চীনা সাহিত্যিক লু সুনকে সকলেই চিনে। তার বেশ কিছু জনপ্রিয় গল্প আছে। তখনকার চিনে উচ্চশিক্ষার্থীদের মত তিনিও ডাক্তারি পড়তে গিয়েছিলেন জাপানে। তখন রুশ-জাপান যুদ্ধে সদ্য জাপানিরা জিতেছে। তাই ক্লাসের ফাকে ফাকে লণ্ঠন স্লাইডশোর মাধ্যমে জাপ সৈন্যদের কৃতিত্ব দেখানো হতো। সেদিন ও দেখানো হচ্ছিল। কিন্তু স্লাইডে চোখ আটকে গেলো তরুণ লু সুনের। তাতে দেখানো হচ্ছিল কয়েকজন চীনাদের মাঝে এক বন্দি চীনাকে। ধারাভাষ্যে বলা হচ্ছিল এই চীনা হচ্ছে রুশ গুপ্তচর। যাকে একটু পরেই হত্যা করবে জাপ-সৈন্যরা। আর সেই বাজি দেখতে এসেছে সহাস্য চীনারা। স্বজাতির মননের এহেন অধপতিত অবস্থা দেখে তিনি দুইরাত ঘুমাইতে পারেন নাই। শেষে সিদ্ধান্ত নিলেন না স্বজাতির নিহত হবার দৃশ্য যারা সহাস্যবদনে দেখতে পারে তাদের শারীরিক কোনো সমস্যা নাই। তাদের দরকার মননের চিকিৎসা। এর পর তিনি সিদ্ধান্ত করেন বিপ্লবী সাহিত্যের। সাহিত্য তথা চিন্তাই পারে মানুষের ভেতরটাকে পাল্টে দিতে।
আহা সময় এখন বদলে গেছে। ছয়জন নিরপরাধ ছাত্রকে স্বজাতিরাই কোনোরকম বিবেচনাহীন গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করলো। তাও আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সামনে। আবার সেই লাশের বিরুদ্ধে মামলা করলো বাহিনীরা। এরপরও কী আমরা এই বিচারের নামে আন্দোলন করবো। বিচারের আবেদন নিয়ে যাবো এইরকম একটা দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের কাছে। এরপরও আমরা শুনবো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের বক্তব্য বিষটি দ্রুত তদন্ত হবে। খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রাণালয়ের মননেও আজ গভীর অসুখ। আর দেশের বৈদেশ ফেরত বুদ্ধিজীবীরা আজ কলম ধরেন গভীর রাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আতঙ্ককে আমলে নিয়ে। যেন তার লেখায় কারও প্রতি আক্রমণ না থাকে। রাষ্ট্র সরকার তার আইনপ্রয়োগ বাহিনীকে আজ কিছুই বলা যাবে না। এটাই এ পোড়ার দেশের বর্তমান সংস্কৃতি।
বারবার ম্যাকিয়াভেলীর ডিসকোর্সেসে ফিরে যেতে হয় এই জন্য। তিনি বলেন, একটা রাষ্ট্রে ততক্ষণ পর্যন্তু কোনো সন্ত্রাস হইতে পারে না। যতক্ষণ পর্যন্তু না রাষ্ট্র পরিস্থিতি তৈরি না করে।’
আমরাতো চোখের কাছেই দেখলাম লিমন নামের একটা কিশোরকে পায়ে গুলি করে পা কেটে তাকে সন্ত্রাসী সাজিয়ে মামলার পর মামলা দিয়ে সন্ত্রাসী প্রমাণ করতে। এদেশেই অপ্রশিক্ষিত ট্রাক ড্রাইভার শত শিশুদের নিয়ে খাদের ভেতর ট্রাক চালিয়ে হত্যা করে পঞ্চাশজন শিশুকে। বারবার বলছি পঙ্গু লিমনকে মেনে নেয়া মানে এইসব ছাত্রদের লাশ আমাদের মেনে নিতে হবে। এই ছয়জন ছাত্র হত্যার কী তদন্ত হবে তাও দেখবে রাষ্ট্র ও জাতি। তিনদিন পরই এটা সরকারের কাজ বলে ভুলে যাবে পুরা জাতি। কিছুদিন পর এরচেয়ে আরো ভয়াবহ কোনো ঘটনা ঘটবে। এভাবেই আমরা শুনতে শুনতে অভ্যস্থ হতে হতে পাথরে পরিণত হচ্ছি নিয়ত।
লাইসেন্স ছাড়া কেউ ট্রাক চালাতে পারবেনা। অপরিপক্ষ চালকদের লাইসেন্স প্রদান করা হবে না। এটা নিশ্চিত না করে। বি আর টি একে আগাগোড়া দুর্নীতিগ্রস্থ রেখে। মিরসরাই গিয়ে বর্তমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী টাকায় টাকায় ভাসিয়ে দিচ্ছেন কেন? ভোট কিনছেন। এভাবেই টাকা নিয়ে আমরা আর মাথা ঘামাব না অপরিপক্ষ চালকদের কেন লাইসেন্স দেয়া হয়? লাইসেন্স বিহীন হেলপারদের কেন গাড়ী চালাতে দেয় ট্রাফিকপুলিশ ভুলে যাব তাও। বরদেশি গ্রামের অজ¯্র ডাকাতির ঘটনা কেন সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। সাভার থানায় কারা চাকরি করে। তাদের কাজ কি। কেন গণমানুষের মনে ডাকাত আতঙ্ক। কেন তারা যেকোনো অচেনা মানুষকে ডাকাত ভাবে। এরজন্য দায়ী কে? ওই ছয়জন ছাত্র, ওই ছাত্রদের মত নিরহ দেশের জনগণ? দেশের প্রত্যেক মানুষ কেন প্রত্যেক মানুষকে আজ ডাকাত ভাবছে। মুল ডাকাত কারা সরকার না জনগণ? আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আজ সম্পূর্ণ দানবের মতো চেপে বসেছে জনগণের ঘাড়ে। ওরা অপরাধীদের বন্ধু জনগণের শত্রু। জনগণই যদি জনগণের আতঙ্ক। জনগণই যদি আজ অপরাধের বিচারক। জনগণের হাতেই যদি আইন। পুলিশের সামনে যদি জনগণ নিরাপরাধ ছাত্রদের হত্যা করতে পারে। তাহলে দেশের আইনশৃঙ্খলাবাহিনী বিলুপ্ত করা হোক।
দ্র: এই লেখা লিখতে লিখতে ভাবছি আমিও গ্রেপ্তার হতে পারি। সরকার ও তথাকথিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে কলম ধরার জন্য। এখানে সুবোধ বাংলাদেশের নাগরীকরা কোনো মন্তব্য কইরেন না আপনিও গ্রেপ্তার হতে পারেন।পরে কোনো যৌন সুড়সুড়ি মার্কা লেখা লেখলে মন্তব্য কইরেন।ঘুমান।