somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সুপারবাগ: বিপন্ন মানবজীবন ও বিজ্ঞানের কাজ | বিজ্ঞান পোস্ট সিরিয়াল ১১

০৩ রা জুলাই, ২০১৯ রাত ১০:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্রমাগত এন্টিবায়োটিক এর ব্যবহার ও এন্টিবায়োটিক এর ডোজ শেষ না করার কারণে ক্রমেই ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া সমূহ এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। এর ফলে ব্যাকটেরিয়া সমূহ পরিণত হচ্ছে সুপারবাগে । অর্থাৎ এন্টিবায়োটিক এদের মারতে পারছে না। এছাড়া এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে দেহের পক্ষে উপকারী ব্যাকটেরিয়াও মারা যাচ্ছে ।
গবাদি পশু, মানুষ, পোল্ট্রি শিল্পে অবাধ এন্টিবায়োটিক এর ব্যবহার ক্রমেই ব্যাকটেরিয়াগুলোকে শক্তিশালী করে তুলছে। ফলে এন্টিবায়োটিক আর সেভাবে কাজ করছে না ।

অদূর ভবিষ্যতে এই অবস্থা আরো খারাপের দিকে যাবে । ধারণা করা হচ্ছে আগামী ২০৫০ সালের দিকে সুপারবাগ মহামারী আকার ধারণ করবে । তখন মানুষের মৃত্যুর অন্যতম কারণ হবে এই এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া বা সুপারবাগ । তখন সামান্য ইনফেকশন থেকে পঁচন হয়ে মানুষের মৃত্যু হবে, কলেরা ডায়রিয়ার টাইফয়েড এর মতো রোগে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটবে । হাতে একটা ব্লেডের আঁচ পড়লেও সেখানে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন এর দ্বারা ভয়াবহ পচনের কারণে মানুষের মৃত্যু ঘটবে। কোনভাবেই এসব মৃত্যু রোধ করা যাবে না ।


সুতরাং, এন্টিবায়োটিক নিলে অবশ্যই সেটার ডোজ পূরণ করতে হবে, এবং অহেতুক বা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এন্টিবায়োটিক এর অবাধ ব্যবহার প্রতিরোধ করতে হবে । গবাদি পশু ও পোল্ট্রি শিল্পে নিয়ন্ত্রিত এন্টিবায়োটিক এর ব্যবহার করতে হবে।




এনিওয়ে,

সুপারবাগ যেহেতু একটি প্রকট সমস্যা হিসেবে দেখা দিতে যাচ্ছে তাই বিজ্ঞানীরা এর সমাধান বের করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে । এক্ষেত্রে সবচেয়ে আশার কথা হলো সুপারবাগ এর প্রতিকার আমাদের হাতে চলে এসেছে ।

কি সেটা ???


উত্তর হচ্ছে T2 ব্যাকটেরিওফাজ ভাইরাস ( T2 bacteriophage) .
Phage মানে ভক্ষণ করা । তাহলে ব্যাকটেরিওফাজ মানে ব্যাকটেরিয়া ভক্ষণকারী ভাইরাস। T2 ফাজ ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য হলো এটি ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে আসলে ফাজের দেহ থেকে ব্যাকটেরিয়ামের দেহে T2 Phage এর ডিএনএ প্রবেশ করিয়ে দেয় যা ব্যাকটেরিয়ামের নিজস্ব ডিএনএ কে ধ্বংস করে ব্যাকটেরিয়ার দেহে বংশ বিস্তার করে। ফলে সুপারবাগ এই T2 ফাজের দ্বারা আক্রান্ত হলে মারা যাবে ।




এখন কথা হলো,

এই ফাজ থেরাপির বর্তমান পরিস্থিতি কি ?

বর্তমানে গণহারে এই ফাজ থেরাপি ব্যবহার করা হচ্ছে না। শুধুমাত্র উন্নতবিশ্বের কিছু গবেষণাগারে এবং চিকিৎসাকেন্দ্রে এর সীমিত ব্যবহার হচ্ছে। এটার এখনো সার্বজনীন ব্যবহার করার অনুমতি আসেনি এফডিএ ও ডব্লিউএইচও থেকে । শুধুমাত্র সিলেকটিভ কিছু পেশেন্ট যাদের কিনা সুপারবাগ এটাক নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে তাদের ক্ষেত্রেই ফাজ থেরাপি ব্যবহার করা হচ্ছে ।


এখন কথা হলো ব্যাকটেরিয়ার বাহিত সমস্যায় ফাজ ভাইরাসের ব্যবহার এর ফলে ফাজ রেজিস্ট্যান্স কি হয়ে উঠবে নাকি ব্যাকটেরিয়া ?

উত্তর হচ্ছে না বা সম্ভব না । যেহেতু ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস দুটোই বিবর্তিত হচ্ছে কোটি কোটি বছর ধরে তাই ব্যাকটেরিয়ার ফাজ ইমিউনিটি তৈরি হতে দেখলে ফাজ ভাইরাসেরও বিবর্তন ঘটবে একে মারার জন্য । পৃথিবীতে এককোষী জীবের অবতারণার পর থেকে এভাবেই চলে আসছে । এছাড়া আমাদের দেহের এন্টিবডি ও ফাজের মিলিত আক্রমণে ব্যাকটেরিয়া ইভলব ঘটে বেঁচে যাওয়ার কোন সুযোগই নেই ।



ফাজ কি আমাদের দেহের কোন ক্ষতি করবে ???

না, ফাজ ভাইরাস খুবই সিলেকটিভ ব্যাকটেরিয়া কিলার । মানুষের দেহের সাথে এর বিরোধ ঘটার সুযোগ নেই । মানুষ ফাজের প্রতি ইমিউনড(human is immune to bacteriophage)


ফাজ বনাম এন্টিবায়োটিক ?

ফাজ কাজ করে ব্যাকটেরিয়ার দেহে তার ডিএনএ সংশ্লেষণ এর মাধ্যমে অন্যদিকে এন্টিবায়োটিক ছত্রাকের দেহে উৎপন্ন এক প্রকার রাসায়নিক যা কিনা ব্যাকটোরিয়ার মেটাবলিজম ও গ্রোথে বাধা দিয়ে ব্যাকটোরিয়া মেরে ফেলে।

ফাজের চাইতে এন্টিবায়োটিক এর কাজ করার স্পিড বেশি ।

ফাজ উচ্চমাত্রার সিলেকটিভ ব্যাকটেরিয়া কিলার তাই শুধুমাত্র সিলেকটিভ ব্যাকটেরিয়াকেই এটি ধ্বংস করে । অন্যদিকে এন্টিবায়োটিক ভালোখারাপ সব ব্যাকটেরিয়াকেই গণহারে মেরে ফেলে, যেমন আমাদের অন্ত্রে বাস করা পরিপাকে সাহায্য করা ব্যাকটেরিয়াও এন্টিবায়োটিক দ্বারা মারা পড়ে ।

ফাজ ভাইরাস মানব দেহের জন্য হাৰ্ম লেস অন্যদিকে অনেক এন্টিবায়োটিক কিডনি লিভারের ক্ষতি করে ।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০১৯ রাত ১০:১২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×