একজন মুসলমান নামাযি, রোযাদার, হাজী, যাকাত দেনেওয়ালা সত্য কিন্তু তার আক্বিদা যদি সহিহ না হয় তাহলে তার নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত পরকালে কোন সুফল বয়ে আনবে না। এই কারণে ইসলামে সর্বপ্রথম আকিদা দুরস্ত করার উপর জোর তাগিদ দেয়া হয়েছে।
আকিদার প্রাথমিক স্তর ছয় কালিমায় বিশ্বাস স্থাপন করা :
1) কালিমা তায়্যিবায় পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করা;
2) কালিমা শাহাদত-এ পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করা;
3) ঈমানে মুজমাল – বিশ্বাস করা
4) ঈমানে মুফাসসাল বিশ্বাস করা
5) কালিমাহ তামজীদ বিশ্বাস করা
6) কালিমাহ তাওহীদ বিশ্বাস করা
আকিদার প্রাথমিক স্তর ছয়টি কালিমায় বিশ্বাস স্থাপন করা। ঈমান বা বিশ্বাসের 3টি স্তর রয়েছে। যেমন :
1) ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোকে অর্থাৎ 6টি কালিমার বিষয়বস্তুকে মুখে স্বীকার করা বা উচ্চারণ করা;
2) সেগুলোকে অন্তরে বিশ্বাস করা এবং
3) মুখের স্বীকৃতি ও অন্তরের বিশ্বাসানুযায়ী আমল করা অর্থাৎ কালিমার বিপরীত কোন বিশ্বাস অন্তরে স্থান না দেয়া, কালেমার বিপরীতে বা সাংঘর্ষিক কোন কাজ না করা বা কাউকে করতে উৎসাহ না দেয়া।
ইসলামের সকল হুকুম-আহকাম, সকল নিদর্শন, নবী-রাসুল, জান্নাত-জাহান্নাম ইত্যাদিতে যথাযথভাবে বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। ইসলামের বড় থেকে বড় কোন নিদর্শন বা হুকুম, ছোট থেকে ছোট কোন আমল সম্পর্কে নেতিবাচক কথা বলা যাবে না বা নেতিবাচক কাজ করা যাবে না। ইসলামের মর্যদা ক্ষুন্ন হয় এমন কোন কাজ করা যাবে না বা কোন কথা বলা যাবে না। জান্নাত-জাহান্নাম ও তথায় অবস্থিত কোন নায-নেয়ামতের এবং কোন শাস্তি সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা করা যাবে না বা কথা বলা যাবে না। কেউ একজন বললো, আমি জান্নাত-জাহান্নাম নিয়ে ভাবিনা, হুর-গেলমান নিয়ে আমার কোন মাথাব্যাথা নাই, একজন জান্নাতী পুরুষ যদি পুরুস্কার হিসাবে অসংখ্য হুর লাভ করে তবে জান্নাতী নারী কি অসংখ্য পুরুষ লাভ করবে না, নবী-রাসূলগণৈর দোষ-ত্রুটি অন্বেষণ করা, এমন কথা বলা যে, খোদা বিপদ দেওয়ার জন্য শুধু আমাকে দেখলো, খোদা আমাকে তুলে নিয়ে যায় না কেন, কিংবা এমন বললো যে, খোদা কি দেখেনা ইত্যাদি, কেউ বললো তুমি এমন খারাব কাজ কিভাবে করলে? তুমি কি আল্লাহকে ভয় পাওনা? জবাবে বললো, হ্যা, “আমি আল্লাহকে ভয় পাই না”- ইত্যাদি কথায় বা কাজে বা বিশ্বাসে ঈমান নষ্ট হয়ে যায়।”
আল্লাহর সমকক্ষ কেউ নেই, তার কোন শরিক নেই, আল্লাহর কোন কাজে দোষের লেশমাত্র নেই, জীবন ও মৃত্যুর মালিক তিনিই, তিনিই সকল প্রাণীর রিযিকের ব্যবস্থা করেন, হুকুমদাতা-বিধানদাতাও তিনি, মানুষকে জ্ঞান ও বিবেক দান করে ভাল-মন্দ (ইচ্ছানুযায়ী) কাজ করার সামর্থ্য তিনি দিয়েছেন, মানুষকে তার শক্তির বাইরে কোন কিছু করতে তিনি আদেশ করেননি, সকল নবিরাসূলগণই নিষ্পাপ, নবিদের মর্তবা সমস্ত মানবজাতির উর্দ্ধে তৎমধ্যে সকল নবীর সর্দার মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (স), নবী (স) এর পরে আর কোন নবী আসবে না, নবী (স) এর ওয়ারিশ বা উত্তরাধীকারী হলেন হক্কানী ওলামায়ে কেরাম, নবী (স) এর মিরায স্বশরীরে জাগ্রত অবস্থায় এক রাত্রেই হয়েছে, আল্লাহর অপার গুণ বর্ণনাকারী জীব ফেরেশতা যারা নূরের তৈরি, তারা কখনো প্রভুর হুকুমের ব্যত্যয় ঘটান না, ওলী যত বড়ই হোক নবীর সমান হতে পারে না, নবীদের মুযেযা সত্য, ওলীদের কারামত সত্য, শরীয়তের খেলাপ কোন কাজ করনেওয়ালা ওলী হতে পারে না, পয়গম্বরদের উপর নাযিলকৃত সকল কিতাবের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা, সকল কিতাবের শ্রেষ্ঠ কিতাব মহাগ্রন্থ আল-কুরআন অবিকৃত এবং এর হেফাজতের মালিক আল্লাহ বিশ্বাস স্থাপন করা, গুণাহের কাজকে হারাম মনে করা, হালাল কাজকে নেকের কাজ জ্ঞান করা, রাসূল (স) এর সকল বিবি-পুত্র-কন্যাগণের প্রতি শ্রদ্ধা-সম্মান প্রদর্শন করা, সাহাবায়ে কেরামগণকে সত্যের মাপকাঠি জ্ঞান করা, সন্তানদের মধ্যে হযরত ফাতেমা (রা), বিবি সাহেবানদের মধ্যে হযরত খাদিজা (রা) ও হযরত আয়েশা (রা) এর মর্যাদা সবচেয়ে বেশী মর্মে বিশ্বাস করা ও ভক্তি শ্রদ্ধা করা, রাসুল (স) কেয়ামতের যে সকল আলামত বর্ণনা করেছেন সেগুলোতে বিশ্বাস স্থাপন করা যে সেগুলো আবশ্যই ঘটবে, মুনকার-নাকিরের সাওয়াল-জওয়াবের মুখোমুখি হবার বিষয়ে স্পষ্ট বিশ্বাস করা, জান্নাত-জাহান্নাম-হাশর-কেয়ামত-মিযান-পুলসিরাতের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা, মৃত্যুর পরে কবরস্থ করা হোক বা না হোক মুনকার-নাকিরের প্রশ্নের সম্মুখিন হবার বিষয়ে সত্য স্বীকার করা, ইমাম মাহদী (আ) এর আগমণ সম্পর্কে বিশ্বাস স্থাপন করা, ছোট থেকে ছোট গুণাহ’র শাস্তি আল্লাহ দিতে পারেন আবার বড় থেকে বড় গুণাহ আল্লাহ যে কোন উছিলায় মাফ করতে পারেন-সেই ক্ষমতা আল্লাহর আছে মর্মে বিশ্বাস করা, গুণাহর কাজে আনন্দ না করা বরং তওবা করা, ভাল কাজ করতে পারলে শোকর করা ও ভাল কাজ করার জন্য দোয়া প্রার্থনা করা, আল্লাহ বা রাসূল (স) এর কোন হুকুমকে মন্দ না জানা বা দোষ বের না করা, কোন নবী বা ফেরেশতার দোষ বের না করা, কোন নবী বা ফেরেশতাকে ঘৃণা না করা, সম্মান প্রর্দশন করতে গিয়ে কারো সামনে মাথা না নোয়ানো, কারো নামে কোন পশু জবাহ না করা (আল্লাহ ব্যতীত), কারো নামে বাজুতে পয়সা বা গলায় সুতা লাগানো, হাসি-ঠাট্টার ছলে (যে কোন কারণে) বিজাতীয় পোশাক না পরা, মাথায় সিঁদুর না দেয়া কিংবা উলু ধ্বনি না দেয়া, রুসুম বিশ্বাস না করা (যেমন হাত চুলকাইলে টাকা আসবে বলে ধারণা করা, হাঁচি দিলে কাজ সিদ্ধ হবে না মর্মে বিশ্বাস করা, ডান চোখ লাফালে ভাল হবে, বাম চোখ লাফালে বিপদ আসবে মর্মে বিশ্বাস করা), মন্ত্র-তন্ত্র-বান-টোনা দিয়ে কাউকে হত্যা না করা বা চেষ্ট না করা বা কারো অনিষ্ট করার কথা মাথায় না আনা, যিনা-ব্যাভিচার না করা, এতিমের মাল না খাওয়া, মা-বাবার সাথে বেয়াদবি না করা, মা-বাবা-উস্তাদের কথার আওয়াজের চেয়ে নিজের কথার আওয়াজ ছোট থাকা, মেয়েদের হক্ব মেয়েদেরকে দিয়ে দেওয়া, সামান্য কারণে স্ত্রীকে বাজে তোহমত না দেয়া (স্বামী-স্ত্রীর মনোমালিন্যকে কেন্দ্র করে অনেক পুরুষ আজকাল স্ত্রীর চরিত্রে কালিমা লেপন করে), কাহারো উপর জুলুম না করা, অযথা ঝগড়া-ফাসাদ না করা, কারো অসাক্ষাতে তার দোষ-ত্রুটি অন্যের নিকট আলোচনা না করা, মিথ্যা কসম না খাওয়া, কোরআন শরীফ নিয়মিত পড়া (যেন ভুলে না যায়), মুসমানকে বেঈমান বা কাফের বা খোদার দুষমন না বলা, বেগানা মহিলাদের নিকট একাকী বসে না থাকা, জুয়া না খেলা, নেশা পান না করা, কোন খাদ্যদ্রব্যকে মন্দ না বলা, খাবারের কারণে এই অসুখ হয়েছে তা না বলা, পরের দোষ খুজে না বেড়ানো এবং প্রচার করে না বোড়ানো ইত্যাদি একজন স্বচ্ছ ঈমানদারের গুণ। এর বিপরীত করা মুসলমানের কাজ নয়। যেই বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে তার বিপরীত বিশ্বাস করা এবং উক্ত বিশ্বাসের সাথে মন্দ কাজে অভ্যস্ত হয়ে পড়া একজন মানুষ কাফের বা অবিশ্বাসী হওয়ার জন্য যথেষ্ট। (শেষ পর্ব আগামী কাল ইনশাআল্লাহ)
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০২০ সকাল ১০:৩৭