
পশ্চিম আফ্রিকায় মহামারী আকারে ছড়িয়ে পরেছে ইবোলা ভাইরাস। ১৩২৩ জন নিশ্চিত আক্রান্তের ৭৩০ জনের মৃত্যু ঘটেছে ইতোমধ্যে। আশঙ্কার ব্যাপার হলো পশ্চিম আফ্রিকাতেই বিভিন্ন শান্তি মিশনে কর্মরত রয়েছে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনীর শান্তিরক্ষীরা। যাদের মাধ্যমে বংলাদেশেও চলে আসতে পারে এই ভাইরাস।
এই ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক টিকা আবিষ্কৃত হয়নি এখনও। নেই তেমন কোনো চিকিসাও। বিশেষজ্ঞদের মতে আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর হার ৯০ শতাংশ। একজন আক্রান্তের সংস্পর্শে আসলেই আক্রান্ত হচ্ছে অপরজন। মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাস বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে ঘটাতে পারে স্মরনাতীতকালের ভয়াবহ মহামারী। কারণ এখানে আমরা একই ব্যক্তির জিনিস ব্যবহার করি বহুজন, প্রতি মুহুর্তেই আমরা লেগে আছি কারো না কারো স্পর্শে, অফিসে-রাস্তার ফুটপাতে, বাসে, দোকানে।
ডক্টরস উইদাউট বর্ডার নামক যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থার মতে এবারের সংক্রমণ অতীতের চেয়ে ভয়াবহ। ১৯৭৬ সালে প্রথম ইবোলার সন্ধান পাওয়া গেলেও কখনোই এই ভাইরাসের সংক্রমণ সীমান্ত অতিক্রম করে একাধিক রাষ্ট্রে এবারের মতো ছড়িয়ে পড়েনি। এবার মার্চে গায়ানায় শুরু হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সিয়েরালিওন, লাইবেরিয়া, নাইজেরিয়ায়।
ইবোলা কি?
ইবোলা হচ্ছে একটি আরএনএ ভাইরাস। যেটির নামকরণ করা হয়েছে কঙ্গোর ইবোলা নদীর নাম থেকে। ভয়াবহ এই ভাইরাসটি মানবদেহে রক্তপাত ঘটায়। যার ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি শকে চলে যায়। অর্থাৎ তার রক্তচাপ কমে যায়, হূৎপিণ্ডের স্পন্দন কমে যায় এবং শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যাহত হয়। ইবোলা ভাইরাস মানবদেহে প্রবেশের পর কয়েকদিন থেকে প্রায় ৩ সপ্তাহ কোনো লক্ষণ প্রকাশ না করেই অবস্থান করতে পারে। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি এই রোগ নিয়ে চলে যেতে পারেন এক দেশ থেকে অন্য দেশে। আর সেখানে ছড়িয়ে দিতে পারেন নিজের অজান্তেই।
ইবোলার লক্ষণ
ইবোলা আক্রান্ত ব্যক্তি প্রথমে নিরীহ ফ্লু এর মতো হালকা জ্বর, মাথা ব্যাথা, শরীর ব্যাথা অনুভব করে। কিছুদিন পর মুখে ঘা, ডায়রিয়া এবং মারাত্মক বমি শুরু হয় এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে শরীরের ভিতরে বাইরে রক্তপাত শুরু হয়। যার ফলে শকে চলে যায় এবং রোগীর মৃত্যু ঘটে।
কিভাবে ছড়ায়?
ধারণা করা হয়- বাদুরের খাওয়া ফল থেকেই ইবোলা ভাইরাস মানুষের দেহে প্রথম প্রবেশ করে এবং পরবর্তীতে তা মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে শুরু করে। ইবোলা আক্রান্ত মানুষের দেহরস অপর কোনো মানুষের দেহের স্পর্শে আসলে সেই ব্যক্তিও আক্রান্ত হতে পারেন। এমনকি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মৃত্যুর পরও ভাইরাসটি বেশ কয়েকদিন টিকে থাকে।
চিকিৎসা
রিহাইড্রেশন এবং হালকা বেদনানাশক দিয়ে করা হচ্ছে এবোলা আকান্তের চিকিৎসা। খুব একটা কার্যকরী কোনো প্রতিষেধক এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। নেই কোনো প্রতিষেধক টিকাও।
আমাদের করণীয়
যেহেতু এর কোনো টিকা আবিষ্কৃত হয়নি তাই এই ভাইরাসটি যাতে আমাদের দেশে প্রবেশ করতে না পারে এই ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। বিমানবন্দরে কর্তব্যরতদের এই ভাইরাসে আক্রান্তদের সনাক্তকরণের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। যদি কোনো আক্রান্ত ব্যক্তি সনাক্ত হয় তবে তাকে কিভাবে পৃথক করে চিকিৎসা দিতে হবে সেই ব্যাপারেও প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন।
আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা এমন একটি দেশ যেখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে হাজারের বেশি মানুষ বাস করি। তাই এই ভয়াবহ ভাইরাসটি যাতে কোনোভাবেই আমাদের দেশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেই বিষয়ে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন এখনই।
সূত্র: সর্বশেষ.কম

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


