লিবিয়ার প্রায় ৫০০ নাগরিক দক্ষিণ কোরিয়ার একটি নির্মাণাধীন স্থাপনায় সোমবার হামলা চালালে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি শ্রমিক আহত হয়েছেন। খবর এএফপির।
এ সময় ওই স্থাপনায় প্রায় ১৬০০ বাংলাদেশি ছিল বলে এএফপি জানিয়েছে। তবে হামলায় আহত হয়েছে ১৫ জন বাংলাদেশি। এদের মধ্যে ছুরিকাহাত দুইজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে।
স্থাপনাটি লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলি থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে।
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম এ খবরটি দেখে দুঃখিত হলেও আশ্চর্য হইনি কারণ আরো বহুদিন মুসলিম বিশ্বের এই ধরনের খবর শুনতে ও পড়তে হবে বলেই আমার ধারনা!
আমার দেওয়া শিরোনামটি নিয়েই সামান্য আলোচনা করবো।
এক। পৃথিবিতে একমাত্র মুসলিম বিশ্বেই এখন কর্তৃত্বধারী রাজা, বাদশাহ ও নানা জাতীয় রাষ্ট্রপ্রধান আছে, তাদের আবার বেশীরভাগই এখন বংশানুক্রমিক এবং প্রাক্তন ব্রিটিশ বা অন্যান্য ঔপনিবেশিক শক্তির দ্বারা একদা রাজ তখতে আসীন হয়েছিল এই শর্তে যে উপনিবেশবাদ শেষ হয়ে গেলে তারা ও তাদের বংশধররা ঔপনিবেশিক শক্তির স্বার্থ সংরক্ষণ করবে! আর তারা তা অনুগত ভৃত্যের মতোই করে আসছিল, সাথে নিজেরাও বিলাস-ব্যাসনে কাটাচ্ছিল তাদের ইহকালীন জীবন!
আরব বিশ্বের তেল তো বটেই, মার্কিনীদের ও ন্যাটোকে ঘাঁটি করে দিয়েও তারা বর্তে গিয়েছিল, যেখান থেকে মার্কিনিরা মুসলিম দেশ ও আক্রমন করতে কসুর করে নি! সেবার আরবরা বিদ্রোহ করেছিল তুরস্কের বিরুদ্ধে, প্রায় একই অভিযোগে যার কারনে এখনকার যে আরব বিপ্লব, পার্থক্য শুধু এই যে "লরেন্স অব এ্যারাবিয়া" প্রমুখ কে দিয়ে সেই "বিদ্রোহ বা বিপ্লবে" পশ্চিমারা সরাসরি অংশ নিয়েছিল, নির্লজ্জ ভাবে তারা ইবনে সৌদকে বাদশাহী দিয়ে আজীবন তেল লুটপাটের বন্দোবস্ত করে নিয়েছিল!
দুই। মুসলিম বিশ্বের কর্তৃত্বধারী রাজা, বাদশাহ ও নানা জাতীয় রাষ্ট্রপ্রধান সেই অনুগতরা বংশানুক্রমে শাসন চালাতে চালাতে এখন আর আগের মতো শক্তিশালী নয়, ভেতরে ভেতরে ক্ষয়ে গেলেও ঝাড়ে-গোত্রে শশীকলার মতো বেড়ে এখন শুধু সৌদি আরবেই অন্যুন ১০,০০০ প্রিন্স! (যাদের একজন উসামা বিন লাদেন পর্যন্ত বনে গেলেন!)!
আরব বিশ্বের সাধারণ মানুষরাও এখন এসব রাজা-গজা কে পছন্দ করছে না (একেকজন ৩০ বছর-৪০ বছর সিংহাসন আলো করছিলেন!)! আবার অন্যদের মতো আরবরাও এখন তথ্য প্রযুক্তির ধারাতে যুক্ত হয়ে বুঝে ফেলেছে যে এই এসব রাজা-গজাদের আসন পশ্চিমা তোষণের দ্বারা যা সামগ্রিকভাবে মুসলমান ও সারা মানব জাতির বিরুদ্ধে!
গত প্রায় ৫০ বছরে তৈরি হওয়া এই সেই দমকা বাতাস এক দশকের ওপর পরিণত হয়েছে প্রতিবাদের আর প্রতিরোধের নিদারুণ সাইমুম ঝড়ে!
সেই ঝড় কখনও আমরা দেখছি তালেবানের পাগড়িতে, কখনো আল কায়দার কায়দায়! সোভিয়েটের বিরুদ্ধে এই তালেবান বানিয়েছিল আমেরিকা আর পাকিস্তান বড় দরদ দিয়ে, হাতে দিয়ে ছিল স্টিঞ্জারের মতো সারফেস টু এয়ার মিসাইল পর্যন্ত!
আরব ও মুসলিম বিশ্বের সাধারণ মানুষ তাদের রাজা-গজাদের অত্যাচারে প্রতিবাদের আর কোন রাস্তা না পেয়ে "মন্দের ভাল" হিসেবে আমেরিকার এককালীন প্রোডাকশন তালেবান ও ইন্ডিরেক্ট প্রোডাকশন আল কায়েদার কায়দা দেখে কেউ কেউ বেশ উৎসাহী, মুগ্ধ ও খুশীও হয়েছিলেন যে যাক, প্রতিবাদ তো হচ্ছে!
তিন। ৯/১১ এর আগে ও পরে আমেরিকা ও তার দোসররা তাদের আরেক প্রোডাকশন সাদ্দামকে "ঈশপের নেকড়ে ও মেষ" পদ্ধতিতে টাইট দিয়ে মুসলিম ও আরব জনগণ কে আবারো একবার জানান দেবার চেষ্টা করলো যে তাদের আয়ত্তে থাকতে হবে, তেল দিতে হবে, পণ্য কিনতে হবে, ইসরাইল কে ভয় পেতে হবে ইত্যাদি!
কিন্তু বিধি বুঝি এবার বাম! ইরাকে হাজার হাজার নিরীহ মানুষ মেরেও আফগানিস্তানের সেই ইঁদুর ধরা কলে ফেঁসে গেছে ন্যাটো, তার মাতব্বর আমেরিকা আর বৃটেনসহ সাদা চামড়ারা! প্রত্যহ শত শত মানুষ মারছে, সিগ্নালিং উপগ্রহটি ইসরাইলের, লাঞ্চ করেছে আরব বিশ্বের সবচে বড় বেনিফিসিয়ারি আর টাকা কামানে ওয়ালা ভারত! আর সেই সিগনালে ক্রুজ মিসাইল ছুঁড়ছে আমেরিকা, পড়ছে কখনও পাকিস্তানে, কখনও বা আফগানিস্তানে, মরছে হাজার হাজার নিরীহ আদম সন্তান! কিন্তু ওই স্বাধীন জাতি স্বত্তাঃসমুহের এলাকায় আমেরিকা চরম মার খাচ্ছে, মার খেতে খেতে এখন কি ভাবে পালাবে, সেই সন্মানজনক রাস্তা খুঁজছে!
২০ শে ফেব্রুয়ারির খবর, আমেরিকানরা তালেবান ওরফে আল কায়েদা ওরফে বাচ্চাসকার প্রেতাত্মার সাথে এখন সরাসরি আলোচনা চাইছে, যাতে মানে মানে সরতে পারে! আরো দুঃসংবাদ, ন্যাটোর বিভিন্ন সদস্য তাদের সৈন্য ফেরত নিয়ে যাচ্ছে!
চার। পেন্টাগন চুপ করে বসে নেই, বিকল্প প্রস্তাব পাশ হয়ে গেছে সেখানে! মুসলিম ও আরব বিশ্বের অচল, আমেরিকার স্বার্থ সংরক্ষণে অক্ষম রাজা গজাদের সরিয়ে দিতে হবে এমন কায়দায় যে আরব পাবলিক সেটাকে বিপ্লব মনে করে খাবে, সেখানে তো বিকল্প নেতৃত্ব গড়ে তুলতে দেয় নি আমেরিকা ও তার দোসররা, তাই অক্ষম রাজা গজাদের অবর্তমানে ক্ষমতায় নির্ঘাত আসবে তাদের সামরিক বাহিনী (মিশরসহ সবখানে তাই ই আসছে!) যাদের আমেরিকা খুব আদর যত্নে পোষ্যপূত্র করে তিলে তিলে গড়ে তুলেছে!
এইবার আমেরিকা সামরিক এক্সপার্ট পাঠাবে, বিনিয়ন ডলারের অস্ত্র বেচবে! এদের মেয়াদ হবে কমপক্ষে ৫০ বছর, ততদিনে আরবের তেল ফক্কা! তাই তালেবান আর আল কায়েদা আফগানিস্তানে রাজত্ব করুক, কি অসুবিধে, বিপ্লব আর এক্সপোর্ট হবে না। কারন আমেরিকার স্বার্থ সংরক্ষণে অক্ষম রাজা-গজাদের জায়গায় এরপর ক্ষমতা দখল করবে তাদের আমেরিকান হাফ ব্রাদার সেনাবাহিনী, যারা আমেরিকানদের তত্ত্বাবধানে অত্যন্ত সুশিক্ষিত ও লয়াল! আমরা সবাই নরিয়েগা, সাদ্দাম, সুহার্তো ইত্যাদি স্বৈরাচারীর পরিনতি ভুলে যাব!
পাঁচ। এই কারনেই ওবামা চেচাচ্ছেন যে সংস্কার করে রক্তপাত বন্ধ কর, আর অকারনেই কেউ না চাইলেও মার্কিনীদের খুশী করতে বান কি মুন তারস্বরে চিৎকার করছেন মেরোনা, মরনা হে আরবেরা, হে মুসলিমরা!
আর সেই সুযোগে হিলারী তার ফেভারিট ব্রান্ড পারফিউম জেসমিনের নামে আন্তঃদেশীয় ও দেশীয় দোসরদের মাধ্যমে আমেরিকার স্বার্থ সংরক্ষণে অক্ষম রাজা গজাদের সরিয়ে সেখানে ফিট লোকদের বসাতে আরব জনগণের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন একটি করে জেসমিন, তাই এই অ্যাবর্টেড বিপ্লবের নামও হয়ে যাচ্ছে জেসমিন বিপ্লব!
আহা, কি ফুলেল নাম, বাহার ও গন্ধ তার, আর তাও আসছে সুদর্শনা হিলারীর হাত থেকে, আরবেরা বর্তে যাচ্ছে!
পরিশেষে বলি, ইরানের ব্যাপার ভিন্ন, সেখানে হিলারীর জেসমিন কল্কে পায় নি, পাবেও না, কারন শিরাজের গোলাপ তো এখনো মশহুর!
আজ দাতাঁতের অবস্থা থাকলে আমেরিকা এ সাহস পেত না, কিন্তু সোভিয়েট ইউনিয়ন আজ নেই, তবে রাশিয়া আছে, চীন ও আছে, তারা কিছুটা সামলানোর চেষ্টা নেবে বই কি! ভারত হয়েছে ইসরাইলের ২য় নম্বরের অস্ত্র ক্রেতা, মাঝে মধ্যে বোঝা যায় না যে কে প্রধানমন্ত্রী, সোনিয়া, না মনোমোহন! তাদের কাছে কিছু আশা করা বাতুলতা!
আল কায়দার কায়দা ও তালেবান ঠেকাতে হিলারির হাতে সুগন্ধী জেসমিন-এটাই কি বাস্তবতা?
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।
আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন
"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?


৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন
এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন
টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।