১১/১১/১৯৭১ রোজ বৃহস্পতিবার। পবিত্র রমজানের ২১ তারিখ। বিকেল সাড়ে ৪টার সময় বাজারে গেলে আমার সাথে দেখা হয় একজন লোকের সাথে যে কিনা পাহাড়ের খামারে কাজকর্ম করে।
তার কাছে জানতে পারলাম, ফয়েজ লেকের বিপরীত দিকের পাহাড়ের উপর অনেক লাশ পড়ে আছে। আমি তখন আরো তিনজন সঙ্গী নিয়ে পাহাড়ের ভেতর পথ করে দেখার জন্য চললাম। সন্ধ্যা ৬টার সময় সেখানে পৌঁছে যা দেখলাম তা যদি প্রকাশ করি দুঃস্বপ্ন বলে মনে হবে। এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের নজির পৃথিবীর ইতিহাসে আছে কিনা জানি না। এটা বর্বর যুগের ইতিহাসকে সহস্রগুণ হার মানিয়ে দিয়েছে।
কি দেখলাম? দেখলাম, অগনিত মৃতদেহ। চক্ষু স্থির হয়ে গেলো। সংযত হলাম। ভালো করে দেখলাম। এবার দেখলাম সব লাশ মেয়েছেলের। উলঙ্গ অবস্থায়। অধিকাংশই যুবতী এবং দুই তিনদিন আগের মৃতদেহ বলে মনে হলো। ভালো করে নজর করে দেখলাম, অধিকাংশ মৃত নারীর পেটে সন্তান পচনশীল অবস্থায় আছে। মৃতদেহ গুলো এক এক স্থুপে ১০ জন ১৫ জন করে রাখা হয়েছে। আমার সঙ্গী একজন অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলো। আমি কোনো রকমে সংজ্ঞা রেখে একে একে সব মৃতদেহ গুণে দেখলাম ১০৮২টি হতভাগ্য যুবতীর মৃতদেহ। এই অর্ধগলিত লাশগুলো দেখে মনে হলো অধিকাংশের পেটে ছুরি দ্বারা আড়াআড়িভাবে আঘাত করে বধ করা হয়েছে। পাহাড়ের পথ ধরে চুপি চুপি চলে এলাম।
পরে জানতে পারি, এই যুবতী মেয়েদের চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে পাক হানাদার সৈন্যদের ভোগের জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে রাজাকারদের মাধ্যমে এনে আটকে রাখা হয়েছিল। এদের অধিকাংশই শিক্ষিতা ও ভদ্র ঘরের মেয়ে মনে হয়েছিল। দীর্ঘদিন আটকে রাখার ফলে তারা অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় ও ভোগের অযোগ্য হওয়ায় হত্যা করে অজ্ঞাত স্থানে এনে ফেলে দিয়েছে। হানাদার পাক সৈন্য অবাঙালি অধ্যুষিত ওয়্যারলেস ও ফিরোজ শাহ্ কলোনির বাসিন্দাদের সহায়তায় এই পাহাড়ের উপর এনে ফেলেছে, যাতে কেউ জানতে না পারে। কিন্তু সত্য কোনোদিন চাপা থাকে না।
এ কে এম আফছার উদ্দিন
সাবেক রেলওয়ে কর্মকর্তা, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


