somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলামের দৃষ্টিতে শ্বশুরবাড়ি একজন নারীর দায়িত্ব এবং অধিকার।

২০ শে মে, ২০১৪ সকাল ৮:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শ্বশুরবাড়ি বনাম বউ, বোঝা না বন্ধন?

একথা অনস্বীকার্য নারী ও পুরুষকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন স্ব স্ব ভিন্নতায় আর বৈশিষ্ট্যে । কিন্তু নারী-পুরুষের মাঝে তিনি কোন বৈষম্য করেন নি। সর্বোচ্চ পুরস্কার জান্নাহ এর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রতিটি মানুষকে যারা সৎ কর্ম করবে, অন্যায়ের প্রতিরোধ করবে এবং সর্বোপরি ঈমানে বলীয়ান থাকবে। কুর’আনে আল্লাহ কোথাও বলেন নি, মেয়েদের যেহেতু আমি ভিন্নভাবে বানিয়েছি তাদের পুরস্কার কম দিব। কিন্তু আফসোস, আমাদের সমাজ এতটা উদার ও ন্যায়বান হতে পারে নি। পরিবার থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন স্তরে প্র্যাকটিসিং ও নন-প্র্যাকটিসিং সব ধরনের পরিবারে মেয়েদের প্রতি বৈষম্য করা হয় নানাভাবে। আমি এমন কিছু অতি সহজ-সরল প্রচণ্ড রকমের ধার্মিক আপুর কথা শুনেছি যে শ্বশুরবাড়িতে তাদেরকে কীভাবে মানসিক দাসত্ব বরণ করে থাকতে হয়। খুব দুঃখের বিষয় হল, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, কট্টর ইসলামিক, উদারপন্থী কোন রকমের পরিবারই বাদ নেই। আমি হতবাক হয়ে যাই আসলেই, আমরা কি আদৌ ইসলামকে জানি ? নাকি জানতে চাই না তা আমাদের ইচ্ছার বিরূপ হবে বলে ? ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দু-মুসলিম সমাজে এই আধুনিক যুগে এসে শিক্ষিত পরিবারে শারীরিক ও মানসিকভাবে নারী নির্যাতন হয়ে চলেছে। ভারতের শিক্ষিত পরিবারে কী ভয়ংকর সেই রূপ তা বুঝেছিলাম একটা রিয়েলিটি শো থেকে। আমি অশিক্ষিত গ্রাম্য পরিবারের কথা বাদ দিচ্ছি, বিপদের কথা হল উচ্চশিক্ষিত উদার ও কট্টর ধার্মিক সব রকমের পরিবারে এই পরিস্থিতির চলছে এবং চলছেই।
তাই একজন মানুষ হিসেবে এবং একজন নারী হিসেবে, আমার ঈমানের দাবি হিসেবে আজ লিখতে বসেছি। অধিকাংশ আপু যেটা ভুল করেন তা হল তারা ধৈর্যের পথ বেছে নেন যা আল্লাহর খুব পছন্দের একটি কাজ। কিন্তু ধৈর্য অবলম্বনের কিছু ক্রাইটেরিয়া, কিছু ক্ষেত্র আছে। ধৈর্য অবলম্বন করার অর্থ এই না যে আমি অন্যায়কে মেনে নিতেই থাকব। এটা ভুললে চলবে না যে আল্লাহ বারবার বলেছেন, তোমরা অন্যায়ের প্রতিরোধ কর আর ন্যায়ের শাসন কায়েম কর।
তাই সবার আগে আমরা যারা কমবেশি ইসলামসচেতন, তাদেরকে ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে জানতে হবে ইসলাম কী বলে। আমাদেরকে অবশ্যই সিদ্ধান্ত নিতে হবে এই ব্যাপারে আমরা বাপ-দাদার আমল থেকে দেখে আসা প্রথাকেই গুরুত্ব দেব নাকি আল্লাহর নিয়মকে গুরুত্ব দেব।
শেইখ আব্দুল রহমান খানকে একজন প্রশ্ন করেছেন, শ্বশুরবাড়িতে একজন মেয়ের কী কী দায়িত্ব আছে ?
উত্তরে তিনি যা বলেছেন তার অনুবাদ নিম্নরূপঃ
শ্বশুরবাড়ির সাথে সম্পর্কের ব্যাপারটা আসলে নতুন কোন বিষয় নয়। মানব সভ্যতার শুরু থেকেই এই সম্পর্ক চলে এসেছে। কুর’আন এবং সুন্নাহ থেকে আমরা বিভিন্ন মানবিক সম্পর্কের সীমা-পরিসীমা, দায়িত্ব-কর্তব্যের ব্যাপারে জ্ঞান পাই। একটা বিষয় এখানে গুরুত্বপূর্ণ আর তা হল এই সম্পর্কের দায়িত্বগুলো কখনও একপক্ষীয় হলে চলে না। একজন সন্তানের যেমন তার পিতামাতার প্রতি দায়িত্ব পালন করতে হয় তেমনি পিতামাতারও সন্তানের জন্য অনেক কিছু করতে হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই যেটা হয় আমরা কেবল নিজের অধিকার আর পাওনাগুলো নিয়েই ভাবি, কর্তব্য নিয়ে ভাবতে চাই না।
আরেকটা বিষয় হল আমরা আমাদের সমাজে চলে আসা রীতিনীতি আর প্রথাগুলোকে আঁকড়ে ধরে থাকি এমন করে যে ইসলামকে বেমালুম ভুলে যাই। এমন অনেক প্রথা আছে যার মূল সূত্রপাত অন্য কোন ধর্মবিশ্বাসে। কিছু রীতিনীতি এমন যে শ্বশুরবাড়িতে একজন মেয়েকে দাসীর মত করে ব্যবহার করা হয়। কিছু পরিবারে শাশুড়িরা ছেলে এবং ছেলের বউয়ের প্রতিটি বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন এবং সিদ্ধান্ত দেন, তার অমতে একটা কাজ করতে দেন না। এমনকি খোদ আমেরিকাতেও এমন অনেক পরিবার আছে যেখানে শাশুড়িরা এমন আচরণ করেন। আবার একইসাথে, এমন অনেক পরিবার আছে যেখানে পুত্রবধূ ও শাশুড়ির মাঝে ভালোবাসা ও সৌহার্দ্যের এক সুন্দর মিষ্টি সম্পর্ক দেখা যায়।
ইসলাম অনুযায়ী একজন নারী বড়-ছোট কোন বিষয়েই শ্বশুরবাড়ির কাউকে মেনে চলতে কোনভাবেই বাধ্য নয়, তা শাশুড়ি, শ্বশুর, ননদ, ননাস, দেবর যে-ই হোক না কেন। তবে এটা শিথিল হবে কেবলমাত্র সেইক্ষেত্রে যদি ঐ নারীর কোন কাজ ইসলামিক শরীয়াতের ফরয কোন কাজ পালনের বা না পালনের ক্ষেত্রে হয়। এবার আসা যাক, স্বামীর প্রসংগে। একজন নারীকে তার স্বামীর প্রতি অনুগত থাকা প্রয়োজন; তবে স্বামী যদি এমন কোন কাজ করতে বলেন যা শরীয়াত বহির্ভূত, অন্যায় ও অন্য কোন নেতিবাচক কাজ তাহলে তা পালন করা যাবে না।
এ প্রসঙ্গে একটি কুর’আনের আয়াত,

পুরুষেরা নারীদের উপর কৃর্তত্বশীল এ জন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে। সে মতে নেককার স্ত্রীলোকগণ হয় অনুগতা এবং আল্লাহ যা হেফাযতযোগ্য করে দিয়েছেন লোক চক্ষুর অন্তরালেও তার হেফাযত করে। আর যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোন পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সবার উপর শ্রেষ্ঠ। (সুরা নিসা-৩৪)

শ্বশুরবাড়ির কারও বিনা অনুমতিতে শোবার ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি ইসলামে নেই। এক্ষেত্রে অমাহরাম কোন পুরুষকে যদি ঢুকতেই হয় তবে ঘরে একজন মাহরামের উপস্থিতি প্রয়োজন। রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, “মেয়েদের ঘরে প্রবেশের আগে সাবধান থেকো”। তখন আনসারদের একজন বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল, যদি সে তার স্বামীর ভাই অথবা ভাগ্নে/ভাতিজা হয় তবু?” তখন নবীজী (স) বললেন, “শ্বশুরবাড়ির সকল অমাহরাম মেয়েটির জন্য মৃত্যুর মত বিপজ্জনক”। এই হাদীসটির ব্যাপারে ইমাম আন-নববী (র) বলেছেন, “আল লায়ত ইবন সা’দের মতে, এখানে স্বামীর ভাই, চাচাত-মামাত ভাই, চাচা-মামা এবং অন্য সকল যারা মাহরাম নয় তাদেরকে বুঝানো হয়েছে। এইজন্য এদের সকলের ক্ষেত্রে হিজাব প্রযোজ্য হবে, অবশ্য স্বামীর বাবা, দাদা, কিংবা সন্তান-সন্ততিদের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য হবে না।”
এবারে অন্য একটি প্রসঙ্গে আসা যাক। ইসলাম অনুযায়ী শ্বশুরবাড়ির কেউ জোর করে বউকে রান্নাবান্না বা ঘরের অন্যান্য কাজ করাতে বাধ্য করতে পারবে না। এই বিষয়ে কোনরকম প্রত্যাশা এবং দাবি রাখা যাবে না। একজন নারী কেবল স্বেচ্ছায় দয়ার্দ্র মনে এই কাজগুলো চাইলে করতে পারে। একইভাবে স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্বে শ্বশুরবাড়ির কারও হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। এতে সুবিধা হবার বদলে বরং দ্বন্দ্ব-কলহ আরও মারাত্মক আকার ধারণ করে।
একজন নারীর তার আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যাবার জন্য শ্বশুরবাড়ি থেকে অনুমতি নেয়ার কোন প্রয়োজন নেই, স্বামীর সম্মতিই এক্ষেত্রে যথেষ্ট। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার কোন বিষয় নিয়ে জানার চেষ্টা করার কোন অধিকারও তাদের নেই। একজন পুরুষকে অবশ্যই তার পিতামাতার প্রতি অনুগত হতে হবে এবং এই ব্যাপারে স্ত্রী তাকে সর্বদা সহায়তা করবে। এটা অনস্বীকার্য যে শ্বশুর-শাশুড়ির প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও নমনীয় হওয়া উচিত।
সামাজিক প্রথা নয়, বরং শরীয়াতের এই নিয়মগুলো মেনে শ্বশুরবাড়িতে থাকার মত ব্যবস্থা করা হলে একসাথে থাকার মাঝে কোন ক্ষতি নেই। আর যদি আলাদাও থাকা হয়, সেক্ষেত্রে শ্বশুরবাড়িতে মাঝে মাঝে বেড়াতে যাওয়া ও খোঁজখবর নিতে হবে।
শেষ করার আগে, জীবনে সম্পর্কগুলোকে সংজ্ঞায়িত করার ব্যাপারে শরীয়াতকে অনুসরণ করে চলা উচিত। এর অন্যথা হলে, শুরু থেকেই সংসারে খিটিমিটি লেগে থাকবে আর বিচার দিবসেও আল্লাহর প্রশ্ন থেকে কেউ উদ্ধার করতে পারবে না। একজন নারীকে তার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকদের প্রতি ধৈর্য ও নমনীয়তা দেখাতে হবে, ঠিক যেমনটা সে নিজে আশা করে তাদের কাছে। কোন বিয়ের অনুষ্ঠানে গেলে আমি সবসময় একটা কথাই বলি, যদি আপনার ছেলেকে বিয়ে দিচ্ছেন তো মনে করবেন আল্লাহ আপনাকে একটি কন্যা উপহার দিচ্ছেন। আর যদি মেয়েকে বিয়ে দিচ্ছেন তো আল্লাহ আপনা্র পরিবারে একটি পুত্র উপহার দিচ্ছেন।
আল্লাহ আমাদের একে অপরের প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে সাহায্য করুন।
সূত্রসমূহ
Click This Link

Click This Link
নিজে জানি এবং অপরকে জানাই শেয়ার করে...
এখান থেকে নেওয়া
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০১৪ সকাল ৮:৪৭
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×