somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাস্তব জগতের আসল জেমস বন্ড

০৯ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বৃটিশ গোয়েন্দা বিভাগের ভয়ঙ্কর গুপ্তচর। বয়স ৩০ থেকে ৪০ এর মধ্যে। দীর্ঘাকার, সুঠামদেহী সুদর্শন চেহারা এবং সব দিক থেকেই ব্যতিক্রমী। ধূমপান, মধ্যপান, জুয়া, দামী গাড়ির লোভ, ক্ষণিকের সাক্ষাতেই সুন্দরী নারীকে বিছানায় নেয়ার মতো দোষে সে নিত্যদোষী। খালি হাতে মারামারি, সাঁতার, বরফে স্কি, বিমান, নৌযান, মটরযান চালানোর সাথে আরেকটি বিষয়ে অত্যন্ত দক্ষ, তাহল মানুষ খুন। সাংকেতিক নাম এম১৬। সাংবাদিক ও লেখক ইয়াং ফ্লেমিং সৃষ্টি করেছেন এমনই এক অসাধারণ চরিত্র বন্ড, জেমস বন্ড ০০৭। কাল্পনিক এই জেমস বন্ড এখন যুক্তরাজ্যের জাতীয় প্রতীকের মতো। গল্পে জেমস বন্ড যুক্তরাজ্যের রাজকীয় নৌ গোয়েন্দা বিভাগের রিজার্ভ অফিসার। গল্প ও বাস্তবের মাঝের পর্দা ছিড়ে বাস্তবেই জেমস বন্ড হাজির হন ২০১২ এর লন্ডন অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। কোটি মানুষের সামনে বৃটেনের রাণীকে নিরাপত্তা দিতে পাশে ছিল জেমস বন্ড রূপে ডেনিয়েল ক্রেইগ।


ক্যারিবিয়ান সাগরের দ্বীপ রাষ্ট্র জ্যামাইকায় ইয়ান ফ্লেমিং এর নিজস্ব এস্টেটের নাম ছিল গোল্ডেনআই। এখানে বসেই ১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ সালে ইয়ান ফ্লেমিং ক্যাসিনো রয়েল উপন্যাসে জন্ম দেন জেমস বন্ড চরিত্রের। বইটি ২ মাসের মধ্যে লেখা শেষ হলে পাণ্ডুলিপি বন্ধু ও সম্পাদক উইলিয়াম প্লোমারে কাছে দেবার পর তিনি খুব প্রশংসা করেন এবং প্রকাশক জনাথন কেইপ এর কাছে হস্তান্তর করেন। কিন্তু প্রকাশক জনাথন কেইপ বইটি পছন্দ না হওয়ায় ফেলে রাখেন। অবশেষে ইয়ান ফ্লেমিংয়ের আপন বড় ভাই অভিযাত্রিক ও প্রতিষ্ঠিত ভ্রমণ লেখক ‘পিটার’ এর অনুরুধে এক বছর পর ১৯৫৩ সালে বইটি ছাপান। প্রকাশিত হয়েই তুমুল জনপ্রিয়তা পায় বইটি, জন্ম হয় নতুন এক ইতিহাসের। ১৯৬৪ সালে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত প্রতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে নিজের গোল্ডেনআই এ বসেই ইয়ান ফ্লেমিং মোট ১২ টি উপন্যাস ও ২ টি ছোট গল্পের বই লিখেন। জেমস বন্ড সিরিজের শেষ দুটি বই ‘দ্যা ম্যান উইদ দা গোল্ডেন গান (১৯৬৫)’ ও ‘অক্টোপোসি এন্ড দ্যা লিভিং ডেলাইটস (১৯৬৬)’ প্রকাশিত হয় লেখকের মৃত্যুর পরে। এই সিরিজ সারা বিশ্বে বিক্রি হয় ১০০ মিলিয়ন বা ১০ কোটি কপির বেশী।


কাল্পনিক গল্পের জেমস বন্ড খ্যাতি ও সম্মানের সকল চূড়া অতিক্রম করলেও বাস্তব জগতের সত্যি জেমস বন্ডকে খুব কমই চিনেন বন্ড ভক্তরা। যদিও কাল্পনিক জেমস বন্ডের নাম নেয়া হয়েছে আসল জেমস বন্ড থেকেই। আমেরিকার শীর্ষস্থানীয় পক্ষীবিদ জেমস বন্ড ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে পাখি নিয়ে দীর্ঘ্য গবেষণা করেছেন। তার লেখা পাখির ফিল্ড গাইড ‘বার্ডস অব দ্যা ওয়েস্ট ইন্ডিজ (১৯৩৬)’ পাখি পর্যবেক্ষকদের কাছে তুমুল জনপ্রিয় ছিল। বৃটেনের নৌ গোয়েন্দা অফিসার ইয়ান ফ্লেমিং ছিলেন একজন একনিষ্ঠ পাখি প্রেমী ও উৎসাহী পাখি পর্যবেক্ষক। পাখি পাগল ইয়ান ফ্লেমিং জ্যামাইকায় অবস্থান করার সময় প্রায়ই বাইনেকুলার হাতে পাখি দেখতে বের হতেন। পাখি পর্যবেক্ষণের কালে সবসময় সাথে থাকত আসল জেমস বন্ডের লেখা প্রিয় ফিল্ড গাইড ‘বার্ডস অব দ্যা ওয়েস্ট ইন্ডিজ’।

ইয়ান ফ্লেমিং পাখি গবেষক জেমস বন্ড এর কাছে তার গোয়েন্দা সিরিজে নাম ব্যবহারের অনুমতি চাইলে জেমস বন্ড খুশি হয়ে রাজি হন। ইয়ান ফ্লেমিং জ্যামাইকাতে একবার আসল জেমস বন্ড ও তার স্ত্রীর এর সাথে সাক্ষাত করেছিলেন যা এক ডকুমেন্টারিতে দেখা গেছে। ১৯৬৪ সালে ইয়ান ফ্লেমিং ‘ইউ অনলি লিভ টুয়াইস (১৯৬৪)’ বইয়ের প্রথম এডিশনের একটি কপি আসল জেমস বন্ডকে উপহার দেন। বইয়ে তার নিজের স্বাক্ষর এর পূর্বে লিখেছিলেন "To the real James Bond, from the thief of his identity"।

শুধু জেমস বন্ড চরিত্রই নয় জেমস বন্ডের অন্য আরো কিছু চরিত্রের সাথে কোড ০০৭ ও নেয়া হয়েছে বাস্তব ঘটনা থেকে। ১ম বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির পররাষ্ট্র সচিব জিনজারম্যান একটি গোপন কূটনৈতিক চিঠি লিখেছিল মেক্সিকোর উদ্দেশ্যে জোটবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করার জন্য। এই গোপন চিঠি হ্যাক ও রহস্য উদ্দার করে বৃটেনের নৌ গোয়েন্দারা। এ সাফল্যের ফলে আমেরিকা ১ম বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে এবং জার্মানদের শোচনীয় পরাজয় ঘটে। এই গোপন চিঠির কোড ছিল ০০৭৫। এই থেকেই ইয়ান ফ্লেমিং তার জেমস বন্ড সিরিজের জন্য ০০৭ কোডটি নেন । ০০৭ কোডের এর ০০ এর অর্থ হল দায়িত্ব পালনের সময় নির্দ্বিধায় হত্যার লাইসেন্স। কাল্পনিক জেমস বন্ডের স্রষ্টা ইয়ান ফ্লেমিং (১৯৬৪) মারা যান বাস্তব জগতের আসল পক্ষীবিদ জেমস বন্ড (১৯৮৯) এর ২৫ বছর আগেই। কিন্তু তার সৃষ্টি করা কাল্পনিক জেমস বন্ডের মৃত্যু কবে হবে বা আদৌ হবে কি?


ইয়ান ফ্লেমিং মারা গেলেও জেমস বন্ড সিরিজ থেমে নেই। ইতোমধ্যে ৮ জন লেখক জেমস বন্ড চরিত্র ব্যবহার করে উপন্যাস (অথরাইজড) লিখেছেন যার সর্বশেষ উপন্যাস ট্রিগার মরটিস (২০১৫)। জেমস বন্ড চরিত্রের জন্মদাতা ইয়ান ফ্লেমিং হলেও জেমস বন্ডকে বিশ্বের কাছে এত জনপ্রিয় করার পিছনে আছে বহু মানুষের অবদান। সম্ভবত সবচেয়ে বেশী অবদান জেমস বন্ড চরিত্রে অভিনয় করা নায়কদের। এ পর্যন্ত ৭ জন নায়ক (Eon প্রোডাকশন এর ৬ জন) জেমস বন্ড এর নাম চরিত্রে অভিনয় করেন। মোট ২৬ টি সিনেমা (Eon প্রোডাকশন এর ২৪টি) এ পর্যন্ত রিলিজ হয়। এখন কয়েকজন নামকরা ক্রিপ্টো রাইটার মিলে একেকটি জেমস বন্ড সিনেমার স্ক্রিপ্ট তৈরি করেন। পৃথিবীর বিখ্যাত পরিচালকেরা এটি নির্মাণ করেন। এটা সম্ভবত চলতেই থাকবে।

মাইন রানা
ছবি ও তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া ও ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:৪০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×