ভালবাসারা আবেশে ছেলেটিকে মেয়েটি ডাকে 'তেলাপোকা' আর মেয়েটিকে ছেলেটিকে ডাকে 'টিকটিকি'।তেলাপোকার কিশোর বেলার খেলার সাথী কে মনে রাখার 'অপরাধে' নিশিরাতের ফোনালাপনে তেলাপোকা আর টিকটিকির মধ্যে লেগে গেল কথার যুদ্ধ।'কিশোর বেলার খেলার সাথীর জন্য মনে কোন রকম প্রেম মার্কা ভালবাসা নেই'-তেলাপোকার এমন দাবী মানতে নারাজ টিকটিকি।তেলাপোকাকে প্রতারক,বেইমান,ভন্ড ইত্যাদি উপাধী দিয়ে টিকটিকি তেলাপোকাকে জানিয়ে দিল,তোর সাথে আজকের পর আমার কোন সম্পর্ক নেই।আরো কয়েক ঘন্টার ফোনালাপন,২৩টি এসএমএস,৯টি ভয়েস এসএমএস দিয়েও টিকটিকির ভুল ভাঙাতে ব্যর্থ হয়ে ভোর রাতের দিকে নিদ্রাদেবীর কোলে ঢলে পড়ল তেলাপোকা।সকাল ১০টার দিকে ইনকামিং এসএমএস এর শব্দে ঘুম ভেঙে গেল তেলাপোকার।এসএসএস ওপেন করতেই টিকটিকির এসএমএস ওপেন হল।টিকটিকি এসএমএস এ লিখেছে.‘তেলাপোকা,৬দিন আগে লেখা তোর চিঠি একটু আগে পেয়েছি।অন্যরকম ভালবাসার আবেশে মাতাল করে দেওয়া চিঠির জন্য কিশোর বেলার খেলার সাথীকে মনে রাখার অপরাধ ক্ষমা করে দিলাম।বুঝলে অনেক কিছু না বুঝলে তেজপাতা..তোর টিকটিকি’।৬দিন আগে পড়ন্ত বিকেলে লেখা চিঠি টিকটিকির অভিমান ভাসিয়ে দিল মেঘের ভেলায়।অথচ গত রাতের ঝগড়ার ‘ঝ’ও নেই চিঠিতে।
প্রিয় পাঠক,কল্পনার কল্পিত চোখে দেখতে পাচ্ছি তেলাপোকা আর টিকটিকির জীবনের অংশ বিশেষ পড়ে হারিয়ে গেছেন অনেক বছর আগে পাওয়া প্রিয় মানুষটির কাছ থেকে পাওয়া কোন চিঠির শব্দের ভান্ডারে।
আধুনিক সভ্যতার যান্ত্রিক জীবনের মোবাইল ফোন,এসএমএস,ভয়েস এসএমএস,ইন্টারনেট ভয়েস চ্যাট,টেক্সট চ্যাট,ভয়েস কনফারেন্স,ই-মেইল ইত্যাদির কল্যানে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম অংশ চিঠি ধীরে ধীরে জায়গা করে নিচ্ছে সাহিত্যের জাদুঘর- এ।বছর পাচেক আগেও মনের ভাব প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম ছিল চিঠি।বছর পাঁচেকের ব্যবধানে চিঠি এখন সোনালী অতীতের মত।দুর প্রবাসে যাওয়ার সময় আজকালকার বধুরা মনে মনে গেয়ে উঠেনা 'বিদেশ গিয়া বন্ধু তুমি আমায় ভুলোনা..চিঠি দিও পত্র দিও জানায়ও ঠিকানা...';প্রিয় সন্তানের চিঠির জন্য আজকালকার মায়েরা ডাকপিয়ন দেখলেই ছুটে যায়না; গৃহবধৃরা প্রবাসী কিংবা অন্য শহরে কর্মরত প্রিয় মানুষটিকে ভর দুপুরে কিংবা সন্ধ্যার পর হারিকেনের আলোতে কাঁপা হাতে লিখেনা 'প্রিয়তম';বাবা কিংবা বড় ভাইয়ের কাছে আলতা,স্নো,পাউডার,স্কুলের পরীক্ষার ফিসের টাকা চেয়ে,পরীক্ষার পাস করার খবর জানিয়ে নতুন জামার আবদার করেনা আজকালকার কিশোর-কিশোরীরা।ভালবাসার মানুষটিকে রাত জেগে চিঠি লিখেনা আজকালকার ডিজুস জেনারেশন।ভালবাসার মানুষটির চিঠি মা-বাবা দেখে ফেলার ভয়ে বুকে রেখে ঘুমানো দিনগুলো সেদিনগুলো আর নেই । একটা সময় ছিল ১৫টাকা থাকলে আরো ১০টাকা বাবা/মায়ের কাছে চেয়ে ছেলে-মেয়েরা বই কিনে চিঠি লিখে সে বইয়ের ভিতরে চিঠি ঢুকিয়ে প্রেমিকাকে বইটি উপহার দিত ।আর এখনকার ছেলে-মেয়েরা ১৫টাকা থাকলে আরো ৫টাকা চুরি করে মোবাইলে রির্চাজ করে।এখন ২৫পয়সায় কথা বলার,১০টাকায় ৫০০টি এসএমএস ফ্রি পাওয়ার যুগ।২মিনিটে এসএসএম লিখে সেন্ড করলে ৫ম মিনিটেই রিপ্লে পাওয়া যায়।৬ষ্ট মিনিটে এসএমএস পড়া শেষ করে ৭ম মিনিটেই ডিলেট করে দেওয়া যায়।চিঠিতে লাইনের পর লাইন লিখেও ভালবাসার প্রকাশ যেখানে শেষ হত না সেখানে এসএমএস এ আই লাভ ইউ বাক্যটি লেখার সময়ও আজকালকার ডিজিটাল ডিজুস জেনারেশনের নেই।আজকালকার প্রেমিক-প্রেমিকারা আই লাভ ইউ ilu আই মিস ইউ fmu লিখে । মনের ভাব সংক্ষিপ্তায়নের এ যুগে মানুষের সম্পর্কের দের্ঘ্যও সংক্ষিপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
২০টাকা দিয়ে ১ঘন্টা কথা বলা,রির্চাজ করলেই ফ্রি এসএমএস-এর এ যুগে চিঠি লেখা 'ফালতু' ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।১ঘন্টা ধরে চিঠি লেখ আরো আধঘন্টা ব্যয় করে পোস্ট করে উওরের জন্য ১৫দিন অপেক্ষা করার দিন এখন নেই।ঘন্টার পর ঘন্টা এ যুগের বাংলা সিনেমার চাইতেও জগন্য হিন্দী সিরিয়াল;৮-১০ ঘন্টার ক্রিকেট ম্যাচ দেখার সময় পাবলিক ঠিকই পায় কিন্তু ১ঘন্টা ব্যায় করে চিঠি লেখার সময় পায়না।অথচ একটি চিঠির আবেদন কখনো শেষ হয়না।একটি চিঠি পারে অনেক ভুল বোঝাবুঝির সমাধান করে কাছের মানুষের আরো আপন হতে।
প্রিয় পাঠক,আসুন আধুনিক যান্ত্রিকতায় গা না ভাসিয়ে প্রিয় মানুষদের প্রতি ভালবাসা অনুভূতিগুলো জানাতে মাসে অন্তত একটি হলেও চিঠি লিখি।
মুল ফিচার
Click This Link