব সব দিক দিয়ে সাপোর্ট করতে হবে। ফেরাউনের বিরুদ্ধে মুসা (আঃ) না হতে পারি, হারুন (আঃ) হয়েও মুসাকে যেন সাহায্য যেন করি। নাহলে ফেরাউন যেমন নিজের সৈন্য সামন্ত নিয়ে সমুদ্রে ডুবেছিল, আমাদেরও ডুবতে হবে।
"এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম, আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম!"
ভয় নেই! যে আল্লাহ মুসার জন্য সাগরের পানি ফাঁক করেছিলেন, সেই একই আল্লাহ আজও আছেন। ঠিকভাবে লেগে থাকলে আবারও সাগর দ্বিখন্ডিত হবে। আমরা পাব আমাদের promised land!
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:২১
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভারতের পাশে আমেরিকা-ইসরায়েল। পাকিস্তানের পাশে কারা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩


গত রাতে ইসরায়েল থেকে ভারতে বিপুল পরিমাণ যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে গেছে একটি কার্গো বিমান। তাতে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির গাইডেড মিসাইল বিপুল পরিমাণে আছে। এই মিসাইলগুলো অতি নিখুঁতভাবে মেঘ, বৃষ্টি বা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত ও পাকিস্তান উভয় সম্পূর্ণ কাশ্মিরের দখল পেতে মরিয়া

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৩



ভারত হয়ত এবার যুদ্ধকরেই পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির দখল করতে চায়। পাকিস্তানও হয়ত যুদ্ধকরেই ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির দখল করতে চায়। এমতাবস্থায় ভারতের পাশে ইসরাইল এবং পাকিস্তানের পাশে চীন থাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঈশ্বরের ভুল ছায়া – পর্ব ৩ | ভূমিকা-ব্রীজ

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:০৮



"তুমি যদি বাতাসকে ভালোবাসো, তাকে বশ করো না—তার সুর বোঝো। কারণ বাতাস একবার থেমে গেলে, তার কণ্ঠ আর কখনো শোনা যায় না।"

“ঈশ্বরের ভুল ছায়া” সিরিজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবার কমন শত্রু আওয়ামী লীগ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:৫৮


শেখ হাসিনা সবসময় তেলবাজ সাংবাদিকদের দ্বারা বেষ্টিত থাকতেন। তেলবাজ নেতাকর্মীরাও বোধহয় তার পছন্দ ছিল। দেশে কী হচ্ছে, না হচ্ছে, সে সম্পর্কে তার ধারণাই ছিল না। সামান্য কোটাবিরোধী আন্দোলন উনার পক্ষে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক কনফ্লিক্ট জোনে পরিণত করলো ড. ইউনুসের অবৈধ দখলদাররা ‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ২:২১



শেষ পর্যন্ত ড.ইউন তার আন্তর্জাতিক সক্ষমতা প্রদর্শন করে দেখালেন! উনি বাংলাদেশের মানুষের জন্য কখনোই কোন কাজ করেননি ।আমাদের কোনো দুর্যোগে কখনো পাশে দাঁড়িয়েছেন তার কোনো দৃষ্টান্ত নেই । যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×