ঈদুল ফিতর। বিকাল ২টার মত হবে। বৃষ্টি থেমে থেমে গেছে। আমার খুব ঘনিষ্ট একজন বন্ধূ ,নাম বড়মনি। ও আজকে বের হয়েছে তার প্রীয় বন্ধুর বাসায় যাবার উদ্দেশ্যে। আজকে তাকে আরো বেশী বেশী রাজপুত্রের মত লাগছে দেখতে। মাথার সাদা পাগড়ী, গায়ের শেরোয়ানীর মত দেখতে পাঞ্জাবী আর ধুতি কাটের পাজামার সাথে পাম্পসুটা তাকে মানিয়েছে বেশ। রাস্তায় একটা সিএনজি পাওয়া গেলো। তাকে জিজ্ঞেস করল “ উত্তরা যাবেন?”
সিএনজি ড্রাইভার উঠেন বলেই স্টার্ট দিয়ে দিলো। বড়মনির ভালো লাগলো। ঈদের দি্নে অন্তত সবাই সুন্দর হয়ে গেছে। সিএনজি দরকষাকষী না করে মিটারেই গাড়ী চালাচ্ছে।
এরপর মিটারের দিকে তাকাতেই তার ভুরু গুলো কুচকিয়ে উঠল। মিটার ০০ হয়ে আছে। আসলে মিটারটা চলছেনা।
বড়মনিঃ আপ্নার মিটার তো বন্ধ। চালু করেন্নায় কেন?
সিএনজিঃ জি না ভাই, ঈদের দিনে কোন মিটার লাগেনা।
বড়মনিঃ কি বলেন? মিটার ছাড়া আমি ভাড়া বুঝব কি করে? আপনি বেশী চাইলে আমি যদি দিতে না পারি? দাড়ান।
সিএনজি রাস্তার মাঝখানেই দাড়িয়ে গেলো।
বড়মনিঃ ঈদের দিনে মিটারের যাওয়া যাবেনা মানে? ভাড় কত তা বুঝব কি করে আমি? হ্যা? রাস্তার মাঝখানে দাড়ালেন কেন? সাইডে যান।
ড্রাইভার একটা ঝাঁকি দেয়া গিয়ারে গাড়ী রাস্তার পারে নিয়ে দাড়া করালো।
বড়মনি একটু রেগে গেলো।
বড়মনিঃ আমাকে কি ওখনে নিয়ে গিয়ে সবার সামনে লজ্জা দিয়ে বেশী টাকা নেবার কথা ভাবা হচ্ছে নাকি? ভাড়া ঠিক না করে চালাবা কেন তুমি? হ্যা
ড্রাইভারঃ যা ভাড় তাই দেবেন, অসুবিধা কি আবার?
বড়মনিঃ সেটার জন্যই তো তুমি মিটারে চালাবা।
সিএনজিঃ জি না। আজকে মিটারে যাওন যায় না। আজকে এমনিতেই সবাই ২/১ শো বেশী দেয়।
খাঁচার ভিতরের সিএনজি অলার চেহারাটা দেখে বড়মনি আরো রেগে যাচ্ছে।
বড়মনিঃ তুমি আমার কাছ থেকে জোর করে সাহায্য নেয়ার জন্য চালাকী করছ। তুমি আসলে ছোট লোক।
সিএনজিঃ ছোট লোক হতে যামু ক্যান? কাম কইরা পয়সা নিমু।
বড়মনির মাথায় আগুন উঠে গেলো।
বড়মনিঃ এইটাকে কাম করে পয়সা নেয়া বলেনা। এইভাবে তুমি শুধু মানুষের কাছে নিজেকে ঘৃণার পাত্র হিসাবেই পরিচিত হবা, সুখী হতে পারবা না। তুমি আসলে আমাকে বড়লোক মনে করে নিজেকে গরীব হিসাবেই আমার কাছে পরিচিত করে তুল্লা। আমি আসলে বড়লোকও না গরীবলোকও না। আমি একজন মানুষ। বুঝছো? যাবা তুমি মিটারে? না নিজেকে আমার কাছে ছোট করেই রাখবা?
সিএনজিঃ না মিটারে যাওন যাইবো না।
বড়মনিঃ তা হলে থাক। আমি যাব না তোমার গাড়ীতে। তুমি একটা ছোটলোক।
বড়মনি, রাগে কষ্টে অপমান মিস্রিত, তার চিরাচরিত মুঘোলরাজপুত্রমার্কা পোষাকে, তার গন্তব্যে হাটতে শুরু করল। সিএনজী টা পিছনে পড়ে রইলো। ওখানে দাঁড়িয়ে থাকা কিছু লোকজন চলে যাওয়া বড়মনির দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। একজন বোধহয় সিএনজি ড্রাইভারকে বলল।
ঃ তোমরা আসলে বাঙ্গালীর মান ইজ্জত আর রাখতে দিলা না। তোমাগো প্যাট কোনদিনো ভোরবো না।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





