মে মাসের শেষ সপ্তাহ। অঝোর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে। আনন্দদের বাসার সামনে পানি জমে গেছে। আজ স্কুলে যাওয়ার মত কোনো অবস্থা ই নেই। আনন্দ তাই পড়ার টেবিলের অনেকক্ষণ ধরে চুপচাপ বসে আছে। আজ কোন কিছুতেই ওর মন বসছে না। কিছুক্ষণ বসে আনমনেই ও বারান্দায় চলে গেলো। এখনও বৃষ্টি পড়ছে অঝোরে। বৃষ্টির ছাঁট ওর গায়ে লাগছে। মাঝে মাঝে আকাশ কাঁপানো বিজলী আকাশকে যেন দু'ভাগ করে দিচ্ছে। তবুও কোন কিছুতেই যেন ওর ভ্রূক্ষেপ নেই। ও ভাবছে অন্তরের কথা।
আনন্দের খুব ভালো কোন বন্ধু নেই। কেন জানি আজকাল ওর একলা থাকতেই ভালো লাগে। ওর কোনো বন্ধুত্ব ই কেন যেন বেশিদিন স্থায়ী হয় না। সবাই যেন কেন ওকে ভুল বুঝে চলে যায়। ওর অসম্ভব ভালো বান্ধবী ছিলো মোহনা। অথচ সে ও ভুল বুঝে ওর সাথে আর যোগাযোগ করে না। ও ঠিক করেছিলো, আর কারো সাথে ও গভীর বন্ধুত্ব করবে না। ওর নিয়তিই যেন কারো সাথে কোন সম্পর্ক টিকে রাখতে দেয় না। আসলে সম্পর্ক অনেকটা গাছের মত। গাছ চারা অবস্থায় থাকতে, তাকে উপড়ে ফেলা সহজ, কিন্তু গাছ বড় হলে তাকে শিকড় সহ উপড়ে ফেলা কঠিন। কিন্তু কিভাবে যেন মনের অজান্তেই আনন্দ আর অন্তর খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেছে। অন্তর যখন অন্য সবার সাথে মেশে, ও সবাইকে কিভাবে যেন মাতিয়ে রাখে। কিন্তু তারপর ও অন্তর কেন যেন নিজেকে খুব বেশি প্রকাশ করে না। অন্তরের যেদিন খুব মন খারাপ থাকে, অন্য কাউকে তা বুঝতে দেয় না। কিন্তু আনন্দ কিভাবে যেন সব বুঝতে পারে। আর অন্তর ও কখনও নিজেকে আনন্দের সামনে আড়াল করে না। ওদের সম্পর্ক যেন খুব সহজ; কোন আড়ষ্টতা নেই, নেই কোন লুকোচুরি।
এইতো গত পরশু দিন সোহেল স্যারের বাসা থেকে আসার পথে ওরা একসাথে ফিরছিল। হঠাৎ বৃষ্টি নামল। ওরা দৌড়ে একটা স্টেশনারী দোকানের সামনে দাঁড়ালো। সেদিন অন্তর অনেক কথা বলছিলো। হঠাৎ ও বললো-
-আনন্দ, আইসক্রিম খাবে?
- এই বৃষ্টিতে আইসক্রিম! একটু আগেই ভিজলাম, এখন আইসক্রিম খেলে নির্ঘাত ঠান্ডা লাগবে।
-আরে ধুর। এত বাধা নিষেধ ভালো লাগে না। চল খাই।
- না। আমি খাব না।
- না খেলে নাই। আমি খাব। এবং বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে আইসক্রিম খেতে খেতে বাসায় যাব।
তারপর সত্যি অন্তর আইসক্রিম কিনে বৃষ্টির ভেতর রাস্তায় নেমে পড়লো। আনন্দ প্রথমে বৃষ্টিতে ভিজতে চায়নি, কিন্তু একা একা থাকতে হবে দেখে, ও রাস্তায় অন্তরের সাথে হাঁটতে শুরু করলো।
-আনন্দ, নাও আইসক্রিম খাও।
- আমি খাব না।
- এক কামড় হলেও খাও।
-না।
- না খেলে আমি সত্যি আর কোনদিন তোমার সাথে কথা বলবো না।
একান্ত নিরুপায় হয়ে আনন্দ সেদিন আইসক্রিম খেয়েছিলো। একথা মনে হতেই আনন্দের ঠোঁটের কোনে হাসির ক্ষীণ আভা ফুটে উঠলো.. পরক্ষনেই তা মিলিয়ে গেল। আচ্ছা, আমি তো এখন অন্তর কে ফোন করতে পারি। এ কথা মনে হতেই ও ফোনের কাছে ছুটে গেল। নম্বর ডায়াল করল। ওপাশে রিং হচ্ছে।
-হ্যালো..
-অন্তর, আমি আনন্দ।
-কেমন আছো?
- ভালো। তোমার গলা এমন শোনাচ্ছে কেন?
- আমার তো জ্বর।
- বলেছিলাম না, তখন তো শুনলা না। এখন মজা বোঝো। আজ আন্টি ফোন ধরলো না যে?
- মা বড় চাচার বাসায় গেছে।
-তুমি একা! খুব খারাপ লাগছে?
-নাঃ, আচ্ছা, ক্য়দিন পর তো বিশ্বকাপ, তুমি কোন দল?
- আমি জার্মানী সাপোর্ট করি।
-সত্যি, আনন্দ, তুমি সামনে থাকলে আমি কোলাকুলি করতাম; না না, স্যরি, আমি তোমার সাথে হ্যান্ডসেক করতাম।
- অন্তর, তুমি ঠিক আছো তো?
-...... হুম।
-তোমার কি মন খারাপ?
-যদি খারাপ থাকে তো কি করবে?
-আমাকে বল... দুঃখ শেয়ার করলে কষ্ট কমে যায়।
অন্তর হঠাৎ রাগত স্বরে বললো:
- বাজে কথা বলো না, আনন্দ। দুঃখ-কষ্ট কখনো শেয়ার করা যায় না। তোমাকে যদি টীচার মাইর দেয়, তাহলে তুমি কেবল ব্যথা পাবে। সেই ব্যথা কেউ শেয়ার করতে পারে না। আসলে কোন ব্যথাই কেউ শেয়ার করতে পারে না। বই পুস্তকেই কেবল তা লেখা থাকে, দুঃখবিলাসীদের মুখেই কেবল ওসব শোনা যায়।
- তুমি হঠাৎ রাগলে কেন, অন্তর। কি হয়েছে?
খানিকক্ষন চুপ থেকে অন্তর বললো, কিছু মনে করো না, আনন্দ। বৃষ্টির দিন গুলোতে মাঝে মাঝে আমার মন খুন খারাপ হয়ে যায়। আমার কিছু কষ্ট আছে। যদিও আমি তা তোমাকে বলবো না। তুমিও আর জানতে চেয় না।
- ঠিক আছে, আমি কক্ষনো জানতে চাইবো না, অন্তর।
অন্তর কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, আনন্দ, আসলে তুমিই আমার একমাত্র বন্ধু, যে আমাকে বুঝতে পারো।
আবার কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো, আনন্দ, তুমি একদিন আমার বাসায় আসবে? আমি আমার মা কে তোমার কথা বলেছি, মা তোমাকে দেখাতে চেয়েছেন। তুমি আসবে না?
- আমিতো কারো বাসায় যাই না, অন্তর।
- তুমি না করো না। মা তোমাকে দেখে খুব খুশি হবে। তুমি না করো না, আনন্দ। বলো আসবে?
- আমি পারবো না অন্তর। আজ আমি রাখছি, কেমন। ভালো থেকো।
ফোন রাখার পর কেন যেন আনন্দের চোখের কোনটা ভিজে উঠলো। অন্তরের জন্য ওর খুব খারাপ লাগছে ওর। ও আবার অন্তরের নম্বর ডায়াল করলো..। অন্তর ফোন উঠালে বললো...
-অন্তর, আমি তোমার বাসায় আসবো। তুমি নিজের খেয়াল রেখ। কেমন?
(চলবে...)।
২য় কিস্তি এখানে...
Click This Link
১ম কিস্তি এখানে...
Click This Link

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


