somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুসলমানরাই মধ্যপন্থী জাতি

২৩ শে মে, ২০১৩ সকাল ১০:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পবিত্র কুরআনের ভাষায় মুসলমানদের ‘উম্মতে ওয়াসাত’ তথা ‘মধ্যমপন্থী জাতি’ বলা হয়েছে। এ শব্দদ্বয় অত্যন্ত গভীর ও ব্যাপক তাৎপর্যের অধিকারী। এর অর্থ হচ্ছে, এমন এক উৎকৃষ্ট উন্নত মর্যাদাসম্পন্ন দল, যারা নিজের ইনসাফ, ন্যায়নিষ্ঠা ও ভারসাম্যের নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত, দুনিয়ার জাতিদের মধ্যে যারা কেন্দ্রীয় আসনলাভের যোগ্যতা রাখে, সত্য ও সততার ভিত্তিতে সবার সাথে যাদের সম্পর্ক সমান এবং কারো সাথে যাদের কোনো অবৈধ ও অন্যায় সম্পর্ক নেই।
মুসলমান হিসেবে আমাদের দায়িত্ব : মুসলমান হিসেবে আমরা শুধু আল্লাহ, পরকাল, তাঁর প্রেরিত কিতাবসহ নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ইত্যাদি পালন বিষয়ে কিছুটা ইসলামের বিধান মেনে নেয়াই যথেষ্ট নয়; বরং এসবের ঊর্ধ্বে এক বিরাট দায়িত্ব আমাদের ওপর ন্যস্ত হয়ে থাকে। তা হচ্ছে, যে সত্যের ওপর আমরা ঈমান এনেছি তার সাক্ষীরূপে পৃথিবীর সামনে আমাদের দাঁড়াতে হবে।
পবিত্র কুরআনে ‘মুসলমান’ নামে আমাদের একটি স্বতন্ত্র জাতির মর্যাদা দেয়া হয়েছে। এর একমাত্র উদ্দেশ্য, আমরা সব মানুষের সামনে পুরোপুরি সত্যের সাক্ষী হয়ে দাঁড়াব। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছেÑ ‘আমি তোমাদের এক মধ্যমপন্থী জাতি বানিয়েছি, যাতে করে তোমরা লোকদের জন্য সাক্ষী হও, আর রাসূল সা:-ও যেন তোমাদের জন্য সাক্ষী হন।’ (সূরা আল-বাকারাহ ১৪৩)
মুসলিম জাতি হিসেবে এ হচ্ছে আমাদের আবির্ভাবের একমাত্র উদ্দেশ্য। এ দায়িত্ব বস্তুত আল্লাহর পক্ষ থেকেই আমাদের ওপর অর্পিত হয়েছে। আল্লাহ বলেনÑ ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর জন্য সত্যের সাক্ষী হয়ে দাঁড়াও।’ (সূরা আন-নিসা ১৫৩)
উপরিউক্ত আয়াতটি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য কঠোর নির্দেশ। এ দায়িত্ব পালন না করার ভীষণ পরিণতির কথাও আল্লাহ আমাদের জানিয়েছেন তাঁর বাণীতে। অর্থাৎ ‘যার কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো সাক্ষ্য বর্তমান রয়েছে, সে যদি তা গোপন রাখে, তবে তার চেয়ে বড় জালেম আর কে হতে পারে?’ (সূরা আল-বাকারাহ ১৪০)।
আমাদের আগে আল্লাহ তায়ালা ইহুদি জাতিকে এ সাক্ষীর দায়িত্ব অর্পণ করলে তারা সত্যের কিছুটা গোপন করে আর কিছুটা তার বিপরীত সাক্ষ্য দান করেছিল। এমনিভাবে তারা সামগ্রিকভাবে সত্যের পরিবর্তে বাতিলের সাক্ষীতে পরিণত হলো। পরিণতিতে তাদের অবস্থা কুরআনের ভাষায় এই দাঁড়াল যে : অর্থাৎ ‘লাঞ্ছনা-গঞ্জনা, অপমান, অধঃপতন ও দুরবস্থা তাদের ওপর চেপে বসল এবং তারা আল্লাহর গজবে পরিবেষ্টিত হয়ে পড়ল।’ (সূরা আল-বাকারাহ ৬১)
মধ্যমপন্থী জাতির মূল দায়িত্ব সত্যের সাক্ষ্যদান : আমাদের ওপর যে সাক্ষ্যদানের দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে এর অর্থ হচ্ছে, আমাদের কাছে কুরআনের মাধ্যমে যে সত্য এসেছে তার সত্যতা ও যথার্থতা সম্পর্কে এবং তার সরল-সোজা পথ সম্বন্ধে আমরা দুনিয়ার সামনে সাক্ষ্য দেবো। যে সাক্ষ্যের সত্যতা যথার্থরূপেই প্রকাশ হয়ে পড়ে এবং দুনিয়ার মানুষের সামনে আল্লাহর দ্বীনের চূড়ান্ত প্রমাণও প্রকাশ হয়ে পড়ে। বস্তুত সত্যের এমনি সাক্ষ্যদানের জন্যই যুগে যুগে নবী-রাসূলের আবির্ভাব হয়েছিল। আর এ দায়িত্ব পালন করা ছিল তাঁদের অপরিহার্য কর্তব্য। নবী-রাসূলের অবর্তমানে এ দায়িত্ব এসে পড়ে সম্মিলিতভাবে সমগ্র মুসলিম জাতির ওপর। আমরা যদি সত্যের সাক্ষ্যদানের কোনোরূপ অবহেলা কবি অথবা সত্যের পরিবর্তে অসত্য বা বাতিলের সাক্ষী হয়ে দাঁড়াই, তবে আমাদের অবস্থাও পূর্ববর্তী উম্মতদের মতো হতে বাধ্য।
সাক্ষ্যদানের পদ্ধতি : মুসলিম জাতি নিম্নোক্ত দুই রকমে সাক্ষ্য দিতে পারেÑ মৌখিক সাক্ষ্য ও বাস্তব সাক্ষ্য।
মৌখিক সাক্ষ্যদান : মৌখিক সাক্ষ্য বলতে বুঝায় নবী করিম সা:-এর মাধ্যমে আমাদের কাছে যে সত্য এসেছে, বক্তৃতা ও লেখনীর মাধ্যমে দুনিয়ার সামনে তাকে তুলে ধরা। মানুষকে বুঝানো ও তাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট করার সম্ভাব্য সব পন্থা অবলম্বন করে দাওয়াত ও প্রচারের সম্ভাব্য সব উপায়-উপকরণ ব্যবহার করে ও আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের উদ্ভাবিত সব কলাকৌশল আয়ত্তে এনে আল্লাহর মনোনীত দ্বীনের সাথে মানুষের পরিচয় করিয়ে দেয়া। উপরন্তু মানুষের চিন্তায়, বিশ্বাসে, নৈতিকতায়, তাহজিব-তমুদ্দুনে, সামাজিক রীতিনীতিতে, লেনদেন ও আইন-আদালতে, রাজনীতি ও রাষ্ট্রব্যবস্থাসহ সব দিক ও বিভাগের জন্য এ পেশকৃত শিক্ষাকে অত্যন্ত খোলাখুলিভাবে বিবৃত করা, যুক্তি-প্রমাণের দ্বারা তার সত্যতার প্রমাণ করা এবং এর বিপরীত যত মতাদর্শ বর্তমান রয়েছে যুক্তিপূর্ণ সমালোচনার মাধ্যমে তার দোষত্রুটি নির্দেশ করা। যে পর্যন্ত না মুসলিম জাতি মানুষকে হেদায়াতের পথ দেখানোর জন্য নবীদের মতো চিন্তভাবনা করবে, সে পর্যন্ত এ মৌখিক সাক্ষ্যদানের দায়িত্ব পুরোপুরি আদায় হতে পারে না। কর্তব্য পালন করতে হলে এ কাজটিকে আমাদের সামগ্রিক চেষ্টা, সাধনা ও কর্মচাঞ্চল্যের কেন্দ্রীয় লক্ষ্যে পরিণত করতে হবে এবং সব কাজেই এ উদ্দেশ্যের প্রতি লক্ষ রাখতে হবে এবং আমাদের মধ্য থেকে সত্যের বিপরীত সাক্ষ্যদানকারী কোনো আওয়াজকেই প্রশ্রয় দেয়া না দেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
বাস্তব সাক্ষ্যদান : এর অর্থ হচ্ছে আমরা যেসব নিয়মনীতিকে সত্য বলে প্রচার করি; আমাদের বাস্তব জীবনেও সেগুলোকে প্রতিফলন করতে হবে। দুনিয়ার মানুষ যেন আমাদের কাছ থেকে ওই নীতিগুলোর সত্যতা সম্বন্ধে কেবল মৌখিক বাণীই শুনতে পায় না, বরং তারা যেন স্বচক্ষে আমাদের জীবনে ওই সবের সৌন্দর্য ও কল্যাণকারিতা প্রত্যক্ষ করতে পারে। এ দ্বীনের পথনির্দেশে কেমন মানুষ তৈরি হয়, কী রকম ন্যায়পরায়ণ সমাজ গঠিত হয়, কেমন সৎ সমাজব্যবস্থার গোড়াপত্তন হয়, কী রূপ সঠিক ধারায় জ্ঞানবিজ্ঞান ও শিল্প-সাহিত্যের বিকাশ ঘটে, ব্যক্তি ও সমাজজীবনের প্রতিটি দিক ও বিভাগ কেমন পরিশুদ্ধ, সুবিন্যস্ত ও কল্যাণের সম্পদে ভরে ওঠে, তা যেন স্বচক্ষে দেখতে পারে। বস্তুত আমরা যদি ব্যক্তিগত ও জাতিগতভাবে নিজেরা দ্বীনের বাস্তব সাক্ষ্যে পরিণতি হতে পারি, আমাদের ব্যক্তিচরিত্র সত্যতার প্রমাণ পেশ করে, আমাদের জাতীয় নীতিও সম্মিলিত চেষ্টাসাধনা তার সত্যতার উজ্জ্বল নিদর্শনে পরিণত হয়; তাহলে এ সাক্ষ্যদানের দায়িত্ব যথার্থভাবে পালিত হতে পারে।
উপরি উক্ত আলোচনার আলোকে বলতে পারি, এসব মূলনীতির ভিত্তিতে যখন আমাদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে এবং তা আল্লাহর দ্বীনকে পুরোপুরি গ্রহণ করে তা বিচার, ইনসাফ, সংস্কারমূলক কার্যসূচি ও সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাদি, শান্তিপ্রিয়তা ও জনগণের কল্যাণ সাধন, শাসক শ্রেণীর সচ্চরিত্র, সুষ্ঠু অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, ইনসাফভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতি, ভদ্রতাপূর্ণ যুদ্ধ এবং আনুগত্যমূলক সন্ধির মাধ্যমে এ কথারই সাক্ষ্য দেবে, যে দ্বীন বা জীবনব্যবস্থা এ রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছে; তা সত্যিই মানবকল্যাণের নিশ্চয়তা বিধানে সক্ষম এবং এরূপ রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মধ্যেই নিহিত রয়েছে মানবজাতির সার্বিক কল্যাণ, কেবল তখনই এ সাক্ষ্যদান পূর্ণাঙ্গ হতে পারে। আর এমনি সাক্ষ্য মৌখিক সাক্ষ্যের সাথে মিলিত হলেই মুসলিম জাতি পুরোপুরি এর দায়িত্ব থেকে মুক্তি পেতে পারে, আর তখনই মানবজাতির সামনে সত্য চূড়ান্তরূপে প্রকাশ পেতে পারে আর আখেরাতের আদালতে দাঁড়িয়ে রাসূল সা:-এর পর মুসলিম জাতি এ সাক্ষ্য দেয়ার অধিকারী হতে পারবে যে, রাসূল সা: আমাদের কাছে যা কিছু পৌঁছিয়েছিলেন আমরা তা দুনিয়ার মানুষের কাছে যথার্থরূপেই পৌঁছে দিয়েছি।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×