।।অনেক বার দেখা একটা মুভি ।।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
পারফিউম একটা মুভি যেটা নিয়ে লিখতে হলে সাহস দরকার। এত ভাল মুভি নিয়ে আসলে লেখা যায় না। অপচেষ্টা বৃথা।
পারফিউম তৈরী হয় কিভাবে? বিভিন্ন রকম ফুল সেদ্ধ করে তার নির্যাস দিয়ে। ফুলের নির্যাসই পারফিউমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কিন্তু ফুলের বদলে যদি মানুষ সেদ্ধ করা হয়? কিংবা একেকটা মানুষের যে আলাদা আলাদা গন্ধ সেটা দিয়ে যদি কোন পারফিউম তৈরী করা জাই।
জন বাপ্টিস্ট রেনোয়া, একজন ভাগ্যবিড়ম্বিত মানুষ। মুভির ব্যাকগ্রাউন্ডের ভাষায়, হি ও'জ নো-বডি। তাকে জন্ম দেয়ার অপরাধে তার মা'কে ফাসিকাষ্ঠে ঝুলতে হয়। যে এতিমখানায় সে বড় হয়েছে সেটির কর্ত্রী খুন হয় ছিনতাইকারীদের হাতে এবং যে কারখানায় সে প্রথম জীবনে কাজ করতো, কারখানা মালিক তাকে বিক্রি করে দেয়ার পরপরই গাড়ি চাপা পড়ে। যে পারফিউম প্রস্তুতকারকের সাথে সে কাজ করতো, তাকে ছেড়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সেই লোকের বাড়িই ধ্বসে পড়ে সীন নদীর ওপর। এই লোকের কাছ থেকেই সে ফুলের রস থেকে গন্ধ সংগ্রহের প্রণালী শিখেছিলো।
দুর্ভাগা এই যুবকের কাহিনী এমনভাবে টেনে রাখে যে এক সেকেন্ডের জন্যও চোখ সরানো যায় না। একদিন এক পাহাড়ের গুহায় রেনোয়া আবিস্কার করে পৃথিবীর সবকিছুর একটা গন্ধ আছে। মাটির গন্ধ আছে, মাটির অনেক গভীরে বাস করে যে পোকা তার গন্ধ আছে, নদীর গন্ধ আছে, নদীর তলায় শ্যাঁওলা জমে থাকা পাথরের গায়ে এক ভিন্ন গন্ধ আছে, পাথরের ওপরে যে মাছের ডিমগুলো আছে তাদেরও গন্ধ আছে; কিন্তু ওর নিজের কোন গন্ধ নেই। ও বুঝতে পারে এই পৃথিবীর সে কেউ না। মহাকালের খাতায় লিখা থাকবে না ওর জন্ম-মৃত্যূর হিসাব।
এরপরে রেনোয়া যখন পাহাড়ের গুহা থেকে বের হয়ে শহরের দিকে হাঁটতে শুরু করে সে সময় একটা ডায়লগ হচ্ছিলো যেটা সিনেমার ট্যাগলাইন, সো হি ডিসাইডেড টু শো দ্য ওয়ার্ল্ড দ্যাট হি ওয়াজ সামবডি। স্বল্প পরিসরের লেখা-লেখি বা অন্যান্য কাজে মানুষের হয়তো কিছু সুনির্ধারিত ট্যাগ দিয়েই কাজ চলে যায়। কিন্তু এরকম একটা পটভূমিতে নির্মিত এরকম একটা মুভির জন্য পুরা একলাইন ট্যাগ ছাড়া আসলে হয় না।
রেনোয়া মূলতঃ একজন সিরিয়াল কিলার। ফ্রান্সের বিখ্যাত এক পারফিউম প্রস্তুতকারকের সাথে কাজ করার সময় সে বিভিন্ন পরীক্ষা-নীরিক্ষা চালাতো। এ সময় সে সিদ্ধান্ত নেয়, সে একটা পারফিউম তৈরী করবে, যেটা হবে পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো পারফিউম। সেটা সে নিজের গায়ে মাখবে, সেটা হবে তার নিজের গন্ধ। তার শরীরেরও গন্ধ আছে, এটাই সে দেখাতে চেয়েছিলো পৃথিবীকে।
রেনোয়ার নিজের পারফিউমটি তৈরীর প্রণালী ছিলো একদম ভিন্ন আর স্বতন্ত্র। সে মেয়েদের গায়ের গন্ধ শুঁকতো। যে গন্ধটি তার পারফিউম তৈরীর জন্য প্রয়োজন সেই মেয়েটিকে সে খুন করতো এবং তার লাশে এক ধরনের গাদ মিশিয়ে কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে রাখতো। এরপর সেই গাদ সে আমাদের দেশে যাকে কাটারী বলে সেটা দিয়ে চেছে চেছে তুলতো এবং এ্যালকোহলের সাথে মিশিয়ে সেটা সেদ্ধ করতো। এভাবে সংগ্রহ করা একেকটা মেয়ে মানুষের শরীরের গন্ধ সে ছোট ছোট বোতলে ভরে রাখতো। এগুলো হচ্ছে পারফিউম তৈরীর একেকটি উপাদান। এরকম ১৩ টি উপাদান মিলে তৈরী হয় এক অপার্থিব পারফিউম। যার ১২ টির খোঁজ মানুষ জানে কিন্তু ১৩ তম সেই উপাদানটি কি তা কেউ জানে না। রেনোয়া বিভিন্ন রকম মেয়ে মানুষের শরীর থেকে সংগ্রহ করে এই ১৩ টি উপাদান। মেয়েগুলোর লাশ ভাসতে থাকে শহরের খালে আর নালায়, পড়ে থাকে অন্ধকার গলির শেষমাথায়। ১৩ টি মৌলিক উপাদান একত্র করে সে তৈরী করে তার নিজের পারফিউম। আর ওদিকে শহরময় পড়ে গেছে ভয়ংকর এই খুনীর তল্লাশ।
জন ব্যাপ্টিস্ট রেনোয়ার খুন করার কারণ ছিলো। হি ওয়াজ নোবডি, সো হি হ্যাড টু শো দ্য ওয়ার্ল্ড দ্যাট হি ওয়াজ সামবডি। তাই সিরিয়াল কিলার হওয়া স্বত্তেও ও আলাদা। মানুষ ওকে অ্যাঞ্জেল ভেবে ভুল করে। একই চরিত্রে পাপহীনতা আর নিষ্ঠুরতা দুই বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্য দর্শককে বিভ্রান্ত করে তোলে ঠিকই, তবে সিনেমার শেষে রেনোয়া যখন প্রথম খুন করা মেয়েটির কথা ভাবে তখন পরিস্কার হয়, সে পৃথিবীর আর দশজনের মতোই সাধারণ মানুষ ছিলো। সে যদি মেয়েটাকে খুন না করে তাকে ভালবাসতো, তাহলে সেও সুখের, শান্তির, আমাদের এই পৃথিবীর একটি জীবন হয়তো পেতে পারতো।
মুভির নামভূমিকায় বেন হুইশ'র অভিনয় বড় বড় চোখে অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখার মতো। এর সাথে পরিচালক টম টাইকারের হাতের কাজ। অষ্টাদশ শতকের ফ্রান্সের সমাজ, জীবনযাত্রা, সিটি মেয়র, পোপ এই বিষয়গুলো দারুণভাবে এসেছে মুভিটায়। মাছের বাজার, চামড়ার কারখানা, শতাব্দীপ্রাচীন নগর কাঠামো সবকিছু এত জীবন্ত করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যে, একশ' বছর আগের ফ্রান্স হঠাৎ করে যেনো লাফিয়ে উঠে আসে চোখের সামনে। অসামান্য এক মুভি।
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা
বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন
চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন
ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?


৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।