somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাহাদুরাবাদ থেকে বালাসী ঘাটঃ হারিয়ে যাওয়া রেইল ফেরীর গল্প

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সবসময় ট্রাভেলিং নিয়ে লিখি, তাই স্মৃতি কথন কেমন হবে তা বলতে পারছি না। তবে এখানে স্মৃতির পাশা পাশি ভ্রমণের গল্পও থাকবে...


নিচের লিংকে ভিডিও দেখতে পারেন ঃ https://youtu.be/dzwvEvhpyCQ
২০০২ বা ২০০৩ এর ঘটনা, আমার একমাত্র খালা তার কর্মক্ষেত্রের কারনে সৈয়দপুর থাকেন আর আমার বাড়ি বা নানা বাড়িও জামাল্পুর। সেসময় যমুনা সেতু সচল হলেও রেইল ফেরী বন্ধ হয়ে যায় নি।

রেল ফেরী কি জিনিস এটা হয়তো আমরা অনেকেই জানি না। যখন যমুনা সেতু ছিল না তখন নদীর এপার ওপার এর যোগাযোগের অন্যতম একটা মাধ্যম ছিল এটা। তখনকার সময় আন্তনগর ট্রেনগুলো ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ- জামাল্পুর হয়ে ট্রেন দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ ঘাটে এসে থামতো। বাহাদুরাবাদ ঘাট ছিল যমুনার পূর্ব পাড়ের ঘাট। ঘাটেই অপেক্ষা করতো অনেক বড় একটা বাংলাদেশ রেলওয়েরই স্টীমার বা লঞ্চ বলা যায়। সেখানে কেবিন ছিল, ফার্স্ট ক্লাস আবার শোভন এরকম একদম ট্রেনের মতই আসন ব্যবস্থা ছিল। দিনে এবং রাতে দুই পাশ থেকেই ২ টা ছিল।

আমি আর আমার নানা- নানি প্রায় প্রতি বছর ই যেতাম খালা কে দেখার জন্য। ট্রেন থেকে নেমে স্টীমারে উঠেই একেবারে ছাদে চলে যেতাম। আমি খুব চঞ্চল না হলেও খুব উৎসুক ছিলাম মনে হয়। আর এজন্যেই আমার শৈশবের একটা ভয়ংকর আর কিছু মজার স্মৃতি জমে আছে এই রেল ফেরিতেই। আমার বয়স ছিল ৭-৮ বছর। আজ যখন প্রায় ১৫ বছর পড়ে স্মৃতিগুলো যখন লিখছি আর আনমনে হয়ে যাচ্ছি। সব কিছুই একদম ঠিক ঠাক মনে না থাকলেও এখনো মনে আছে আমি একবার সিড়ি থেকে পিছলে পড়ে গিয়েছিলাম, কারন আমার মা আমাকে এক সাইজ বড় স্যান্ডেল কিনে দিয়েছিলেন কারন আমাকে আমার পা যেভাবে বাড়ছে , বড় স্যান্ডেল বেশিদিন টিকবে। যাই হোক পড়ে গিয়ে যত না ব্যাথা পেয়েছিলাম তার চেয়ে বেশি লজ্জা পেয়েছিলাম মনে হয়। সামনেই ফ্রক পড়া একটা মেয়ে ক্যামন করে যেন তাকিয়ে ছিল। আরো ভয়ংকর একটা কাহিনী ঘটেছিল, আমি ভীড়ের মধ্যে হারিয়ে গিয়েছিলাম। তখন তো আর মোবাইল ছিলো না, যেটাকে এখন পারসনাল ট্র্যাকিং ডিভাইস হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আমার কাছে মনে হচ্ছিল এই বুঝি আমি পথ শিশুতে পরিণত হচ্ছি। এক পুলিশ আংকেল কে বলতে চাচ্ছিলাম যে আমি হারিয়ে গেছি। কিন্তু উনার পান খাওয়ার ভঙ্গি আর বড় বড় চোখ দেখে আর নিরাপদ বোধ করি নাই। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিলাম সিড়ির কাছে দাড়িয়ে থাকবো। ষ্টীমারের সিঁড়ি টা ছিল শপিং মলের সিঁড়ি র মতো, এক্সিট ওয়ের সামনে। অবশেষে আমি সেখানে দাড়িয়েই আমার উদ্ভ্রান্তের মত খুঁজতে থাকা আমার নানা কে দেখতে পেলাম। আর ভাবলাম, এরপর আর ২ হাত নতুন কেনা ফুল প্যান্টের ভিতরে ঢুকিয়ে ভাব নিয়ে হাটা যাবে না; এক হাত দিয়ে নানা ভাইয়ের হাত ধরে থাকতে হবে।

আরেকটা মজার স্মৃতি আছে, স্টিমারের ক্যাপ্টেনের রুমের পাশে চলে যেতাম, নাবিক দের ভাসায় যেটাকে ব্রিজ বলে। সবচেয়ে বেশি ভালো লাগতো রাতের বেলায়। ভঁ ভঁ হুইসেল দিয়ে ষ্টীমার চলতে থাকতো। সামনে থেকে আসা আরেকটা নৌকা বা স্টীমার কে লাইট দিয়ে কি যে সিগ্নাল দিত, আমি অনেক চেষ্টা করেও তা ডিকোড/উদ্ধার করতে পারি নাই। তবে হাই বিম আলো দেখতেই খুব ভালো লাগতে। রাতের আকাশের হাজারো তারা গুলো যেন আমাদের পিছু ছাড়তই না।


এখন আর এই পথে যাওয়া হয় না। তবে অল্প কিছু দিন আগে উত্তর বঙ্গে যাওয়া হয়েছিল। আসার সময় আর বাসে করে আসার সাহস হয় নাই। এদিকে ট্রেইনের টিকেট ও নাই। তাই রাস্তার চরম খারাপ অবস্থা আর জ্যাম এর কথা ভেবে গাইবান্ধা হয়ে আসার প্ল্যান করি। রংপুর গাইবান্ধা রাস্তা খুব ই ভাল। গেটলক লোকাল বাস গুলো যেন সীতাকুন্ডের জ্যামে পরে থাকা এসি বাসের চেয়েও ভালো সার্ভিস দিচ্ছিল। গাইবান্ধা বাস টারমিনাল থেকে নেমে বালাসি ঘাটে যাওয়ার অটো রিক্স্যা তে উঠি, ভাড়া ২০ টাকা আর সময় লাগলো ২৫ মিনিট। ঘাটে এসেই মন টা খারাপ হয়ে গেল। আমার নানাভাই এর কথা খুব মনে পড়লো। আজ তিনি নেই , সৃষ্টিকর্তা উনাকে ভালো রাখুক।


তবে আরেক টা জিনিস অবাক লাগলো, ঘাট এ সেই আগের উচ্ছ্বলতা বা চাঞ্চল্য নেই। তবে বোঝা যায়, একসময় দেশের অন্যতম একটা সচল বন্দর ছিল। এখানে বসে যমুনা নদীর টাটকা মাছ দিয়ে মধ্যাহ্ন ভোজ ছিল যাত্রার একটা চুম্বক অংশ।
এখান থেকে প্রায় অনেক যায়গার নৌকা ছাড়ে। তবে বাহাদুরাবাদ ঘাটের নৌকা দিনের নির্দিষ্ট সময়ে চার বার ছেড়ে যায়। এগুলো ১০ টা, ১২ টা, বিকেল ২ টা ৩০ ও বিকেল ৪ টা ৩০ মিনিটে। ওপাড়ে যাওয়ার ভাড়া মাত্র ১০০ টাকা আর সময় লাগে ২ ঘন্টা। কম বেশিও হতে পারে, নদীর নাব্যতা বা বর্ষার কারনে। এই দুই ঘণ্টা আমার মনে হচ্চছিল যেনে এই লোকালয় ছেড়ে অন্য জগতে চলে এসেছি। এখানে কোন ট্রাফিক য্যাম নেই, রাস্তার সংস্কারের জন্য ৫ কিলো বাস দাঁড়িয়ে নেই বা ব্ল্যাক এর টিকেট বিক্রেতারা ৬০০ টাকার টিকেট ২০০০ টাকায় বিক্রির জন্য বসে নেই। নৌকায় বসে থাকা সহযাত্রীদেরকে মনে হচ্ছিল তারা খুব আপান জন, যেন আমার ই পরিবার।

যেন এক চিলতে সোনার বাংলা। দূরে দেখা যায় জেলেদের গ্রাম। মাছ ধরার নৌকা, আর একপায়ে দাঁড়ানো শত শত বক বা পানকৌড়ি। যমুনার একপাড়ে দেখা যায় ফাটল ধরার চিত্র, আরেক পাড়ে নতুন চড়। ভট ভট করে নৌকা টা কহন যে এপাড়ে চলে আসবে, টের ই পাবেন না। পাড়ে আসার আনন্দ বা নদীকে ছেড়ে আসার বিরহে যেন এক মিশ্র অনুভূতি তৈরী হয়েছিল। প্রথমবার এসে দ্বিতীয়বার ঘুরতে আসেনি এমন লোক খুব কম ই আছে। আমার মনে হয় ভিন্ন স্বাদের জন্য হলেও এই পথে একবার ভ্রমণ করা উচিত।

সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:৫১
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।

লিখেছেন লেখার খাতা, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩


ছবি - সংগৃহীত।


ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রোফেসরদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করি : প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১২ ই মে, ২০২৪ ভোর ৪:১০



বিগত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নিজ সংসদীয় এলাকায় সর্বসাধারনের মাঝে বক্তব্য প্রদান কালে উক্ত আহব্বান করেন ।
আমি নিজেও বিশ্বাস করি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ।
তিনি প্রত্যন্ত অন্চলের দাড়িয়ারকুল গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×