somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রিভিউঃ Runway (2010) - একটি অন্য মাত্রার সিনেমা

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ দুপুর ১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





আমি সবসময়ই বলে থাকি, সিনেমার নিজস্ব একটি ভাষা আছে। এই ভাষাগত কারনেই মুলত একটি সিনেমার সিনেমা হয়ে উঠা হয়। একটি সিনেমার গল্প এটার মুল চালিকাশক্তি; আর পরিচালক হচ্ছে সিনেমার ড্রাইভার বা চালক। তারেক মাসুদের 'রানওয়ে' হচ্ছে স্ট্রং ইস্যু নিয়ে গড়ে উঠা একটি আপাতঃ সাধারন গল্পের অসাধারন চিত্রায়ন যেটা কিনা আমি মাত্র গতকাল দেখলাম।

২০০৫/০৬ সালের জঙ্গীবাদের উপর নির্ভর করে এয়ারপোর্টের কাছের বস্তিতে বসবাসরত এক পরিবারকে ঘিরে রানওয়ে'র যাত্রা শুরু। সাহসী চলচ্চিত্রকার প্রয়াত তারেক মাসুদ রাজনৈতিক ইস্যুর কারনে তখন এই বিতর্কির সিনেমাটি মুক্তি দিতে পারেননি। পরবর্তীতে ক্যাথরিন মাসুদ স্বামী তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের স্মৃতি রক্ষার্তে কিছুটা কাঁটছাট করে সিনেমাটি মুক্তি দেন (শোনা কথা)।

গল্পের মুল চরিত্র, রুহুল, মাদ্রাসায় দাখিল পর্যন্ত পড়াশুনা করেও পরীক্ষা দিতে পারেনি। তার বাবা জমি-বিক্রী করে মধ্যপ্রাচ্য পাড়ী জমিয়েছেন মাসখানেক হলো; মা ব্যাঙ্কলোনের টাকায় গাভী কিনে সেটার দুধ বিক্রী করে সংসার চালান; ছোটবোন দীর্ঘ সময় গার্মেন্টসে শ্রম বিক্রী করে পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করে। পরিবারের পুরুষ বলতে আছেন এক অসুস্থ দাদু। রুহুল হন্য হয়ে চাকুরী খোঁজার পাশাপাশি তার মামার ছোটখাটো এক সাইবার ক্যাফেতে গিয়ে কম্পিউটার চালানো শিখে। এমন এক সময় তার সাথে পরিচয় হয় 'আরিফ' নামের এক ছেলের সাথে।

আরিফের ইসলামিক লেবাস ও কথাবার্তায় মুগ্ধ হয়ে রুহুল অনেকটা নিজের অজান্তেই জড়িয়ে যায় জঙ্গীদের সাথে। রুহুলকে করা হয় ব্রেইনওয়াশড; দেয়া হয় জঙ্গী ট্রেনিং। নিজের অসুস্থ দাদু এবং অসহায় মা-বোনকে রেখে রুহুল জঙ্গীদের সাথে থাকা শুরু করে।

এরকম একটি বিতর্কিত বিষয় নিয়ে সিনেমা বানানো অত্যন্ত সাহসের ব্যাপার এবং তারেক মাসুদ সেই কাজটি করে দেখিয়েছেন। তিনি তার সিনেমা দিয়ে দর্শকদের নিকট কিছু প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে; এক অর্থে সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর ও তিনি দিয়ে দিয়েছেন। এছাড়া, গল্প চিত্রায়ন করতে গিয়ে তারেক মাসুদ সাহায্য নিয়েছেন অনেক রুপক দৃশ্যের। একটি ক্লিপ দেখুন



https যুক্ত ইয়ুটিউব লিঙ্ক


উপরের ক্লিপে দেখুন এরোপ্লেনের প্রতি একটি বস্তির কিশোরের ক্ষোভ। কিন্তু তার এই ক্ষোভ বা আক্রোশ কিসের প্রতি? কেনো সে সামান্য গুলতি দিয়ে বিশাল প্লেনকে আঘাত করতে চায়?

তারেক মাসুদের মিউজিক সেন্স দেখে চমতকৃত হবেন। একটি দেড় মিনিটের ক্লিপ দেখুন যখন জঙ্গীরা প্রশিক্ষন নিতে যাচ্ছে।



https যুক্ত ইয়ুটিউব লিঙ্ক


প্রয়াত মিশুক মুনীরের সিনেমাটোগ্রাফী দেখার সৌভাগ্য আমার কম হয়েছে। রানওয়েতে উনার কাজ দেখে আরেকবার আফসোস হলো এই ভেবে যে কত দূর্ভাগা জাতি আমরা! অসাধারন কিছু দৃশ্য দেখে আপনাকে মুগ্ধ হতেই হবে।

যেদুটো বিষয়ে আমি অতৃপ্তঃ সম্পাদনা (যেটাতে আরেকটু মুন্সিয়ানা দেখাতে পারতেন ক্যাথরিন) এবং সিনেমার দৈর্ঘ্য (আমি হয়তো আরো কিছুক্ষন বুঁদ হয়ে থাকতে চেয়েছিলাম)


সিনেমাটির ব্যাপারে কিছু তথ্যঃ

পরিচালকঃ তারেক মাসুদ
প্রযোজকঃ ক্যাথরিন মাসুদ
স্ক্রিপ্টঃ তারেক মাসুদ, ক্যাথরিন মাসুদ
অভিনয়েঃ জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, নাজমুল হুদা বাচ্চু, ফজলুল হক, মোসলেম উদ্দিন, নাসরিন আক্তার, রিকিতা নন্দিনী শিমু
সঙ্গীতঃ তারেক মাসুদ, ক্যাথরিন মাসুদ
চলচ্চিত্রায়নঃ মিশুক মুনীর
সম্পাদনাঃ ক্যাথরিন মাসুদ
মুক্তিপ্রাপ্ত তারিখঃ ২০১১
সময়ঃ ৯০ মিনিট

[তথ্যসুত্রঃ উইকিপিডিয়া]


কিছু কথাঃ দের ঘন্টার এই সিনেমাটি তথাকথিত কোন বানিজ্যিক সিনেমা নয়। অফ ট্র্যাকের এই সিনেমাতে তারপরেও সিনেমার সকল গুন বিদ্যমান। সিনেমাটি তারেক মাসুদ জেলায় জেলায় ফেরী করে বেড়িয়েছিলেন। ২০১১ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারী এনায়েতপুরে সর্বপ্রথম এই সিনেমা মুক্তি দেয়া হয় যদিও ২০১০ সাল থেকেই এটা দেশের আনাচে কানাচে প্রদর্শনী করে দেখানো হয়েছিলো। আপনি দয়া করে সিনেমাটির ডিভিডি কিনুন এবং দেখুন। আমি আশাবাদী যে আপনি ঠকবেন না।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:৫০
৪৭টি মন্তব্য ৪৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭



আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে লেখাটি সে বিষয়ে। এখানে এক শিম্পাঞ্জির কথা উদাহরণ হিসেবে টেনেছি মাত্র।

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×