Freedom of Speech বা বাকস্বাধীনতা কি ?
আমাদের মাঝে একটা কঠিন ধারনা বা ভূল ধারনা বাকস্বাধীনতার সংজ্ঞায়।
বাকস্বাধীনতা মানেই কি আপনি যা খুশি বলতে পারেন, যখন ইচ্ছে বলতে পারেন বা যা খুশি করতে পারেন? উত্তরঃ ভুল
'বাকস্বাধীনতা হল যেকোনো উপায়ে সব ধরনের তথ্য ও আইডিয়া চাওয়া, গ্রহণ করা, প্রকাশ এবং প্রদানের অধিকার দেয়া।
এটা একই সাথে দুই ধারী তলোয়ার এর মত। সাবধানে হ্যান্ডেল না করলে দুইভাবেই আঘাত পেতে হবে।
বাকস্বাধীনতা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার সকল প্রকার ধারণার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যেগুলো ধর্মীয় ভাবে গভীর আপত্তিকর হতে পারে আবার দেশের সরকার বিরোধী ও হতে পারে। খেয়াল করে দেখবেন- শব্দটা সরকার বিরোধী, বাট রাস্ট্র বিরোধী নয়। সরকার আসবে যাবে বাট রাস্ট্র তার যায়গায় থেকে যাবে। সো, সরকারের ভুল ত্রুটি তুলে ধরলেই সেটাকে রাস্ট্রবিরোধী হিসেবে রায় দেয়া যাবেনা।
কিন্তু বাকস্বাধীনতা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা- একটা রেস্পন্সিবিলিটি নিয়ে আসে।
এর সাথে সাথে আরেকটা জিনিষ আসে- হেট স্পীচ বা বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও উস্কানি।
বাকস্বাধীনতার আসল ধারনার সাথে যদিও যায়না তবুও সরকার ও অথোরিটি চাইলেই যে কোন বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে যদি তা দেশের আইন ও সমাজের জন্য মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনে।
তবে, এই বাকস্বাধীনতা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উপর যে কোন বিধিনিষেধ অবশ্যই আইনের মধ্যে নির্ধারিত হতে হবে যা অবশ্যই স্পষ্ট এবং সংক্ষিপ্ত হতে হবে যাতে সবাই সেগুলি বুঝতে পারে।
এমন হওয়া যাবেনা, একটা ব্রড টার্ম দিয়ে রাখল আর এর অধীনে সবাইকে ধরে জেলে পুরে দিলো, যেটা ৩য় বিশ্বের অসভ্য দেশে চলছে বর্তমানে ।
কিভাবে এর প্রয়োগ হতে পারে?
সুনির্দিষ্টঃ যে কোনও বিধিনিষেধ যথাসম্ভব সুনির্দিষ্ট হওয়া উচিত। ধরুন কোন এক পত্রিকায় কোন এক সংবাদ প্রকাশিত হল যা সমস্যার সৃষ্টি করল, এই ক্ষেত্রে ওই সংবাদটি তুলে নেয়া যুক্তিকর, কিন্তু এটা দিয়ে পুরা পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া জায়েজ হয়ে যায় না।
বাট, পুরা পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া জায়েজ হতে পারে, যদি পত্রিকা টি ক্রমাগত একের পর এক সেইম ভুল করতে থাকে, এবং তাতে সমাজ ও রাস্ট্র চরম বিপদে পড়তে পারে।
জাতীয় নিরাপত্তা এবং জনশৃঙ্খলাঃ জাতীয় নিরাপত্তা এবং জনশৃঙ্খলার কারন দেখিয়ে যে কাউকে তুলে নিয়ে যাওয়া, মামলা করা বা তার কোন লিখা কে বেইজ করে তাকে অভিযুক্ত করা অন্যায়, যতক্ষন না নির্ধারিত কোর্টে এবং নিরপেক্ষ বিচারক দ্বারা সে দোষী সাব্যস্ত না হয়। এটা নিশ্চিত করা অবশ্য কর্তব্য।
কিন্তু এই আইন এমন হওয়া যাবেনা যা, তা কোন ইন্ডিভিজুয়াল ট্রেডিশান বা ধর্মের উপর নির্ভর করে।
৩য় বিশ্বের রাস্ট্র সমূহে এখন যেটা চলছেঃ জাতীয় নিরাপত্তা এবং জনশৃঙ্খলা রক্ষার নামে সরকারের যে কোন সমালোচনা বন্ধ করে দেয়া হয় এবং কঠোর হাতে দমন করা হয়। ফলে, সমালোচক বিহীন শাসক হয়ে উঠে দানব।
অন্যের অধিকার এবং খ্যাতি রক্ষাঃ সরকারি কর্মকর্তাদের ইন্ডিভিউজুয়াল ব্যক্তির চেয়ে বেশি সমালোচনা সহ্য করা উচিত, কারন তারা সমাজের সুপিরিয়র এবং সমালোচনা ব্যতিরেকে তারা বুঝতে পারবেনা তারা কি সঠিক করছে নাকি ভুল। সুতরাং মানহানি আইন যা সরকার বা সরকারি কর্মকর্তার বৈধ সমালোচনা বন্ধ করে তা সুস্পষ্ট ভাবে বাকস্বাধীনতার অধিকার লঙ্ঘন করে।
এক্ষেত্রে, আমরা উন্নত দেশ গুলোর দিকে তাকাতে পারি, প্রেসিডেন্ট বুশ এর ১৪ গুষ্টি উদ্ধার করলেও কারো কিছু আসে যায়না, ট্রাম্পের মূর্তি বানিয়ে তাতে জুতা মারলেও ট্রাম্প এর মান সম্মান যায় না, অথচ ৩য় বিশ্বের কোন দেশের কোন ডিক্টেটর বা রাস্ট্রনায়ক এর নামে কিছু বলে দেখলেও সাথে সাথে জেলে পুরে দেয়া হয়।
ব্লাস্ফেমি বা পরনিন্দাঃ
এটা একটা সেন্সিটিভ টার্ম।
যে কোন এবস্ট্রাক্ট ধারনা, ধর্মীয় বিশ্বাস বা অন্যান্য বিশ্বাস যা বিশ্বাসী দের সংবেদনশীলতা রক্ষা করার দায়িত্ব বাকস্বাধীনতার কাধে নয়, এবং কেউ যদি ধর্ম, ধারনা ও বিশ্বাস নিয়ে সমালোচনা, ভিন্নমত এবং ভুল তুলে ধরে সেটাকে বন্ধ করা বা চুপ করিয়ে দেয়া বাক স্বাধীনতার লঙ্ঘনের চূড়ান্ত রুপ।
এটা খুব সেন্সিটিভ টার্ম এবং সভ্য দেশে এই টার্ম প্রয়োগ করা ইজি, তবে কুশিক্ষিত এবং পিছিয়ে পড়া জনপদে এই টার্ম সমাজে বিশাল বিপদ ডেকে আনে।
কারন- পিছিয়ে পড়া জনপদে ধর্মীয় কুসংস্কার এবং অজ্ঞতা জ্ঞান, আলো ও সভ্যতাকে রিপ্লেস করে এবং সেখানে যে কোন ধরনের সমালোচনা কে কঠোর হাতে দমন করা হয়।
নীচে ব্লাস্ফেমি আইন চালু থাকা দেশ গুলোর লিস্ট এবং এর সাজার পরিমান দেয়া হলঃ
মৃত্যুদন্ডঃ
নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ইরান, আফগানিস্তান, সোমালিয়া, মৌরিতানিয়া, সৌদি আরব, ব্রুনেই দারুস সালাম।
খেয়াল করে দেখুন প্রতিটা রাস্ট্র মুসলিম রাস্ট্র এবং প্রতিটা রাস্ট্রই দুনিয়ার সবচেয়ে জঘন্য রাস্ট্র গুলোর অন্যতম।
কারাগারে বিভিন্ন মেয়াদে সাজাঃ
ইন্ডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, ইথিওপিয়া, তুরস্ক, মিশর, মায়ানমার, কেনিয়া, তানজানিয়া, পোল্যান্ড, সুদান, দক্ষিন সুদান, আলজেরিয়া, মরোক্কো ও পশ্চিম সাহারা, ইয়েমেন, কুয়েত, ইরাক, ক্যামেরুন, মালেশিয়া, শ্রী লংকা, মালাঈয়ী, কাজাখাস্তান, জিম্বাবুয়ে, জাম্বিয়া, তিউনিশিয়া, এল সাল্ভাদর, সিংগাপুর, জর্ডান, ইরিত্রিয়া, দুবাই আমিরাত, ফিলিস্তিন, ওমান, বতসোয়ানা, গাম্বিয়া, মরিশাস, ত্রিনিদাদ এন্ড টোবাকো, নর্থ বা তুর্কি সাইপ্রাস, কমোরোস, কাতার, গিনি বিসাউ, বাহরাইন, সুরিনাম, লেবানন, মালদ্বীপ, সেইন্ট ভিন্সেন্ট এবন্ড গ্রেনাডা, গ্রেনাডা, এন্টিগা এন্ড বারমুডা, এন্ডোরা, স্যান ম্যারিনো
রাশিয়া ( পুতিন বিরোধী দের দমন করার অন্যতম হাতিয়ার)
জার্মানি ( এটা মূলত নাজি এবং হিটলার বাহিনী কে সাপোর্ট করার জন্য প্রযোজ্য এবং এটাকে সেইম আইনে ফেলা হয়েছে ) থাইল্যান্ড ( এখানে থাই রাজার ও রাজ দরবার এর বিরুদ্ধে কিছু বললে সেটাকে ব্লাস্ফেমি আইনে ফেলা হয়, কারন থাইল্যান্ড এ রাজাই ধর্ম ও আইন )
ইস্রায়েল ( মূলত দখল করে রাখা ফিলিস্তিনি দের চাপে রাখার জন্য, যাতে সহজে ইহুদি ধর্মের বিপক্ষে কিছু বললেই বিচার করা যায় ফিলিস্তিনিদের)
নেপাল ( হিন্দু রাস্ট্র একমাত্র এই লিস্টে )।
খেয়াল করলে দেখা যায়, বেশির ভাগ রাস্ট ( ৯৫% এরও বেশি) মুসলিম রাস্ট্র এবং তারা সভ্যতায় অত্থনীতিতে জ্ঞান বিজ্ঞান মেধা এবং মননে পিছিয়ে পড়া রাস্ট্র।
বাকি দুনিয়ার সব উন্নত ও সভ্য দেশে এই পিছিয়ে পড়া আইন এর অস্তিত্ব নেই বা তারা এটা নিয়ে মাথা ঘামায় না।
সাংবাদিক ও মিডিয়াঃ সাংবাদিক এবং ব্লগাররা তাদের কাজের কারণে বিশেষ ঝুঁকির সম্মুখীন হয়। তাই তাদের বাকস্বাধীনতার অধিকার রক্ষার দায়িত্ব দেশগুলোর।
সংবাদপত্র, টিভি স্টেশন ইত্যাদিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যেকের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে প্রভাবিত করতে পারে।
হুইসেল ব্লোয়ার্সঃ যে বা যারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য প্রকাশ করে তার বিরুদ্ধে সরকারের কখনই ফৌজদারি মামলা করা উচিত নয়। এডোয়ার্ড স্নোডেন দের যদি দমিয়ে রাখা হয়, তাহলে কখনোই খুজে পাওয়া যাবেনা দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার।
বাক স্বাধীনতা একটি মারাত্মক অস্ত্র।
এটা ইউজ করা উচিত সচেতন ভাবে, এবং এর বিরুদ্ধে যে কোন অপ্রেশান এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো উচিত সাহস করে।
কারন, হিউমান রাইটস এর সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলোর একটা হল- মুক্ত ভাবে চিন্তা, এবং প্রকাশ করতে দেয়ার অধিকার। যদিও সেটা প্রভাবশালী বা অপ্রেসর দের বিরুদ্ধে যায়।
যদি কি, কেন, কোথায় এবং কিভাবে - এই সব প্রশ্ন না করেন এবং উত্তর খুজে বের করতে না চেস্টা করেন, তাহলে আপনার আর বোবা পশুর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।
ঘানিতে চোখ বাধা গরুর মত আপনি যেদিকে গলায় দড়ি বাধা, সেদিকেই যদি যেতে থাকেন, তাহলে আপনাকে মানুষ হিসেবে গন্য করবে কিভাবে?
Photo Courtesy
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০২১ দুপুর ২:২২