সিঙ্গাপুর - মালেশিয়া - থাইল্যান্ড ঘুরে এলাম মাত্র ৭০,০০০ টাকায় ,১২ দিন নিজে নিজেই- পর্ব-৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১ম পর্ব
2য় পর্ব ৩য় পর্ব
২৮.০৯.১২
সিংগাপুরে ২ রাত কেটে গেছে। আজ রাতে মালেশিয়া চলে যাবো।সকাল সকাল উঠেই বাসের টিকেট কাটতে বেরুলাম। ফেরার পার্কের আশেপাশেই খুজে দুএকটা এজেন্সী পেলেও শুক্রবার হওয়ার কারনে টিকেট পাওয়া গেলোনা।এ বিষয়টা একদম মাথায় ছিলোনা।এদের রবিবার হলিডে তাই ফ্রইডে নাইট পিক টাইম।অবশেষে আরও কিছুক্ষণ চেষ্টার পর একটা এজেন্সী পাওয়া গেলো।বাস রাত ১১:৩০ এ আর টিকেট ৩০ সিংডলার। জলিল ভাইও আমার সাথে যাবেন তাই দুটো টিকেট কাটলাম। টিকেটে বাস কোথা থেকে ছাড়বে লিখা আছে, মেট্রো ওখানে যায়না টেক্রি নিতে হবে।
আমাদের বাস যেহেতু রাতে আর হোটেল ছাড়তে হবে দুপুর ১২ টায় তাই টিকেট কাটা শেষে হোটেলে ফিরে আসলাম , মালিক মামুন ভাইয়ের সাথে চেক আউটের ব্যপারে কথা বলার জন্য। মামুন ভাই আমাদেরকে চেকআউট করে লাগেজ উনার রেষ্টুরেন্ট ষ্টোরে রেখে যেতে বললেন।আমরা সেটাই করলাম।
রেষ্টুরেন্টে বসে নাস্তা সারতে সারতে কোথায় যাবো ঠিক করলাম। প্রথমে ন্যাশনাল মিউজিয়াম তারপর ক্লার্ক কি, সেন্ট্রাল শপিং , মেরিনা বে তারপর শপিং ফেরার পার্ক এসে।
ন্যাশনাল মিউজিয়ামের জন্য মেট্রো ধরতে হবে দবি গট ষ্টেশন এরপর হাটাপথ। আমি গতরাতে মেট্রো ষ্টেশনে আমার দুদিনের টুরিষ্ট পাস ফেরত দিয়ে ১০ সিংডলার ফেরত পেয়েছি। খুব বেশিট্রাভেল না থাকলে টুরিষ্ট পাস না নেয়া ভালো।এখন আমাকে সিংগেল জার্নি টিকেট নিতে হবে দেবি গট পর্যন্ত।সিংগেল জার্নি টিকেট গন্তব্যভেদে দাম নির্ধারন হয় এবং জারনি শেষে মেশিনে ফেরত দিলে ১ সিংডলার ফেরত পাওয়া যায়।
দেবি গটে নেমেই দেখলাম সিংগাপুরের এক বিখ্যাত ইউনিভার্সিটি ,সবরকম তথ্যের জন্য রয়েছে ষ্টেশনে আলাদা একটা বুথ। আমরা ম্যাপ দেখে মিউজিয়ামের দিকে হাটা দিলম। ন্যাশনাল মিউজিয়াম দেখতে অনেকটা ইংল্যান্ডের ন্যাশনাল মিউজিয়ামে র আদলে গড়া। ভেতরে ঢুকতেই সিকিউরিটি চেক এরপর টিকেট কাউন্টার। এই ব্যাপারটা পছন্দ হলোনা।ইংল্যান্ডে এত বড় বড় কতগুলো মিউজিয়াম দেখলাম ফ্রিতে আর এখানে টিকেট কাটতে হবে। শেষে জলিলভাইয়ের "আসছি যখন দেখে যাই" মন্তব্যের কারণে ১০ সিংডলার দিয়ে টিকেট কাটলাম। ষ্টাফ সুন্দরীকে জিজ্গেস করেই ফেললাম যে কেন তারা টাকা নেয়। বেচারী কাচুমাচু করে কি বললো নাকি গালি দিলো বুঝা গেলোনা।
ভেতরে অনেক কিছুই আাছে তাদের দেশ সম্পর্কে কিন্তু বাইর থেকে যত বড় মনে হয় ভেতরে তার আধাও নাই।দুই ফ্লোরেই জাস্ট ম্যারেডদের দখলে। এরা বিয়ে করে মিউজিয়ামে আসে ছবি তুলতে। বর কনে আর ফটোগ্রাফার। খমাখা এখানে ঢুকে টাকা লস ছাড়া কিছুইনা।যাদের ইতিহাসের ব্যারাম আছে তারা এখানে কিছু পাইলেও পাইতে পারে।
মন খারাপ নিয়ে ন্যাশনাল মিউজিয়াম থেকে বের হলাম। রোড় ম্যাপ দেখে হাটা ধরলাম ক্লার্ক কি এর দিকে। পথে যেতে যেতে আরো দুটো ফ্রি মিউজিয়াম পড়লো।তেমন বড় নয়। কিছুক্ষণ সময় কাটালাম সেখানে।
এরপর ক্লার্ক কি এসে পড়লাম। এখানে বার আর নাইটক্লাবে ভরপুর। শহরের মধ্যখানে নদী আর ব্রীজের উপর চলছে চীনা ফেষ্টিভেল।যেহেতু বার আর নাইটক্লাবে তেমন ইন্টারেষ্ট নাই তাই চীনা ফেষ্টিবেলের দিকে এগুলাম। নানারকম খাবার আর পানীয়ের দোকান। জ্বীবটা লকলক করে উঠলো। একটা নামনাজানা ড্রিংক কিনেই ফেললাম। পরিচয় হলো অনেক বাংগালী শ্রমিক ভাইয়ের সাথে।তারা ইভেন্টে কাজ করেন। কিছুক্ষণ তাদের সাথে কথা বলে ড্রিংক শেষ করলাম।
দুপুর গডিয়ে বিকেল হলো অথচ পেটে তেমন কিছু পরে নাই। হাতের কাছে ম্যাকডোনালট পেয়ে খিদে চমক দিলো। চটপট ঢুকেই বিগম্যাক খেয়ে নিলাম ৭সিংডলার।চেটেপুটে খেয়ে বের হয়ে পড়লাম গন্তব্য মেরিনা বে।
মেরিনা বে যাওয়ার জন্য বাস ধরবো ভাবলাম কারণ জলিল ভাই হেটে ক্লান্ত। বাস স্টপ কাছেই ছিলো। বয়ষ্ক এক লোককে বাস নম্বার জিজ্গেস করলাম মেরিনা বে এর জন্য। লোকটা আমাদেরকে তার পাশে বসতে বললো, আমরা বসলাম। জানালো তারও গন্তব্য একই সুতরাং তাকে ফলো করলেই হবে। এবার শুরু হলো আলাপচারিতা।আমরা বাংলাদেশী শুনে বললো "বাংলাদেশীরা খুব চালাক, ওরা ফিলিপিনের মেয়েদের প্রেগনেন্ড করে পালিয়ে যায়।" এই কথা শুনে আমি আর জলিল ভাই হা হয়ে গেলাম, গায়ে জ্বালা ধরলো। লোকটা কেন আমাদের এটা শুনালো ভেবে পেলামনা। দুজনে সোজা উঠে পড়লাম। বাসের গুষ্ঠি কিলাই, বাংলাদেশী নিয়ে এত খারাপ মন্তব্য সহ্য হলোনা।বিদেশে গেলে দেশের জন্য টানটা বেড়ে যায়।
জলিল ভাইকে বললাম চলেন হাটি মেরিনা বে বেশী দূরনা। তিনি এককথায় রাজি। দুজনে হেটে মেরিনা বে আসতে ই সন্ধ্যা হয়ে গেলো।সন্ধ্যায় এ জায়গাটা অসাধারণ। ঘুরে ঘুরে ছবি তুললাম অনেক্ষণ।
জলিল ভাই এবার শপিংয়ের জন্য গো ধরলেন। হাতে যেহেতু সময় আছে তাই ভাবলাম বুগিস যাই। বুগিস হচ্ছে সস্তা মার্কেট। মেরিনা বে থেকে মেট্রো ধরলাম, সরাসরি মেট্রো নেই। কাছাকাছি নেমে হাটা ধরলাম।
অনেক কিছুই আছে কেনার মত। কাউকে গিফট করার জন্য আইটেমের অভাব নাই। বেশীর ভাগই দোকান গিফটের। ১০ সিংডলারেই পাওয়া যায় যেকোন আইটেমের ৩ টি গিফট।দুজন মিলে কিছু কেনাকাটা সেরে নিলাম। এবার ফেরার পার্ক ফেরার পালা।
ফেরার পার্ক এসে বংগালী রেষ্টুরেন্টে ডিনার খেয়ে নিলাম। আরও একটু সময় থাকাতে পাশেই মোস্তফা শপিং সেন্টারে ঢুকে পড়লাম। আরও কিছু কেনাকাটা।এখানে মুটামুটি সবই পাওয়া যায় ব্রান্ডের।
কেনাকাটা শেষ করে মামুন ভাই থেকে বিদায় নিয়ে টেক্সির জন্য আসলাম মুস্তফা শপিংয়ের সামনে। যেহেতু ফ্রাইডে নাইট তাই হাতের ইশারায় কেউ দাড়ালো না। চলন্ত টেক্সি থেকে নাম্বার নিয়ে ফোন করলাম।মিনিট দশেকের মধ্যে টেক্সী এসে গেলো। লাগেজ তুলে নিয়ে ড্রাইভারকে ঠিকানা দেখিয়ে দিলাম। বাস স্টেষন পৌছতে বেশী সময় লাগলনা ।১০ সিংয়ের কিছু বেশী ভাড়া দিয়ে বাস কাউন্টারে রিপোট করলাম।সময়মত বাস ছাড়লো। কিছুদূর গিয়ে সিংগাপুর ইমেগ্রেশন।বাস আমাদের নামিয়ে দিলো।লাগেজ বাসেই থাকলো।ইমেগ্রশন আমার বহির্গমন কার্ড টি রেখে দিলো। ইমেগ্রশন পার হয়েই দেখলাম বাস দাড়িয়ে আছে। উঠে পড়লাম।
বাই বাই সিংগাপুর..............
চলবে নাকি..........?
৯টি মন্তব্য ৬টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন
আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”
একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?
যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন
হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই
হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই
আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন
তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।
দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।