ফেক নিউজ দুইরকমের হয়ে থাকে।
১. প্রথমটা হচ্ছে একটা ঘটনা ঘটেই নাই, কিন্তু একটা নিউজ বানিয়ে গুজব সৃষ্টি করে হুলুস্থূল বাঁধিয়ে দেয়া।
যেমন অতি সম্প্রতি স্টুডেন্টরা যখন শহরময় গ্রাফিতি আঁকাআঁকি করছে, তখন একটা AI generated ছবি ভাইরাল করার চেষ্টা হলো যেখানে দেয়ালে আঁকা হয়েছে স্ট্যাচু অফ লিবার্টি সহ নিউইয়র্কের ল্যান্ডস্কেপের ছবি।
আওয়ামীলীগের এক পেজে সেটা শেয়ার করে ক্যাপশন দিয়েছে "এই ছবিটার মানে কি ??? ভালো করে লক্ষ্য করে দেখুন বুঝতে পারবেন।"
সাথে সাথে বেয়াক্কেল মূর্খের দল কমেন্ট নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে "এটা তো স্ট্রার্চু অব লিবার্টি, তাহলে কি দেশ টাকে আমেরিকার কাছে,আসলেই বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।" "যে আমেরিকা ৭১ এ স্বাধীনতা বিরোধী ছিল আজ তাদের পা চাটা বাংলাদেশ!!" "এই ছবিটার মানে খুব সিম্পল আগে আমরা বাঙালি ছিলাম আর নতুন স্বাধীনতার পর আমরা আমেরিকার দালালে পরিনত হলাম।" ইত্যাদি ইত্যাদি আরও বহু কিছু।
আমার পরিচিত এক আংকেল কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছেন "দেশটা এখন আমেরিকার কাছে বিক্রি হয়ে গেল! সেন্টমার্টিন আর আমাদের থাকবে না।" বাড়িয়ে বলছি না, আসলেই উনি টেনশনে আধমরা হয়ে গেছেন। ওনার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হবেন, উনি সেটা মানতেই পারছেন না।
অথচ ছবিটাই ছিল ফেক।
২. বন্যার সময়ে পানিতে নিমজ্জিত একটি শিশুর ছবি ভাইরাল করা হয়েছে যেটি ছিল AI জেনারেটেড।
দেশে যে বন্যা হচ্ছে এ নিয়ে কারোরই কোন সন্দেহ নাই। পত্রিকায় এখনও নিহতের সংখ্যা না আসলেও প্রচুর মানুষ যে মারা যাবেন এটি নিশ্চিত। কারন মধ্যরাতে হঠাৎ করেই কোন রকম সতর্কতা না দিয়ে বাঁধের গেইট খুলে দেয়ায় অপ্রস্তুত মানুষ বানের জলে ভেসে গেছেন। এমন অবস্থায় "এই শিশুর AI ছবি কেন ভাইরাল হলো" তা নিয়ে তর্ক করে বেহুদা সময় নষ্ট করার মানে কি? যদি ভাইরাল নাও হতো তাহলে কি বন্যা থেমে যেত?
"তবুও একটা মিথ্যা ছবি আপলোডানোর কোন মানে হয়না।" এতই স্বামী বিশুদ্ধানন্দ আপনারা যে অধমন চালের মধ্যে একটা ছোট্ট কাঁকর দেখলেও লাফিয়ে উঠেন?
আগের দৃশ্যপটে নকল AI ছবিকে অথেন্টিক বলে চালু করে দেশে একটা দাঙ্গা লাগানো সম্ভব।
১৫ জুলাই পরবর্তী সংগ্রামে অনেকেই অনেক মিথ্যা বানোয়াট গুজব রটিয়েছে। আমি অবশ্যই গুজবের বিপক্ষে, কারন এই ধরনের পরিস্থিতিতে মানুষের জীবন মরন নির্ভর করছে।
যেমন শেখ হাসিনার একটি ছবি পোস্ট করে পেছনে দাঁড়ানো ইউনিফর্ম পরা এক অফিসারের ছবি হাইলাইট করে একজন ছড়ানোর চেষ্টা করলেন "উনার চেহারা ইন্ডিয়ানদের মতন, এই ইউনিফর্মটাও অপরিচিত। এইটা কি "র"?"
বা আরও হাস্যকর, "হেলিকপ্টারে ধুতি পরা একজন কপালে তিলক মেখে গুলি করে মানুষ মারছিল। ওটা র বা ইন্ডিয়ান সেনাবাহিনী।"
প্রথম কথা, র-এর বুদ্ধি তোমার চেয়ে একটু বেশি, তাই ওরা ধুতি পরে, মাথায় তিলক দিয়ে হেলিকপ্টারে উঠবে না। আর ইউনিফর্মে প্রধানমন্ত্রীর পিছনেও দাঁড়াবে না।
এমনই বহু গুজবের ভিডিও ও ছবি ছড়িয়েছিল সেই সময়ে।
তখন যদি কেউ গুজব রটাতো যে সমন্বয়কদের ডিবি অফিসে ধরে নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, এবং তাতে জড়িত আছে র, তাহলে একটা বড় সুযোগ ছিল দেশবাসী ডিবি অফিসে আক্রমন করে সব কটা অফিসারকে পুড়িয়ে মেরে ফেলতো।
আর বন্যা পরিস্থিতিতে শিশুটির নকল ছবিতে কোন কিছুরই হেরফের হবেনা। এখানে মূল লক্ষ্য যত বেশি সম্ভব মানুষ যেন বন্যার্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন।
একটা AI জেনারেটেড ছবি দেখে যদি "আশাহত" "মর্মাহত" "দুঃখ ভারাক্রান্ত" হয়ে কেউ বন্যার্তদের সাহায্য করা থেকে বিরত হয়, ওর মতন বা*&দ (আমার রাবীন্দ্রিক শব্দচয়ন ক্ষমা করবেন) শুরু থেকেই অমানুষ ছিল, এইটা স্রেফ একটা এক্সকিউজ।
হ্যা, যদি বন্যা না হতো, অথবা হলেও কারোরই কোন রকম ক্ষতি না হতো, তাহলে অবশ্যই এইধরনের ফেক ছবি প্রচার করলে গুজব রটনাকারীকে থাবড়ানো উচিত ছিল।
দুই ধরনের পরিস্থিতির পার্থক্য বুঝাতে পেরেছি?

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



