somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মোঃ খুরশীদ আলম
যারা ইমান আনে এবং সৎকাজ করে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত যার নিচ দিয়ে প্রবাহিত রয়েছে নহর সমূহ ( আল কুরআন)“সত্য ও সুন্দরকে ভালবাসি, অন্যায়- অবহেলা দেখলে খারাপ লাগে, তাই ক্ষদ্র এ প্রয়াস “

‘অনিন্দ্য সুন্দরী ও স্বামীর প্রতি নিবেদিতা’ হুরকথন- ‘হুর’ জান্নাতে মহান প্রভুর বিশাল অনুগ্রহ

১৬ ই জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘অনিন্দ্য সুন্দরী ও স্বামীর প্রতি নিবেদিতা’ হুরকথন- ‘হুর’ জান্নাতে মহান প্রভুর বিশাল অনুগ্রহ

[কারো বিশ্বাসে আঘাত করার উদ্দেশ্যে নয় বরং শিরোনামে উল্লেখিত বিষয় সম্পর্কে মুসলমানদের সঠিক তথ্য দেয়া (বিশেষ করে এই ব্লগের সহব্লগারদের) লেখাটির উদ্দেশ্য। যারা মন্তব্য ইনপুট করবেন লেখার শুরুতেই তাদেরকে করজোরে নিবেদন করছি, কোন নেতিবাচক মন্তব্য নিজ দায়িত্বে করবেন, সেজন্য এই ব্লগার দুনীয়া বা আখেরাতে কোনরুপ দায় বহন করবে না। ]

হুর : হুর সম্পর্কে জেনে নিই উপমহাদেশের বিখ্যাত পীর ও মুজাদ্দেদ মরহুম হযরত মাও: সৈয়দ মোহাম্মদ এছহাক (রহ.) এর লিখিত ও আল-এছহাক প্রকাশনী কর্তৃক প্রকাশিত “বেহেশতের সুখ বা বেহেশতের ওয়াজ” নামক কিতাব থেকে। উক্ত কিতাবের চৌত্রিশ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, “বেহেশতের মধ্যে আর একটি মস্তবড় নেয়ামত হইবে হুর। হুর সকল বেহেশতবাসীগণের নিকট সব সময় থাকিবেন। তাঁহাদের চক্ষু হইবে বড়, এবং চক্ষের সাদা অংশটুকু খুব সাদা হইবে আর কাল অংশটুকু গাঢ় কাল হইবে। উহা দেখিতে এতই সুন্দর হইবে যে, দেখিলেই মনে হইবে যেন উহাতে সুরমা দিয়া রাখিয়াছে। তাঁহারা কখনোই অন্য পুরুষের দিকে তাকাইবেন না বরং আপন আপন স্বামীর উপরই আশেক থাকিবেন। জানিয়া রাখিবেন বেহেশতের মধ্যে কোন পর্দার আইন থাকিবে না, তাই বিবিগণের সব সময় আপন স্বামীর উপরই খেয়াল থাকিবে, আর অন্য পুরুষ হাজার সুন্দর হইলেও সেদিকে ফিরিয়াও চাহিবে না।”

হুরগণের ব্যাপারে তারিফ করে উক্ত কিতাবের পঁয়ত্রিশ নং পৃষ্ঠায় বেহেশতবাসীদের স্ত্রীদের বিষয়ে বলা হয়েছে, “দুনীয়ার বিবিগণ যাহারা বেহেশতি হইবেন, তাহারা ঐ নুরের তৈয়ারী হুরদের চাইতেও অতি সুন্দরী ও সম্মানীতা হইবেন, আর হুরগণ তাহাদের তাবে হইয়া চলিবেন। কারণ হুর সকলকে আল্লাহপাক নিজ ইচ্ছায় ঐরূপ সুন্দরী করিয়া সৃষ্টি করিয়াছেন, কিন্তু দুনীয়ার বিবিগণকে ঐরূপ সুন্দরী করিয়া সৃষ্টি না করিলে-ও তাহারা দুনীয়ায় বসিয়া কষ্ট করিয়া নেক আমল করিয়াছেন বিধায় সেই নেকের ফলে তাহাদের ইজ্জত, সম্মান ও খুব ছুরাতী বৃদ্ধি পাইবে।”

বোখারী ও মুসলিম শরিফের উদ্বৃতি দিয়ে উক্ত কিতাবের সাতষট্টি পৃষ্ঠায় একখানা হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে যার বাংলা অর্থ হলো, “ হযরত আবু হোরায়রা (রা.) হইতে রাওয়ায়াত করা হইতেছে, তিনি বলিয়াছেন, হুজুর (স.) ফরমাইয়াছেন- বেহেশতের মধ্যে প্রথম যাহারা দাখেল হইবেন তাহাদের চেহারা হইবে পূর্ণিমার রজনীর চন্দ্রের মত উজ্জল। অতঃপর যাহারা বেহেশতে দাখেল হইবেন, তাঁহাদের চেহারা হইবে আসমানের অতি চমকদার তারকার ন্যায়। সকলের দেল এইরূপ পরিস্কার ও উজ্জল হইবে যে, মনে হইবে যেন সবার একটি মাত্র দেল। হিংসা-বিদ্বেষ পরস্পরের মধ্যে এখলেতাফ, গোস্বা-বিবাদ ইত্যাদি কিছুই থাকিবে না, বরং প্রত্যেকের দেল প্রত্যেকের উপর খোশ থাকিবে। প্রতিজনের জন্য সেখানে দুইজন করিয়া মনোহারিনী চক্ষু বিশিষ্ট হুর থাকিবে, (অবশ্য তথায় প্রতেক্যের সত্তর জন বিবি থাকিবে, কিন্তু ঐ দুইজন উঁচু দরজার খুবছুরাতের হইবে।)। তাহাদের খুবসুরাত এতই হইবে যে, হাড্ডির ভিতরের শাস পর্যন্ত সৌন্দর্যের কারণে হাড্ডি ও গোশত ভেদ করিয়া দেখা যাইবে। তাহারা প্রাতে এবং সন্ধ্যায় আল্লাহর নামের জেকের করিবে ও তছবিহ পাড়িবে। [বন্দুগণ! খেয়াল করিয়া নেন, আমি যে আপনাদিককে সব সময় তাগিদ করিতেছি “ প্রাতে ও সন্ধ্যায় জেকের নাগা করিবেন না,” এখন দেখুন বেহেশতের মধ্যেও প্রাতে ও সন্ধ্যায় জেকের হইবে- এটুকু লেখকের নিজের বক্তব্য অনুসারিদের জেকের করার গুরত্ব বুঝাতে গিয়ে। ] উক্ত হাদিসে আরো বলা হইয়াছে – ঐ বেহেশতের মধ্যে পেয়ালা সমূহ হইবে স্বর্ণের ও রৌপ্যের এবং কাঙ্গই বা চিরণী হইবে স্বর্ণের আর আঙ্গুটির নাগিনা হইবে চন্দনের। হামেশা বেহেশতবাসীদের শরীর হইতে মেস্কের খোশবু আসিতে থাকিবে। তাহাদের সকলেই এক বরাবর হইবে-কেউ খাট বা লম্বা হইবে না এবং প্রত্যেকেই হযরত আদম (আ.) এর ন্যায় ষাট হাত লম্বা হইবে।” (বোখারী, মুসলিম)

উক্ত কিতাবের একাত্তর নং পৃষ্ঠায় একটি হাদিস আনয়ন করা হয়েছে যে,“আল্লাহপাক বেহেশতের মধ্যে মোমেনগণকে বাহাত্তর জন বিবি ও আশি হাজার খাদেম দান করিবেন।”

উক্ত কিতাবের বাহাত্তর পৃষ্ঠায় তিরমিজী শরীফের একটি হাদিস উল্লেখ করা হয়েছে যে, “হযরত আলী রা. হইতে রাওয়ায়াত আছে, তিনি বলিয়াছেন, হুজুর (দ.) ফরমাইয়াছেন- নিশ্চয়ই বেহেশতে মনোহরিণী চক্ষু বিশিষ্ট হুরদের সম্মেলন হইবে, যেখানে তাহারা একত্রিত হইয়া অতি খোশ ও বোলন্দ আওয়াজে গান করিবে। এমন খোশ আওয়াজে গান করিবে, যাহা মানুষ বা কোন মাখলুক ইতিপূর্বে কোন দিন শুনে নাই। তাহারা এই বলিয়া গান গাহিবে- আমরা বেহেশতের মধ্যে হামেশা থাকিব, কখনো ধ্বংস হইবো না। আর আমরা হামেশা নেয়ামতের মধ্যে থাকিব, কখনো পুরাতন হইবো না, আর দুঃখও দেখিব না। আমরা সর্বদা রাজিই থাকিব, কখনও নারাজ হইব না। আমাদের ও আমাদের স্বামীর জন্য খোশ-খবরী যাহাদের জন্য আল্লাহ পাক আমাদিগকে সৃষ্টি করিয়াছেন। (আমরা স্বামীদের সহিত চিরকাল মিলিয়া মিশিয়াই থাকিব কেহ কাহারও উপর কোন বেজার বা অসন্তষ্ট হইব না।” (তিরমিজী)

ইমাম গাযযালি (রহ.) এর লেখা কিতাব ‘দাকায়েকুল আখবার’– এর একশত আঠারো পৃষ্ঠায় জান্নাত অধ্যায়ে হুর সম্পর্কে পরিচয় দেয়া হয়েছে এভাবে- হুরে-ঈন বা বড় চক্ষুবিশিষ্টা পবিত্র রমনী বেহেশতে থাকিবে। আল্লাহ তাদেরকে স্বীয় নুর দ্বারা সৃষ্টি করিয়াছেন। তাহারা ইয়াকুত ও মারজানের তুল্য লাবন্যময়ী ও সুন্দরী। তাহারা স্ব স্ব স্বামী ভিন্ন অন্য কাহারো প্রতি দৃষ্টিপাত করিবে না এবং স্বীয় স্বামী ভিন্ন কাহারো দ্বারা স্পর্শীত হইবে না। তাহাদের সাথে যতই সঙ্গম করা যাইবে ততই তাহাদিগকে নবতর ও কুমারীবৎ মনে হইবে। তাহাদের দেহে বিভিন্ন রংয়ের সত্তরটি অলংকার থাকিবে। উহা একটি পশম তুল্যও ভারি হইবে না। তাহাদের হাড়ের মগজ এবং হাড় অংলকারের ভিতর দিয়া দেখা যাইবে। তাহাদের কেশগুচ্ছ ইয়াকুত ও মুক্তা খচিত হইবে।

উক্ত কিতাবের একশত ছাব্বিশ নং পৃষ্ঠায় হুর অধ্যায়- হুরদের পরিচয় দেয়া হয়েছে এভাবে- হুযুর আকরাম (স.) এরশাদ করিয়াছেন- আল্লাহ তায়ালা হুরদের মুখমন্ডল লাল, সাদা, সবুজ এবং হলুদ রংয়ের সংমিশ্রণের এবং দেহ মুশক, জাফরান এবং কাফুর দ্বারা সৃষ্টি করিয়াছেন। মাথার কেশ লবঙ্গ দ্বারা তৈরী। তাহাদের পায়ের পাতা হইতে হাটু পর্যন্ত অত্যন্ত সুগন্ধি জাফরান দ্বারা, হাটু হইতে বক্ষদেশ পর্যন্ত মুশক দ্বারা বক্ষদেশ হইতে ঘাড় পর্যন্ত আম্বর দ্বারা এবং ঘাড় হইতে উপরিভাগ কাফুর দ্বারা আল্লাহপাক সৃষ্টি করিয়াছেন। যদি তোমাদের কেহ পৃথিবীর বুকে এক ফোটা থুথু নিক্ষেপ করিত তবে সারা পৃথিবী মুশকের সুগন্ধিতে মোহিত হইয়া যাইত। সেই হুরদের বুকে তাহাদের স্বামীর নাম এবং আল্লাহর একটি নাম লেখা থাকিবে। তাহাদের বক্ষদেশ দৈর্ঘ্য প্রস্থে এক ক্রোশ প্রকান্ড হইবে। তাহাদের উভয় হাতে দশটি করিয়া কাঁকন এবং আঙ্গুলে একটি করিয়া আংটি থাকিবে। পদ্বদয়ে দশটি করিয়া খাড়ু থাকিবে।
একই পৃষ্ঠায় হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত একটি হাদিস উল্লেখ করা হয়েছে যার শেষ বাক্যটি এরুপ- “....... যদি কেহ আমার ন্যায় সুন্দরী হুর পাইতে চাও তবে আমার প্রভুর উপাসনায় লিপ্ত হও।”
আল্লাহর নির্দেশে হযরত জিবরাইল আ. এর জান্নাতে ঘুরাফেরার একটি মুহুর্ত ও একজন হুরের সাথে তার কথাবার্তার একটি ঘটনা উক্ত কিতাবের 126 পৃষ্ঠার শেষ অংশ হতে 127 পৃষ্ঠায় বর্ণনা করা হয়েছে। উভয়ের কথোপকোথনের শেষ অংশের বর্ণনা এসেছে এভাবে –
“হুর জিজ্ঞাসা করিল- হে জিবরাইল! আপনি অবগত আছেন কি আল্লাহ আমাকে কার জন্য সৃষ্টি করিয়াছেন?
জিবরাইল আ. বলিলেন- তাতো আমি জানি না।
হুর বলিল- যে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের নিমিত্ত স্বীয় কামনা বাসনাকে জলাজ্ঞলি দেয় আল্লাহ আমাকে তাহার জন্যই সৃষ্টি করিয়াছেন।
উক্ত কিতাবের ‘বেহেশতের দরজা’ অধ্যায়ের 122 পৃষ্ঠায় শেষে হুজুর স. এর একখানা হাদিস আনয়ন করা হয়েছে। হাদীস শরিফে বর্ণিত আছে- রমযানের রোযাদারের সাথে আল্লাহ পাক সাদা মোতির তাঁবুতে আবদ্ধ বড় বড় চোখবিশিষ্ট হুরের বিবাহ দিবেন। আল্লাহ পাক বলেন- ‘হুরুম মাকসূরাতুন্ ফিল্ খিয়ান।’
তাবুতে আবদ্ধ হুরদের সাথে বিবাহ হইবে। এই সমস্ত নারীদের প্রত্যেকের জন্য সত্তরটি লাল ইয়াকুতের তৈরী খাট এবং খাটের উপর সত্তরটি খাদ্য পাত্র এবং প্রত্যেক পাত্রে সহস্র স্বর্ণ পেয়ালা থাকিবে। তাহার স্বামীকেও এই পরিমাণ দান করা হইবে। অন্যান্য সৎকর্মশীল ব্যক্তিগণও এই পরিমাণ নেয়ামত পাইবে।

উক্ত কিতাবের 123 নং পৃষ্ঠায় বেহেশতের সুখ সদ্ভোগ অধ্যায়ে হুযুর স. এর একখানা বিশাল হাদিস আনয়ন করা হয়েছে। যার 3য় প্যারায় উল্লেখ করা হইয়াছে- “ সুতরাং তাহারা দ্রুতপদে ছুটিয়া গিয়া স্বামীকে আলিঙ্গন করিয়া ভিতরে আনিয়া বলিবেন- “ হে প্রিয়তম স্বামী! তুমিই আমার চির আকাঙ্খিত জন। আমি তোমাতে সন্তষ্ট; আমি কোন দিন তোমার প্রতি অসন্তষ্ট হইব না।” তাহাদের জন্য বেহেশতে সত্তরটি সজ্জিত পালঙ্ক এবং প্রত্যেক পালঙ্কে সত্তর জন করিয়া হুর স্ত্রী থাকিবে। প্রত্যেকের দেহে সত্তর প্রকার অলংকার থাকিবে। অলংকারের মধ্য দিয়া তাহাদের হাড়ের মগজ পর্যন্ত দেখা যাইবে।

একই অধ্যায়ে 125 নং পৃষ্ঠায় বর্ণিত হাদিসে হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন- হুরদের ন্যায় লাবণ্যময়ী এবং সুন্দরীর সংবাদ কেহ কখনো শোনে নাই। তাই তাহাদের যথার্থ বর্ণনা দেওয়া সম্ভবপর নয়।

হুরদের পবিত্রতা বিশদ বর্ণনা করা হয়েছে ইমাম গাযযালী র. এর অন্য কিতাব মুকাশাফাতুল-ক্বূলূব 2য় খন্ডের 183 নং পৃষ্ঠায় অধ্যায় নং-22 এর “জান্নাতের বিশদ বর্ণনা ও জান্নাতবাসীদের মান-মর্যাদা’’ শীর্ষক লেখায়। .... গোলাম-বালক ও খাদেমগণ সদা উপস্থিত থাকবে। শোভা ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে বড় বড় চক্ষু বিশিষ্টা উত্তম স্বভাবসম্পন্না বেহেশতী হুর রুপসীগণ। ....... কাজল মাখা চোখ, মন-মাতানো সুগন্ধময় দেহ।..........বেহেশতী হুরগণ হবে আনত দৃষ্টিসম্পন্না।

হুযুর স. সূরা ছফফ এর 12 নং আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হলে তিনি যে উত্তর দেন তাতে বেহেশতের মহল ও হুরের সংখ্যা এবং তাদের বিন্যাস-এর উপস্থাপনা উক্ত কিতাবের 191 নং পৃষ্ঠায় উঠে এসেছে এভাবে- এগুলো হচ্ছে মুক্তা নির্মিত মহলসমূহ। প্রতিটি মহলে লাল ইয়াকুত পাথরে নির্মিত সত্তরটি ঘর রয়েছে। প্রতিটি ঘরে সবুজ জমরদ (পান্না) পাথরের কামরা রয়েছে। প্রতিটি কামরায় একটি করে পালংক রয়েছে। প্রতিটি পালংকে সর্বপ্রকার রংয়ের সত্তরটি বিছানা রয়েছে। প্রতি বিছানায় একজন করে পরমা সুন্দরী জান্নাতী হুর রয়েছে। প্রত্যেক কামরায় সত্তরটি দস্তরখান রয়েছে। প্রত্যেক দস্তরখানের উপর সত্তর প্রকার খানা রয়েছে। প্রতিটি কামরায় সত্তরজন খাদেম রয়েছে। প্রতিদিন সকালে একজন মুমিনকে এতটুকু শক্তি দেওয়া হবে যে, সে উপরোক্ত সবকিছু করতে পারবে।”

ইমাম গাযযালী র. এর অপর বিশ্ববিখ্যাত কিতাব এহইয়াউ উলূমিদ্দীন এর নবম খন্ডের 301 পৃষ্ঠায় ‘বেহেশত প্রসঙ্গ’ নামক শিরোনামের আলোচনায় উল্লেখ করা হয়, ......কচি কিশোর সুন্দর চেহারাবিশিষ্ট বালকগণ ও কৃষ্ণনয়না হুরী-অপ্সরীগণ যথায়-তথায় বিচরণ করবে। ..... এই হুরী-অপ্সরীদেরকে এর পূর্বে কখনও কোন পুরষ স্পর্শ করেনি।

রাসুল স. মেরাযের সফরে বেহেশত ও দোযখ অবলোকন করেন। বেহেশতের বারদাখ নামক স্থানের রাসুল স. পৌছানোর পরের অবস্থা উক্ত কিতাবের ‘হুর ও গেলমান অধ্যায়ের’ 312 নং পৃষ্ঠায় বিশদ আলোচনার এক পর্যায়ে জিবরাইল আ. এর একটি উক্তি উল্লেখ করা হয়, .......... ইয়া রাসুলুল্লাহ দ.! তাবুর অভ্যন্তরস্থ সুন্দরী হুরী ও অপ্সরীগণের শব্দ শুনা যাচ্ছে।
হুযুর স. এর হাদীস উল্লেখপূর্বক পৃষ্ঠা নং 313 বলা হয়েছে- হুযুরে পাক স. এরশাদ করেছেন বেহেশতে প্রত্যেক অধিবাসীর পাঁচশ হুর, চার হাজার কুমারী রমণী এবং আট হাজার বিধবা রমণী থাকবে। তন্মধ্যে প্রত্যেকেরই সাথে আলিঙ্গন হবে।

মদিনায় অবতীর্ণ সূরা বাকারার 25 নং আয়াতের শেষাংশের অর্থ এরুপ : ....... এবং সেখানে (জান্নাতে) তাদের জন্য শুদ্ধচারিনী রমণীকূল থাকবে। আর সেখানে (জান্নাতে) তারা অনন্তকাল অবস্থান করবে ।” – এর ব্যাখ্যায় তাফসিরে মাআরেফুল ক্বোরআন এর 26 নং পৃষ্ঠায় এই আয়াতাংশটুকুর ব্যাখ্যায় লিখেন- জান্নাতে পুতঃ পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন স্ত্রী লাভের অর্থ, তারা হবে পার্থিব যাবতীয় বাহ্যিক ও গঠনগত ত্রুটি বিচ্যুতি ও চরিত্রগত কলুষতা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত এবং পস্রাব, পায়খানা, রক্তস্রাব, প্রসবোত্তর স্রাব প্রভূতি যাবতীয় ঘৃণ্য বিষয়ের উর্ধ্বে। অনুরুপভাবে নীতিভ্রষ্টতা, চরিত্রহীনতা, অবাধ্যতা প্রভূতি অভ্যন্তরীন ত্রুটি ও কদর্যতার লেশমাত্রও তাদের মধ্যে পাওয়া যাবে না।

সূরা ইয়াছিন শরীফের 56 নং আয়াতে বলা হয়েছে “এবং তারা তাদের স্ত্রীরা উপবিষ্ট থাকবে ছায়াময় পরিবেশে আসনে হেলান দিয়ে।” এই আয়াতে “ হুম আযওয়াজুন” শব্দদ্বয়ে “আযওয়াজুন’ শব্দ দ্বারা জান্নাতের হুর এবং দুনীয়ার স্ত্রী সবই অন্তভূক্ত মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে তাফসিরে মাআরেফুল ক্বোরআনের 1136 পৃষ্ঠায় উক্ত আয়াতের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যায়। সূরা আস সাফফাত এর 48 ও 49 নং আয়াতে বলা হয়েছে, “ তাদের কাছে থাকবে নত, আয়োতলোচনা তুরুণীগণ, যেন তারা সুরক্ষিত ডিম।” 48 নং আয়াতে বর্ণিত “ ক্বাছিরাতুত ত্বরিফ” এর বর্ণনায় তাফসীর মাআরেফুল ক্বোরআন এর 1146 পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, ক্বাছিরাতুত ত্বরিফ- অর্থাৎ জান্নাতের হুরদের বৈশিষ্ট হবে যে, তারা হবে ‘আনতনয়না’। যেসব স্বামীর সাথে আল্লাহ তায়ালা তাদের দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপন করে দেবেন, তারা তাদের ছাড়া কোন ভিন্ন পুরুষের প্রতি দৃষ্টিপাত করবে না। আল্লামা ইবনে জওযী বর্ণনা করেন যে, তারা তাদের স্বামীদেরকে বলবে, - আমার পালনকর্তার ইযযতের কসম, জান্নাতে তোমার চেয়ে উত্তম ও সুশ্রী পুরুষ আমার দৃষ্টিগোচর হয় না। যে আল্লাহ আমাকে তোমার স্ত্রী এবং তোমাকে আমার স্বামী করেছেন, সমস্ত প্রশংসা তাঁরই।

আল্লামা ইবনে জওযী “ক্বাছিরাতুত ত্বরিফ” এর আরো একটি অর্থ এই বর্ণনা করেছেন যে, তারা তাদের স্বামীদের দৃষ্টি নত রাখবে। অর্থাৎ তারা নিজেরা এমন ‘অনিন্দ্য সুন্দরী ও স্বামীর প্রতি নিবেদিতা’ হবে যে, স্বামীদের মনে অন্য কোন নারীর প্রতি দৃষ্টিপাত করার বাসনাই হবে না।– (তাফসীর যাদুল মাসীর)
সূরা আল-ওয়াক্বিয়া তে হুরদের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে এইভাবে- “ তথায় থাকবে আনতনয়না হুরগণ, আবরণে রক্ষিত মোতির ন্যায়।” (আয়াত সংখ্যা 22-23) সূরা আর-রাহমান এর 56 নং আয়াতে হুরদের কথা বলা হয়েছে এভাবে- “তথায় থাকবে আনতনয়না রমনীগণ, কোন জ্বিন ও মানব পূর্বে যাদেরকে ব্যবহার করেনি।”


যে সকল ব্লগার বন্ধুগণ হুর সম্পর্কীত বিষয় নিয়ে নেতিবাচক ধারণা করতেন, হুর পুরুষ বা নারী যে কোন টি মর্মে বিশ্বাস করতেন, জান্নাতি পুরুষকে মহান আল্লাহ প্রদত্ত হুরের পরিমাণ সম্পর্কে সন্দিহান ছিলেন উপরোক্ত বিশদ আলোচনায় আশা করি তাদের যাবতীয় প্রশ্নের সমাধান এসে গেছে।

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:২০
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×